মাহবুবুল আলম তারেক
দীর্ঘ ১৭ বছর পর কোনো গণমাধ্যমে সরাসরি সাক্ষাৎকার দিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিবিসি বাংলার সঙ্গে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি কথা বলেন তিনি। আজ সোমবার (৬ অক্টোবর) সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা হয়। সাক্ষাৎকারে তিনি বাংলাদেশের অভ্যুত্থান-পরবর্তী অস্থির রাজনীতি, জুলাই আন্দোলনের উত্তরাধিকার, তাঁর দেশে ফিরে আসার পরিকল্পনা এবং আসন্ন নির্বাচনের জন্য বিএনপির রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনা করেন।
বিগত আওয়ামী লীগ শাসনামলে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়েছিল। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের কয়েক সপ্তাহ পরপরই হাইকোর্ট তা তুলে নেয়। তবে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পরও তিনি দীর্ঘ ১৪ মাস কোনো গণমাধ্যমে সরাসরি কথা বলেননি। যদিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় ছিলেন বিএনপির এই শীর্ষ নেতা। প্রশ্ন উঠেছে হাসিনার পতনের পরও তারেক রহমান এত দিন কোনো গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেননি কেন?
গণমাধ্যমে তারেক রহমানের দীর্ঘ অনুপস্থিতি মূলত শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী নীতির ফল। ২০০৮ সালে নির্যাতনের অভিযোগ ও ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ মামলার মুখে তিনি চিকিৎসার জন্য লন্ডনে পাড়ি জমান। এরপর আদালত তাঁর বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। রাজনৈতিকভাবে তিনি কোণঠাসা হয়ে পড়েন। রাষ্ট্রীয় কৌশলে তিনি চিত্রিত হন ‘পলাতক’ হিসেবে।
হাসিনার শাসনামলে তারেক রহমান মিডিয়ায় অস্তিত্বহীন হয়ে ছিলেন। হাসিনা সরকার বাংলাদেশি মিডিয়াকে তাঁর বক্তব্য সম্প্রচার বা প্রকাশ থেকে নিষিদ্ধ করার জন্য আদালতের আদেশ জারি করে। একে সামগ্রিকভাবে বিএনপিকে প্রান্তিক করার জন্য একটি সুপরিকল্পিত কৌশল হিসেবে দেখা হয়। আর তা কেবল আইনি লাল ফিতা ছিল না; ছিল জোরপূর্বক ভয় দেখানো। মিডিয়া আউটলেটগুলো তা অমান্য করলে হুমকির মুখে পড়ত।
তারেক রহমান সোশ্যাল মিডিয়া এবং ভার্চুয়াল সমাবেশের মাধ্যমে বিএনপি কর্মীদের সাথে যোগাযোগ করলেও, মূলধারার আলোচনা থেকে কার্যকরভাবে তাঁর কণ্ঠস্বর মুছে ফেলা হয়েছিল। বাইরের জগতে মনে হয়েছিল তিনি যেন একেবারেই চুপ হয়ে গেছেন। বিবিসির আলোচ্য সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্ট বলেন যে তিনি কখনোই সত্যিকার অর্থে চুপ ছিলেন না—‘আমি দলের নেতা, কর্মী এবং সাধারণ মানুষের সাথে ক্রমাগত যোগাযোগ রেখেছি, কিন্তু মিডিয়ার উপর সরকারের দমনপীড়ন জনসাধারণের কাছে সেটাকে অদৃশ্য করে তুলেছিল।’
এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রাখা হয়েছিল ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে। এমনকি ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরও কয়েক সপ্তাহ তা বহাল ছিল। পরে হাইকোর্ট এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। তখন গণমাধ্যম তাঁর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ পায়। তবুও তিনি এতদিনেও কোনো গণমাধ্যমের মুখোমুখি হননি। কেবল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ভার্চুয়াল বক্তব্যের মাধ্যমে সীমিত যোগাযোগ রাখছিলেন।
