স্ট্রিম ডেস্ক
বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলোকচিত্র শিল্পী, মানবাধিকার কর্মী এবং শিক্ষাবিদ শহীদুল আলম বর্তমানে গাজামুখী আরও ১১টি জাহাজের একটির যাত্রী। এর মধ্যে শহীদুলদের বহনকারী কনশানস জাহাজসহ ৯টি নৌযান একসঙ্গে গাজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের পেছনে গ্রিসের ক্রিট থেকে শনিবার আরও দুটি জাহাজ যাত্রা শুরু করেছে।
শহীদুলদের ৯টি জাহাজের বহর এখন ভূমধ্যসাগরের ফিলিস্তিনি টাইম জোনে আছে। বহরটির লক্ষ্য শান্তিপূর্ণ উপায়ে গাজায় পৌঁছানো, তবে সম্ভাব্য বাধার জন্য প্রস্তুতিও রাখা হয়েছে। ট্র্যাকারে দেখা যায়, বর্তমানে তাদের অবস্থান গাজা থেকে প্রায় ৩০০ নটিক্যাল মাইল (৫০০-৫৫০ কিলোমিটার) দূরে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া বন্দর বরাবর।
তাঁরা আশা করছেন, তারা সোমবার (৬ অক্টোবর ২০২৫) গাজায় পৌঁছাতে পারবেন। তবে ইসরায়েলের হস্তক্ষেপের ঝুঁকির কারণে তা অনিশ্চিত। এর আগে ২-৩ অক্টোবর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’কেও থামিয়ে দেওয়া হয় এবং ৪০টি জাহাজসহ প্রায় ৫০০ অ্যাকটিভিস্টকে আটক করে ইসরায়েলি নৌবাহিনী।
সাম্প্রতিক ভিডিও বার্তা ও সাক্ষাৎকারে শহিদুল তার দৃঢ় সংকল্পের কথা জানিয়েছেন। তিনি জানান, এই মিশন কেবল সাহায্য পৌঁছানো নয় বরং বিশ্বজনীন সংহতির প্রতীক। তিনি আরও বলেন, ‘কী হবে জানি না, তবে আমরা গাজার পথে আছি।’
তাঁর লক্ষ্য গাজার ওপর চলমান ‘তথ্য অবরোধ’ ভাঙা। এজন্য তিনি সরাসরি সাংবাদিকতা, ধ্বংসযজ্ঞের ছবি ও তথ্য নথিভুক্ত করা এবং তার সঙ্গে থাকা চিকিৎসকরা সেবা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন।
শহীদুল জানান, এই যাত্রা গাজায় ইসরায়েলি অবরোধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ। তিনি বলেন, ‘পুরো বাংলাদেশ’ এই অভিযানের সঙ্গে রয়েছে। তিনি বিশ্বব্যাপী শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের সংহতি প্রকাশের আহ্বান জানান। তিনি তার ২০১৮ সালের কারাবাসের অভিজ্ঞতার সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির মিল খুঁজে বলেন, এবারও তিনি ‘অদম্য সাহস ও দৃঢ় মনোবল’ নিয়ে এগোচ্ছেন।
ইতালির সার্জন ড. রিকার্দো কোরাদিনি বলেন, ‘সাংবাদিক ও চিকিৎসক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব সত্য প্রকাশ করা এবং জীবন রক্ষা করা। এই মিশন আমাদের সহকর্মীদের কাছে আহ্বান— এবং সেইসঙ্গে বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছেও— যাতে তারা নীরবতা ভাঙে, নৈতিকতা রক্ষা করে এবং ইতিহাসের সঠিক পাশে দাঁড়ায়।’
আন্তর্জাতিক উদ্যোগ ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) ‘থাউজেন্ড ম্যাডলিনস টু গাজা (টিএমটিজি)’ শিরোনামে এই যাত্রার আয়োজন করে। এফএফসি ইসরায়েলি অবরোধ ভেঙে গাজায় ত্রাণ পৌঁছাতে যাওয়া বৈশ্বিক প্রচেষ্টা ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার’ যৌথ আয়োজক জোটগুলোরও একটি। তাদের মধ্যে কনশানস সবার শেষে (৩০ সেপ্টেম্বর) ইতালি থেকে রওনা করেছিল।
এফএফসি-র স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য হুয়াইদা আরাফ বলেন, এটি এই ঐতিহাসিক বহরের সর্বশেষ ও সবচেয়ে বড় নৌযান। এর নাম শুধু ইসরায়েলের অবৈধ অবরোধের বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিরোধের প্রতীক নয়, বরং বিশ্বের বিবেককে জাগ্রত করারও আহ্বান।
আন্তর্জাতিক আইন কী বলে
