জনপ্রিয় গোয়েন্দা লেখক রকিব হাসান আজ প্রয়াত হয়েছেন। তাঁর ‘তিন গোয়েন্দা’ এক সময় তুমুল জনপ্রিয় ছিল। রকিব হাসানকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন আরেক জনপ্রিয় লেখক সাদাত হোসাইন।
সাদাত হোসাইন
সম্ভবত ক্লাস এইট বা নাইনে পড়ি তখন। কিন্তু ক্লাসের পড়ায় বিন্দুমাত্র মন নেই। বাংলাদেশ তখন প্রথমবারের মতো ক্রিকেট বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। তার কিছুদিন আগে জিতেছে আইসিসি ট্রফি। সে এক বিস্ময়কর মহোৎসব। ফুটবলের প্রেমে বুঁদ হয়ে থাকা জাতি হঠাৎ করেই নিজেদের আবিষ্কার করলো ক্রিকেটের সম্মোহনে। ইলেক্ট্রিসিটি, টেলিভিশনবিহীন অঁজপাড়াগাঁও-গ্রাম অবধিও ক্রিকেটের নেশায় মাতাল হয়ে গেল। আমি এবং আমার বন্ধুরাও।
তবে অন্যরা যেখানে কেবল ক্রিকেটে বুঁদ হয়ে থাকতো, আমার তখন অন্য এক নেশায়ও প্রবল আসক্তি। আফিমের চেয়েও শক্তিশালী সেই নেশার নাম বই পড়া। সমস্যা হচ্ছে, যে গাঁয়ে বড় হয়েছি, সেখানে পাঠ্য বইয়ের বাইরে বই পড়া রীতিমতো অপরাধ বলেই গণ্য হতো। ওসব বইকে বলা হতো ‘আউট বই’।
এই আউট বই যারা পড়ে, তারা অকাল পক্ব, ইঁচড়ে পাকা কিংবা নষ্ট হয়ে যায়। সুতরাং কিছুতেই আউট বই পড়া যাবে না। কিন্তু আমার কল্পনার জগৎজুড়ে তখন কেবলই গল্পের বসবাস। পড়ার মতো বই জোগাড় করতে পারি না বলে সারাক্ষণ আম্মা, নানী, দাদীকে অস্থির করে রাখি। তারা নানান গল্প শোনান। কিন্তু ছেলেবেলা থেকে সেইসব গল্প এতো শুনেছি যে আর ভালো লাগে না। কিন্তু পড়ার মতো বই কোথায় পাবো? কোথাওতো ওইসব ‘অপাঠ্য-আউট বই’ নেই। থাকবে কী করে? চাহিদা এবং যোগানের সম্পর্ক যে চিরাচরিত। যেখানে কেউ বই পড়ে না, সেখানে বই না থাকাই তো স্বাভাবিক।
আমি তখন অদ্ভুত অদ্ভুত কাজ করি। ক্লাসের বাংলা বইয়ের সব গল্প পড়ে ফেলি। শুধু আমার ক্লাসেরই নয়। আমার চাইতে উঁচু-নিচু সব ক্লাসের বাংলা বই। তাতে নানান গল্প থাকে। কবিতা থাকে। মাঝেমধ্যে আব্বা যখন আম্মার জন্য শাড়ি, আমাদের জন্য লুঙ্গি কিনে আনেন, সেই শাড়ি লুঙ্গির ভেতর পুরনো দিনের পত্রিকা ভাঁজ করা থাকে, আমি সেই পত্রিকার প্রতিটি সংবাদ গোগ্রাসে গিলি। মুখস্থ করি। যত্ন করে গুছিয়ে রাখি। তারপর আবার পড়ি। কারণ, গল্পের জন্য বুভুক্ষু আমার কাছে ওই একেকটা সংবাদও তখন গল্পই।
২.
ক্লাস এইট বা নাইনে পড়া আমি তখন দেখতে আমার বন্ধুদের চেয়ে আকার-আকৃতি-মুখাবয়বে ভীষণ পিচ্চি। আচার-আচরণেও। ক্লাসের মেয়েদের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব তাই অন্যদের চাইতে আলাদা। তারা আমাকে যতটা ক্লাসমেট বা বন্ধু ভাবে, তার চাইতে বেশি ভাবে ছোটো ভাই। সেই ছোটো ভাইকে দিয়ে স্কুলের পাশের বাজার থেকে চকলেট, আইসক্রিম আনানো যায়। ছেলেদের কাছে প্রেমপত্র পাঠানো যায়। কাগজ-কলম ফুরিয়ে গেলে একদৌড়ে নিয়ে আসতে বলা যায়। তা আমি যাইও। এই নিয়ে আমার ছেলে বন্ধুদের মধ্যে খানিক ঈর্ষাও কাজ করে।
তবে সেই ঈর্ষা বেড়ে বহুগুণ হলো যখন ঢাকা থেকে রূপবতী এক কিশোরী এসে আমাদের ক্লাসে ভর্তি হয়ে গেল। সে আমাদের তখনকার চেনা পৃথিবীর মেয়েদের মতো নয়। সে কথা বলে শুদ্ধ উচ্চারণে। তার চাল-চলন, কথা-বার্তা, পোশাক-আশাক আলাদা। পড়াশোনাও। কিন্তু কারো সঙ্গে খুব একটা মেশে না। কেমন একটা দেয়াল তুলে রাখে চারপাশে। আর সারাক্ষণ বই পড়ে। এমনকি ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকেও। তার ওই পড়া আমাকে ভীষণ কৌতুহলী করে তুললো। লোভীও। ইশ, ওগুলো গল্পের বই নয়তো? আমার যে ভারি গল্পের বই পড়ার ইচ্ছে!