এই নীরবতার পেছনে গভীর রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ থাকতে পারে। দেশ তখনও ছিল সহিংসতায় বিপর্যস্ত। জুলাই-অভ্যুত্থানে দুই হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়। এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার প্রক্রিয়া চালাচ্ছিল। এই পরিস্থিতিতে তারেক রহমানের নীরবতা তার সতর্কতার প্রতিফলন ছিল। তারেক রহমানের পুনরাবির্ভাবেও কৌশলগতভাবেই সময় বেছে নেওয়া হয়। এই বিলম্বের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণের কথা বলা যায়:
দীর্ঘস্থায়ী আইনি ও নিরাপত্তা ঝুঁকি: নিষেধাজ্ঞা ছাড়াও তারেক রহমান ৪০টিরও বেশি বিচারাধীন মামলায় আসামি ছিলেন। ২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলার মতো মামলায় অনুপস্থিতিতে তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে সেই রায় চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল। গ্রেপ্তারের ঝুঁকি এবং কর্তৃপক্ষের সবুজ সংকেতের অভাবে ২০২৫ সালের জুলাই মাসে তাঁর দেশে ফেরা স্থগিত রাখা হয়। তাঁর উপদেষ্টা মাহদী আমিন বলেন—তাঁর দেশে ফেরা ‘হাসিনার একনায়কতন্ত্রের সময়কার অবিচারের’ অবসান ঘটাতে ‘বিচারিক সংস্কার’ এর উপর নির্ভরশীল ছিল। হয়তো খুব তাড়াতাড়ি কথা বললে তিনি আইনি বিপাকেও পড়তে পারতেন।
রাজনৈতিক অস্থিরতা: অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশ ছিল বিশৃঙ্খল। আওয়ামী লীগের সহযোগীদের ওপর প্রতিশোধমূলক আক্রমণ, অর্থনৈতিক দুর্দশা এবং গণতন্ত্রপন্থী শক্তিগুলোর মধ্যে অন্তর্কোন্দল চলছিল। বিএনপির নেতারা এই পরিস্থিতিকে তাঁর ‘নিরাপত্তার জন্য ঝূঁকিপূর্ণ’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। বিএনপির তথ্য সম্পাদক এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান ২০২৪ সালের শেষের দিকে বলেন যে, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রচেষ্টার মধ্যে বিএনপির মনোযোগ মিডিয়ায় প্রচারণার চেয়ে ‘ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার’ ওপর বেশি ছিল।
বিএনপির জন্য কৌশলগত সংযম: তারেক রহমান দলীয় চ্যানেল এবং অনলাইনের মাধ্যমে যোগাযোগ রেখেছিলেন। তবে কোন বড় সাক্ষাৎকার পুরনো দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগকে আরও উস্কে দিতে পারত। অপেক্ষা করে তিনি বিএনপিকে এমন দায় থেকে দূরে রাখার কৌশল নেন। একে প্রতিশোধের বদলে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি তুলে ধরার প্রচেষ্টা বলতে পারেন সমর্থকেরা। তাই তিনি মূলধারার প্রচারের বাইরে থেকে স্থানীয় সমর্থন গড়ে তুলেছেন।
সংক্ষেপে, হাসিনার পতনের পরের সময়টি অত্যন্ত অস্থির ছিল। তাই তারেক রহমান নিজের নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক অবস্থানকে অগ্রাধিকার দিয়ে বড় ধরণের মিডিয়া উপস্থিতি এড়িয়ে গেছেন।
এখন কেন
বর্তমান সময়টি জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাবনা এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতির মিলনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই সময়ে সাক্ষাৎকার বিএনপির জোরেশোরে মাঠে নামার চালিকাশক্তি হয়ে উঠতে পারে।
অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৬-এর শুরুর দিকে নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা করছে। এই প্রেক্ষাপটে সাক্ষাৎকারে তিনি ঘোষণা করেছেন, ‘বাংলাদেশে আমার ফেরার সময় এসেছে।’ এটি নির্বাচনের সময়সূচির সঙ্গে যুক্ত। সম্ভবত ডিসেম্বরের মধ্যেই তিনি ফিরে আসবেন। বিএনপির সমর্থকদের একত্রিত করে ভোটের আগে দলকে প্রস্তুত করতেই মূলত এই বার্তা দেওয়া হয়েছে। তারেক রহমান নিজেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে প্রস্তুত একজন ‘রাজনৈতিক কর্মী’ হিসেবে উপস্থাপন করছেন।
