চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: নারী শিক্ষার্থীদের রাত ১০টার মধ্যে হলে ফেরা
৩১ জুলাই বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে থাকা ছাত্রীদের রাত ১০টার মধ্যে হলে না ঢুকলে আসন বাতিল করার হুঁশিয়ারি দেওয়ার অভিযোগ এসেছে এক সহকারী প্রক্টরের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি নিয়ে এর মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনামুখর হয়েছেন অনেক শিক্ষার্থী।
সায়মা আলম
ভাবতে অবাক লাগে একবিংশ শতাব্দিতে এসেও ‘নারীদের ঘরে ফেরার নিয়ম’ নিয়ে আমাদের কথা বলতে হচ্ছে! এ-ও সত্য যে আমাদের সমজে নারীদের চলাচল ও স্বাধীনতা নিয়ে কথা হয়েছে, হচ্ছে অনেক দশক ধরেই। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে নারী শিক্ষার্থীদের ফেরার সময় নিয়ে আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক বিধিনিষেধ, সবসময়ই বিতর্ক ও আলোচনার কেন্দ্রে থেকেছে। স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এ আলোচনা হয়েছে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি। কেবল হলে ফেরাই বা বলি কী করে, নারীর যেকোনো স্বাধীন আচরণ কিংবা অধিকারের প্রশ্নে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আচরণ অনেক আত্মসম্মানসম্পন্ন স্বাধীনচেতা মানুষকেই হতাশ করে।
বিভিন্ন পত্রপত্রকিা মারফত জানা গেল, ৩১ জুলাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি তথা সহকারী প্রক্টর বলেছেন, আবাসিক হলে থাকা নারী শিক্ষার্থীদের রাত ১০টার পরে হলে ফিরলে তাঁদের সিট বাতিল হয়ে যাবে। এমনকি তা দশটা এক মিনিট হলেও।
এর আগে এ বছরের ১৮ মে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় ২৪ হল কর্তৃপক্ষ একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপনটি এমন ছিল যে আবাসিকভাবে থাকা নারী শিক্ষার্থীরা ১০টার পর বাইরে থাকতে পারবেন না। চিকিৎসাকেন্দ্রে যাওয়া বা অন্য কোনো কারণে যদি রাত ১০টার পর বাইরে থাকার দরকার হয়, সেক্ষেত্রে হল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লিখিত অনুমতি নিতে হবে।
যাঁরা এভাবে নারী শিক্ষার্থীদের হলে ফেরার সময় বেঁধে দিতে চান, তাঁদের প্রধান যুক্তি হলো, তাঁদের নিরাপত্তা। রাতের বেলা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাহাড়ঘেরা বিশাল এলাকায় নারী শিক্ষার্থীরা নানা ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারেন—যেমন ইভ টিজিং, যৌন হয়রানি, যৌন সহিংসতা বা ধর্ষণ। এছাড়া অনেকে সামাজিক রীতিনীতির দিকও বিবেচনায় আনেন। ‘ভালো মেয়েরা বা ভালো পরিবারের নারীরা বেশি রাত করে বাইরে থাকে না’—নারীদের চরিত্র মাপার সেই পুরোনো বস্তাপচা দৃষ্টিভঙ্গী এখনও এখানে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভীষণ তাজা। তবে বাবা-মায়েদের দুশ্চিন্তাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বৈকি।
এখন প্রশ্ন হলো, কেন তৈরি হয় এ দুশ্চিন্তা? উন্নত বিশ্বে অনেক আগেই এই প্রশ্ন অবান্তর হয়ে গেছে। এমনকি অনেক অনুন্নত দেশ কিংবা আমাদের মতো দেশে—যেখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোনো বিবেচনাতেই ভালো না; সেখানে নারী-পুরুষ সবারই নিরাপত্তার অভাব আছে। অবশ্য নারীদের একটু বেশি থাকবে, সে কথা বলা বাহুল্য। দুর্বল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বা সামাজিক দুশ্চিন্তা—অবস্থা যা-ই হোক না কেনো, নিরাপত্তা বিবেচনায় একটা শ্রেণিকে ঘরে আটকে রাখা কতটা যৌক্তিক, তা নিয়ে এখন প্রবলভাবে কথা হওয়া দরকার। আর যদি কোনো বিবেচনায় কোনো বিধিনিষেধ জারি করতেও হয় তবে তা সমতা নিশ্চিত করে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব শিক্ষার্থীর জন্য একই নিয়মে করাই সুবিবেচনাপ্রসূত। এভাবে লিঙ্গগত বৈষম্য এই যুগে আসলে অসভ্যতারই পরিচায়ক।
আরেকটা বিষয়ও আলোচনা করা জরুরি, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্বশাসন মানে কী? বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় স্বায়ত্বশাসন দেওয়ার কথা বিবেচনা করা হয়েছিল কেন? ‘রাষ্ট্রের ভেতরে আরেকটা রাষ্ট্র’ তৈরির দরকার পড়েছিল কেন?
