leadT1ad

নাগরিক মর্যাদা নাকি টাকা, বাসা ভাড়া পেতে আসলে কী লাগে

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা
প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ২৩: ০৯
স্ট্রিম গ্রাফিক

বগুড়ার মেয়ে তামান্না তাসনিম। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সূত্রে তাঁর ঢাকায় আসা। থাকার জন্য বাসা খুঁজছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে। অনেক খোঁজাখুজির পর পছন্দসই বাসা পেলেন। কিন্তু শর্ত জুড়ে দেওয়া হলো—‘শুধু ফ্যামিলি’। প্রায় একই দশা নোমান হাসানের। গত মাসেই একটি ব্যাংকে চাকরি পেয়েছেন। অফিস মতিঝিলে। এক মাস ধরে ‘ব্যাচেলর’ বাসা খুঁজছেন। কিন্তু পাচ্ছেন না।

রাজধানী ঢাকায় কয়েক কোটি মানুষের বসবাস। তবে তাঁদের অধিকাংশই থাকেন ভাড়া বাসায়। প্রতিনিয়ত চাকরি, পড়াশোনাসহ নানা কারণে রাজধানীতে পাড়ি জমাতে হচ্ছে। কিন্তু ঢাকায় এসেই যে বিষয়টি নিয়ে বিপাকে পড়তে হয় সেটি হলো—‘বাসা ভাড়া’। যেমনটি হয়েছে তামান্না ও নোমানের সঙ্গে। বাসিন্দারা বলছেন, বিশেষ করে ব্যাচেলরদের জন্য বাসা ভাড়া পাওয়া মুশকিল।

নোমান বলছিলেন, ‘ব্যাচেলর শুনলেই ভাড়া দিতে চায় না। বেশিরভাগ বাসায় ‘টু লেট’ লেখা দেখে ফোন করি। ব্যাচেলর শুনলে আর রেসপন্স করে না।’

রাজধানীর কয়েক এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাসা ভাড়া নেওয়া নিয়ে ‘বিপত্তি’ নতুন কিছু নয়। আর্থিকভাবে সক্ষম হলেই যে সহজে পছন্দমতো বাসা পাওয়া যায় তা নয়। মালিকের পক্ষ থেকে জুড়ে দেওয়া হয় নানান শর্ত। তখন নতুন করে ভাবতে হয় ‘ওই বাসাটি ভাড়া নেব কি-না’। সবশেষেও নানা বিবেচনায় মালিক সিদ্ধান্ত দেন, তিনি বাসাটি ভাড়া দেবেন কি-না।

এই যেমন বিবাহ বিচ্ছেদের পর হন্যে হয়ে একটি ফ্ল্যাট বাসা খুঁজছেন কর্মজীবী নাহিদা তাবাসসুম। বাধ্য হয়ে থাকছেন ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে। স্ট্রিমকে নাহিদা বলেন, ‘অনেকদিন ধরেই বাসা খুঁজছি। যত জায়গায় বাসা পছন্দ হয়েছে, টাকা-পয়সা নিয়ে সমস্যা হয়নি। সমস্যা একটাই, আমার হাজবেন্ড আমার সঙ্গে থাকবেন না। একা নারীকে বাড়িওয়ালা ঘর ভাড়া দেবেন না। সবকিছু ফাইনাল হলেও এই একটা কারণেই আমি বাসা পাচ্ছি না।’

বাড়িওয়ালারা কী বলছেন

রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে বাসা ভাড়ার বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে। দেয়ালে সাঁটানো এসব বিজ্ঞাপনে লেখা দেখা যায়—‘শুধুমাত্র ফ্যামিলি’। অনেকে বাড়িওয়ালা বাসা ফাঁকা রাখবেন, কিন্তু ব্যাচেলরদের কাছে ভাড়াই দেবেন না।

সূত্রাপুরের তনুগঞ্জ লেনের একটি ৮ তলা বাড়ির মালিক মাজেদ চৌধুরি। তাঁর ভাড়া দেওয়ার মতো দুটো ফ্ল্যাট বর্তমানে ফাঁকা। যাঁরা ভাড়া নিতে আসছেন তাঁদের বেশির ভাগই ব্যাচেলর। তিনি ব্যাচেলর ভাড়া দিতে চান না।

স্ট্রিমকে মাজেদ চৌধুরী বলেন, ‘ব্যাচেলর ভাড়া দিলে অনেক সমস্যা। দেরি করে বাসায় ফেরে, দারোয়ানদের সমস্যা হয়। আর নিয়মিত বাসায় হৈ-হুল্লোড় করে। অন্য ভাড়াটিয়ারা এসব নিয়ে অভিযোগ করে।’

তবে মালিটোলার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বাড়িওয়ালা স্ট্রিমকে জানান, অনৈতিক কিছু না করলে কোনো ভাড়াটিয়া নিয়েই আমার কোনো সমস্যা নেই। মানুষ নিজের সুবিধামতো জীবনযাপন করবে, এখানে আমি কথা বলার কেউ না। নিয়মিত ভাড়া পেলেই আমার চলবে।’

আইনে যা আছে

বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কোনো আইন দেশে নেই। তবে বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯১ নামে একটি আইন আছে। আইনটির মূল উদ্দেশ্য হলো বাড়ির ভাড়া অতিরিক্ত বৃদ্ধি রোধ এবং ভাড়াটিয়াদের সুরক্ষা প্রদান।

আইন অনুযায়ী, বাড়িওয়ালারা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত ভাড়া বাড়াতে পারেন না এবং বাড়ির অভ্যন্তরীণ অবস্থা বাসযোগ্য রাখতে বাধ্য থাকবেন। অন্যদিকে, ভাড়াটিয়াদের অধিকার রয়েছে নিরাপদ, স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থানে বসবাসের, ভাড়া নির্ধারণে যৌক্তিকতা পাওয়ার এবং নিজের সম্মতি ছাড়া উচ্ছেদ থেকে বাঁচার। পাশাপাশি, ভাড়াটিয়ারা ভাড়ার জন্য বৈধ রসিদ পাওয়ার অধিকার রাখেন এবং ভাড়া সংক্রান্ত কোনো সমস্যা হলে তারা নিয়ন্ত্রক বা আদালতে লিখিত অভিযোগ করতে পারেন।

ব্যাচেলরদের ‘জটিল বাস্তবতা’

বাসা ভাড়া সংক্রান্ত সমস্যাটি নাগরিকদের বিশেষ করে ব্যাচেলরদের জীবনের জটিল বাস্তবতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রাশেদা ইরশাদ নাসির স্ট্রিমকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটা একটা জটিল বাস্তবতা। আন্তর্জাতিকভাবে এই সংক্রান্ত আইনগুলো মানতে হয়। কিন্তু আমরা একটা ট্র্যাডিশনাল সোসাইটিতে অভ্যস্ত। আমরা তা ভাঙতেও চাই না। ব্যাচেলরদের বাড়ি ভাড়া না দিতে চাওয়াকে যদি আমরা বাড়িওয়ালার সতর্কতার অংশ ধরি, অপরপক্ষ সেটা পছন্দ করে না। অন্যদিকে যারা ভাড়া নিতে চায় তাদের ব্যাপারে নিয়ম সহজ থাকা উচিত। আমরা এগুলো মধ্যস্থতা করি না, রেষারেষিতে চলে যায়।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত