আজ চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদের মৃত্যুদিন। তাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রসূন রহমান। এ লেখায় উঠে এসেছে তারেক মাসুদের জীবন ও চলচ্চিত্রের বহুমাত্রিক মূল্যায়ন।
প্রসূন রহমান
তারেক মাসুদ নামটি খুব নৈর্ব্যক্তিকভাবে উচ্চারণ করা আমার জন্যে সহজ কাজ নয়। আমি তাঁর ছাত্র, অনুসারী, সহযোগী বা উত্তরসূরি হলেও অন্য অনেকের মতোই আমিও তাঁকে তারেক ভাই বলে ডাকতাম। কিন্তু এই ভাই ডাকার অভ্যস্ততা দীর্ঘদিনের অভ্যাসে এত গভীরে প্রোত্থিত যে আনুষ্ঠানিক কারণেও শুধু নামটি উচ্চারণে আমার অস্বস্তি হয়।
আমরা যখন তারেক ভাইকে নিয়ে আলোচনা করি, তাঁর চলচ্চিত্র প্রদর্শন করি, আমরা আসলে তাঁর সৃজনশীলতাকেই উদযাপন করি; তাঁর স্পিরিটকে উদযাপন করি, তাঁর চিন্তা ও দর্শনকে পাঠ করি। তাঁর চলচ্চিত্র সব সময় আমাদের মুক্তির কথা বলে যায়, আত্মোপলদ্ধির কথা বলে যায়, জাতীয় ও আত্মপরিচয় আত্ম-অনুসন্ধানের কথা বলে যায়, তাঁর প্রতিটি কাজ গভীর জীবনবোধ থেকে উৎসারিত দার্শনিক বিশ্লেষণের সুযোগ রেখে যায়।
এই পাঠ ও পুনর্পাঠের প্রক্রিয়া নানাভাবে নানামাধ্যমে চলমান। তাঁকে নিয়ে লেখায়, তাঁর কাজ নিয়ে গবেষণায়, তাঁকে নিয়ে আলোচনার এই প্রক্রিয়ার ভেতরই তিনি এবং তাঁর স্পিরিট আমাদের মধ্যে বেঁচে আছে এবং বেঁচে থাকবে।
চলচ্চিত্রনির্মাতা তারেক মাসুদকে বেঁচে থাকতেই কয়েক দফা পুনরাবিষ্কারের অভিজ্ঞতা হয়েছিল আমার। শুধু নির্মাতা হিসেবে নয়, সৃজনশীল মানুষ হিসেবে, মেধাবী মানুষ হিসেবে, ভাষ্যকার হিসেবে তিনি প্রতিদিনই আমার কাছে নতুন ছিলেন। তাঁর জীবনের শেষ কয়েকটি বছর তাঁর বেশিরভাগ কাজের সঙ্গী হিসেবে থাকার সুযোগ হয়েছিল। সেটি নির্মাণ প্রক্রিয়া, সেটি লেখার প্রক্রিয়া, সেটি অন্যদের কাজ দেখার প্রক্রিয়া, সেটি আলোচনার প্রক্রিয়া, সেটি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার প্রক্রিয়া—প্রায় সব কাজেই আমার অংশগ্রহণের সুযোগ হয়েছিল। সে সময় যা বলতেন, যে বিষয়েই বলতেন প্রতিটি কথাই কোট করবার মতো, ডকুমেন্টেশন করার মতো গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হতো। কিন্তু সব তো আর ধরে রাখা যায়না। ক্ষুদ্র জ্ঞান নিয়ে মহিরুহের পাশে দাঁড়িয়ে কতটুকু নিতে পেরেছি তা আমি নিজেও ভালো করে জানিনা। শুধু মনে হতো, এই কথাগুলো গুরুত্বপূর্ণ, এই কথাগুলো সবার জানা উচিত, সবাইকে জানানো উচিত। জগতের এমন কোনো বিষয় নেই, যে বিষয়ে তাঁর বিশেষ মতামত ছিল না।
‘আদম সুরতে’র নির্মাতাকে নতুন করে আবিষ্কার করেছিলাম ‘মুক্তির গানে’র নির্মাতা হিসেবে। এরপর ‘মুক্তির গানে’র নির্মাতাকে আবিষ্কার করেছি ‘মাটির ময়না’র নির্মাতা হিসেবে। এরপর পাই দুটি কর্মশালায় প্রশিক্ষক হিসেবে। ততদিনে ‘অর্ন্তযাত্রা’ নির্মিত হয়েছে। প্রতিবারই তিনি নতুন। এর মধ্যে আমিও পড়তে গিয়েছিলাম দেশের বাইরে। দেশে ফিরি ২০০৬ এর শেষভাগে। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দীর্ঘমেয়াদি শাসনকাল চলছে।
২০০৭ সালের এমনই একদিন দুপুরবেলায় দেখি, বাংলাদেশ থেকে বিবিসির লাইভ টকশো হচ্ছে। কেন্দ্র বাংলাদেশের বিআইসিসি। শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্র। বিবিসির হার্ড টক-এর উপস্থাপক স্টিফেন সাকুরে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন অতিথি আলোচকদের সঙ্গে। আলোচনার বিষয়—‘বাংলাদেশ ক্যান ডেমোক্রেসি ডেলিভার’। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আলোচনায় উপস্থিত আছেন সাবের হোসেন চৌধুরী। বিএনপির পক্ষ থেকে উপস্থিত আছেন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। আর নিরপেক্ষ বক্তা হিসেবে যাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে তাঁর নাম তারেক মাসুদ।
পাশ্চাত্যে শিক্ষা নেয়া দুজন ঝানু রাজনীতিবিদের মাঝখানে বসেছেন তিনি। যিনি ঐ মুহূর্তে পুরো জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি। তাঁর পরিচয় তিনি একজন চলচ্চিত্র পরিচালক। সেদিন দেখেছিলাম, একজন চলচ্চিত্র নির্মাতার সমাজ ও রাজনৈতিক চেতনার অর্ন্তগত শক্তি, তাঁর শিক্ষা ও মেধার স্ফূরণ, তাঁর ব্যক্তিত্ব ও যুক্তি উপস্থানের ধার। অন্য ভাষার ওপর তাঁর দখল ও যথার্থ শব্দপ্রয়োগের প্রতিক্রিয়া। সেদিন জেনেছিলাম একজন সত্যিকার চলচ্চিত্র নির্মাতার সংজ্ঞা ও পরিচয়। একজন চলচ্চিত্র নির্মাতাকে যে জগতের সকল বিষয়ে জ্ঞান রাখতে হয়, সবার চাইতে স্মার্ট ও মেধাবী হতে হয় সেটাও জেনেছিলাম।