এর একটা বড় কারণ সম্ভবত এই যে রাষ্ট্রের ভেতরে একটি আধুনিক আদর্শ রাষ্ট্র নির্মাণের উদাহরণ তৈরি করা। যাঁরা এ পরিকল্পনা করেছিলেন তাঁরা হয়তো ভেবেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানী, বিচক্ষণ ও মেধাবী শিক্ষকেরা এমন আদর্শিক অবস্থা তৈরি করতে পারবেন, যা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়বে পুরো রাষ্ট্রে। এ কারণে এখানে সরকারের আদলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন, স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা, নিজস্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা রক্ষায় প্রক্টিরিয়াল বডি এবং তাদের অধীনে নিরাপত্তা বাহিনী—সবই তৈরি করা হয়েছিল। পরিসর ছোট হওয়ায় পরিচালনা সহজ হবে এবং এখানে প্রায় সমশিক্ষাগত যোগ্যতার জনগোষ্ঠী (শিক্ষার্থীরা) থাকায় সবাই-ই আধুনিক ধারনার মূল বিষয়গুলো বুঝবেন বলেই ধরে নেওয়া হয়েছিল। বলা চলে, এটা হয়তো ছিল ‘আদর্শ রাষ্ট্র’-এর একটা ‘পাইলট প্রজেক্ট’, কীভাবে একটি আধুনিক ও আদর্শ রাষ্ট্র তৈরি করা যায়, কেমন করে একটা সমতাভিত্তিক দক্ষ জনবল ও সুনাগরিক তৈরি করা যায়, তারই পরীক্ষাগার হলো বিশ্ববিদ্যালয়।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, গত প্রায় পাঁচ দশকের বেশি সময় গেলেও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্বশাসনের যোগ্যতার প্রমাণ রাখতে বারবার ব্যর্থ হয়েছে; বরং অযোগ্য এক গোষ্ঠী প্রচলিত রাষ্ট্র ব্যাবস্থাকেই অন্ধ অনুকরণ বা তোষণ করে গেছে। আর নারী শিক্ষার্থীদের প্রশ্নে তাদের যুক্তি তো আরও মন্ধাতার আমলের!
বর্তমানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক নারী শিক্ষার্থী টিউশান কিংবা খণ্ডকালীন কাজ নানান রকম কাজ করে নিজের খরচ যোগান। এ কারণে সন্ধ্যার পরেও তাঁদের অনেককে কাজ করতে হয়। এছাড়া বলার কথা হলো, একজন পূর্ণবয়স্ক নারী তাঁর জীবনের সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়ার অধিকারতো রাখেন। রাতে বাইরে থাকা, কাজে যাওয়া, বা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে সময় কাটানো তাঁর মৌলিক স্বাধীনতার অংশ। এই স্বাধীনতাকে সময় নির্ধারণের নামে নিয়ন্ত্রণ করা মানে নারীর ব্যক্তি স্বাধীনতাকেও খর্ব করা।
এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তার ঝুঁকি যদি থেকেও থাকে, প্রশাসনের উচিত সেই ঝুঁকির জায়গাগুলো চিহ্নিত করা এবং যথাযোগ্য ব্যবস্থা নিয়ে তার সমাধান করা। ‘এত বড় জায়গায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়’ বলে নিজেদের অক্ষমতা, অযোগ্যতা, অদক্ষতাকে প্রকাশ করা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালকদের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যদি তাঁদের এ দক্ষতা-যোগ্যতা-সামর্থ্যের ঘাটতি থাকে, তবে এ দায়িত্বই না নেওয়াই উত্তম। অথবা রাষ্ট্রের কাছে তাঁরা এই বলে আত্মসমার্পণ করতে পারেন যে ‘আমরা নিজেদের দায়িত্ব নিতে অপারগ, স্বায়ত্তশাসনের উপযুক্ত আমরা নই। তাই অন্য সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো রাষ্ট্রের সরাসরি তত্বাবধানেই আমরা চলব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীরা নিজের ক্যাম্পাসেই যদি নিরাপদ না থাকেন, নিজের ক্যাম্পাসের ভেতরেই যদি স্বাধীনতার চর্চা করতে না পারেন, তবে বাইরের বড় দুনিয়ায় কীভাবে পথ চলার সাহস করবেন?