গাজা অভিমুখী বহর ও অবরোধ নিয়ে আন্তর্জাতিক আইন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বিভিন্ন সূত্র এ বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা দেয়।
অবরোধ: ২০১১ সালের জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে (মাভি মারমারা ঘটনার পর) বলা হয়, ইসরায়েলের নৌ অবরোধ নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে বৈধ হতে পারে। তবে শর্ত হলো এটি আনুপাতিক হতে হবে এবং মানবিক দায়িত্ব মানতে হবে।
অন্যদিকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি, এই অবরোধ আসলে সমষ্টিগত শাস্তি। এটি জেনেভা কনভেনশনের ৩৩ অনুচ্ছেদ ও জাতিসংঘ প্রস্তাবনায় উল্লেখিত আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের পরিপন্থী।
অবরোধ ভাঙার চেষ্টায় হস্তক্ষেপ: ইসরায়েল আন্তর্জাতিক পানিসীমায় জাহাজ আটক করায় ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। জাতিসংঘ সমুদ্র আইন সনদ (ইএনসিএলওএস) অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক পানিসীমায় চলাচলের স্বাধীনতা সুরক্ষিত। ২-৩ অক্টোবরের মতো সাম্প্রতিক হস্তক্ষেপগুলো অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, আল জাজিরা এবং এবিসি নিউজ অবৈধ বলে অভিহিত করেছে। কারণ ঘটনাগুলো ইসরায়েলের আঞ্চলিক সীমানা (সাধারণত ১২ নটিক্যাল মাইল) অতিক্রম করে ঘটেছে।
আটক ও গ্রেপ্তার: সাংবাদিক ও অধিকার কর্মীদের, যেমন গ্রেটা থুনবার্গকে আটক করাকে অনেকে স্বেচ্ছাচারী ও অবৈধ বলে মনে করেন। যদি তাৎক্ষণিক কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি না থাকে, তবে এসব আটক আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের মতে, এই অবরোধ মানবিক সংকট বাড়িয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ভঙ্গ করছে।
ইসরায়েল নিজেদের পদক্ষেপকে আত্মরক্ষার অধিকার বলে দাবি করে। তবে অধিকাংশ মানবাধিকার সংগঠন ও কিছু রাষ্ট্রের মতে, অবরোধ ও হস্তক্ষেপ অবৈধ। আর বেসামরিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা যুদ্ধাপরাধের পর্যায়ে পড়তে পারে।
বিশ্বব্যাপী সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষাকারী সংগঠনগুলো বহুবার ইসরায়েলের সাংবাদিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলেছে। এই সপ্তাহেও তারা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, যখন ইসরায়েলি বাহিনী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলাকে গাজায় পৌঁছাতে বাধা দেয় এবং কয়েকজন সাংবাদিককে আটক করে।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ)-এর সংকট ডেস্কের প্রধান মার্টিন রু এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার এবং তাদের কাজ করতে বাধা দেওয়া তথ্য দেওয়া ও পাওয়ার অধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই জাহাজগুলোতে থাকা সংবাদকর্মীরা এক অভূতপূর্ব মানবিক অভিযানের খবর সংগ্রহ করছিলেন। তাদের অবৈধভাবে আটক করা হয়েছে। ইসরায়েলি সেনারা ইতিমধ্যেই গাজায় ২১০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি সাংবাদিককে হত্যা করেছে। এবার সমুদ্রে এই গ্রেপ্তারের মাধ্যমে তারা গাজার ওপর চলমান সংবাদ অবরোধ আরও জোরদার করছে। এর সুস্পষ্ট লক্ষ্য হলো ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে চালানো অপরাধ আড়াল করা।’
আরএসএফ ইসরায়েলকে আহ্বান জানিয়েছে যেন তারা সাংবাদিকদের মর্যাদা রক্ষা করে, তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তাদের নিরাপত্তা গ্যারান্টি দেয়।
শহীদুল আলম কি গ্রেপ্তার হতে পারেন
শহীদুল আলমের জাহাজ আটক হলে তার গ্রেপ্তারের ঝুঁকি প্রবল। এর আগেও এ ধরনের অভিযানে বহু সাংবাদিক ও অধিকার কর্মীকে ইসরায়েল আটক করেছে। শহীদুলদের আগে সুমুদ ফ্লোটিলা থেকেও ২০ জনের বেশি সাংবাদিক এবং অধিকার কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন, যাদের মধ্যে গ্রেটা থুনবার্গের মতো অনেক পরিচিত মুখও আছেন।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শহীদুলের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করছে এবং পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে। তবে বাংলাদেশের সরাসরি হস্তক্ষেপের ক্ষমতা নেই। শহীদুল নিজেও ঝুঁকি স্বীকার করেছেন, তবে তিনি শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এখনো তাকে আটক করা হয়নি। তবে গন্তব্যের কাছে পৌঁছালে পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টে যেতে পারে।
সাংবাদিকদের বহন করায় কনশাসনসকে ‘মিডিয়া ফ্লোটিলা’ও বলা হচ্ছে। জাহাজটিতে মোট ৯৬ জন অ্যাকটিভিস্ট আছেন, যার মধ্যে ৮২ জনই মিডিয়া ও চিকিৎসা পেশাজীবী। এদের মধ্যে আবার মিডিয়া ব্যক্তিত্বই বেশি।
ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘কনশানস’ জাহাজটিতে ২৫টি দেশের সাংবাদিক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা আছেন। এফএফসির সর্বশেষ এই মিশন গত বুধবার যাত্রা শুরু করে। তাদের লক্ষ্য তথ্যের ওপর ইসরায়েলের অবৈধ অবরোধ ভাঙ্গা এবং গাজার বাস্তব চিত্র তুলে ধরা।
দুই বছর ধরে ইসরায়েল বিদেশি সাংবাদিকদের গাজায় প্রবেশে বাধা দিয়ে আসছে। এ সময়ে ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের ওপরও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে আসছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ২৭০ জনের বেশি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, অনেকে আটক ও কারাগারে বন্দী আছেন।
ফেসবুক পোস্টে শহীদুল বলেন, ‘আমরা মূলত কোনও মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর জন্য যাচ্ছি না। আমাদের প্রধান লক্ষ্য ইসরায়েলের অবৈধ অবরোধ ভাঙা। আমরা সাংবাদিক ও চিকিৎসকদের ওপর ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদ জানাতে যাচ্ছি। আমরা বিশেষ করে মিডিয়ার ওপর এবং তথ্যের ওপর ইসরায়েলের অবৈধ অবরোধ ভাঙতে চাই। আমরা গাজার বাস্তব পরিস্থিতি পুরো বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে চাই।’
শহীদুল আরও বলেন, ‘থাউজেন্ড ম্যাডলিনস এক অসাধারণ ধারণা। গাজায় গণহত্যা ঠেকাতে বিশ্বনেতাদের পুরোপুরি নিষ্ক্রিয়তা এবং ভণ্ডামির কারণে বিশ্বের সাধারণ জনগণ নিজেরাই পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হাজার জাহাজের এই ধারণাটি প্রতীকী। তবে নিঃসন্দেহে এভাবে একত্রিত হওয়া সমুদ্রযানের সবচেয়ে বড় বহর এটি।’
বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলোকচিত্র শিল্পী, মানবাধিকার কর্মী এবং শিক্ষাবিদ শহীদুল আলম বর্তমানে গাজামুখী আরও ১১টি জাহাজের একটির যাত্রী। এর মধ্যে শহীদুলদের বহনকারী কনশানস জাহাজসহ ৯টি নৌযান একসঙ্গে গাজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের পেছনে গ্রিসের ক্রিট থেকে শনিবার আরও দুটি জাহাজ যাত্রা শুরু করেছে।
শহীদুলদের ৯টি জাহাজের বহর এখন ভূমধ্যসাগরের ফিলিস্তিনি টাইম জোনে আছে। বহরটির লক্ষ্য শান্তিপূর্ণ উপায়ে গাজায় পৌঁছানো, তবে সম্ভাব্য বাধার জন্য প্রস্তুতিও রাখা হয়েছে। ট্র্যাকারে দেখা যায়, বর্তমানে তাদের অবস্থান গাজা থেকে প্রায় ৩০০ নটিক্যাল মাইল (৫০০-৫৫০ কিলোমিটার) দূরে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া বন্দর বরাবর।