একদিন দুরুদুরু বুকে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম। কিন্তু সে গ্রাহ্য করল না। একবার চোখ তুলে তাকিয়ে আবার বইয়ের পাতায় নিমগ্ন হয়ে গেল। কিন্তু আমার গল্প-বুভুক্ষ হৃদয় তখন উথাল-পাতাল। যে করেই হোক, ওই বই আমাকে পড়তেই হবে।
তা পড়লামও আমি। অদ্ভুতভাবে তার সঙ্গে সখ্য হয়ে গেল আমার। তাকে আমি আপনি করে বলি। একদিন ক্লাসের মাঝখানে তার কলম ফুরিয়ে গেল। আমি তাকে কলম এগিয়ে দিলাম। ক্লাস শেষে সে কলম ফিরিয়ে দিতে এসে বললো, ‘তুমি কি গল্পের বই পড়তে পছন্দ কর?’
আমি মাথা নাড়লাম। সে বললো, ‘তুমি কী কী বই পড়েছ?’
আমার যে স্বল্প বইয়ের সংগ্রহ বা পাঠ-অভিজ্ঞতা, তা তাকে বললাম। সে হঠাৎ তার বাহারী ব্যাগের ভেতর থেকে নিউজপ্রিন্ট কাগজের একটা পেপারব্যাক বই বের করে দিলো আমাকে। বললো, ‘এটা পড়ে দেখ, কেমন লাগে। ভালো লাগলে জানিও।’
আমি মাথা নেড়ে বললাম, ‘আচ্ছা।’
৩.
বইটির নাম সম্ভবত ‘জলদস্যুর গুপ্তধন’ কিংবা ‘জলদস্যুর মোহর’। লেখক রকিব হাসান। ওপরে লেখা তিন গোয়েন্দা। পাতা ওল্টাতেই দেখি লেখা, ‘হাল্লো, কিশোর বন্ধুরা—আমি কিশোর পাশা বলছি, আমেরিকার রকি বিচ থেকে...।’
খুব সাধারণ এক লাইন। কিন্তু সেই লাইনের ‘হাল্লো, কিশোর বন্ধুরা‘ ও ‘আমি কিশোর পাশা বলছি’ —এই দুই বাক্যের দুই ‘কিশোর’ শব্দটি আমাকে প্রবলভাবে দ্বিধান্বিত করে ফেলল। শব্দ দুটির আলাদা অর্থ বুঝতেই গলদঘর্ম হয়ে গেলাম। কারণ, প্রথম ‘কিশোর’ বলতে বোঝানো হয়েছে বয়সে ‘কিশোর’ আর পরের ‘কিশোর’ বলতে বোঝানো হয়েছে একজনের নাম। কিন্তু ‘কিশোর’ যে কারও নাম হতে পারে, তা আমার সেই বাস্তবতায় ধারণায়ও ছিল না। আমাদের পরিচিত কারও অমন নামও ছিল না। ফলে আমি ভেবেছিলাম, পাশা নামের কোনো ছেলে বোধহয় তার পরিচয় দিচ্ছে কিশোর হিসেবে। অর্থাৎ সে বয়সে কিশোর। একারণেই বলছে আমি ‘কিশোর’ পাশা।
তারপরও পড়তে শুরু করলাম। কিন্তু আমার সেই গাঁওগ্রামের পূর্বপাঠ অভিজ্ঞতা ও জানাশোনার সীমানায় আমি বারবার আটকে যাচ্ছিলাম। অনেক শব্দই বুঝতে পারছিলাম না। ব্যাকইয়ার্ড, শোফার, ক্যানু, ইয়ট। এমন নানান কিছু। আমি খুঁতখুতে স্বভাবের মানুষ। কৌতুহলীও। ফলে কোনো শব্দের যথাযথ অর্থ না জেনে সামনে এগিয়ে যাওয়াটা আমার স্বভাব বিরুদ্ধ। কিন্তু ওই বই যেন আমাকে ঘোরগ্রস্থ করে ফেলল। আমি পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা গোগ্রাসে গিলতে লাগলাম। যখন বই শেষ করে উঠলাম, তখন আমার স্কুলের সময় ফুরিয়ে গেছে। পুকুরের পেছনে যে খড়ের গাঁদায় হেলান দিয়ে পড়ছিলাম, প্রবল সূর্যতাপে তা অগ্নিকুণ্ড প্রায়।
কিন্তু আমার ঘোর তাতে কাটল না। স্কুল মিস দেওয়ার কারণে আম্মার ভয়ানক শাস্তির আশঙ্কা মাথায় নিয়েও আমি রাস্তায় গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। কখন স্কুল ছুটি হবে? কখন সবাই এখান দিয়ে বাড়ির পথ ধরবে? আর আমি মেয়েটির কাছে আরও একখানা বই পাব? তা পেলামও। এর পরের বইটির নাম সম্ভবত ‘কাকাতুয়া রহস্য’। এরপর সবুজ ভূত, ভীষণ অরণ্য ১ ও ২। এরপর আরও কী কী।
আমি হঠাৎই আবিষ্কার করলাম, আমার রাতদিন সব একাকার হয়ে যাচ্ছে। আমার খাওয়া, ঘুম, স্বপ্ন, জাগারণ—সব দখল করে ফেলেছে ওই তিন গোয়েন্দা। আমার জগৎ আচ্ছন্ন হয়ে আছে এক বিস্ময়াভিভূত রোমাঞ্চের ঘোরে। সেই ঘোর আর কাটল না। এক সকালে ঘুম থেকে উঠে জানলাম, তিন গোয়েন্দার আর কোনো বই মেয়েটির কাছে নেই। সে যতগুলো এনেছিল, সব ফুরিয়ে গেছে। আমার অকস্মাৎ মনে হলো, আমি বুঝি শ্বাস নিতে পারছি না। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। ওই তিন গোয়েন্দাদের ছাড়া আমি থাকব কী করে! জগতে এমন সম্মোহনও কিছুতে হয়? হয় না।
৪.
সেই সম্মোহন কাটাতেই কি না কে জানে, কিংবা হতে পারে সম্মোহিত হয়েই আমি অদ্ভুত এক কাজ করে ফেললাম। তখন বাজারে জাহিদ খাতা নামে এক ধরনের বাঁধাই করা খাতা পাওয়া যেত। বাংলা-ইংরেজি খাতায় রুলটানা থাকত। কিন্তু অংক খাতা থাকত একদম ফ্রেশ। সাদা পাতা। আমি ছ’টাকা দিয়ে তেমন একটা খাতা কিনে ফেললাম। তারপর সেই খাতায় লিখতে শুরু করলাম আমার প্রথম গোয়েন্দা গল্প।
গল্পের নাম মনে নেই। তবে এইটুকু মনে আছে, তিন গোয়েন্দার মতো করে আমিও সেই বইয়ের নাম দিয়েছিলাম ‘দুই গোয়েন্দা’। প্রধান চরিত্রের নাম দিয়েছিলাম সম্ভবত হীরা। কেন এই নাম দিয়েছিলাম তা আর এখন মনে নেই। তবে তিন গোয়েন্দার ভিজিটিং কার্ডে যে তাদের একটা বিস্ময় (!) চিহ্নের মনোগ্রাম থাকত, আমিও অনেক ভেবেচিন্তে সেই খাতায় একটা মনোগ্রামও এঁকে ফেললাম। ফণাতোলা সাপ। জাহিদ খাতার ওপরে আঠা দিয়ে একটা সাদা কাগজ লাগিয়ে সেই কাগজে ওই মনোগ্রাম যুক্ত করে প্রচ্ছদও এঁকে ফেললাম। তারপর লিখে ফেললাম আমার প্রথম গল্প, বা প্রথম বই।
বহু বছর এই বিষয়টা আমি যেন বিস্মৃতই হয়েছিলাম। ফলে কেউ যখন প্রশ্ন করত, কার লেখা দেখে প্রথম লিখতে অনুপ্রাণিত হই, তখন দ্বিধাগ্রস্থ অনুভব করতাম। মনে করার চেষ্টা করতাম। কারও কারও নামও হয়তো চটজলদি বলে দিতাম। কিন্তু ২০১৯ সালের এক সন্ধ্যায় অদ্ভুত এক ঘটনায় সেই বিস্মৃত স্মৃতি যেন অকস্মাৎ রঙিন আলোর মতো আলোড়িত করল আমায়। আমার হঠাৎই মনে হলো, সত্যি সত্যিই আমি এক বিস্ময়কর বাতিঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছি! সত্যি সত্যিই! আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল। চারপাশ অদ্ভুত এক আলোয় উদ্ভাসিত মনে হচ্ছিল। আর সিনেমার দৃশ্যের মতো চোখের সামনে ভেসে উঠছিল বহুবছর আগে মাদারীপুর জেলার কালকিনি থানার কয়ারিয়া গ্রামে এক ছোট্ট ঘরে হারিকেনের কম্পমান আলোয় টিনটিনে এক কিশোরের ছবি। যে পৃথিবীর সকল রোমাঞ্চ, রহস্য, উত্তেজনা, আগ্রহ আর ভালোবাসা একসঙ্গে জড় করে লেখার চেষ্টা করছে একটি বই। যে বইয়ের প্রতিটি অক্ষর, শব্দ, বাক্য, কল্পনা তৈরি হয়েছিল অদেখা-অজানা এক মানুষের সম্মোহন ছড়ানো কল্পনার কালির আঁখরে। কলমের কথায়। শব্দে। আমি সেই মানুষটির সামনে দাঁড়িয়ে! সত্যি সত্যিই দাঁড়িয়ে আমি সেই মানুষটির সামনে। আমার শৈশব কৈশোরের স্বপ্নের জাদুকর, হ্যামিলিয়নের বাঁশিওয়ালা রকিব হাসানের সামনে!