বিশ্ববিদ্যালয়ের হর্তাকর্তারা যদি নিজেদেরকে নারী শিক্ষার্থীদের শুভাকাঙ্ক্ষী বলে মনে করেন, তবে তাঁদের উচিত হবে নারীর নিরাপত্তা ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করে তা দূর করার জন্য কার্যকর সমাধান খোঁজা। পাশাপাশি এ বিষয়ে জনমত তৈরি করা। বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত নিরাপত্তারক্ষীর উপস্থিতি নিশ্চিত করে এমন এক আদর্শ জায়গা তৈরি করা, যার আদলে গড়ে উঠবে পুরো রাষ্ট্র এবং বদলাবে আমাদের সমাজ।
লেখক: শিক্ষক, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ভাবতে অবাক লাগে একবিংশ শতাব্দিতে এসেও ‘নারীদের ঘরে ফেরার নিয়ম’ নিয়ে আমাদের কথা বলতে হচ্ছে! এ-ও সত্য যে আমাদের সমজে নারীদের চলাচল ও স্বাধীনতা নিয়ে কথা হয়েছে, হচ্ছে অনেক দশক ধরেই। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে নারী শিক্ষার্থীদের ফেরার সময় নিয়ে আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক বিধিনিষেধ, সবসময়ই বিতর্ক ও আলোচনার কেন্দ্রে থেকেছে। স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এ আলোচনা হয়েছে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি। কেবল হলে ফেরাই বা বলি কী করে, নারীর যেকোনো স্বাধীন আচরণ কিংবা অধিকারের প্রশ্নে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আচরণ অনেক আত্মসম্মানসম্পন্ন স্বাধীনচেতা মানুষকেই হতাশ করে।
বিভিন্ন পত্রপত্রকিা মারফত জানা গেল, ৩১ জুলাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি তথা সহকারী প্রক্টর বলেছেন, আবাসিক হলে থাকা নারী শিক্ষার্থীদের রাত ১০টার পরে হলে ফিরলে তাঁদের সিট বাতিল হয়ে যাবে। এমনকি তা দশটা এক মিনিট হলেও।
এর আগে এ বছরের ১৮ মে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় ২৪ হল কর্তৃপক্ষ একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপনটি এমন ছিল যে আবাসিকভাবে থাকা নারী শিক্ষার্থীরা ১০টার পর বাইরে থাকতে পারবেন না। চিকিৎসাকেন্দ্রে যাওয়া বা অন্য কোনো কারণে যদি রাত ১০টার পর বাইরে থাকার দরকার হয়, সেক্ষেত্রে হল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লিখিত অনুমতি নিতে হবে।
যাঁরা এভাবে নারী শিক্ষার্থীদের হলে ফেরার সময় বেঁধে দিতে চান, তাঁদের প্রধান যুক্তি হলো, তাঁদের নিরাপত্তা। রাতের বেলা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাহাড়ঘেরা বিশাল এলাকায় নারী শিক্ষার্থীরা নানা ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারেন—যেমন ইভ টিজিং, যৌন হয়রানি, যৌন সহিংসতা বা ধর্ষণ। এছাড়া অনেকে সামাজিক রীতিনীতির দিকও বিবেচনায় আনেন। ‘ভালো মেয়েরা বা ভালো পরিবারের নারীরা বেশি রাত করে বাইরে থাকে না’—নারীদের চরিত্র মাপার সেই পুরোনো বস্তাপচা দৃষ্টিভঙ্গী এখনও এখানে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভীষণ তাজা। তবে বাবা-মায়েদের দুশ্চিন্তাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বৈকি।