তাঁরা আশা করছেন, তারা সোমবার (৬ অক্টোবর ২০২৫) গাজায় পৌঁছাতে পারবেন। তবে ইসরায়েলের হস্তক্ষেপের ঝুঁকির কারণে তা অনিশ্চিত। এর আগে ২-৩ অক্টোবর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’কেও থামিয়ে দেওয়া হয় এবং ৪০টি জাহাজসহ প্রায় ৫০০ অ্যাকটিভিস্টকে আটক করে ইসরায়েলি নৌবাহিনী।
সাম্প্রতিক ভিডিও বার্তা ও সাক্ষাৎকারে শহিদুল তার দৃঢ় সংকল্পের কথা জানিয়েছেন। তিনি জানান, এই মিশন কেবল সাহায্য পৌঁছানো নয় বরং বিশ্বজনীন সংহতির প্রতীক। তিনি আরও বলেন, ‘কী হবে জানি না, তবে আমরা গাজার পথে আছি।’
তাঁর লক্ষ্য গাজার ওপর চলমান ‘তথ্য অবরোধ’ ভাঙা। এজন্য তিনি সরাসরি সাংবাদিকতা, ধ্বংসযজ্ঞের ছবি ও তথ্য নথিভুক্ত করা এবং তার সঙ্গে থাকা চিকিৎসকরা সেবা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন।
শহীদুল জানান, এই যাত্রা গাজায় ইসরায়েলি অবরোধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ। তিনি বলেন, ‘পুরো বাংলাদেশ’ এই অভিযানের সঙ্গে রয়েছে। তিনি বিশ্বব্যাপী শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের সংহতি প্রকাশের আহ্বান জানান। তিনি তার ২০১৮ সালের কারাবাসের অভিজ্ঞতার সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির মিল খুঁজে বলেন, এবারও তিনি ‘অদম্য সাহস ও দৃঢ় মনোবল’ নিয়ে এগোচ্ছেন।
ইতালির সার্জন ড. রিকার্দো কোরাদিনি বলেন, ‘সাংবাদিক ও চিকিৎসক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব সত্য প্রকাশ করা এবং জীবন রক্ষা করা। এই মিশন আমাদের সহকর্মীদের কাছে আহ্বান— এবং সেইসঙ্গে বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছেও— যাতে তারা নীরবতা ভাঙে, নৈতিকতা রক্ষা করে এবং ইতিহাসের সঠিক পাশে দাঁড়ায়।’
আন্তর্জাতিক উদ্যোগ ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) ‘থাউজেন্ড ম্যাডলিনস টু গাজা (টিএমটিজি)’ শিরোনামে এই যাত্রার আয়োজন করে। এফএফসি ইসরায়েলি অবরোধ ভেঙে গাজায় ত্রাণ পৌঁছাতে যাওয়া বৈশ্বিক প্রচেষ্টা ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার’ যৌথ আয়োজক জোটগুলোরও একটি। তাদের মধ্যে কনশানস সবার শেষে (৩০ সেপ্টেম্বর) ইতালি থেকে রওনা করেছিল।
এফএফসি-র স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য হুয়াইদা আরাফ বলেন, এটি এই ঐতিহাসিক বহরের সর্বশেষ ও সবচেয়ে বড় নৌযান। এর নাম শুধু ইসরায়েলের অবৈধ অবরোধের বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিরোধের প্রতীক নয়, বরং বিশ্বের বিবেককে জাগ্রত করারও আহ্বান।
আন্তর্জাতিক আইন কী বলে
গাজা অভিমুখী বহর ও অবরোধ নিয়ে আন্তর্জাতিক আইন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বিভিন্ন সূত্র এ বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা দেয়।
অবরোধ: ২০১১ সালের জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে (মাভি মারমারা ঘটনার পর) বলা হয়, ইসরায়েলের নৌ অবরোধ নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে বৈধ হতে পারে। তবে শর্ত হলো এটি আনুপাতিক হতে হবে এবং মানবিক দায়িত্ব মানতে হবে।
অন্যদিকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি, এই অবরোধ আসলে সমষ্টিগত শাস্তি। এটি জেনেভা কনভেনশনের ৩৩ অনুচ্ছেদ ও জাতিসংঘ প্রস্তাবনায় উল্লেখিত আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের পরিপন্থী।