৫.
আমার তখন নির্বাসন উপন্যাস বের হয়েছে। পাঠক চিনতে শুরু করেছে। লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে বই কিনছে। আমার প্রকাশনী অন্যধারার পাশেই সম্ভবত গ্রন্থকুটির নামের একটি প্রকশনা। কে যেন হঠাৎ বলল, সেখানে রকিব হাসান এসেছেন। আমি বললাম, ‘কোন রকিব হাসান?’
‘তিন গোয়েন্দার রকিব হাসান।’
আমার সামনে লাইনে দাঁড়ানো অসংখ্য পাঠক, তারা দীর্ঘসময় ধরে অটোগ্রাফের জন্য অপেক্ষা করছেন। ছবি তুলতে চাইছেন। কথা বলতে চাইছেন। কিন্তু তারা হঠাৎ আবিষ্কার করলেন, তাদের প্রার্থিত প্রিয় লেখক তাদের অপেক্ষায় রেখে কিছু না বলেই দিশেহারা কিশোরের মতো কিংবা ছটফটানি পাখির মতো হঠাৎ কোথায় উড়ে চলে গেলেন?
আক্ষরিক অর্থেই উড়ে চলে গিয়েছিলাম আমি। তারপর সত্যি সত্যিই আবিষ্কার করেছিলাম আমার সামনে শুভ্র শ্মশ্রুমন্ডিত সৌম্য চেহারার একজন মানুষ। তাকে ঘিরে ভিড়। আমি তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। তারপর দীর্ঘসময় পর ভিড় খানিক কমতেই বললাম, ‘স্যার, আমি কি একটু আপনাকে ছুঁয়ে দেখতে পারি? পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে পারি?’
তিনি খানিক আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর বললেন, ‘তোমাকে চিনি আমি। অনেক নাম শুনেছি। এবার আমাদের কাছাকাছি স্টল পড়ার কারণে প্রায়ই দেখি তোমাকে। খুব ভালো করছ তুমি। ছেলেমেয়েরা আবার বই পড়ছে। এ ভীষণ আনন্দের।’
আমার যে তখন কেমন লাগছিল! মনে হচ্ছিল, মানুষের স্বপ্নও বোধহয় এমন সুন্দর হয় না। আমি নিচু হয়ে তার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে যাচ্ছিলাম, তিনি চকিতে সরে গিয়ে আমায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন। জড়িয়ে রাখলেন দীর্ঘসময়। তার মুখে হাসি। বুকে স্নেহের স্পর্শ। ওই স্পর্শ এই জীবনে কখনো ভুলব না আমি। কখনোই না।
ভুলবে না কেউই। সম্ভব নয়। রকিব হাসান যে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন অসংখ্য কিশোর হৃদয়ে, যে অমোচনীয় স্বপ্ন ও স্মৃতি, কৌতুহল ও কল্পনার স্বাক্ষর এঁকে দিয়েছেন অজস্র মানব মনে, তা ভোলার সাধ্য কারও নেই।
না মনের, না মানুষের। না সময়ের, না স্মৃতির।
সম্ভবত ক্লাস এইট বা নাইনে পড়ি তখন। কিন্তু ক্লাসের পড়ায় বিন্দুমাত্র মন নেই। বাংলাদেশ তখন প্রথমবারের মতো ক্রিকেট বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। তার কিছুদিন আগে জিতেছে আইসিসি ট্রফি। সে এক বিস্ময়কর মহোৎসব। ফুটবলের প্রেমে বুঁদ হয়ে থাকা জাতি হঠাৎ করেই নিজেদের আবিষ্কার করলো ক্রিকেটের সম্মোহনে। ইলেক্ট্রিসিটি, টেলিভিশনবিহীন অঁজপাড়াগাঁও-গ্রাম অবধিও ক্রিকেটের নেশায় মাতাল হয়ে গেল। আমি এবং আমার বন্ধুরাও।
