leadT1ad

দেশে দেড় কোটির বেশি মানুষ তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায়

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

সংগৃহীত ছবি

বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে এবং ১৬ লাখ শিশু মারাত্মক অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে—এমন তথ্য উঠে এসেছে সরকার ও উন্নয়ন সহযোগীদের যৌথ বিশ্লেষণে।

বুধবার রাজধানীর বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশিপ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে এক কর্মশালায় খাদ্য মন্ত্রণালয় জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), ইউনিসেফ, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি), অ্যাকশন অ্যাগেইনস্ট হাঙ্গার ও সেভ দ্য চিলড্রেনের সঙ্গে একত্রে সর্বশেষ জাতীয় পরিস্থিতি বিশ্লেষণের ফলাফল প্রকাশ করে।

চলতি বছরের এপ্রিল মাসে পরিচালিত এক বিশ্লেষণে দেখা যায়, মে থেকে ডিসেম্বর সময়কালে বাংলাদেশের ৩৬টি জেলা ও রোহিঙ্গা শিবিরের মোট ৯ কোটি ৬ লাখ মানুষের মধ্যে প্রায় ১৭ শতাংশ অর্থাৎ ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশনে (আইপিসি) ‘খাদ্য সংকটের’ অবস্থায় বা তারও উচ্চ পর্যায়ে থাকবে। এর মধ্যে প্রায় ৩ লাখ ৬১ হাজার মানুষের জরুরি খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন হবে।

আইপিসি হলো একটি বৈশ্বিক মানদণ্ডভিত্তিক বিশ্লেষণ পদ্ধতি। যা প্রমাণভিত্তিক তথ্য ব্যবহার করে জনগোষ্ঠীর খাদ্নিরাপত্তার অবস্থা পাঁচ ধাপে শ্রেণিবদ্ধ করে। এই ধাপগুলো যথাক্রমে মিনিমাল, স্ট্রেসড, ক্রাইসিস, ইমার্জেন্সি এবং ক্যাটাস্ট্রোফি বা দুর্ভিক্ষ।

আইপিসি অনুযায়ী সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি দেখা গেছে কক্সবাজারে—বিশেষত উখিয়া ও টেকনাফ এলাকায়। এ ছাড়াও সুনামগঞ্জ, বরগুনা, বান্দরবান, নোয়াখালী এবং সাতক্ষীরা জেলায় খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকি বেশি।

জলবায়ুজনিত ধাক্কা—বিশেষ করে ২০২৪ সালের বন্যা জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে; বাজারে অস্থিরতা ও মুদ্রাস্ফীতি নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমিয়েছে; পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের চাহিদা বাড়লেও মানবিক সহায়তার তহবিল কমে গেছে—এসবই খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে।

এ ছাড়াও পুষ্টি পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক বলে জানিয়েছে সংস্থাগুলো। ৬ থেকে ৫৯ মাস বয়সী প্রায় ১৬ লাখ শিশু এ বছর তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে বা ভুগতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় ১ লাখ ৪৪ লাখ শিশুর অবস্থা মারাত্মক অপুষ্টি, যাদের জরুরি চিকিৎসা সহায়তা প্রয়োজন। একই সময়ে প্রায় ১৪ লাখ শিশু মাঝারি পর্যায়ের অপুষ্টিতে ভুগবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রায় ১ লাখ ১৭ হাজার গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী নারীও তীব্র অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছেন।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাসুদুল হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টি পরিস্থিতির বাস্তব চিত্র আমাদের সামনে তুলে ধরেছে এই সর্বশেষ আইপিসি বিশ্লেষণ। ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা এবং ১৬ লাখের বেশি শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে—এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজকের এই কর্মশালা বিশ্লেষণের ফলাফল শুধুমাত্র পর্যালোচনা করার জন্য নয়, বরং সেগুলোকে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনায় রূপান্তর করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্ববহ। বাংলাদেশ সরকার এই তথ্যকে নীতি প্রণয়নে ব্যবহার করবে এবং জাতিসংঘ ও উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে কাজ করে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণদের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।’

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মোহাম্মদ জাবের বলেন, ‘আইপিসি বিশ্লেষণের ফলাফল বিশেষ করে গ্রামীণ ও উপকূলীয় সম্প্রদায়ের জন্য উদ্বেগের কারণ, যাদের জীবিকা কৃষি ও মৎস্য খাতের ওপর নির্ভরশীল। আমরা সবাই মিলে খাদ্যব্যবস্থা শক্তিশালী করতে, পুষ্টিকর খাবারের প্রাপ্যতা বাড়াতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা মোকাবিলায় সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে যেতে চাই।'

তিনি আরও বলেন, 'দুর্বল জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে আমাদের দ্রুত ও সম্মিলিত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি—যাতে কেউ পিছিয়ে না থাকে।’

বিশ্লেষণে যে সুপারিশগুলো উঠে এসেছে, তার মধ্যে রয়েছে জরুরি সহায়তা প্রদান, ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য শক-রেসপন্সিভ সেফটি নেট সম্প্রসারণ, কৃষি ও পশুপালন খাতে জরুরি সহায়তা, বন্যাকবলিত এলাকায় জীবিকা পুনরুদ্ধারে সহায়তা।

Ad 300x250

সম্পর্কিত