এরপর একসঙ্গে কাজ কারতে গিয়ে আরও অনেকবার তাঁকে নতুন করে আবিষ্কার করেছি। বুঝতে পেরেছি, হি হিমসেল্ফ ইজ লার্জার দ্যান লাইফ। তিনি রবীন্দ্ররচনাবলির মতো, শেক্সপিয়র রচনাসমগ্রের মতো, পড়তে পড়তেও মনে হয় ঠিকমতো বুঝলাম কিনা, পড়তে পড়তেই মনে হয় পড়ে শেষ করা মুশকিল। শুধু এটুকু বুঝেছিলাম তাকে পাঠ করবার এই প্রক্রিয়া চলবে।
কারণ তিনি প্রতিনিয়ত নিজেকে ভাঙতেন, গড়তেন, বদলাতেন, আপগ্রেড করতেন। যে কারণে প্রতিবারই তাঁকে নতুন মনে হতো, আধুনিক মনে হতো, মনে হতো তরুণতর, মনে হতো ফ্রেশ। তরুণরা যেমন তাঁকে পছন্দ করতেন, তেমনি তরুণদেরও তিনি পছন্দ করতেন। ভাবনার আদানপ্রদানে নিজেকেও এগিয়ে নিতেন। নতুন প্রযুক্তি, নতুন ভাবনা, নতুন চিন্তার সঙ্গে পাল্লা দিয়েই তিনি এগিয়ে থাকতেন সব সময়। আবার তরুণদের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার নিজের এই চেষ্টাকে তিনি শিং ভেঙে বাছুর হওয়ার চেষ্টা বলেও স্যাটায়ার করতেন।
ভাবনার বিষয়, চলচ্চিত্রের বিষয় বা শিল্পে তুলে আনবার বিষয় হিসেবে তিনটি বিষয়ের প্রতি তারেক ভাইয়ের বিশেষ দুর্বলতা ছিল। বিষয় তিনটি হলো, মুক্তিযুদ্ধ, নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। শুধু তাঁর মুখ থেকে শোনা নয়, তাঁর কাজের দিকে তাকালেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে সমানভাবেই। ‘মুক্তির গান’ থেকে শুরু করে শেষ দিকের নির্মাণ ‘নরসুন্দর’ কিংবা ‘রানওয়ে’-সহ প্রতিটি নির্মাণেই এই বিষয়গুলোর যেকোনো একটি, কখনো বা একাধিক বিষয়ের উপস্থিতি দেখা যায়।
অবশ্য বিষয়ভাবনা হিসেবে এর প্রতিটি বিষয়ই এতো ব্যাপক ও বিস্তৃত যে একটিমাত্র ছবিতে তাঁর সামান্যই তুলে আনা সম্ভব হয়। প্রতিটি বিষয়ই এই ভূখণ্ডের সামগ্রিক রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজনীতির সকল অনুসর্গ ও উপসর্গের সাথে সম্পৃক্ত। আর একজন সমাজসচেতন চলচ্চিত্রকারের তখন দায়িত্ব হয়ে পড়ে সেগুলোকে যথার্থভাবে শিল্পে তুলে আনা। আর তারেক ভাইয়ের কাছে চলচ্চিত্র শুধু চলমানচিত্র ছিল না, চলচ্চিত্র ছিল তাঁর জীবনচর্চার অংশ। চলচ্চিত্র ছিল তাঁর সমাজভাবনা, তাঁর রাজনৈতিক বক্তব্য এবং দার্শনিক চিন্তা প্রকাশের মাধ্যম।
একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম, চলচ্চিত্রকার না হলে কী হতেন? বলেছিলেন, হয়তো লেখক হতাম। লেখালেখি কম করতেন বলে এক ধরনের যন্ত্রণা ছিল তাঁর মধ্যে। তবু আমরা যা পেয়েছি তার দিকে তাকালেও তারেক মাসুদ নামের মহিরুহটি দেখতে পাই। তিনি বলেছেন অনেক, অনেকের কাছে। তাঁর সেসব কথামালা ছাপার অক্ষরে বিভিন্ন দৈনিকে, সাময়িকীতে প্রকাশও হয়েছে অনেক। এরপর বই আকারেও সংকলিত হয়েছে। অনেকেই হয়তো জানেন, তার সমস্ত কাজ ও লেখা নিয়ে এরই মধ্যে তিনটি প্রকাশনা বেরিয়েছে। যেখানে প্রায় সমগ্র তারেক মাসুদকেই পাওয়া যায়।
‘চলচ্চিত্রযাত্রা’ নামে প্রথম প্রকাশনাটি তাঁর নিজের চলচ্চিত্রবিষয়ক লেখার সংকলন। ‘চলচ্চিত্র লেখা’ শিরোনামের বইটিতে রয়েছে তাঁর সকল চিত্রনাট্য ও গান। আর তাঁর নির্বাচিত কিছু সাক্ষাৎকার ও চলচ্চিত্রবিষয়ক বক্তৃতার সংকলনটির নাম ‘চলচ্চিত্রকথা’। তাঁর কাজের সঙ্গে এই তিনটি বই মিলিয়ে দেখলেই সম্পূর্ণ তারক মাসুদকে খুঁজে পাওয়া যায়।
এছাড়া আমার নিজের একটি প্রকাশনা রয়েছে তারেক মাসুদকে নিয়ে। বইটির নাম ‘তারেক মাসুদ ও তাঁর স্বপ্নসংক্রান্ত’। সেখানে তাঁকে নিয়ে আমার যতো লেখা প্রকাশিত হয়েছে ইতিপূর্বে তার মধ্য থেকে নির্বাচিত কিছু লেখার সংকলন। বইটি প্রকাশিত হয়েছিল তার দশম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে। এছাড়া তাঁকে নিয়ে আমার নির্মিত ‘ফেরা’ চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের সময় ধারণ করা আছে প্রায় সাড়ে ৩ ঘন্টার কথামালা। সেখান থেকে উল্লেখযোগ্য চল্লিশ মিনিট নিয়ে নির্মিত হয়েছে প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘ফেরা’। গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়েই তাঁর বক্তব্য আছে সেখানে। শেষ সময়টায় দেখেছি, শুধু লেখার জন্যে নয়, বলার জন্যেও ছটফট করেছেন তিনি। হয়তো বুঝতে পারছিলেন সময় কমে আসছে ক্রমে। আমাদের দুর্ভাগ্য তাঁর সব কথা আমরা ধরে রাখতে পারিনি।
সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে আব্বাস কিয়ারোস্তামির একটি বিশেষ মিল আছে। দুজনেই চলচ্চিত্র নিয়ে সক্রিয় ছিলেন চল্লিশ বছর কাল এবং নির্মাণ করেছেন সাকল্যে উনচল্লিশটি করে নানা ধরনের নানা দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র। প্রসঙ্গক্রমে বলা যায়, দুজনেই তারেক ভাইয়ের প্রিয় চলচ্চিত্রকার।