তবে অন্যরা যেখানে কেবল ক্রিকেটে বুঁদ হয়ে থাকতো, আমার তখন অন্য এক নেশায়ও প্রবল আসক্তি। আফিমের চেয়েও শক্তিশালী সেই নেশার নাম বই পড়া। সমস্যা হচ্ছে, যে গাঁয়ে বড় হয়েছি, সেখানে পাঠ্য বইয়ের বাইরে বই পড়া রীতিমতো অপরাধ বলেই গণ্য হতো। ওসব বইকে বলা হতো ‘আউট বই’।
এই আউট বই যারা পড়ে, তারা অকাল পক্ব, ইঁচড়ে পাকা কিংবা নষ্ট হয়ে যায়। সুতরাং কিছুতেই আউট বই পড়া যাবে না। কিন্তু আমার কল্পনার জগৎজুড়ে তখন কেবলই গল্পের বসবাস। পড়ার মতো বই জোগাড় করতে পারি না বলে সারাক্ষণ আম্মা, নানী, দাদীকে অস্থির করে রাখি। তারা নানান গল্প শোনান। কিন্তু ছেলেবেলা থেকে সেইসব গল্প এতো শুনেছি যে আর ভালো লাগে না। কিন্তু পড়ার মতো বই কোথায় পাবো? কোথাওতো ওইসব ‘অপাঠ্য-আউট বই’ নেই। থাকবে কী করে? চাহিদা এবং যোগানের সম্পর্ক যে চিরাচরিত। যেখানে কেউ বই পড়ে না, সেখানে বই না থাকাই তো স্বাভাবিক।
আমি তখন অদ্ভুত অদ্ভুত কাজ করি। ক্লাসের বাংলা বইয়ের সব গল্প পড়ে ফেলি। শুধু আমার ক্লাসেরই নয়। আমার চাইতে উঁচু-নিচু সব ক্লাসের বাংলা বই। তাতে নানান গল্প থাকে। কবিতা থাকে। মাঝেমধ্যে আব্বা যখন আম্মার জন্য শাড়ি, আমাদের জন্য লুঙ্গি কিনে আনেন, সেই শাড়ি লুঙ্গির ভেতর পুরনো দিনের পত্রিকা ভাঁজ করা থাকে, আমি সেই পত্রিকার প্রতিটি সংবাদ গোগ্রাসে গিলি। মুখস্থ করি। যত্ন করে গুছিয়ে রাখি। তারপর আবার পড়ি। কারণ, গল্পের জন্য বুভুক্ষু আমার কাছে ওই একেকটা সংবাদও তখন গল্পই।
২.
ক্লাস এইট বা নাইনে পড়া আমি তখন দেখতে আমার বন্ধুদের চেয়ে আকার-আকৃতি-মুখাবয়বে ভীষণ পিচ্চি। আচার-আচরণেও। ক্লাসের মেয়েদের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব তাই অন্যদের চাইতে আলাদা। তারা আমাকে যতটা ক্লাসমেট বা বন্ধু ভাবে, তার চাইতে বেশি ভাবে ছোটো ভাই। সেই ছোটো ভাইকে দিয়ে স্কুলের পাশের বাজার থেকে চকলেট, আইসক্রিম আনানো যায়। ছেলেদের কাছে প্রেমপত্র পাঠানো যায়। কাগজ-কলম ফুরিয়ে গেলে একদৌড়ে নিয়ে আসতে বলা যায়। তা আমি যাইও। এই নিয়ে আমার ছেলে বন্ধুদের মধ্যে খানিক ঈর্ষাও কাজ করে।
তবে সেই ঈর্ষা বেড়ে বহুগুণ হলো যখন ঢাকা থেকে রূপবতী এক কিশোরী এসে আমাদের ক্লাসে ভর্তি হয়ে গেল। সে আমাদের তখনকার চেনা পৃথিবীর মেয়েদের মতো নয়। সে কথা বলে শুদ্ধ উচ্চারণে। তার চাল-চলন, কথা-বার্তা, পোশাক-আশাক আলাদা। পড়াশোনাও। কিন্তু কারো সঙ্গে খুব একটা মেশে না। কেমন একটা দেয়াল তুলে রাখে চারপাশে। আর সারাক্ষণ বই পড়ে। এমনকি ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকেও। তার ওই পড়া আমাকে ভীষণ কৌতুহলী করে তুললো। লোভীও। ইশ, ওগুলো গল্পের বই নয়তো? আমার যে ভারি গল্পের বই পড়ার ইচ্ছে!
