leadT1ad

গণভোটের ফলাফল জাতীয় নির্বাচনেও প্রভাব ফেলবে

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের বিষয়ে একমত হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। এই সনদে বিগত পতিত সরকারের আমলে ঘটা অপরাধের বিচার প্রক্রিয়াসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। এই গণভোট হলে কী কী হতে পারে? এটি কি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনসহ জাতীয় রাজনীতিতে কতটা প্রভাব রাখবে?

নূরুল হুদা সাকিব
নূরুল হুদা সাকিব
স্ট্রিম গ্রাফিক

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের বিষয়ে একমত হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। এটি খুবই ইতিবাচক একটি পদক্ষেপ। জুলাই সনদ দেশের ভবিষ্যতের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এতে বিচার প্রক্রিয়া এবং নতুন বাংলাদেশ গঠনের মতো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। দলগুলো একমত হলে গণভোটের মাধ্যমে এর বাস্তবায়ন হতেই পারে। গণভোটের প্রধান সুবিধা হলো, এর মাধ্যমে জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়। একই সঙ্গে পুরো প্রক্রিয়াটি একটি গণভিত্তি ও বৈধতা পায়। জনগণ সরাসরি মতামত দেওয়ার সুযোগ পায়। আগে রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থা থেকে পদ্ধতি সংসদীয় পদ্ধতিতে যাওয়ার সময়ও আমরা গণভোটের সাহায্য নিয়েছিলাম। তাই সব দলের সম্মতিতে এটি একটি ভালো উপায় হতে পারে।

এই গণভোটের ফলাফল আসন্ন জাতীয় নির্বাচনেও কিছুটা প্রভাব ফেলবে বলে মনে হয় পারে। কেননা গণভোট হলে ভোটারদের অংশগ্রহণ এবং তাঁদের পছন্দের একটি ধরণ বা প্যাটার্ন বোঝা যাবে, যা জাতীয় নির্বাচনেও প্রভাব রাখবে বলে আমার ধারণা। তবে এটাও মনে রাখা জরুরি, জাতীয় নির্বাচন একটি ভিন্ন এবং ব্যাপক বিষয়। তাই গণভোটের ফলকে আমারা যদি চূড়ান্ত ধরে নিই, তাতে হয়তো ভুল হওয়ার সম্ভাবনাও থাকতে পারে। তবে এই গণভোট নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি ভালো অনুশীলন বা প্রস্তুতির সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে।

গণভোটে জুলাই সনদের পক্ষে রায় এলে তা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কিছুটা মানসিক শক্তি জোগাবে বলে মনে হয়। তবে তাদের আসল শক্তি বা জনপ্রিয়তা নির্ভর করবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উত্তরণ, দুর্নীতি দমন ও অর্থনীতি ব্যবস্থাপনার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ওপর। শুধু গণভোটের ফলাফলের ওপর নির্ভর করাটা হয়তো ভুল হবে। দিন শেষে একটি গণতান্ত্রিক ও নির্বাচিত সরকারের কোনো বিকল্প নেই। কারণ, আন্তর্জাতিকভাবেও এর গ্রহণযোগ্যতা বেশি।

গণভোটে যদি জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট না পড়ে, তখন কী হবে? প্রকৃতপক্ষে এমনটা না ঘটার সম্ভাবনাই বেশি। তবে এমনটা যদি হয়, সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি খুব জটিল হয়ে উঠতে পারে। এতে সনদ বাস্তবায়িত না হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। যদিও এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম, তবে কিছুই নিশ্চিত করে বলা যায় না।

গণভোটের সময় নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে। এটি তাদের রাজনৈতিক কৌশলের অংশ। জামায়াত নির্বাচনের আগে গণভোট করতে চায়, যাতে ভোটের ধরণ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় এবং সেই অনুযায়ী তারা কৌশল নির্ধারণ করতে পারে। অন্যদিকে, বিএনপি এই ঝুঁকি নিতে চায় না। তারা চায় না যে গণভোটের ফলাফল জাতীয় নির্বাচনের আগে কোনো ধরনের প্রভাব ফেলুক।

সংবিধান, আইনসভা ও অন্যান্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংস্কারের প্রস্তাবগুলো আমাদের সামনে রয়েছে। এখন প্রশ্ন আসছে যে এই সংস্কারের বিষয়গুলো গণভোটে আনা হবে কি না। তবে বড় দলগুলো এ বিষয়ে একমত যে এসব কাঠামোগত সংস্কার পরবর্তী নির্বাচিত সরকার বাস্তবায়ন করবে। তারা বলছে, গণভোটের মাধ্যমে এত জটিল সাংবিধানিক বিষয় কার্যকর করা ঠিক হবে না। কারণ, সাধারণ মানুষের পক্ষে এর সবটা বোঝা কঠিন। তা ছাড়া, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এগুলো বাস্তবায়ন করলে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার এসে তা বাতিল করে দিতে পারে। তাই তারা এজন্য নির্বাচিত সংসদকেই সঠিক মনে করছে।

আরেকটি বিষয় হলো, গণভোটে যদি জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট না পড়ে, তখন কী হবে? প্রকৃতপক্ষে এমনটা না ঘটার সম্ভাবনাই বেশি। তবে এমনটা যদি হয়, সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি খুব জটিল হয়ে উঠতে পারে। এতে সনদ বাস্তবায়িত না হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। যদিও এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম, তবে কিছুই নিশ্চিত করে বলা যায় না।

আমাদের মনে রাখতে হবে, এত সব সংস্কার বা সনদ বাস্তবায়ন যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ দেশের মূল সমস্যার সমাধান। আর সেই সমস্যা হলো, আমাদের ব্যবস্থা বা সিস্টেম ও মানুষের মানসিকতা বদল। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের মানসিকতার বদল না ঘটছে এবং আমলাতন্ত্র ও অন্য সব প্রতিষ্ঠানগুলো ঢেলে সাজানো না হচ্ছে, ততক্ষণ কোনো সনদ বা আইন দিয়েই চূড়ান্ত মুক্তি আসবে না।

লেখক: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক

Ad 300x250

সম্পর্কিত