অবরোধ ভাঙার চেষ্টায় হস্তক্ষেপ: ইসরায়েল আন্তর্জাতিক পানিসীমায় জাহাজ আটক করায় ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। জাতিসংঘ সমুদ্র আইন সনদ (ইএনসিএলওএস) অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক পানিসীমায় চলাচলের স্বাধীনতা সুরক্ষিত। ২-৩ অক্টোবরের মতো সাম্প্রতিক হস্তক্ষেপগুলো অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, আল জাজিরা এবং এবিসি নিউজ অবৈধ বলে অভিহিত করেছে। কারণ ঘটনাগুলো ইসরায়েলের আঞ্চলিক সীমানা (সাধারণত ১২ নটিক্যাল মাইল) অতিক্রম করে ঘটেছে।
আটক ও গ্রেপ্তার: সাংবাদিক ও অধিকার কর্মীদের, যেমন গ্রেটা থুনবার্গকে আটক করাকে অনেকে স্বেচ্ছাচারী ও অবৈধ বলে মনে করেন। যদি তাৎক্ষণিক কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি না থাকে, তবে এসব আটক আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের মতে, এই অবরোধ মানবিক সংকট বাড়িয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ভঙ্গ করছে।
ইসরায়েল নিজেদের পদক্ষেপকে আত্মরক্ষার অধিকার বলে দাবি করে। তবে অধিকাংশ মানবাধিকার সংগঠন ও কিছু রাষ্ট্রের মতে, অবরোধ ও হস্তক্ষেপ অবৈধ। আর বেসামরিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা যুদ্ধাপরাধের পর্যায়ে পড়তে পারে।
বিশ্বব্যাপী সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষাকারী সংগঠনগুলো বহুবার ইসরায়েলের সাংবাদিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলেছে। এই সপ্তাহেও তারা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, যখন ইসরায়েলি বাহিনী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলাকে গাজায় পৌঁছাতে বাধা দেয় এবং কয়েকজন সাংবাদিককে আটক করে।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ)-এর সংকট ডেস্কের প্রধান মার্টিন রু এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার এবং তাদের কাজ করতে বাধা দেওয়া তথ্য দেওয়া ও পাওয়ার অধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই জাহাজগুলোতে থাকা সংবাদকর্মীরা এক অভূতপূর্ব মানবিক অভিযানের খবর সংগ্রহ করছিলেন। তাদের অবৈধভাবে আটক করা হয়েছে। ইসরায়েলি সেনারা ইতিমধ্যেই গাজায় ২১০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি সাংবাদিককে হত্যা করেছে। এবার সমুদ্রে এই গ্রেপ্তারের মাধ্যমে তারা গাজার ওপর চলমান সংবাদ অবরোধ আরও জোরদার করছে। এর সুস্পষ্ট লক্ষ্য হলো ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে চালানো অপরাধ আড়াল করা।’
আরএসএফ ইসরায়েলকে আহ্বান জানিয়েছে যেন তারা সাংবাদিকদের মর্যাদা রক্ষা করে, তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তাদের নিরাপত্তা গ্যারান্টি দেয়।
শহীদুল আলম কি গ্রেপ্তার হতে পারেন
শহীদুল আলমের জাহাজ আটক হলে তার গ্রেপ্তারের ঝুঁকি প্রবল। এর আগেও এ ধরনের অভিযানে বহু সাংবাদিক ও অধিকার কর্মীকে ইসরায়েল আটক করেছে। শহীদুলদের আগে সুমুদ ফ্লোটিলা থেকেও ২০ জনের বেশি সাংবাদিক এবং অধিকার কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন, যাদের মধ্যে গ্রেটা থুনবার্গের মতো অনেক পরিচিত মুখও আছেন।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শহীদুলের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করছে এবং পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে। তবে বাংলাদেশের সরাসরি হস্তক্ষেপের ক্ষমতা নেই। শহীদুল নিজেও ঝুঁকি স্বীকার করেছেন, তবে তিনি শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এখনো তাকে আটক করা হয়নি। তবে গন্তব্যের কাছে পৌঁছালে পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টে যেতে পারে।