একদিন দুরুদুরু বুকে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম। কিন্তু সে গ্রাহ্য করল না। একবার চোখ তুলে তাকিয়ে আবার বইয়ের পাতায় নিমগ্ন হয়ে গেল। কিন্তু আমার গল্প-বুভুক্ষ হৃদয় তখন উথাল-পাতাল। যে করেই হোক, ওই বই আমাকে পড়তেই হবে।
তা পড়লামও আমি। অদ্ভুতভাবে তার সঙ্গে সখ্য হয়ে গেল আমার। তাকে আমি আপনি করে বলি। একদিন ক্লাসের মাঝখানে তার কলম ফুরিয়ে গেল। আমি তাকে কলম এগিয়ে দিলাম। ক্লাস শেষে সে কলম ফিরিয়ে দিতে এসে বললো, ‘তুমি কি গল্পের বই পড়তে পছন্দ কর?’
আমি মাথা নাড়লাম। সে বললো, ‘তুমি কী কী বই পড়েছ?’
আমার যে স্বল্প বইয়ের সংগ্রহ বা পাঠ-অভিজ্ঞতা, তা তাকে বললাম। সে হঠাৎ তার বাহারী ব্যাগের ভেতর থেকে নিউজপ্রিন্ট কাগজের একটা পেপারব্যাক বই বের করে দিলো আমাকে। বললো, ‘এটা পড়ে দেখ, কেমন লাগে। ভালো লাগলে জানিও।’
আমি মাথা নেড়ে বললাম, ‘আচ্ছা।’
৩.
বইটির নাম সম্ভবত ‘জলদস্যুর গুপ্তধন’ কিংবা ‘জলদস্যুর মোহর’। লেখক রকিব হাসান। ওপরে লেখা তিন গোয়েন্দা। পাতা ওল্টাতেই দেখি লেখা, ‘হাল্লো, কিশোর বন্ধুরা—আমি কিশোর পাশা বলছি, আমেরিকার রকি বিচ থেকে...।’
খুব সাধারণ এক লাইন। কিন্তু সেই লাইনের ‘হাল্লো, কিশোর বন্ধুরা‘ ও ‘আমি কিশোর পাশা বলছি’ —এই দুই বাক্যের দুই ‘কিশোর’ শব্দটি আমাকে প্রবলভাবে দ্বিধান্বিত করে ফেলল। শব্দ দুটির আলাদা অর্থ বুঝতেই গলদঘর্ম হয়ে গেলাম। কারণ, প্রথম ‘কিশোর’ বলতে বোঝানো হয়েছে বয়সে ‘কিশোর’ আর পরের ‘কিশোর’ বলতে বোঝানো হয়েছে একজনের নাম। কিন্তু ‘কিশোর’ যে কারও নাম হতে পারে, তা আমার সেই বাস্তবতায় ধারণায়ও ছিল না। আমাদের পরিচিত কারও অমন নামও ছিল না। ফলে আমি ভেবেছিলাম, পাশা নামের কোনো ছেলে বোধহয় তার পরিচয় দিচ্ছে কিশোর হিসেবে। অর্থাৎ সে বয়সে কিশোর। একারণেই বলছে আমি ‘কিশোর’ পাশা।
তারপরও পড়তে শুরু করলাম। কিন্তু আমার সেই গাঁওগ্রামের পূর্বপাঠ অভিজ্ঞতা ও জানাশোনার সীমানায় আমি বারবার আটকে যাচ্ছিলাম। অনেক শব্দই বুঝতে পারছিলাম না। ব্যাকইয়ার্ড, শোফার, ক্যানু, ইয়ট। এমন নানান কিছু। আমি খুঁতখুতে স্বভাবের মানুষ। কৌতুহলীও। ফলে কোনো শব্দের যথাযথ অর্থ না জেনে সামনে এগিয়ে যাওয়াটা আমার স্বভাব বিরুদ্ধ। কিন্তু ওই বই যেন আমাকে ঘোরগ্রস্থ করে ফেলল। আমি পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা গোগ্রাসে গিলতে লাগলাম। যখন বই শেষ করে উঠলাম, তখন আমার স্কুলের সময় ফুরিয়ে গেছে। পুকুরের পেছনে যে খড়ের গাঁদায় হেলান দিয়ে পড়ছিলাম, প্রবল সূর্যতাপে তা অগ্নিকুণ্ড প্রায়।
কিন্তু আমার ঘোর তাতে কাটল না। স্কুল মিস দেওয়ার কারণে আম্মার ভয়ানক শাস্তির আশঙ্কা মাথায় নিয়েও আমি রাস্তায় গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। কখন স্কুল ছুটি হবে? কখন সবাই এখান দিয়ে বাড়ির পথ ধরবে? আর আমি মেয়েটির কাছে আরও একখানা বই পাব? তা পেলামও। এর পরের বইটির নাম সম্ভবত ‘কাকাতুয়া রহস্য’। এরপর সবুজ ভূত, ভীষণ অরণ্য ১ ও ২। এরপর আরও কী কী।
আমি হঠাৎই আবিষ্কার করলাম, আমার রাতদিন সব একাকার হয়ে যাচ্ছে। আমার খাওয়া, ঘুম, স্বপ্ন, জাগারণ—সব দখল করে ফেলেছে ওই তিন গোয়েন্দা। আমার জগৎ আচ্ছন্ন হয়ে আছে এক বিস্ময়াভিভূত রোমাঞ্চের ঘোরে। সেই ঘোর আর কাটল না। এক সকালে ঘুম থেকে উঠে জানলাম, তিন গোয়েন্দার আর কোনো বই মেয়েটির কাছে নেই। সে যতগুলো এনেছিল, সব ফুরিয়ে গেছে। আমার অকস্মাৎ মনে হলো, আমি বুঝি শ্বাস নিতে পারছি না। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। ওই তিন গোয়েন্দাদের ছাড়া আমি থাকব কী করে! জগতে এমন সম্মোহনও কিছুতে হয়? হয় না।
৪.
