শোকাঞ্জলি
আজফার হোসেন
বদরুদ্দীন উমরের কাজগুলো কেউ মুছে দিতে পারবে না। তিনি ১১৫টি বই লিখেছেন। বেশির ভাগ মানুষ তাঁর এতগুলো বই পড়েননি। কিছু কিছু সাক্ষাৎকার হয়তো পড়েছে। কিন্তু তারা সমালোচনা করার ব্যাপারে খুব তৎপর। যাইহোক, আমি তাঁর প্রধান প্রধান বইগুলো পড়ার চেষ্টা করেছি। ফলে আমি তার সমগ্র কাজকে বিবেচনায় নিয়ে বলতে পারি, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ পাঠক এবং বিশ্লেষক হচ্ছেন বদরুদ্দীন উমর।
বদরুদ্দীর উমরের সমগ্র কাজের অবস্থান ছিল জনগণকেন্দ্রিক। জনগণকেন্দ্রিক অবস্থান থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের যে বিশ্লেষণ, তা ওমর ভাইয়ের কাজের ভেতরে উপস্থিত ছিল। এটা হচ্ছে একটা কথা। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, উমর ভাইয়ের সারা জীবনের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতী মানুষ। যারা আমাদেরকে বাঁচিয়ে রেখেছে, আমাদের অর্থনীতিকে চালু রেখেছে, যারা আমাদের সুযোগ-সুবিধার পেছনে সবসময় কাজ করে যাচ্ছে, এই অধিকাংশ মানুষের পক্ষে তিনি কথা বলে গেছেন, রাজনীতি করে গেছেন।
বদরুদ্দীন উমরের ১১৫টা বইয়ের যদি একমাত্র বৈশিষ্ট্য যদি আমি চিহ্নিত করতে চাই, সেটা হবে জনগণকেন্দ্রিকতা। জনগণ হচ্ছে তারাই যারা বাংলাদেশের খেটে খাওয়া মানুষ, কৃষক এবং শ্রমিক, অধিকাংশ মানুষ, যাদের কথা আমরা বলি না। কিন্তু বদরুদ্দীর উমর ইতিহাসের পাঠাতনের ভেতর দিয়ে জনগণকে দেখতে চেয়েছেন।
জনগণ ইতিহাসটা নির্মাণ করে। এই জনগণ কারা? অধিকাংশ মানুষ। অধিকাংশ মানুষ কারা? আবারও বলি, কৃষক, শ্রমিক, মেহনতী মানুষ। তাদের সঙ্গে ছিলেন বদরুদ্দীন উমর। এটা হচ্ছে তার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য।
বদরুদ্দীন ওমরের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তিনি বাংলাদেশের বামপন্থাকে যেভাবে বুঝেছেন, সেভাবে আর কেউ বোঝেনি। তিনি তথাকথিত বামপন্থার কড়া সমালোচনা করেছেন। এমনকি বদরুদ্দীন উমর নিজের সমালোচনাও করেছেন।
আমরা অনেক বুদ্ধিজীবী, অনেক রাজনীতিবিদের মধ্যে এই আত্মসমালোচনা দেখি না। আমি আমার জীবনে কখনো কোনো রাজনীতিবদিকে দেখিনি, যিনি জনসমক্ষে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, আমার এটা ভুল হয়েছে। কিন্তু বুদ্ধিজীবী হিসেবে উমর ভাইয়ের আত্ম-সমালোচনা ছিল। এটি তাঁর একটি বিশেষ গুণ।
বদরুদ্দিন উমর এক সময় কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে সেখান থেকে ইস্তফা দিয়ে বেরিয়ে এসেছেন। কেন বেরিয়ে এসেছেন? উনি মনে করেছেন, এদের যে পথ, এই যে তথাকথিত কমিউনিস্ট, এই লাইন ঠিক নেই। তিনি শুরু থেকেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত প্রথম বইটিও তিনি লিখেছেন। নাম ‘দ্য ইমার্জেন্স অব বাংলাদেশ’। বইটি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, মানুষ তো এসব বই পড়ে না। তিনি কী বলতে চেয়েছেন, তা তারা না পড়েই সমালোচনা করেন।