সাংবাদিকদের বহন করায় কনশাসনসকে ‘মিডিয়া ফ্লোটিলা’ও বলা হচ্ছে। জাহাজটিতে মোট ৯৬ জন অ্যাকটিভিস্ট আছেন, যার মধ্যে ৮২ জনই মিডিয়া ও চিকিৎসা পেশাজীবী। এদের মধ্যে আবার মিডিয়া ব্যক্তিত্বই বেশি।
ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘কনশানস’ জাহাজটিতে ২৫টি দেশের সাংবাদিক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা আছেন। এফএফসির সর্বশেষ এই মিশন গত বুধবার যাত্রা শুরু করে। তাদের লক্ষ্য তথ্যের ওপর ইসরায়েলের অবৈধ অবরোধ ভাঙ্গা এবং গাজার বাস্তব চিত্র তুলে ধরা।
দুই বছর ধরে ইসরায়েল বিদেশি সাংবাদিকদের গাজায় প্রবেশে বাধা দিয়ে আসছে। এ সময়ে ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের ওপরও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে আসছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ২৭০ জনের বেশি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, অনেকে আটক ও কারাগারে বন্দী আছেন।
ফেসবুক পোস্টে শহীদুল বলেন, ‘আমরা মূলত কোনও মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর জন্য যাচ্ছি না। আমাদের প্রধান লক্ষ্য ইসরায়েলের অবৈধ অবরোধ ভাঙা। আমরা সাংবাদিক ও চিকিৎসকদের ওপর ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদ জানাতে যাচ্ছি। আমরা বিশেষ করে মিডিয়ার ওপর এবং তথ্যের ওপর ইসরায়েলের অবৈধ অবরোধ ভাঙতে চাই। আমরা গাজার বাস্তব পরিস্থিতি পুরো বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে চাই।’
শহীদুল আরও বলেন, ‘থাউজেন্ড ম্যাডলিনস এক অসাধারণ ধারণা। গাজায় গণহত্যা ঠেকাতে বিশ্বনেতাদের পুরোপুরি নিষ্ক্রিয়তা এবং ভণ্ডামির কারণে বিশ্বের সাধারণ জনগণ নিজেরাই পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হাজার জাহাজের এই ধারণাটি প্রতীকী। তবে নিঃসন্দেহে এভাবে একত্রিত হওয়া সমুদ্রযানের সবচেয়ে বড় বহর এটি।’
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় শনিবারও অন্তত ৭০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বোমা হামলা বন্ধের আহ্বান জানানোর পরও এ হামলা চলতে থাকে। এর আগে হামাস জানিয়েছিল, তারা ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার কিছু অংশ মেনে নিতে রাজি।
২ ঘণ্টা আগেইসরায়েলি অবরোধ ভাঙতে গাজা অভিমুখী ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র জাহাজ বহর আটকের পর ইসরায়েলি সেনারা অ্যাকটিভিস্টদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে সুইডেনের জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গও রয়েছেন।
৪ ঘণ্টা আগেঅনেক ফিলিস্তিনি বিস্ময় ও বিভ্রান্তিতে পড়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মেসেজিং অ্যাপে শতশত ফিলিস্তিনির পোস্টে ছড়িয়ে পড়ছে নানান প্রশ্ন—‘যুদ্ধ কি শেষ হয়ে গেছে?’, ‘এটা কি সত্যি, নাকি স্বপ্ন?’
৪ ঘণ্টা আগেট্রাম্পের গাজা শান্তি পরিকল্পনায় হামাসের আংশিক সমর্থনের পর বিশ্বজুড়ে আশাবাদ জেগেছে। কাতারসহ গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারীরাও এতে আশা খুঁজছেন। দুই বছর ধরে চলা গণহত্যা থামার সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে।
২১ ঘণ্টা আগে