এখন প্রশ্ন হলো, কেন তৈরি হয় এ দুশ্চিন্তা? উন্নত বিশ্বে অনেক আগেই এই প্রশ্ন অবান্তর হয়ে গেছে। এমনকি অনেক অনুন্নত দেশ কিংবা আমাদের মতো দেশে—যেখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোনো বিবেচনাতেই ভালো না; সেখানে নারী-পুরুষ সবারই নিরাপত্তার অভাব আছে। অবশ্য নারীদের একটু বেশি থাকবে, সে কথা বলা বাহুল্য। দুর্বল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বা সামাজিক দুশ্চিন্তা—অবস্থা যা-ই হোক না কেনো, নিরাপত্তা বিবেচনায় একটা শ্রেণিকে ঘরে আটকে রাখা কতটা যৌক্তিক, তা নিয়ে এখন প্রবলভাবে কথা হওয়া দরকার। আর যদি কোনো বিবেচনায় কোনো বিধিনিষেধ জারি করতেও হয় তবে তা সমতা নিশ্চিত করে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব শিক্ষার্থীর জন্য একই নিয়মে করাই সুবিবেচনাপ্রসূত। এভাবে লিঙ্গগত বৈষম্য এই যুগে আসলে অসভ্যতারই পরিচায়ক।
আরেকটা বিষয়ও আলোচনা করা জরুরি, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্বশাসন মানে কী? বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় স্বায়ত্বশাসন দেওয়ার কথা বিবেচনা করা হয়েছিল কেন? ‘রাষ্ট্রের ভেতরে আরেকটা রাষ্ট্র’ তৈরির দরকার পড়েছিল কেন?
এর একটা বড় কারণ সম্ভবত এই যে রাষ্ট্রের ভেতরে একটি আধুনিক আদর্শ রাষ্ট্র নির্মাণের উদাহরণ তৈরি করা। যাঁরা এ পরিকল্পনা করেছিলেন তাঁরা হয়তো ভেবেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানী, বিচক্ষণ ও মেধাবী শিক্ষকেরা এমন আদর্শিক অবস্থা তৈরি করতে পারবেন, যা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়বে পুরো রাষ্ট্রে। এ কারণে এখানে সরকারের আদলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন, স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা, নিজস্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা রক্ষায় প্রক্টিরিয়াল বডি এবং তাদের অধীনে নিরাপত্তা বাহিনী—সবই তৈরি করা হয়েছিল। পরিসর ছোট হওয়ায় পরিচালনা সহজ হবে এবং এখানে প্রায় সমশিক্ষাগত যোগ্যতার জনগোষ্ঠী (শিক্ষার্থীরা) থাকায় সবাই-ই আধুনিক ধারনার মূল বিষয়গুলো বুঝবেন বলেই ধরে নেওয়া হয়েছিল। বলা চলে, এটা হয়তো ছিল ‘আদর্শ রাষ্ট্র’-এর একটা ‘পাইলট প্রজেক্ট’, কীভাবে একটি আধুনিক ও আদর্শ রাষ্ট্র তৈরি করা যায়, কেমন করে একটা সমতাভিত্তিক দক্ষ জনবল ও সুনাগরিক তৈরি করা যায়, তারই পরীক্ষাগার হলো বিশ্ববিদ্যালয়।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, গত প্রায় পাঁচ দশকের বেশি সময় গেলেও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্বশাসনের যোগ্যতার প্রমাণ রাখতে বারবার ব্যর্থ হয়েছে; বরং অযোগ্য এক গোষ্ঠী প্রচলিত রাষ্ট্র ব্যাবস্থাকেই অন্ধ অনুকরণ বা তোষণ করে গেছে। আর নারী শিক্ষার্থীদের প্রশ্নে তাদের যুক্তি তো আরও মন্ধাতার আমলের!