ভাষা আন্দোলনের ওপর সর্বেশ্রেষ্ঠ বইটি লিখেছেন বদরুদ্দিন উমর। তাঁর বইয়ের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন বিষয়কে একসঙ্গে আনা এবং ভাষা আন্দোলনে মেহনতী মানুষ, কৃষক ও শ্রমিকের অংশগ্রহণের ইতিহাস লিখে যাওয়া। এই জন্য আমি মনে করি, বদরুদ্দীন উমরের লেখা ‘পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি’ বইটি ভাষা আন্দোলনের ওপর সর্বশ্রেষ্ঠ বই।
জীবনের শেষ সময়েও তাঁর বৃদ্ধিজীবীতা প্রখর ছিল। জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে তাঁর যে পর্যবেক্ষণ, তা যথার্থ পর্যবেক্ষণ। তিনি মনে করেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গণঅভ্যুত্থান। সত্য যে, এই অভ্যুত্থানে বিভিন্ন ধরনের মানুষ, বিভিন্ন পেশার মানুষ, বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মানুষ জামায়েত হয়েছিল।
গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাসের দিকে চোখ রাখলে দেখা যায়, যেকোনো গণঅভ্যুত্থানই চূড়ান্ত দৃষ্টান্তে সফল না। আবার চূড়ান্ত দৃষ্টান্তে ব্যর্থও না। এই গণঅভ্যুত্থানে যদি কেউ কেউ মনে করে, শুধু জামায়াতে ইসলামী অংশগ্রহণ করেছে। সেটা সঠিক নয়। আমরা রশিয়ায় কিংবা লাতিন আমেরিকাতেও দেখেছি, গণঅভ্যুত্থানের সময় প্রতিক্রিয়াশীল দল যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে। গণঅভ্যুত্থান মানে ‘গণ’। সেখানে সবাই যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে। সেটাই স্বাভাবিক। এখন কেউ যদি সেই গণঅভ্যুত্থানকে শুধু প্রতিক্রিয়াশীলদের মধ্যে রিডিউস করে, তাহলে বলতে হবে, গণঅভ্যুত্থানের চরিত্র এবং চেহারা সম্পর্কে তার কোনো জ্ঞানই নেই।
জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে উমর ভাইয়ের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। আর সর্বশেষ দেখা হয়েছে, গত বছরের আগের বছর। আমার জীবনে তাঁর বিরাট প্রভাব রয়েছে। আমি যুক্তরাষ্ট্রে এসে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কাছে নিজের আত্মা বিক্রি করিনি। বরং যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সংগ্রামে যুক্ত হয়েছি। গত ১২ বছর ধরে আমি প্যালেস্টানিয়ান সলিডারিটি কমিটি সদস্য। ফিলিস্তিনিদের পক্ষে কাজ করেছি। তারপর গ্লোবাল সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়েছি। এই সবকিছুর পেছনে রয়েছে বদরুদ্দীন উমরের অনুপ্রেরণা। বাংলাদেশ লেখক শিবিরের জেনারেল সেক্রেটারি ছিলাম। তখন সেটার ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াস এবং প্রেসিডেন্ট ছিলেন হাসান আজিজুল হক। আর বদরুদ্দীন উমর ছিলেন এই সংগঠনের স্টিয়ারিং কমিটির মেম্বার।
সবশেষে আমি শুধু এটুকু বলব, বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত সমাজ এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজ—কেউই বদরুদ্দীন উমরকে ধারণ করতে পারেনি। আমাদের বুদ্ধিজীবীদের একটা বড় দল হচ্ছে সুবিধাবাদী। আরেকটা দল আছে যারা ওমর ভাইকে গালিগালাজ করে। সবচেয়ে বড় ইন্টেলেকচুয়াল অসততা হচ্ছে, আপনি একজনের সমালোচনা করেন অথচ সেই ব্যক্তির কাজ সম্পর্কে আপনার কোনো ধারণা নেই। তার কোনো কাজ আপনি পড়েননি। এর চেয়ে বড় অসততা কিছু হয় না। ওমর ভাই সেই ধরনের অসততার ভিকটিম হয়েছেন বুদ্ধিজীবীদের কাছ থেকে।
