leadT1ad

আবুল হাশিমের রাজনীতি: রব্বানি দর্শন থেকে যুক্ত বাংলা

৫ অক্টোবর ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ আবুল হাশিমের ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকী। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা।

আবুল হাশিম। সংগৃহীত ছবি

আবুল হাশিমের রাজনীতি ও ধর্মাচিন্তা নিয়ে পাঠক সমাজে বেশ নীরবতা লক্ষ করা যায়। এই নীরবতার একটা কারণ তাঁর রাজনৈতিক প্রকল্পের ব্যর্থতা। বাংলাদেশে বিদ্যমান কোনো রাজনৈতিক দলের তত্ত্ব-কাঠামোয় তিনি আঁটেন না। তাই তাঁকে নিয়ে আলোচনাও হয় কম। অর্থাৎ আবুল হাশিমের চিন্তার সমগ্র অংশ না হলেও বিভিন্ন অংশকে সমকালের জন্য ব্যবহার উপযোগী করে তোলা যায়নি তেমন। কারণ, তাঁর জীবন, চিন্তা, লেখালেখি ও রাজনৈতিক সক্রিয়তার সঙ্গে আমাদের পর্যালোচনামূলক অন্তরঙ্গতা ও সম্পৃক্তি গড়ে ওঠেনি। তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বছর বিশেকের—১৯৩৬ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত ধরা যায়। ১৯৩৬-৩৭ সালে তিনি প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে প্রবেশ করেন বর্ধমান মুসলিম নির্বাচনী এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়ে বঙ্গীয় আইন সভার সদস্য হওয়ার মাধ্যমে।

হাশিম তাঁর ইন রেট্রোসপেক্ট বইয়ে জানান, তিনি পড়তে ভালোবাসতেন, রাজনৈতিক কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা তাঁর ভেতরে ছিল না। উল্লেখ্য, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আবুল হাশিম আইন পাশ করেন। শুধু পরিবর্তন ও সেবার আকাঙ্ক্ষা থেকে তাঁর রাজনীতিতে আসা। তাঁর পিতা আবুল কাশেম ছিলেন কংগ্রেস সদস্য, স্বদেশী আন্দোলন, খেলাফত আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন।

আবুল হাশিম রচিত ‘আমার জীবন ও বিভাগপূর্ব বাংলাদেশের রাজনীতি‘ বইয়ের প্রচ্ছদ। সংগৃহীত ছবি
আবুল হাশিম রচিত ‘আমার জীবন ও বিভাগপূর্ব বাংলাদেশের রাজনীতি‘ বইয়ের প্রচ্ছদ। সংগৃহীত ছবি

আবুল হাশিম রাজনৈতিক আবহে বেড়ে উঠেছেন ঠিকই, কিন্তু পিতার পথ বেছে না নিয়ে নিজের রাজনৈতিক পথ নিজেই খুঁজে নেন।

দৃশ্যত তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে উজ্জ্বল সময় ছিল ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত যখন তিনি বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রবল উদ্যমে কাজ করেছেন। গ্রামেগঞ্জে ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি। লক্ষ্য ছিল মুসলিম লীগের মাঠ পর্যায়ে শক্তি বৃদ্ধি করা। শিক্ষার্থীদের তিনি বিপুল সংখ্যায় আকৃষ্ট করতে পেরেছিলেন। মুসলিম স্টুডেন্টস লীগ তাঁর হাতে গঠিত হয়। ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের যে বিজয় তাঁর পেছনে আবুল হাশিমের মাঠ পর্যায়ে গায়েগতরে খাটা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক তৎপরতা দুটোই বড় ভূমিকা রেখেছিল।

ব্রিটিশ ভারতের এই সর্বশেষ নির্বাচনে মুসলিম লিগের বিজয়ে আবুল হাশিমের লেখা ইশতেহার বড় ভূমিকা রেখেছিল। ইশতেহারের নাম ছিল ‘চলো যুদ্ধে যাই’। কংগ্রসের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার যুদ্ধ বলে এই নির্বাচনকে ফ্রেইম করা হয়েছিল। কেউ কেউ অবশ্য নিজে থেকেই এটাকে পাকিস্তান দাবির সঙ্গেও যুক্ত করেছিল।

আবুল হাশিম লাহোর প্রস্তাবকে ব্যাখ্যা করেছিলেন ভারতের বহু স্বাধীন জাতি ও সংস্কৃতির স্বীকৃতি হিসেবে। ইউরোপের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেছেন, ভারতীয় ইউনিয়নের মধ্যে বাংলার একটা স্বাধীন রাষ্ট্র হতে বাধা নাই। লাহোর প্রস্তাবকে তিনি কোনো অনড় ব্লু প্রিন্ট হিসেবে না দেখে যুক্তবাংলার ধারণার সাথে মিলিয়ে পাঠ করেছেন।