বর্তমানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক নারী শিক্ষার্থী টিউশান কিংবা খণ্ডকালীন কাজ নানান রকম কাজ করে নিজের খরচ যোগান। এ কারণে সন্ধ্যার পরেও তাঁদের অনেককে কাজ করতে হয়। এছাড়া বলার কথা হলো, একজন পূর্ণবয়স্ক নারী তাঁর জীবনের সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়ার অধিকারতো রাখেন। রাতে বাইরে থাকা, কাজে যাওয়া, বা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে সময় কাটানো তাঁর মৌলিক স্বাধীনতার অংশ। এই স্বাধীনতাকে সময় নির্ধারণের নামে নিয়ন্ত্রণ করা মানে নারীর ব্যক্তি স্বাধীনতাকেও খর্ব করা।
এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তার ঝুঁকি যদি থেকেও থাকে, প্রশাসনের উচিত সেই ঝুঁকির জায়গাগুলো চিহ্নিত করা এবং যথাযোগ্য ব্যবস্থা নিয়ে তার সমাধান করা। ‘এত বড় জায়গায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়’ বলে নিজেদের অক্ষমতা, অযোগ্যতা, অদক্ষতাকে প্রকাশ করা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালকদের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যদি তাঁদের এ দক্ষতা-যোগ্যতা-সামর্থ্যের ঘাটতি থাকে, তবে এ দায়িত্বই না নেওয়াই উত্তম। অথবা রাষ্ট্রের কাছে তাঁরা এই বলে আত্মসমার্পণ করতে পারেন যে ‘আমরা নিজেদের দায়িত্ব নিতে অপারগ, স্বায়ত্তশাসনের উপযুক্ত আমরা নই। তাই অন্য সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো রাষ্ট্রের সরাসরি তত্বাবধানেই আমরা চলব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীরা নিজের ক্যাম্পাসেই যদি নিরাপদ না থাকেন, নিজের ক্যাম্পাসের ভেতরেই যদি স্বাধীনতার চর্চা করতে না পারেন, তবে বাইরের বড় দুনিয়ায় কীভাবে পথ চলার সাহস করবেন?
বিশ্ববিদ্যালয়ের হর্তাকর্তারা যদি নিজেদেরকে নারী শিক্ষার্থীদের শুভাকাঙ্ক্ষী বলে মনে করেন, তবে তাঁদের উচিত হবে নারীর নিরাপত্তা ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করে তা দূর করার জন্য কার্যকর সমাধান খোঁজা। পাশাপাশি এ বিষয়ে জনমত তৈরি করা। বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত নিরাপত্তারক্ষীর উপস্থিতি নিশ্চিত করে এমন এক আদর্শ জায়গা তৈরি করা, যার আদলে গড়ে উঠবে পুরো রাষ্ট্র এবং বদলাবে আমাদের সমাজ।
লেখক: শিক্ষক, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতি বাংলাদেশের তৈরি পোশাকখাতকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। তাই এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যসম্পর্ক আরও জোরদার করা।
১ দিন আগেবিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার পর ৩১ জুলাই জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছে, জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ হবে ১০০ আসন বিশিষ্ট। আর এর সদস্য মনোনীত হবেন সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে। অর্থাৎ, দলগুলো জাতীয় নির্বাচনে যে ভোট পাবে, তার ভিত্তিতে তাদের মধ্যে বণ্টন করা হবে আসন।
১ দিন আগে২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে কোটা সংস্কারকে কেন্দ্র করে যে ছাত্র আন্দোলন হলো এবং এতে তৎকালীন সরকারের ছাত্র-সংগঠন ও রাষ্ট্রীয় বাহিনী—এই দুইয়ের নৃশংসতায় সহস্রাধিক যে প্রাণহানির ঘটনা ঘটল, আজও তা ভুলতে পারি না। মূলত এর পরেই তো শুরু হলো ছাত্র-জনতার গণজোয়ার।
২ দিন আগেকেন এত বছর ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি—এর কোনো সদুত্তর কখনোই কোনো সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দিতে পারেনি। বহুদিন ধরে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও প্লাটফর্ম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে এলেও সে দাবি বাস্তবায়ন করেনি প্রশাসনগুলো।
২ দিন আগে