বদরুদ্দীন উমর চেয়েছেন জনগণের, বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি। জনগণের মুক্তি বলতে তিনি যেটা বোঝাতে চেয়েছেন, একটা বড় ধরনের গণতান্ত্রিক রূপান্তর হবে বাংলাদেশে। সেখানে কৃষক, শ্রমিক, মেহনতী মানুষ, নির্যাতিত, শোষিত মানুষ, এথনিক মাইনরিটি, রিলিজিয়াস মাইনরিটি, লিঙ্গুইস্টিক মাইনরিটি—সবার অংশগ্রহণ থাকবে।
লেখক: আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত বাংলাদেশী-মার্কিন তাত্ত্বিক ও লেখক
বদরুদ্দীন উমরের কাজগুলো কেউ মুছে দিতে পারবে না। তিনি ১১৫টি বই লিখেছেন। বেশির ভাগ মানুষ তাঁর এতগুলো বই পড়েননি। কিছু কিছু সাক্ষাৎকার হয়তো পড়েছে। কিন্তু তারা সমালোচনা করার ব্যাপারে খুব তৎপর। যাইহোক, আমি তাঁর প্রধান প্রধান বইগুলো পড়ার চেষ্টা করেছি। ফলে আমি তার সমগ্র কাজকে বিবেচনায় নিয়ে বলতে পারি, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ পাঠক এবং বিশ্লেষক হচ্ছেন বদরুদ্দীন উমর।
বদরুদ্দীর উমরের সমগ্র কাজের অবস্থান ছিল জনগণকেন্দ্রিক। জনগণকেন্দ্রিক অবস্থান থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের যে বিশ্লেষণ, তা ওমর ভাইয়ের কাজের ভেতরে উপস্থিত ছিল। এটা হচ্ছে একটা কথা। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, উমর ভাইয়ের সারা জীবনের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতী মানুষ। যারা আমাদেরকে বাঁচিয়ে রেখেছে, আমাদের অর্থনীতিকে চালু রেখেছে, যারা আমাদের সুযোগ-সুবিধার পেছনে সবসময় কাজ করে যাচ্ছে, এই অধিকাংশ মানুষের পক্ষে তিনি কথা বলে গেছেন, রাজনীতি করে গেছেন।
বদরুদ্দীন উমরের ১১৫টা বইয়ের যদি একমাত্র বৈশিষ্ট্য যদি আমি চিহ্নিত করতে চাই, সেটা হবে জনগণকেন্দ্রিকতা। জনগণ হচ্ছে তারাই যারা বাংলাদেশের খেটে খাওয়া মানুষ, কৃষক এবং শ্রমিক, অধিকাংশ মানুষ, যাদের কথা আমরা বলি না। কিন্তু বদরুদ্দীর উমর ইতিহাসের পাঠাতনের ভেতর দিয়ে জনগণকে দেখতে চেয়েছেন।
জনগণ ইতিহাসটা নির্মাণ করে। এই জনগণ কারা? অধিকাংশ মানুষ। অধিকাংশ মানুষ কারা? আবারও বলি, কৃষক, শ্রমিক, মেহনতী মানুষ। তাদের সঙ্গে ছিলেন বদরুদ্দীন উমর। এটা হচ্ছে তার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য।
বদরুদ্দীন ওমরের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তিনি বাংলাদেশের বামপন্থাকে যেভাবে বুঝেছেন, সেভাবে আর কেউ বোঝেনি। তিনি তথাকথিত বামপন্থার কড়া সমালোচনা করেছেন। এমনকি বদরুদ্দীন উমর নিজের সমালোচনাও করেছেন।
আমরা অনেক বুদ্ধিজীবী, অনেক রাজনীতিবিদের মধ্যে এই আত্মসমালোচনা দেখি না। আমি আমার জীবনে কখনো কোনো রাজনীতিবদিকে দেখিনি, যিনি জনসমক্ষে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, আমার এটা ভুল হয়েছে। কিন্তু বুদ্ধিজীবী হিসেবে উমর ভাইয়ের আত্ম-সমালোচনা ছিল। এটি তাঁর একটি বিশেষ গুণ।