চলচ্চিত্র নিয়ে তারেক ভাইয়ের সক্রিয় সময় তিন দশক। এই তিন দশকে সব মিলিয়ে তাঁর মোট নির্মাণ বিশটির মতো। নির্মাণাধীন ও পরিকল্পনায় যা ছিল, সে অনুযায়ী আর এক দশক বেঁচে থাকলে তাঁর নির্মাণও হয়তো তিরিশ পার হতো। এই বিশটি নির্মাণে আমরা কী পেয়েছি, সকলেই সেটা জানি। তবু পুনর্পাঠের প্রস্তুতি হিসেবে আসুন আরেকবার চোখ বোলানো যাক।
আমরা পেয়েছি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র—‘আদম সুরত’, ‘মুক্তির গান’, ‘মুক্তির কথা’, ‘নারীর কথা’, ‘শিশুকণ্ঠ’, ‘নিরাপত্তার নামে’, ‘অন্য শৈশব’, ‘কানসাটের পথে’, ‘আহ আমেরিকা’ এবং ‘কৃষ্ণনগরে একদিন’। এর মধ্যে শেষোক্ত দুটি যৌথ নির্মাণ। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হিসেবে পেয়েছি ‘সে’ ও ‘নরসুন্দর’। এর মধ্যে ‘সে’ যৌথভাবে নির্মিত। পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনিচিত্র পেয়েছি ‘মাটির ময়না’, ‘অর্ন্তযাত্রা’ ও ‘রানওয়ে’। এছাড়া কয়েকটি বক্তব্যধর্মী মিউজিক ভিডিওর পাশাপাশি রয়েছে দুটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র। এর একটির নাম ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’, আরেকটির নাম ‘ইউনিসন’। এর মধ্যে ‘ইউনিসন’ আলাদাভাবে খানিকটা আলোচনার দাবি রাখে।
ভারতের একটি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের অনুরোধে উৎসবের লোগো ফিল্ম হিসেবে এর সৃষ্টি। ১৯৯১ সালে সে ফেস্টিভালে ‘আদম সুরত’ চলচ্চিত্রটি বিশেষ সম্মাননা পায়। সে বছর ভারতে দাঙ্গায় যখন বাবরি মসজিদ ভাঙা হয়েছিল তার পরিপ্রেক্ষিতে ধর্মীয় সম্প্রীতির কথা মাথায় রেখে সেটি তৈরি করা হয়। এর নির্মাণকাল ১৯৯২। তার মানে অ্যনিমেশন প্রো সফ্টওয়ারে এটি প্রথম প্রজন্মের নির্মাণ। যেখানে দেখা যায়, সব ধর্মের যত আইকন আছে সেগুলো একটা থেকে আরেকটায় মডিফায়েড হচ্ছে, পরিবর্তিত হচ্ছে।
শুধু চাঁদতারা, ত্রিশূল, ক্রিসেন্ট আর ক্রস নয়। অসংখ্য আইকন। এগুলো একটা অর্ডার থেকে আরেকটা অর্ডারে বিবর্তিত হতে থাকে। সঙ্গে ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর হিসেবে আছে সব ধরনের ধর্মীয় চ্যান্টস্। এর মধ্যে আযান যেমন আছে, তেমনি আছে কীর্তনের সুর, বুড্ডিস্ট চ্যান্ট যেমন আছে, তেমনি আছে গ্রেগরিয়ান চ্যান্ট, জুডায়িক চ্যান্ট। আইকনগুলোর মতো সাউন্ড ও একটা থেকে ধীরলয়ে আরেকটায় বিবর্তিত হয়ে যায়।
ওই আইকনগুলোর সমন্বয়ে একটা মাদার আইকন তৈরি করেছিলেন ক্যাথরিন। যেটা একটা লোগোর মতো, নিউমোনিকের মতো। সেই লোগো দিয়ে একটা পোস্টার করা হয়েছিল। তা দিয়ে তাঁদের ভিজিটিং কার্ডও তৈরি করেছিলেন। বলা প্রয়োজন, তারেক ভাই ও ক্যাথরিন দুজনে একই ভিজিটিং কার্ড ব্যবহার করতেন। যার একপাশে ছিল তারেক ভাইয়ের নাম, আরেক পাশে ক্যাথরিনের। লোগোসহ সেই কার্ডটি নিশ্চিতভাবেই একটা স্টেটমেন্টও বহন করে, যেখানে তাঁর বিশ্বাস, চিন্তা ও দর্শনের বিশেষ প্রতিফলন থাকে।
তারেক ভাই বলতেন, ‘একজন সমাজসচেতন চলচ্চিত্র নির্মাতার কাজ হচ্ছে দর্শকের মনে অস্বস্তি তৈরি করা, প্রশ্ন তৈরি করা। প্রদর্শনী শেষ হয়ে যাওয়ার পরও দর্শক আরও কিছুক্ষণ বসে থাকবে। হাত তালি দিতে ভুলে যাবে। কী যেন নেই, কী যেন থাকার কথা ছিল, অথবা নিশ্চিত হতে না পারা একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে খানিক বাদে ভ্রু কুঁচকে প্রেক্ষাগৃহ থেকে বেরিয়ে যাবে। সে ভাবনাটা হয়তো পরবর্তী কয়েকদিন তাকে তাড়িয়ে বেড়াবে।’
‘মাটির ময়না’ বোধহয় তেমনই একটি চলচ্চিত্র, শেষ হয়ে যাওয়ার পরও এর রেশ থেকে যায়। বুকের ভেতর খানিকটা শূন্যতা এসে ভর করে। প্রদর্শনী শেষে হাততালি দেওয়ার প্রয়োজন থাকেনা। কিন্তু ভাবনার খোরাক হাতে আসে অনেক। ‘রানওয়ে’ বোধহয় ভাবনার খোরাক জোগায় আরেকটু বেশি। ‘রানওয়ে’ হয়তো এই অন্ধ-বন্ধ সময়ের ভিজ্যুয়াল মেটাফোর।
আমাদের দুর্ভাগ্য, এমন চলচ্চিত্র আমরা প্রতি দশকে একটার বেশি পাইনা। সবাই আমাদের বিনোদন দিতে চায়। কেউ গলা ফাটিয়ে বিনোদন দিতে চায়, কেউ শরীর দেখিয়ে বিনোদন দিতে চায়, কেউ সুড়সুড়ি দিয়ে বিনোদন দিতে চায়, কেউ অস্ত্রের হিংস্রতা আর রক্তারক্তি দেখিয়ে বিনোদন দিতে চায়। বেশির ভাগ আবার এর সব কিছু একসঙ্গে মিশিয়ে ঘোল বানিয়ে বিনোদন দিতে চায়। তবে পরিণত মানুষের বিনোদন যে পরিণত চিন্তার আশ্রয়ে হতে পারে, একথা বোধহয় সবাইকে বোঝানোর প্রয়োজন পড়েনা।