সেই সম্মোহন কাটাতেই কি না কে জানে, কিংবা হতে পারে সম্মোহিত হয়েই আমি অদ্ভুত এক কাজ করে ফেললাম। তখন বাজারে জাহিদ খাতা নামে এক ধরনের বাঁধাই করা খাতা পাওয়া যেত। বাংলা-ইংরেজি খাতায় রুলটানা থাকত। কিন্তু অংক খাতা থাকত একদম ফ্রেশ। সাদা পাতা। আমি ছ’টাকা দিয়ে তেমন একটা খাতা কিনে ফেললাম। তারপর সেই খাতায় লিখতে শুরু করলাম আমার প্রথম গোয়েন্দা গল্প।
গল্পের নাম মনে নেই। তবে এইটুকু মনে আছে, তিন গোয়েন্দার মতো করে আমিও সেই বইয়ের নাম দিয়েছিলাম ‘দুই গোয়েন্দা’। প্রধান চরিত্রের নাম দিয়েছিলাম সম্ভবত হীরা। কেন এই নাম দিয়েছিলাম তা আর এখন মনে নেই। তবে তিন গোয়েন্দার ভিজিটিং কার্ডে যে তাদের একটা বিস্ময় (!) চিহ্নের মনোগ্রাম থাকত, আমিও অনেক ভেবেচিন্তে সেই খাতায় একটা মনোগ্রামও এঁকে ফেললাম। ফণাতোলা সাপ। জাহিদ খাতার ওপরে আঠা দিয়ে একটা সাদা কাগজ লাগিয়ে সেই কাগজে ওই মনোগ্রাম যুক্ত করে প্রচ্ছদও এঁকে ফেললাম। তারপর লিখে ফেললাম আমার প্রথম গল্প, বা প্রথম বই।
বহু বছর এই বিষয়টা আমি যেন বিস্মৃতই হয়েছিলাম। ফলে কেউ যখন প্রশ্ন করত, কার লেখা দেখে প্রথম লিখতে অনুপ্রাণিত হই, তখন দ্বিধাগ্রস্থ অনুভব করতাম। মনে করার চেষ্টা করতাম। কারও কারও নামও হয়তো চটজলদি বলে দিতাম। কিন্তু ২০১৯ সালের এক সন্ধ্যায় অদ্ভুত এক ঘটনায় সেই বিস্মৃত স্মৃতি যেন অকস্মাৎ রঙিন আলোর মতো আলোড়িত করল আমায়। আমার হঠাৎই মনে হলো, সত্যি সত্যিই আমি এক বিস্ময়কর বাতিঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছি! সত্যি সত্যিই! আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল। চারপাশ অদ্ভুত এক আলোয় উদ্ভাসিত মনে হচ্ছিল। আর সিনেমার দৃশ্যের মতো চোখের সামনে ভেসে উঠছিল বহুবছর আগে মাদারীপুর জেলার কালকিনি থানার কয়ারিয়া গ্রামে এক ছোট্ট ঘরে হারিকেনের কম্পমান আলোয় টিনটিনে এক কিশোরের ছবি। যে পৃথিবীর সকল রোমাঞ্চ, রহস্য, উত্তেজনা, আগ্রহ আর ভালোবাসা একসঙ্গে জড় করে লেখার চেষ্টা করছে একটি বই। যে বইয়ের প্রতিটি অক্ষর, শব্দ, বাক্য, কল্পনা তৈরি হয়েছিল অদেখা-অজানা এক মানুষের সম্মোহন ছড়ানো কল্পনার কালির আঁখরে। কলমের কথায়। শব্দে। আমি সেই মানুষটির সামনে দাঁড়িয়ে! সত্যি সত্যিই দাঁড়িয়ে আমি সেই মানুষটির সামনে। আমার শৈশব কৈশোরের স্বপ্নের জাদুকর, হ্যামিলিয়নের বাঁশিওয়ালা রকিব হাসানের সামনে!
৫.