বদরুদ্দিন উমর এক সময় কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে সেখান থেকে ইস্তফা দিয়ে বেরিয়ে এসেছেন। কেন বেরিয়ে এসেছেন? উনি মনে করেছেন, এদের যে পথ, এই যে তথাকথিত কমিউনিস্ট, এই লাইন ঠিক নেই। তিনি শুরু থেকেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত প্রথম বইটিও তিনি লিখেছেন। নাম ‘দ্য ইমার্জেন্স অব বাংলাদেশ’। বইটি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, মানুষ তো এসব বই পড়ে না। তিনি কী বলতে চেয়েছেন, তা তারা না পড়েই সমালোচনা করেন।
ভাষা আন্দোলনের ওপর সর্বেশ্রেষ্ঠ বইটি লিখেছেন বদরুদ্দিন উমর। তাঁর বইয়ের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন বিষয়কে একসঙ্গে আনা এবং ভাষা আন্দোলনে মেহনতী মানুষ, কৃষক ও শ্রমিকের অংশগ্রহণের ইতিহাস লিখে যাওয়া। এই জন্য আমি মনে করি, বদরুদ্দীন উমরের লেখা ‘পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি’ বইটি ভাষা আন্দোলনের ওপর সর্বশ্রেষ্ঠ বই।
জীবনের শেষ সময়েও তাঁর বৃদ্ধিজীবীতা প্রখর ছিল। জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে তাঁর যে পর্যবেক্ষণ, তা যথার্থ পর্যবেক্ষণ। তিনি মনে করেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গণঅভ্যুত্থান। সত্য যে, এই অভ্যুত্থানে বিভিন্ন ধরনের মানুষ, বিভিন্ন পেশার মানুষ, বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মানুষ জামায়েত হয়েছিল।
গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাসের দিকে চোখ রাখলে দেখা যায়, যেকোনো গণঅভ্যুত্থানই চূড়ান্ত দৃষ্টান্তে সফল না। আবার চূড়ান্ত দৃষ্টান্তে ব্যর্থও না। এই গণঅভ্যুত্থানে যদি কেউ কেউ মনে করে, শুধু জামায়াতে ইসলামী অংশগ্রহণ করেছে। সেটা সঠিক নয়। আমরা রশিয়ায় কিংবা লাতিন আমেরিকাতেও দেখেছি, গণঅভ্যুত্থানের সময় প্রতিক্রিয়াশীল দল যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে। গণঅভ্যুত্থান মানে ‘গণ’। সেখানে সবাই যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে। সেটাই স্বাভাবিক। এখন কেউ যদি সেই গণঅভ্যুত্থানকে শুধু প্রতিক্রিয়াশীলদের মধ্যে রিডিউস করে, তাহলে বলতে হবে, গণঅভ্যুত্থানের চরিত্র এবং চেহারা সম্পর্কে তার কোনো জ্ঞানই নেই।
জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে উমর ভাইয়ের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। আর সর্বশেষ দেখা হয়েছে, গত বছরের আগের বছর। আমার জীবনে তাঁর বিরাট প্রভাব রয়েছে। আমি যুক্তরাষ্ট্রে এসে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কাছে নিজের আত্মা বিক্রি করিনি। বরং যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সংগ্রামে যুক্ত হয়েছি। গত ১২ বছর ধরে আমি প্যালেস্টানিয়ান সলিডারিটি কমিটি সদস্য। ফিলিস্তিনিদের পক্ষে কাজ করেছি। তারপর গ্লোবাল সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়েছি। এই সবকিছুর পেছনে রয়েছে বদরুদ্দীন উমরের অনুপ্রেরণা। বাংলাদেশ লেখক শিবিরের জেনারেল সেক্রেটারি ছিলাম। তখন সেটার ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াস এবং প্রেসিডেন্ট ছিলেন হাসান আজিজুল হক। আর বদরুদ্দীন উমর ছিলেন এই সংগঠনের স্টিয়ারিং কমিটির মেম্বার।