শিল্পের সবগুলো শাখা যেখানে এসে মিলিত হয়, সেটি চলচ্চিত্র। এটিকে শুধু বিনোদনের মাধ্যম মনে করা হলে এর শক্তিমত্তার দিকটিকে অস্বীকার করা হয়। যা আসলে হয়তো বুদ্ধিবৃত্তিক সীমাবদ্ধতা।
একজন নির্মাতার ক্রমশ পরিণত হয়ে ওঠার পথে যে যাত্রা, যে নিরন্তর সংগ্রাম, সে সংগ্রাম তার একান্ত নিজস্ব হলেও তা থেকে যে প্রাপ্তি ঘটে তা অন্য সকলের। তাঁর সমাজের, তাঁর দর্শকের, তাঁর সহযোগীসহ সকলের। কিন্তু পরিণত হয়ে ওঠার পর যখন তাঁর সবচেয়ে ক্ষুরধার কাজটি করার সময় আসে, আর তখনই যদি সে হারিয়ে যায়, সে ক্ষতিটাও আসলে সকলের। তারেক মাসুদ বোধহয় পরিণত হয়ে ওঠার শীর্ষে পৌঁছেছিলেন। এই দেশে একজন সৃজনশীল মানুষ যতটা উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে। তার সৃজনশীল উচ্চতার সর্বোচ্চ প্রকাশ হয়তো ঘটত দেশভাগের গল্প নিয়ে তাঁর শেষ নির্মাণ ‘কাগজের ফুলে’। কিন্তু আমরা বঞ্চিত হলাম।
সত্যজিৎ রায়ের ‘অপু ট্রিলজি’র মতো একটা ট্রিলজি নির্মাণের স্বপ্ন দেখতেন তারেক ভাই। সেই ভাবনা থেকেই ‘কাগজের ফুলে’র বীজবপন। এটা হতো প্রিক্যুয়াল। জানতে চেয়েছিলাম, যখন ‘মাটির ময়না’র সিক্যুয়াল নির্মাণ করবেন তখন কোন গল্পটা বেছে নেবেন? প্রথমবার বলেছিলেন, ‘এতদিন কী বাঁচবো?’ উত্তরের জন্যে নাছোড়বান্দার মতো লেগেছিলাম। জিজ্ঞেস করেছিলাম, যদি বাঁচেন, তাহলে কোন গল্পটা বেছে নেবেন? চোখ-মুখ উজ্জ্বল করে বলেছিলেন, ‘মাটির ময়না’র আনুর বড় হয়ে ওঠার গল্প। তাঁর যৌবনের গল্প।’
সেই যৌবনের গল্প আমরা কিছুটা জেনেছিলাম। মাদ্রাসার ছাত্র মুক্তি পায় মুক্তিযুদ্ধে। তারপর একদিন সে হয়ে ওঠে চলচ্চিত্র নির্মাতা। সিনেমার মতোই গল্প। অথবা গল্পের চেয়ে বেশি কিছু। কিন্তু আমরা বঞ্চিত হলাম সেই ট্রিলজি থেকে। চলচ্চিত্রের ইতিহাসে যোগ হওয়ার মতো আরো দুটি স্বর্ণপালক আগস্টের সেই বৃষ্টির দিনে মহাসড়কের পিচঢালা পথে মহাপ্রাণের সঙ্গে মিলিয়ে গেল।
২০১৬ সালে চলে গেলেন তারেক ভাইয়ের আরেক প্রিয় নির্মাতা আব্বাস কিয়ারোস্তামিও। যাঁকে আমাদেরও অনেকের চেনা হয়েছিল তারেক ভাইয়ের চোখ দিয়ে। চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রক্রিয়া নিয়ে আব্বাস কিয়ারোস্তামির একটি কথা তারেক ভাইয়ের খুব প্রিয় ছিল। কিয়ারোস্তামি বলেছিলেন, ‘সিনেমা ইজ আ সিরিজ অব লাইজ, সেইড টু পুট ইন ফ্রন্ট অফ আস দ্য গ্রেটার ট্রুথ’।
কিয়ারোস্তামির এই কথা তারেক ভাই রিফ্রেজ করে বলতেন, ‘ফিল্ম মেকিং ইজ আ আনপ্লিজেন্ট প্রসেস হুইচ ইন্টেন্ডিং টু ক্রিয়েট আ গ্রেটার বিউটি।’ বলবার জায়গা থেকে দুজনের পার্সপেক্টিভ ভিন্ন হলেও দুটো কথাই প্রয়োজনীয়, দুটো কথাই তাঁদের অভিজ্ঞতাজাত সৃজনশীল অভিজ্ঞান। নিজেদের কাজটুকু করতে গিয়ে তাঁদের এসব কথার আক্ষরিক প্রমাণ আমরা সবসময়েই পেয়ে আসছি।
‘ফেরা’ নির্মাণের সময় যাত্রাপথে তিনি বলছিলেন, ‘মানুষের শেকড় অনেক জায়গায় প্রোথিত হয়। সেই শেকড়ের টানে আমরা সব সময় কোথাও না কোথাও যাচ্ছি, কোথাও না কোথাও ফিরছি।’ কারো কারো জন্যে সেই ফেরা হয়ে ওঠে অনন্ত কালের। কারো কারো ফিরে যাওয়া বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্যে তৈরি করে গভীর শূন্যতা। সেই শূন্যতার পথ ধরে যে আলোকরশ্মি আসে সেই আলোর পথ ধরে আমরাও পথচলি অন্য কোথাও ফিরব বলে।
দুর্বল অবকাঠামোর ভিড়ে আমরা হারিয়ে ফেলেছি তারেক মাসুদকে। সেই হারিয়ে ফেলারও যুগ পেরিয়ে গেছে। কিন্তু তাঁর স্পিরিট আছে সবখানে। তিনি তাঁর কাজে ও জীবনযাপনে যেভাবে বহুমাত্রিকতাকে ধারণ করতেন, যেভাবে সকলকে একসঙ্গে ধারণ করতেন, সেভাবে তাঁকেও আমরা ধারণ করি সকলে।
তিনি বলতেন, ‘সংস্কৃতির অগ্রযাত্রা হচ্ছে রিলে-রেসের মতো। এক প্রজন্ম আরেক প্রজন্মের কাছে হস্তান্তর করে যায়।’ তারেক মাসুদকে নিয়ে স্মরণ, আলোচনা এবং তাঁর চলচ্চিত্রপাঠের এই প্রক্রিয়াও এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে ছড়িয়ে যাবে নিশ্চয়।
(লেখাটি ২০২৩ সালে শিল্পকলা একাডেমীর আয়োজনে দেওয়া স্মারক বক্তৃতার সংক্ষেপিত রূপ।)
লেখক: চলচ্চিত্র নির্মাতা
তারেক মাসুদ নামটি খুব নৈর্ব্যক্তিকভাবে উচ্চারণ করা আমার জন্যে সহজ কাজ নয়। আমি তাঁর ছাত্র, অনুসারী, সহযোগী বা উত্তরসূরি হলেও অন্য অনেকের মতোই আমিও তাঁকে তারেক ভাই বলে ডাকতাম। কিন্তু এই ভাই ডাকার অভ্যস্ততা দীর্ঘদিনের অভ্যাসে এত গভীরে প্রোত্থিত যে আনুষ্ঠানিক কারণেও শুধু নামটি উচ্চারণে আমার অস্বস্তি হয়।