আর সম্প্রতি হাইকোর্টের রায়ে ২০১৮ সালের সাজা বাতিল তাঁর দেশে ফেরায় আইনি বাধাও কমিয়েছে। এই বিলম্ব তারেক রহমানের সতর্কতার পরিচায়ক ও উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। তারেক রহমানের পুনরুত্থান বিএনপির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দেশের রাজনৈতিক মাঠ এখন আরও উষ্ণ হয়ে উঠবে। সমালোচকরা বলছেন, এটি বংশানুক্রমিক রাজনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে। যদিও তাঁর সমর্থকদের কাছে তা গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণের সুযোগ। তবে তারেক রহমানের ফিরে আসা দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করবে না কি বিভক্ত করবে, তা নির্ভর করছে সংস্কারের প্রতিশ্রুতির ওপর। এখন পর্যন্ত, নির্বাসনে থাকা মানুষটি সকলকে মনে করিয়ে দিয়েছেন—রাজনীতিতে সময়ই সব।
লেখক: সাংবাদিক ও অনুবাদক
দীর্ঘ ১৭ বছর পর কোনো গণমাধ্যমে সরাসরি সাক্ষাৎকার দিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিবিসি বাংলার সঙ্গে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি কথা বলেন তিনি। আজ সোমবার (৬ অক্টোবর) সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা হয়। সাক্ষাৎকারে তিনি বাংলাদেশের অভ্যুত্থান-পরবর্তী অস্থির রাজনীতি, জুলাই আন্দোলনের উত্তরাধিকার, তাঁর দেশে ফিরে আসার পরিকল্পনা এবং আসন্ন নির্বাচনের জন্য বিএনপির রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনা করেন।
বিগত আওয়ামী লীগ শাসনামলে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়েছিল। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের কয়েক সপ্তাহ পরপরই হাইকোর্ট তা তুলে নেয়। তবে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পরও তিনি দীর্ঘ ১৪ মাস কোনো গণমাধ্যমে সরাসরি কথা বলেননি। যদিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় ছিলেন বিএনপির এই শীর্ষ নেতা। প্রশ্ন উঠেছে হাসিনার পতনের পরও তারেক রহমান এত দিন কোনো গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেননি কেন?
গণমাধ্যমে তারেক রহমানের দীর্ঘ অনুপস্থিতি মূলত শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী নীতির ফল। ২০০৮ সালে নির্যাতনের অভিযোগ ও ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ মামলার মুখে তিনি চিকিৎসার জন্য লন্ডনে পাড়ি জমান। এরপর আদালত তাঁর বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। রাজনৈতিকভাবে তিনি কোণঠাসা হয়ে পড়েন। রাষ্ট্রীয় কৌশলে তিনি চিত্রিত হন ‘পলাতক’ হিসেবে।
হাসিনার শাসনামলে তারেক রহমান মিডিয়ায় অস্তিত্বহীন হয়ে ছিলেন। হাসিনা সরকার বাংলাদেশি মিডিয়াকে তাঁর বক্তব্য সম্প্রচার বা প্রকাশ থেকে নিষিদ্ধ করার জন্য আদালতের আদেশ জারি করে। একে সামগ্রিকভাবে বিএনপিকে প্রান্তিক করার জন্য একটি সুপরিকল্পিত কৌশল হিসেবে দেখা হয়। আর তা কেবল আইনি লাল ফিতা ছিল না; ছিল জোরপূর্বক ভয় দেখানো। মিডিয়া আউটলেটগুলো তা অমান্য করলে হুমকির মুখে পড়ত।
তারেক রহমান সোশ্যাল মিডিয়া এবং ভার্চুয়াল সমাবেশের মাধ্যমে বিএনপি কর্মীদের সাথে যোগাযোগ করলেও, মূলধারার আলোচনা থেকে কার্যকরভাবে তাঁর কণ্ঠস্বর মুছে ফেলা হয়েছিল। বাইরের জগতে মনে হয়েছিল তিনি যেন একেবারেই চুপ হয়ে গেছেন। বিবিসির আলোচ্য সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্ট বলেন যে তিনি কখনোই সত্যিকার অর্থে চুপ ছিলেন না—‘আমি দলের নেতা, কর্মী এবং সাধারণ মানুষের সাথে ক্রমাগত যোগাযোগ রেখেছি, কিন্তু মিডিয়ার উপর সরকারের দমনপীড়ন জনসাধারণের কাছে সেটাকে অদৃশ্য করে তুলেছিল।’
এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রাখা হয়েছিল ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে। এমনকি ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরও কয়েক সপ্তাহ তা বহাল ছিল। পরে হাইকোর্ট এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। তখন গণমাধ্যম তাঁর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ পায়। তবুও তিনি এতদিনেও কোনো গণমাধ্যমের মুখোমুখি হননি। কেবল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ভার্চুয়াল বক্তব্যের মাধ্যমে সীমিত যোগাযোগ রাখছিলেন।
এই নীরবতার পেছনে গভীর রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ থাকতে পারে। দেশ তখনও ছিল সহিংসতায় বিপর্যস্ত। জুলাই-অভ্যুত্থানে দুই হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়। এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার প্রক্রিয়া চালাচ্ছিল। এই পরিস্থিতিতে তারেক রহমানের নীরবতা তার সতর্কতার প্রতিফলন ছিল। তারেক রহমানের পুনরাবির্ভাবেও কৌশলগতভাবেই সময় বেছে নেওয়া হয়। এই বিলম্বের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণের কথা বলা যায়:
দীর্ঘস্থায়ী আইনি ও নিরাপত্তা ঝুঁকি: নিষেধাজ্ঞা ছাড়াও তারেক রহমান ৪০টিরও বেশি বিচারাধীন মামলায় আসামি ছিলেন। ২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলার মতো মামলায় অনুপস্থিতিতে তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে সেই রায় চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল। গ্রেপ্তারের ঝুঁকি এবং কর্তৃপক্ষের সবুজ সংকেতের অভাবে ২০২৫ সালের জুলাই মাসে তাঁর দেশে ফেরা স্থগিত রাখা হয়। তাঁর উপদেষ্টা মাহদী আমিন বলেন—তাঁর দেশে ফেরা ‘হাসিনার একনায়কতন্ত্রের সময়কার অবিচারের’ অবসান ঘটাতে ‘বিচারিক সংস্কার’ এর উপর নির্ভরশীল ছিল। হয়তো খুব তাড়াতাড়ি কথা বললে তিনি আইনি বিপাকেও পড়তে পারতেন।
রাজনৈতিক অস্থিরতা: অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশ ছিল বিশৃঙ্খল। আওয়ামী লীগের সহযোগীদের ওপর প্রতিশোধমূলক আক্রমণ, অর্থনৈতিক দুর্দশা এবং গণতন্ত্রপন্থী শক্তিগুলোর মধ্যে অন্তর্কোন্দল চলছিল। বিএনপির নেতারা এই পরিস্থিতিকে তাঁর ‘নিরাপত্তার জন্য ঝূঁকিপূর্ণ’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। বিএনপির তথ্য সম্পাদক এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান ২০২৪ সালের শেষের দিকে বলেন যে, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রচেষ্টার মধ্যে বিএনপির মনোযোগ মিডিয়ায় প্রচারণার চেয়ে ‘ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার’ ওপর বেশি ছিল।
বিএনপির জন্য কৌশলগত সংযম: তারেক রহমান দলীয় চ্যানেল এবং অনলাইনের মাধ্যমে যোগাযোগ রেখেছিলেন। তবে কোন বড় সাক্ষাৎকার পুরনো দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগকে আরও উস্কে দিতে পারত। অপেক্ষা করে তিনি বিএনপিকে এমন দায় থেকে দূরে রাখার কৌশল নেন। একে প্রতিশোধের বদলে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি তুলে ধরার প্রচেষ্টা বলতে পারেন সমর্থকেরা। তাই তিনি মূলধারার প্রচারের বাইরে থেকে স্থানীয় সমর্থন গড়ে তুলেছেন।