নির্বাচনী প্রচারের জন্যে আবুল হাশিম সাপ্তাহিক মিল্লাত পত্রিকা গড়ে তুলেছিলেন। এই নির্বাচনে কৃষক প্রজাপার্টি এবং মুসলিম লীগের খাজাগ্রুপ ছিল হাশিম-সোহরাওয়ার্দি গ্রুপের নানামাত্রিক প্রতিপক্ষ।

বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতি হওয়ার পরের দিন আবুল হাশিম নবাবদের হাত থেকে মুসলিম লীগকে উদ্ধার করে পার্টিকে জনমুখী করবার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, পার্টি যে তিনটি জায়গায় বন্ধক পড়ে আছে, সেখান থেকে একে উদ্ধার করতে হবে, আহসান মঞ্জিলের নবাবদের কাছ থেকে, আজাদ পত্রিকার মালিকের বিজ্ঞাপন থেকে এবং আর্থিকভাবে ইস্পাহানিদের উপর নির্ভরশীলতা থেকে।

মুসলিম লীগের মধ্যে নাজিমুদ্দীন-আকরাম খাঁ-ইসপাহানিরা একটি ব্লক, এবং সোহরাওয়ার্দি-হাশিম হয়ে উঠেন আরেকটি ব্লক। দুই ব্লকের মধ্যে মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। সাতচল্লিশের পর হাশিম-সোহরাওয়ার্দীর মধ্যেও দূরত্ব তৈরি হয়। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দির মা ছিলেন আবুল হাশিমের খালা শাশুড়ি, সেই সূত্রে তাঁরা আত্মীয়ও ছিলেন।

১৯৪০ সালের দিকে বিহারের মাওলানা আজাদ সুবহানির সাথে আবুল হাশিমের দেখা হয়। হাশিম তাঁর কাছ থেকে খেলাফতে রব্বানি বা রব্বানিয়াতের ধারণা লাভ করেন। এই ধারণার উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, এতে মানুষকে আল্লাহর রবুবিয়াতের খলিফা ভাবা হয়। অর্থাৎ জগতের যত্নের দায়িত্ব মানুষের উপরে বর্তায়। মানুষের সঙ্গে খোদার সম্পর্কের দাবিই এটা যে অন্য কোন প্রাণই মানুষের দ্বরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না বরং মানুষের যত্নে পরিপুষ্ট ও বিকশিত হবে।

আবুল হাশিম রচিত ‘ইন রেট্রোসপেক্টশন’ বইয়ের প্রচ্ছদ। সংগৃহীত ছবি
আবুল হাশিম রচিত ‘ইন রেট্রোসপেক্টশন’ বইয়ের প্রচ্ছদ। সংগৃহীত ছবি

সৃষ্টির প্রতি দায়িত্বশীলতার এই দর্শনকে তিনি বঙ্গীয় মুসলিম লীগের রাজনৈতিক পরিসরে ব্যবহারে আগ্রহী হন। পার্টিকে ওয়েলফেয়ার বা কল্যাণের ধারায় তিনি চালিত করতে চান। মুসলিগ লীগকে এলিটদের কোটারি স্বার্থ থেকে মুক্ত করে তিনি যে গণমানুষের দলে রূপান্তরিত করতে ইচ্ছুক ছিলেন, তার পেছনে রব্বানি চেতনার প্রভাব থাকতে পারে।

হাশিম মনে করতেন, ইসলাম মানুষকে তার ক্ষমতা ও সম্পদ দ্বারা বিচার করে না। বিচার করে তার ব্যক্তিগত আখলাক মানে চরিত্র ও সামাজিক কল্যাণে তার অবদান দিয়ে। একজন দক্ষ ও সৎ মুচি অদক্ষ ও অসৎ সুলতানের চেয়ে শ্রেয়।

১৯৪৩-এর দুর্ভিক্ষের সময় মুসলিম লীগের জেনারেল সেক্রেটারি হয়েছিলেন আবুল হাশিম। তাঁর তৎপরতায় বেকার হোস্টেল, কারমাইকেল হোস্টেল, টেইলর হোস্টেলে মুসলিম ছাত্রদের মধ্যে সংঘশক্তি বিকশিত হয়। দুর্ভিক্ষের মধ্যে এই ছেলেরা লঙ্গরখানা খুলে হাজার হাজার ভুখা মানুষকে আহার করায়।

সোহরাওয়ার্দি ও হাশিমের তৎপরতায় মুসলিম লীগের জনপ্রিয়তার একটা নমুনা হলো, যখন জিন্নাহ ১৯৩৬ সালে বাংলায় আসেন তাকে সংবর্ধনা জানাতে মাত্র তিনজন উপস্থিত হয়েছিল, কিন্তু ১০ বছরের ব্যবধানে ১৯৪৬ এর নির্বাচনী প্রচারণায় জিন্নাহ যখন আবার বাঙলায় আসেন তখন তাঁকে বরণ করে নিয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ।