আমরা যখন তারেক ভাইকে নিয়ে আলোচনা করি, তাঁর চলচ্চিত্র প্রদর্শন করি, আমরা আসলে তাঁর সৃজনশীলতাকেই উদযাপন করি; তাঁর স্পিরিটকে উদযাপন করি, তাঁর চিন্তা ও দর্শনকে পাঠ করি। তাঁর চলচ্চিত্র সব সময় আমাদের মুক্তির কথা বলে যায়, আত্মোপলদ্ধির কথা বলে যায়, জাতীয় ও আত্মপরিচয় আত্ম-অনুসন্ধানের কথা বলে যায়, তাঁর প্রতিটি কাজ গভীর জীবনবোধ থেকে উৎসারিত দার্শনিক বিশ্লেষণের সুযোগ রেখে যায়।
এই পাঠ ও পুনর্পাঠের প্রক্রিয়া নানাভাবে নানামাধ্যমে চলমান। তাঁকে নিয়ে লেখায়, তাঁর কাজ নিয়ে গবেষণায়, তাঁকে নিয়ে আলোচনার এই প্রক্রিয়ার ভেতরই তিনি এবং তাঁর স্পিরিট আমাদের মধ্যে বেঁচে আছে এবং বেঁচে থাকবে।
চলচ্চিত্রনির্মাতা তারেক মাসুদকে বেঁচে থাকতেই কয়েক দফা পুনরাবিষ্কারের অভিজ্ঞতা হয়েছিল আমার। শুধু নির্মাতা হিসেবে নয়, সৃজনশীল মানুষ হিসেবে, মেধাবী মানুষ হিসেবে, ভাষ্যকার হিসেবে তিনি প্রতিদিনই আমার কাছে নতুন ছিলেন। তাঁর জীবনের শেষ কয়েকটি বছর তাঁর বেশিরভাগ কাজের সঙ্গী হিসেবে থাকার সুযোগ হয়েছিল। সেটি নির্মাণ প্রক্রিয়া, সেটি লেখার প্রক্রিয়া, সেটি অন্যদের কাজ দেখার প্রক্রিয়া, সেটি আলোচনার প্রক্রিয়া, সেটি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার প্রক্রিয়া—প্রায় সব কাজেই আমার অংশগ্রহণের সুযোগ হয়েছিল। সে সময় যা বলতেন, যে বিষয়েই বলতেন প্রতিটি কথাই কোট করবার মতো, ডকুমেন্টেশন করার মতো গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হতো। কিন্তু সব তো আর ধরে রাখা যায়না। ক্ষুদ্র জ্ঞান নিয়ে মহিরুহের পাশে দাঁড়িয়ে কতটুকু নিতে পেরেছি তা আমি নিজেও ভালো করে জানিনা। শুধু মনে হতো, এই কথাগুলো গুরুত্বপূর্ণ, এই কথাগুলো সবার জানা উচিত, সবাইকে জানানো উচিত। জগতের এমন কোনো বিষয় নেই, যে বিষয়ে তাঁর বিশেষ মতামত ছিল না।
‘আদম সুরতে’র নির্মাতাকে নতুন করে আবিষ্কার করেছিলাম ‘মুক্তির গানে’র নির্মাতা হিসেবে। এরপর ‘মুক্তির গানে’র নির্মাতাকে আবিষ্কার করেছি ‘মাটির ময়না’র নির্মাতা হিসেবে। এরপর পাই দুটি কর্মশালায় প্রশিক্ষক হিসেবে। ততদিনে ‘অর্ন্তযাত্রা’ নির্মিত হয়েছে। প্রতিবারই তিনি নতুন। এর মধ্যে আমিও পড়তে গিয়েছিলাম দেশের বাইরে। দেশে ফিরি ২০০৬ এর শেষভাগে। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দীর্ঘমেয়াদি শাসনকাল চলছে।
২০০৭ সালের এমনই একদিন দুপুরবেলায় দেখি, বাংলাদেশ থেকে বিবিসির লাইভ টকশো হচ্ছে। কেন্দ্র বাংলাদেশের বিআইসিসি। শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্র। বিবিসির হার্ড টক-এর উপস্থাপক স্টিফেন সাকুরে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন অতিথি আলোচকদের সঙ্গে। আলোচনার বিষয়—‘বাংলাদেশ ক্যান ডেমোক্রেসি ডেলিভার’। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আলোচনায় উপস্থিত আছেন সাবের হোসেন চৌধুরী। বিএনপির পক্ষ থেকে উপস্থিত আছেন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। আর নিরপেক্ষ বক্তা হিসেবে যাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে তাঁর নাম তারেক মাসুদ।
পাশ্চাত্যে শিক্ষা নেয়া দুজন ঝানু রাজনীতিবিদের মাঝখানে বসেছেন তিনি। যিনি ঐ মুহূর্তে পুরো জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি। তাঁর পরিচয় তিনি একজন চলচ্চিত্র পরিচালক। সেদিন দেখেছিলাম, একজন চলচ্চিত্র নির্মাতার সমাজ ও রাজনৈতিক চেতনার অর্ন্তগত শক্তি, তাঁর শিক্ষা ও মেধার স্ফূরণ, তাঁর ব্যক্তিত্ব ও যুক্তি উপস্থানের ধার। অন্য ভাষার ওপর তাঁর দখল ও যথার্থ শব্দপ্রয়োগের প্রতিক্রিয়া। সেদিন জেনেছিলাম একজন সত্যিকার চলচ্চিত্র নির্মাতার সংজ্ঞা ও পরিচয়। একজন চলচ্চিত্র নির্মাতাকে যে জগতের সকল বিষয়ে জ্ঞান রাখতে হয়, সবার চাইতে স্মার্ট ও মেধাবী হতে হয় সেটাও জেনেছিলাম।
এরপর একসঙ্গে কাজ কারতে গিয়ে আরও অনেকবার তাঁকে নতুন করে আবিষ্কার করেছি। বুঝতে পেরেছি, হি হিমসেল্ফ ইজ লার্জার দ্যান লাইফ। তিনি রবীন্দ্ররচনাবলির মতো, শেক্সপিয়র রচনাসমগ্রের মতো, পড়তে পড়তেও মনে হয় ঠিকমতো বুঝলাম কিনা, পড়তে পড়তেই মনে হয় পড়ে শেষ করা মুশকিল। শুধু এটুকু বুঝেছিলাম তাকে পাঠ করবার এই প্রক্রিয়া চলবে।
কারণ তিনি প্রতিনিয়ত নিজেকে ভাঙতেন, গড়তেন, বদলাতেন, আপগ্রেড করতেন। যে কারণে প্রতিবারই তাঁকে নতুন মনে হতো, আধুনিক মনে হতো, মনে হতো তরুণতর, মনে হতো ফ্রেশ। তরুণরা যেমন তাঁকে পছন্দ করতেন, তেমনি তরুণদেরও তিনি পছন্দ করতেন। ভাবনার আদানপ্রদানে নিজেকেও এগিয়ে নিতেন। নতুন প্রযুক্তি, নতুন ভাবনা, নতুন চিন্তার সঙ্গে পাল্লা দিয়েই তিনি এগিয়ে থাকতেন সব সময়। আবার তরুণদের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার নিজের এই চেষ্টাকে তিনি শিং ভেঙে বাছুর হওয়ার চেষ্টা বলেও স্যাটায়ার করতেন।