সংক্ষেপে, হাসিনার পতনের পরের সময়টি অত্যন্ত অস্থির ছিল। তাই তারেক রহমান নিজের নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক অবস্থানকে অগ্রাধিকার দিয়ে বড় ধরণের মিডিয়া উপস্থিতি এড়িয়ে গেছেন।
এখন কেন
বর্তমান সময়টি জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাবনা এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতির মিলনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই সময়ে সাক্ষাৎকার বিএনপির জোরেশোরে মাঠে নামার চালিকাশক্তি হয়ে উঠতে পারে।
অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৬-এর শুরুর দিকে নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা করছে। এই প্রেক্ষাপটে সাক্ষাৎকারে তিনি ঘোষণা করেছেন, ‘বাংলাদেশে আমার ফেরার সময় এসেছে।’ এটি নির্বাচনের সময়সূচির সঙ্গে যুক্ত। সম্ভবত ডিসেম্বরের মধ্যেই তিনি ফিরে আসবেন। বিএনপির সমর্থকদের একত্রিত করে ভোটের আগে দলকে প্রস্তুত করতেই মূলত এই বার্তা দেওয়া হয়েছে। তারেক রহমান নিজেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে প্রস্তুত একজন ‘রাজনৈতিক কর্মী’ হিসেবে উপস্থাপন করছেন।
আর সম্প্রতি হাইকোর্টের রায়ে ২০১৮ সালের সাজা বাতিল তাঁর দেশে ফেরায় আইনি বাধাও কমিয়েছে। এই বিলম্ব তারেক রহমানের সতর্কতার পরিচায়ক ও উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। তারেক রহমানের পুনরুত্থান বিএনপির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দেশের রাজনৈতিক মাঠ এখন আরও উষ্ণ হয়ে উঠবে। সমালোচকরা বলছেন, এটি বংশানুক্রমিক রাজনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে। যদিও তাঁর সমর্থকদের কাছে তা গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণের সুযোগ। তবে তারেক রহমানের ফিরে আসা দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করবে না কি বিভক্ত করবে, তা নির্ভর করছে সংস্কারের প্রতিশ্রুতির ওপর। এখন পর্যন্ত, নির্বাসনে থাকা মানুষটি সকলকে মনে করিয়ে দিয়েছেন—রাজনীতিতে সময়ই সব।
লেখক: সাংবাদিক ও অনুবাদক
আবুল হাশিমের রাজনীতি ও ধর্মাচিন্তা নিয়ে পাঠক সমাজে বেশ নীরবতা লক্ষ করা যায়। এই নীরবতার একটা কারণ তাঁর রাজনৈতিক প্রকল্পের ব্যর্থতা। বাংলাদেশে বিদ্যমান কোনো রাজনৈতিক দলের তত্ত্ব-কাঠামোয় তিনি আঁটেন না। তাই তাঁকে নিয়ে আলোচনাও হয় কম। অর্থাৎ আবুল হাশিমের চিন্তার সমগ্র অংশ না হলেও বিভিন্ন অংশকে সমকালের জন্
৬ ঘণ্টা আগেজুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের বিষয়ে একমত হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। এটি খুবই ইতিবাচক একটি পদক্ষেপ। জুলাই সনদ দেশের ভবিষ্যতের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এতে বিচার প্রক্রিয়া এবং নতুন বাংলাদেশ গঠনের মতো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে।
৮ ঘণ্টা আগেসেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে নেপালে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই জেনজি বিপ্লব ঘটে। সারা দেশে প্রশ্ন উঠেছিল—‘তাদের নেতা কে?’ কিন্তু আসল প্রশ্ন ছিল ভিন্ন। অতীতে কোনো বিপ্লব শত্রুর কারণে ধ্বংস হয়নি। ধ্বংস হয়েছে সেইসব নেতাদের কারণে যারা বিপ্লবের নামে ক্ষমতা দখল করেছিল। এবার কোনো নেতা না থাকাটাই ছিল সবচেয়ে বড়
৯ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশ ক্রিকেটের আকাশে আবারও নির্বাচন নামের এক ভোর ফুটছে। অথচ এই ভোরের আলোয় ঝলমল করছে না কোনো নতুন সূর্য; বরং ধোঁয়াটে এক কুয়াশা, যেখানে আলোও যেন পথ হারায়।
১০ ঘণ্টা আগে