আমার তখন নির্বাসন উপন্যাস বের হয়েছে। পাঠক চিনতে শুরু করেছে। লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে বই কিনছে। আমার প্রকাশনী অন্যধারার পাশেই সম্ভবত গ্রন্থকুটির নামের একটি প্রকশনা। কে যেন হঠাৎ বলল, সেখানে রকিব হাসান এসেছেন। আমি বললাম, ‘কোন রকিব হাসান?’
‘তিন গোয়েন্দার রকিব হাসান।’
আমার সামনে লাইনে দাঁড়ানো অসংখ্য পাঠক, তারা দীর্ঘসময় ধরে অটোগ্রাফের জন্য অপেক্ষা করছেন। ছবি তুলতে চাইছেন। কথা বলতে চাইছেন। কিন্তু তারা হঠাৎ আবিষ্কার করলেন, তাদের প্রার্থিত প্রিয় লেখক তাদের অপেক্ষায় রেখে কিছু না বলেই দিশেহারা কিশোরের মতো কিংবা ছটফটানি পাখির মতো হঠাৎ কোথায় উড়ে চলে গেলেন?
আক্ষরিক অর্থেই উড়ে চলে গিয়েছিলাম আমি। তারপর সত্যি সত্যিই আবিষ্কার করেছিলাম আমার সামনে শুভ্র শ্মশ্রুমন্ডিত সৌম্য চেহারার একজন মানুষ। তাকে ঘিরে ভিড়। আমি তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। তারপর দীর্ঘসময় পর ভিড় খানিক কমতেই বললাম, ‘স্যার, আমি কি একটু আপনাকে ছুঁয়ে দেখতে পারি? পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে পারি?’
তিনি খানিক আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর বললেন, ‘তোমাকে চিনি আমি। অনেক নাম শুনেছি। এবার আমাদের কাছাকাছি স্টল পড়ার কারণে প্রায়ই দেখি তোমাকে। খুব ভালো করছ তুমি। ছেলেমেয়েরা আবার বই পড়ছে। এ ভীষণ আনন্দের।’
আমার যে তখন কেমন লাগছিল! মনে হচ্ছিল, মানুষের স্বপ্নও বোধহয় এমন সুন্দর হয় না। আমি নিচু হয়ে তার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে যাচ্ছিলাম, তিনি চকিতে সরে গিয়ে আমায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন। জড়িয়ে রাখলেন দীর্ঘসময়। তার মুখে হাসি। বুকে স্নেহের স্পর্শ। ওই স্পর্শ এই জীবনে কখনো ভুলব না আমি। কখনোই না।
ভুলবে না কেউই। সম্ভব নয়। রকিব হাসান যে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন অসংখ্য কিশোর হৃদয়ে, যে অমোচনীয় স্বপ্ন ও স্মৃতি, কৌতুহল ও কল্পনার স্বাক্ষর এঁকে দিয়েছেন অজস্র মানব মনে, তা ভোলার সাধ্য কারও নেই।
না মনের, না মানুষের। না সময়ের, না স্মৃতির।
এ বছর এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর দেখা গেছে, মাত্র ৫৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোর তুলনায় এই হার অনেক কম। ফলে অনেকেই বলছেন, পাসের হারে যেন ধস নেমেছে।
২ ঘণ্টা আগেট্রাম্পের প্রস্তাবগুলো যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি গাজার ভবিষ্যৎকে আমূল পুনর্গঠনের প্রস্তাব। ট্রাম্প তাঁর প্রস্তাবকে অভিহিত করেছেন ‘একটি ঐতিহাসিক অগ্রগতি’ হিসেবে। তাঁর ভাষায়, ‘এই অগ্রগতি তিন হাজার বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনতে পারে।’
৪ ঘণ্টা আগেক্যাপশন পড়ে চোখ উলটে ফেলার কোনো কারণ নেই। আমার বয়সে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়া যায় না বা দেইনি—এটা সবাই জানেন। কিন্তু আজকে যে ফল প্রকাশ হয়েছে, তাতে যারা ফেল করেছে, সে তালিকায় আমার এবং আপনাদের নামও আছে।
৬ ঘণ্টা আগেমাধ্যমিক ও উচচশিক্ষা স্তরের সাথে সংযোগ স্থাপনকারী শ্রেণি হচেছ উচচ-মাধ্যমিক। সেই পরীক্ষার ফল বের হলো আজ ১৬ অক্টোবর। এবার পাসের হার ৫৮দশমিক ৮৩শতাংশ। গতবারের চেয়ে পাসের হার কমেছে প্রায় ১৯ শতাংশ। সম্ভবত শিক্ষা উপদেষ্টার পদক্ষেপে ফল কিছুটা হয়েছে। তবে পুন:নিরীক্ষনে আবার অনেকেই পাস করে যান যা পাসের হারের উ
৮ ঘণ্টা আগে