ভাবনার বিষয়, চলচ্চিত্রের বিষয় বা শিল্পে তুলে আনবার বিষয় হিসেবে তিনটি বিষয়ের প্রতি তারেক ভাইয়ের বিশেষ দুর্বলতা ছিল। বিষয় তিনটি হলো, মুক্তিযুদ্ধ, নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। শুধু তাঁর মুখ থেকে শোনা নয়, তাঁর কাজের দিকে তাকালেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে সমানভাবেই। ‘মুক্তির গান’ থেকে শুরু করে শেষ দিকের নির্মাণ ‘নরসুন্দর’ কিংবা ‘রানওয়ে’-সহ প্রতিটি নির্মাণেই এই বিষয়গুলোর যেকোনো একটি, কখনো বা একাধিক বিষয়ের উপস্থিতি দেখা যায়।
অবশ্য বিষয়ভাবনা হিসেবে এর প্রতিটি বিষয়ই এতো ব্যাপক ও বিস্তৃত যে একটিমাত্র ছবিতে তাঁর সামান্যই তুলে আনা সম্ভব হয়। প্রতিটি বিষয়ই এই ভূখণ্ডের সামগ্রিক রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজনীতির সকল অনুসর্গ ও উপসর্গের সাথে সম্পৃক্ত। আর একজন সমাজসচেতন চলচ্চিত্রকারের তখন দায়িত্ব হয়ে পড়ে সেগুলোকে যথার্থভাবে শিল্পে তুলে আনা। আর তারেক ভাইয়ের কাছে চলচ্চিত্র শুধু চলমানচিত্র ছিল না, চলচ্চিত্র ছিল তাঁর জীবনচর্চার অংশ। চলচ্চিত্র ছিল তাঁর সমাজভাবনা, তাঁর রাজনৈতিক বক্তব্য এবং দার্শনিক চিন্তা প্রকাশের মাধ্যম।
একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম, চলচ্চিত্রকার না হলে কী হতেন? বলেছিলেন, হয়তো লেখক হতাম। লেখালেখি কম করতেন বলে এক ধরনের যন্ত্রণা ছিল তাঁর মধ্যে। তবু আমরা যা পেয়েছি তার দিকে তাকালেও তারেক মাসুদ নামের মহিরুহটি দেখতে পাই। তিনি বলেছেন অনেক, অনেকের কাছে। তাঁর সেসব কথামালা ছাপার অক্ষরে বিভিন্ন দৈনিকে, সাময়িকীতে প্রকাশও হয়েছে অনেক। এরপর বই আকারেও সংকলিত হয়েছে। অনেকেই হয়তো জানেন, তার সমস্ত কাজ ও লেখা নিয়ে এরই মধ্যে তিনটি প্রকাশনা বেরিয়েছে। যেখানে প্রায় সমগ্র তারেক মাসুদকেই পাওয়া যায়।
‘চলচ্চিত্রযাত্রা’ নামে প্রথম প্রকাশনাটি তাঁর নিজের চলচ্চিত্রবিষয়ক লেখার সংকলন। ‘চলচ্চিত্র লেখা’ শিরোনামের বইটিতে রয়েছে তাঁর সকল চিত্রনাট্য ও গান। আর তাঁর নির্বাচিত কিছু সাক্ষাৎকার ও চলচ্চিত্রবিষয়ক বক্তৃতার সংকলনটির নাম ‘চলচ্চিত্রকথা’। তাঁর কাজের সঙ্গে এই তিনটি বই মিলিয়ে দেখলেই সম্পূর্ণ তারক মাসুদকে খুঁজে পাওয়া যায়।
এছাড়া আমার নিজের একটি প্রকাশনা রয়েছে তারেক মাসুদকে নিয়ে। বইটির নাম ‘তারেক মাসুদ ও তাঁর স্বপ্নসংক্রান্ত’। সেখানে তাঁকে নিয়ে আমার যতো লেখা প্রকাশিত হয়েছে ইতিপূর্বে তার মধ্য থেকে নির্বাচিত কিছু লেখার সংকলন। বইটি প্রকাশিত হয়েছিল তার দশম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে। এছাড়া তাঁকে নিয়ে আমার নির্মিত ‘ফেরা’ চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের সময় ধারণ করা আছে প্রায় সাড়ে ৩ ঘন্টার কথামালা। সেখান থেকে উল্লেখযোগ্য চল্লিশ মিনিট নিয়ে নির্মিত হয়েছে প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘ফেরা’। গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়েই তাঁর বক্তব্য আছে সেখানে। শেষ সময়টায় দেখেছি, শুধু লেখার জন্যে নয়, বলার জন্যেও ছটফট করেছেন তিনি। হয়তো বুঝতে পারছিলেন সময় কমে আসছে ক্রমে। আমাদের দুর্ভাগ্য তাঁর সব কথা আমরা ধরে রাখতে পারিনি।
সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে আব্বাস কিয়ারোস্তামির একটি বিশেষ মিল আছে। দুজনেই চলচ্চিত্র নিয়ে সক্রিয় ছিলেন চল্লিশ বছর কাল এবং নির্মাণ করেছেন সাকল্যে উনচল্লিশটি করে নানা ধরনের নানা দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র। প্রসঙ্গক্রমে বলা যায়, দুজনেই তারেক ভাইয়ের প্রিয় চলচ্চিত্রকার।
চলচ্চিত্র নিয়ে তারেক ভাইয়ের সক্রিয় সময় তিন দশক। এই তিন দশকে সব মিলিয়ে তাঁর মোট নির্মাণ বিশটির মতো। নির্মাণাধীন ও পরিকল্পনায় যা ছিল, সে অনুযায়ী আর এক দশক বেঁচে থাকলে তাঁর নির্মাণও হয়তো তিরিশ পার হতো। এই বিশটি নির্মাণে আমরা কী পেয়েছি, সকলেই সেটা জানি। তবু পুনর্পাঠের প্রস্তুতি হিসেবে আসুন আরেকবার চোখ বোলানো যাক।