হাশিম মনে করতেন, ইসলাম মানুষকে তার ক্ষমতা ও সম্পদ দ্বারা বিচার করে না। বিচার করে তার ব্যক্তিগত আখলাক মানে চরিত্র ও সামাজিক কল্যাণে তার অবদান দিয়ে। একজন দক্ষ ও সৎ মুচি অদক্ষ ও অসৎ সুলতানের চেয়ে শ্রেয়।

১৯৫০ সালে হাশিম পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে পূর্ববঙ্গে আসেন। মধ্য বয়সের পর থেকেই তাঁর অন্ধত্বের সমস্যা প্রকট হতে থাকে। ১৯৫২ সালে তিনি ভাষা আন্দলনে অংশগ্রহণ করেন। চোখের অসুস্থতা নিয়েই ১৬ মাস জেল খাটেন। পূর্ববঙ্গে আসার পর তিনি খেলাফতে রব্বানি নামে একটি দল গড়ে তুলেন। ১৯৫৪-এর যুক্ত ফ্রন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ২ টি আসন পান। অবশ্য, এ দল আর দাঁড়ায়নি। জাপানি গবেষক শো কুওয়াজিমা তাঁর মুসলিম, নেশন এন্ড দা ওয়ার্ল্ড: লাইফ এন্ড থট অব আবুল হাশিম বইয়ে জানান, আয়ুইব খান ১৯৫৮ ক্ষমতা দখলের পর আবুল হাশিমের চিন্তাকে ব্যবহার করে ইসলামের নামে জাতীয়তাবাদের একটা ধরন তৈরির চেষ্টা করেন। কুওয়াজিমা বলেন, আবুল হাশিমের ইসলাম সম্পর্কে প্রখর জ্ঞানের জন্যে তাঁকে সমীহ করা প্রথম ব্যাক্তি আইয়ুব খানই প্রথম। আইয়ুব খান কনভেনশন মুসলিম লীগ নামক দল গঠন করতে চাইলে এর পূর্ব পাকিস্তান শাখার দায়িত্ব আবুল হাশিমকে দিয়েছিলেন। জীবনের শেষ দিকে নির্বাচনী ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির ডামাডোল পেরিয়ে তিনি বুদ্ধিবৃত্তিক, ধর্মীয় মতাদর্শিক লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেন।

১৯৬০ সালে তিনি ইসলামিক একাডেমির ডিরেক্টর ও ১৯৬২ সালে পাকিস্তান ইসলামিক কাউন্সিলের সদস্য হন ।

১৯৬৬-৬৭ সালে প্রকাশিত ইনটিগ্রেশন অব পাকিস্তান বইয়ে হাশিম বলেন, হিটলার যেমন বলেছেন একটা বড় মিথ্যা বার বার বললে সকলে তা বিশ্বাস করা শুরু করে, তেমনই এই কথা বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা হয়েছে যে, ভারতীয় কংগ্রেস হচ্ছে জাতীয়তাবাদী আর মুসলিম লীগ সাম্প্রদায়িকতাবাদী সংগঠন। অথচ, আবুল হাশিমের প্রধান রাজনৈতিক প্রকল্প ছিল যুক্ত বাংলা বা অখণ্ড বাংলা প্রকল্প। শরৎবসুর সাথে আলাপ আলোচনা ও চিঠি চালাচালির মধ্য দিয়ে অখণ্ড বাংলার পক্ষে দার্শনিক ভিত্তি তিনি দাঁড় করান।

১৯৪৬ সালের শেষের দিকে শরৎ বসুর সাথে আবুল হাশিম দেখা করেন, সেখানে মুন্সিগঞ্জের শামসুদ্দীন আহমেদ নামক আরেক লোক ছিলেন। পরে হাশিম জানতে পারেন তিনি কমিউনিস্ট পার্টির লোক। কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকা স্বাধীনতায় ঘটনাটি বিকৃত করে ছাপা হয়। দাবি করা হয়, বোস এবং হাশিম একমত হয়েছেন বৃহৎ বঙ্গ গঠনে, যেখানে মুসলমানেরা সংখ্যালঘু হবে। এতে হাশিমের বিরোধী পক্ষে বেশ সাড়া পড়ে যায়। এই কথা চাউর হয় যে কমিউনিস্টদের সাথে হাশিমের গোপন বোঝাপড়া আছে।

আবুল হাশিম রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে উজ্জ্বল সময় ছিল ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত যখন তিনি বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রবল উদ্যমে কাজ করেছেন। গ্রামেগঞ্জে ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি। লক্ষ্য ছিল মুসলিম লীগের মাঠ পর্যায়ে শক্তি বৃদ্ধি করা। শিক্ষার্থীদের তিনি বিপুল সংখ্যায় আকৃষ্ট করতে পেরেছিলেন। মুসলিম স্টুডেন্টস লীগ তাঁর হাতে গঠিত হয়।