সবশেষে আমি শুধু এটুকু বলব, বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত সমাজ এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজ—কেউই বদরুদ্দীন উমরকে ধারণ করতে পারেনি। আমাদের বুদ্ধিজীবীদের একটা বড় দল হচ্ছে সুবিধাবাদী। আরেকটা দল আছে যারা ওমর ভাইকে গালিগালাজ করে। সবচেয়ে বড় ইন্টেলেকচুয়াল অসততা হচ্ছে, আপনি একজনের সমালোচনা করেন অথচ সেই ব্যক্তির কাজ সম্পর্কে আপনার কোনো ধারণা নেই। তার কোনো কাজ আপনি পড়েননি। এর চেয়ে বড় অসততা কিছু হয় না। ওমর ভাই সেই ধরনের অসততার ভিকটিম হয়েছেন বুদ্ধিজীবীদের কাছ থেকে।
বদরুদ্দীন উমর চেয়েছেন জনগণের, বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি। জনগণের মুক্তি বলতে তিনি যেটা বোঝাতে চেয়েছেন, একটা বড় ধরনের গণতান্ত্রিক রূপান্তর হবে বাংলাদেশে। সেখানে কৃষক, শ্রমিক, মেহনতী মানুষ, নির্যাতিত, শোষিত মানুষ, এথনিক মাইনরিটি, রিলিজিয়াস মাইনরিটি, লিঙ্গুইস্টিক মাইনরিটি—সবার অংশগ্রহণ থাকবে।
লেখক: আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত বাংলাদেশী-মার্কিন তাত্ত্বিক ও লেখক
উজ্জ্বল নক্ষত্র বদরুদ্দীন উমর (১৯৩১) আর নেই। তিনি কেবল উপনিবেশ-পরবর্তী বাংলাদেশের একজন মার্কসবাদী ইতিহাসবিদই ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন বিপ্লবী তাত্ত্বিক এবং রাজনীতিবিদও। লেখালেখি ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মধ্য দিয়ে শ্রেণিসংগ্রাম, জাতীয়তাবাদ ও রাষ্ট্রগঠনের প্রচলিত ধারণাকে তিনি চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। নিজের
১ ঘণ্টা আগেঅধ্যাপক উমরের সাথে আমার দীর্ঘদিনের সখ্যতা। তাঁর শেষ দিনগুলোর কথা মনে পড়লে আজও মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। তিনি ছিলেন অসম্ভব রসবোধ সম্পন্ন একজন মানুষ। বাইরে থেকে তাঁকে কিছুটা কাঠখোট্টা মনে হলেও, তাঁর ভেতরের সূক্ষ্ম রসবোধ ছিল অসাধারণ। প্রায়ই তিনি মজা করে বলতেন, ‘আমি তো ইয়ের দুয়ারে দাঁড়িয়ে আছি, আজরাইল আমার
৩ ঘণ্টা আগেজুলাই অভ্যুত্থানের পর নয় মাস গত হয়েছে। এই সময়ে বাঙলাদেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির মধ্যে অনেক ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে। এই পরিবর্তনের সব থেকে উল্লেখযোগ্য দিক হলো বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের একটানা পনেরো বছরের ফ্যাসিস্ট শাসনের অবসান। আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট চরিত্রের যে পরিচয় ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ প
৬ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক ও প্রগতিশীল চিন্তার ‘বাতিঘর’ হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। অথচ সেখানেই সম্প্রতি এক ছাত্রীকে দলবদ্ধধ র্ষণের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ এক তিক্ত সত্যকে সামনে এনেছে।
৩ দিন আগে