আমরা পেয়েছি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র—‘আদম সুরত’, ‘মুক্তির গান’, ‘মুক্তির কথা’, ‘নারীর কথা’, ‘শিশুকণ্ঠ’, ‘নিরাপত্তার নামে’, ‘অন্য শৈশব’, ‘কানসাটের পথে’, ‘আহ আমেরিকা’ এবং ‘কৃষ্ণনগরে একদিন’। এর মধ্যে শেষোক্ত দুটি যৌথ নির্মাণ। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হিসেবে পেয়েছি ‘সে’ ও ‘নরসুন্দর’। এর মধ্যে ‘সে’ যৌথভাবে নির্মিত। পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনিচিত্র পেয়েছি ‘মাটির ময়না’, ‘অর্ন্তযাত্রা’ ও ‘রানওয়ে’। এছাড়া কয়েকটি বক্তব্যধর্মী মিউজিক ভিডিওর পাশাপাশি রয়েছে দুটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র। এর একটির নাম ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’, আরেকটির নাম ‘ইউনিসন’। এর মধ্যে ‘ইউনিসন’ আলাদাভাবে খানিকটা আলোচনার দাবি রাখে।
ভারতের একটি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের অনুরোধে উৎসবের লোগো ফিল্ম হিসেবে এর সৃষ্টি। ১৯৯১ সালে সে ফেস্টিভালে ‘আদম সুরত’ চলচ্চিত্রটি বিশেষ সম্মাননা পায়। সে বছর ভারতে দাঙ্গায় যখন বাবরি মসজিদ ভাঙা হয়েছিল তার পরিপ্রেক্ষিতে ধর্মীয় সম্প্রীতির কথা মাথায় রেখে সেটি তৈরি করা হয়। এর নির্মাণকাল ১৯৯২। তার মানে অ্যনিমেশন প্রো সফ্টওয়ারে এটি প্রথম প্রজন্মের নির্মাণ। যেখানে দেখা যায়, সব ধর্মের যত আইকন আছে সেগুলো একটা থেকে আরেকটায় মডিফায়েড হচ্ছে, পরিবর্তিত হচ্ছে।
শুধু চাঁদতারা, ত্রিশূল, ক্রিসেন্ট আর ক্রস নয়। অসংখ্য আইকন। এগুলো একটা অর্ডার থেকে আরেকটা অর্ডারে বিবর্তিত হতে থাকে। সঙ্গে ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর হিসেবে আছে সব ধরনের ধর্মীয় চ্যান্টস্। এর মধ্যে আযান যেমন আছে, তেমনি আছে কীর্তনের সুর, বুড্ডিস্ট চ্যান্ট যেমন আছে, তেমনি আছে গ্রেগরিয়ান চ্যান্ট, জুডায়িক চ্যান্ট। আইকনগুলোর মতো সাউন্ড ও একটা থেকে ধীরলয়ে আরেকটায় বিবর্তিত হয়ে যায়।
ওই আইকনগুলোর সমন্বয়ে একটা মাদার আইকন তৈরি করেছিলেন ক্যাথরিন। যেটা একটা লোগোর মতো, নিউমোনিকের মতো। সেই লোগো দিয়ে একটা পোস্টার করা হয়েছিল। তা দিয়ে তাঁদের ভিজিটিং কার্ডও তৈরি করেছিলেন। বলা প্রয়োজন, তারেক ভাই ও ক্যাথরিন দুজনে একই ভিজিটিং কার্ড ব্যবহার করতেন। যার একপাশে ছিল তারেক ভাইয়ের নাম, আরেক পাশে ক্যাথরিনের। লোগোসহ সেই কার্ডটি নিশ্চিতভাবেই একটা স্টেটমেন্টও বহন করে, যেখানে তাঁর বিশ্বাস, চিন্তা ও দর্শনের বিশেষ প্রতিফলন থাকে।
তারেক ভাই বলতেন, ‘একজন সমাজসচেতন চলচ্চিত্র নির্মাতার কাজ হচ্ছে দর্শকের মনে অস্বস্তি তৈরি করা, প্রশ্ন তৈরি করা। প্রদর্শনী শেষ হয়ে যাওয়ার পরও দর্শক আরও কিছুক্ষণ বসে থাকবে। হাত তালি দিতে ভুলে যাবে। কী যেন নেই, কী যেন থাকার কথা ছিল, অথবা নিশ্চিত হতে না পারা একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে খানিক বাদে ভ্রু কুঁচকে প্রেক্ষাগৃহ থেকে বেরিয়ে যাবে। সে ভাবনাটা হয়তো পরবর্তী কয়েকদিন তাকে তাড়িয়ে বেড়াবে।’
‘মাটির ময়না’ বোধহয় তেমনই একটি চলচ্চিত্র, শেষ হয়ে যাওয়ার পরও এর রেশ থেকে যায়। বুকের ভেতর খানিকটা শূন্যতা এসে ভর করে। প্রদর্শনী শেষে হাততালি দেওয়ার প্রয়োজন থাকেনা। কিন্তু ভাবনার খোরাক হাতে আসে অনেক। ‘রানওয়ে’ বোধহয় ভাবনার খোরাক জোগায় আরেকটু বেশি। ‘রানওয়ে’ হয়তো এই অন্ধ-বন্ধ সময়ের ভিজ্যুয়াল মেটাফোর।
আমাদের দুর্ভাগ্য, এমন চলচ্চিত্র আমরা প্রতি দশকে একটার বেশি পাইনা। সবাই আমাদের বিনোদন দিতে চায়। কেউ গলা ফাটিয়ে বিনোদন দিতে চায়, কেউ শরীর দেখিয়ে বিনোদন দিতে চায়, কেউ সুড়সুড়ি দিয়ে বিনোদন দিতে চায়, কেউ অস্ত্রের হিংস্রতা আর রক্তারক্তি দেখিয়ে বিনোদন দিতে চায়। বেশির ভাগ আবার এর সব কিছু একসঙ্গে মিশিয়ে ঘোল বানিয়ে বিনোদন দিতে চায়। তবে পরিণত মানুষের বিনোদন যে পরিণত চিন্তার আশ্রয়ে হতে পারে, একথা বোধহয় সবাইকে বোঝানোর প্রয়োজন পড়েনা।
শিল্পের সবগুলো শাখা যেখানে এসে মিলিত হয়, সেটি চলচ্চিত্র। এটিকে শুধু বিনোদনের মাধ্যম মনে করা হলে এর শক্তিমত্তার দিকটিকে অস্বীকার করা হয়। যা আসলে হয়তো বুদ্ধিবৃত্তিক সীমাবদ্ধতা।
একজন নির্মাতার ক্রমশ পরিণত হয়ে ওঠার পথে যে যাত্রা, যে নিরন্তর সংগ্রাম, সে সংগ্রাম তার একান্ত নিজস্ব হলেও তা থেকে যে প্রাপ্তি ঘটে তা অন্য সকলের। তাঁর সমাজের, তাঁর দর্শকের, তাঁর সহযোগীসহ সকলের। কিন্তু পরিণত হয়ে ওঠার পর যখন তাঁর সবচেয়ে ক্ষুরধার কাজটি করার সময় আসে, আর তখনই যদি সে হারিয়ে যায়, সে ক্ষতিটাও আসলে সকলের। তারেক মাসুদ বোধহয় পরিণত হয়ে ওঠার শীর্ষে পৌঁছেছিলেন। এই দেশে একজন সৃজনশীল মানুষ যতটা উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে। তার সৃজনশীল উচ্চতার সর্বোচ্চ প্রকাশ হয়তো ঘটত দেশভাগের গল্প নিয়ে তাঁর শেষ নির্মাণ ‘কাগজের ফুলে’। কিন্তু আমরা বঞ্চিত হলাম।