যাহোক, হাশিম বাংলা-পরিস্থিতিকে অনন্য ভাবতেন। আবুল হাশিম মনে করতেন, ভারতবর্ষ বহু জাতি ও সংস্কৃতির দেশ। ভারতবর্ষ অনেকগুলো স্বাধীন রাষ্ট্রের যোগফল হওয়া উচিত। দ্বিজাতি তত্ত্বের বিরোধী ছিলেন তিনি ।

হাশিম লাহোর প্রস্তাবকে ব্যাখ্যা করেছিলেন ভারতের বহু স্বাধীন জাতি ও সংস্কৃতির স্বীকৃতি হিসেবে। ইউরোপের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেছেন, ভারতীয় ইউনিয়নের মধ্যে বাংলার একটা স্বাধীন রাষ্ট্র হতে বাধা নাই। লাহোর প্রস্তাবকে তিনি কোনো অনড় ব্লু প্রিন্ট হিসেবে না দেখে যুক্তবাংলার ধারণার সাথে মিলিয়ে পাঠ করেছেন। হাশিম লেখেন, ‘স্বাধীন ভারতকে হতে হবে, স্রষ্টা যেভাবে একে সৃষ্টি করেছেন, এমন এক উপমহাদেশ যেখানে বসবাসকারী প্রত্যেক জাতি হবে সম্পূর্ণ স্বাধীন।’

রাষ্ট্র, আইন, জাতি ইত্যাদি বিষয়ক আধুনিক তত্ত্ব-দৃষ্টির আলোকে তিনি তার অখণ্ড স্বাধীন বাংলা বা বৃহৎ বঙ্গের ধারণা গড়ে তুলেছিলেন। যদিও এটা তাঁর একার প্রস্তাব নয়, হুট করে উঠে আসা দাবিও না। তবে বিষয়টাকে তত্ত্বায়ন ও লেগে থাকাতে হাশিমের অবদান অগ্রগণ্য ।

সুচরিতা দাশ তাঁর থিওরাইজিং এ বেঙ্গলি নেশন: আবুল হাশিম এন্ড ইউনাইটেড বেঙ্গলি মুভমেন্ট বইয়ে আবুল হাশিমের জাতি ও জাতীয়তাবাদ বিষয়ক চিন্তার তত্ত্বায়ন করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, সিভিক ও এথনিক ন্যাশনালিজমের যুগ্ম বৈপরীত্যের বাইরে এসে হাশিম একধরনের এস্থেটিক জাতীয়তাবাদের চিন্তা হাজির করেছেন। যুক্ত বাংলার মতাদর্শিক কাঠামোর মধ্যে উদারনীতিবাদ, বহুসংস্কৃতিবাদ ও কল্যাণবাদকে তিনি যুক্ত করেছিলেন। বাংলার হিন্দু-মুসলিম জনগোষ্ঠীকে সাংস্কৃতিক জনগোষ্ঠী থেকে রাজনৈতিক জনগোষ্ঠিতে তিনি রূপান্তরিত করতে চেয়েছিলেন, যেখানে বহু সংস্কৃতি ও ধর্ম থাকবে, কিন্তু সবাই একই জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হবে। অবিভক্ত স্বাধীন বাংলার প্রস্তাবে নতুন অন্তর্বর্তী সরকারে দুই জনগোষ্ঠী থেকে সমান সংখ্যক সদস্য থাকবে, শুধু প্রধানমন্ত্রী থাকবে মুসলিম ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকবে হিন্দু।

আবুল হাশিম বিশ্বাস করতেন, এভাবে অখণ্ড বাংলায় দুই জনগোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগি ও বন্টনের মধ্য দিয়ে একটা রাজনৈতিক জনগোষ্ঠীর আবির্ভাব হবে। ‘নেশন’ তৈরি হওয়ার এই রূপকে সিভিক ন্যাশনালিজম বলে। সেখানে সবাই যার যার ‘এথনিসিটি’ নিয়েই রাষ্ট্রের নাগরিক হিশেবে বসবাস করবে।

আবুল হাশিমের স্মৃতিকথা, বক্তৃতা, ইসলাম বিষয়ক লেখালেখি সব কিছুকে সামগ্রিকভাবে পাঠ করতে পারলে আধুনিক বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের পথে প্রতিবন্ধকতাগুলো অতিক্রমের দিশা পাওয়া যেতে পারে। আবুল হাশিমের রাজনৈতিক স্বপ্ন ও ব্যর্থতা দুটোই শিক্ষানীয়।

Ad 300x250

সম্পর্কিত