সত্যজিৎ রায়ের ‘অপু ট্রিলজি’র মতো একটা ট্রিলজি নির্মাণের স্বপ্ন দেখতেন তারেক ভাই। সেই ভাবনা থেকেই ‘কাগজের ফুলে’র বীজবপন। এটা হতো প্রিক্যুয়াল। জানতে চেয়েছিলাম, যখন ‘মাটির ময়না’র সিক্যুয়াল নির্মাণ করবেন তখন কোন গল্পটা বেছে নেবেন? প্রথমবার বলেছিলেন, ‘এতদিন কী বাঁচবো?’ উত্তরের জন্যে নাছোড়বান্দার মতো লেগেছিলাম। জিজ্ঞেস করেছিলাম, যদি বাঁচেন, তাহলে কোন গল্পটা বেছে নেবেন? চোখ-মুখ উজ্জ্বল করে বলেছিলেন, ‘মাটির ময়না’র আনুর বড় হয়ে ওঠার গল্প। তাঁর যৌবনের গল্প।’
সেই যৌবনের গল্প আমরা কিছুটা জেনেছিলাম। মাদ্রাসার ছাত্র মুক্তি পায় মুক্তিযুদ্ধে। তারপর একদিন সে হয়ে ওঠে চলচ্চিত্র নির্মাতা। সিনেমার মতোই গল্প। অথবা গল্পের চেয়ে বেশি কিছু। কিন্তু আমরা বঞ্চিত হলাম সেই ট্রিলজি থেকে। চলচ্চিত্রের ইতিহাসে যোগ হওয়ার মতো আরো দুটি স্বর্ণপালক আগস্টের সেই বৃষ্টির দিনে মহাসড়কের পিচঢালা পথে মহাপ্রাণের সঙ্গে মিলিয়ে গেল।
২০১৬ সালে চলে গেলেন তারেক ভাইয়ের আরেক প্রিয় নির্মাতা আব্বাস কিয়ারোস্তামিও। যাঁকে আমাদেরও অনেকের চেনা হয়েছিল তারেক ভাইয়ের চোখ দিয়ে। চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রক্রিয়া নিয়ে আব্বাস কিয়ারোস্তামির একটি কথা তারেক ভাইয়ের খুব প্রিয় ছিল। কিয়ারোস্তামি বলেছিলেন, ‘সিনেমা ইজ আ সিরিজ অব লাইজ, সেইড টু পুট ইন ফ্রন্ট অফ আস দ্য গ্রেটার ট্রুথ’।
কিয়ারোস্তামির এই কথা তারেক ভাই রিফ্রেজ করে বলতেন, ‘ফিল্ম মেকিং ইজ আ আনপ্লিজেন্ট প্রসেস হুইচ ইন্টেন্ডিং টু ক্রিয়েট আ গ্রেটার বিউটি।’ বলবার জায়গা থেকে দুজনের পার্সপেক্টিভ ভিন্ন হলেও দুটো কথাই প্রয়োজনীয়, দুটো কথাই তাঁদের অভিজ্ঞতাজাত সৃজনশীল অভিজ্ঞান। নিজেদের কাজটুকু করতে গিয়ে তাঁদের এসব কথার আক্ষরিক প্রমাণ আমরা সবসময়েই পেয়ে আসছি।
‘ফেরা’ নির্মাণের সময় যাত্রাপথে তিনি বলছিলেন, ‘মানুষের শেকড় অনেক জায়গায় প্রোথিত হয়। সেই শেকড়ের টানে আমরা সব সময় কোথাও না কোথাও যাচ্ছি, কোথাও না কোথাও ফিরছি।’ কারো কারো জন্যে সেই ফেরা হয়ে ওঠে অনন্ত কালের। কারো কারো ফিরে যাওয়া বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্যে তৈরি করে গভীর শূন্যতা। সেই শূন্যতার পথ ধরে যে আলোকরশ্মি আসে সেই আলোর পথ ধরে আমরাও পথচলি অন্য কোথাও ফিরব বলে।
দুর্বল অবকাঠামোর ভিড়ে আমরা হারিয়ে ফেলেছি তারেক মাসুদকে। সেই হারিয়ে ফেলারও যুগ পেরিয়ে গেছে। কিন্তু তাঁর স্পিরিট আছে সবখানে। তিনি তাঁর কাজে ও জীবনযাপনে যেভাবে বহুমাত্রিকতাকে ধারণ করতেন, যেভাবে সকলকে একসঙ্গে ধারণ করতেন, সেভাবে তাঁকেও আমরা ধারণ করি সকলে।
তিনি বলতেন, ‘সংস্কৃতির অগ্রযাত্রা হচ্ছে রিলে-রেসের মতো। এক প্রজন্ম আরেক প্রজন্মের কাছে হস্তান্তর করে যায়।’ তারেক মাসুদকে নিয়ে স্মরণ, আলোচনা এবং তাঁর চলচ্চিত্রপাঠের এই প্রক্রিয়াও এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে ছড়িয়ে যাবে নিশ্চয়।
(লেখাটি ২০২৩ সালে শিল্পকলা একাডেমীর আয়োজনে দেওয়া স্মারক বক্তৃতার সংক্ষেপিত রূপ।)
লেখক: চলচ্চিত্র নির্মাতা
নব্বইয়ের ক্লান্তি কিংবা বার্ধক্য-জরায় যতীন স্যার কখনোই নিঃসঙ্গতায় ছিলেন না। বাংলার প্রাকৃতজনের দার্শনিক জ্ঞান ও শান্তির দ্রোণাচার্য যতীন সরকার জীবনের শেষ দিনগুলোতে সাতপাই, রামকৃষ্ণ রোডের 'বানপ্রস্থ' নামের বাড়িতে মানুষের সান্নিধ্যেই থাকতেন।
১ ঘণ্টা আগেমাত্র ২৮ বছরের তরুণ ছিলেন আল-জাজিরার ফিলিস্তিনি প্রতিবেদক আনাস আল শরীফ। স্পষ্টতার সঙ্গে তুলে ধরতেন ইসরায়েলের অব্যাহত হামলার অমানবিক রূপ। তাঁর প্রতিবেদনে প্রাণহীন শুষ্ক তথ্য ছাড়িয়ে উঠে আসত অবরুদ্ধ জীবনের নিখাদ ও অনাবৃত প্রতিচ্ছবি।
২১ ঘণ্টা আগেহুমায়ুন আজাদ আধুনিকতাবাদী সাহিত্য-নন্দনতত্ত্বের লেখক হিসেবেই সর্বাধিক পরিচিত; নিজেও কবিতা লেখার ফিরিস্তি হিসেবে সেই পরিচয়কে বিশেষভাবে জাহির করেছেন। শিল্পের নির্মাণে এবং শিল্পের উপস্থাপন-কৌশলের বেলায়ও এই বিষয় সত্য বলে প্রতীয়মান হবে তাঁর সাহিত্য-পাঠের বেলায়।
১ দিন আগেগত বিশ বছরে হাতি-মানুষের লড়াই চলছে। হাতির আক্রমণে পাহাড়ি ও বাঙালি উভয়ে আক্রান্ত হচ্ছে। গত বিশ বছরে সত্তরের অধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
১ দিন আগে