.png)

মারুফ ইসলাম

‘যদি দ্রুত যেতে চাও, একা হাঁটো। আর যদি জীবন উপভোগ করতে চাও, অনেকের সাথে হাঁটো।’— হাঁটা নিয়ে এক আলোচনায় এমন দর্শনের কথা বলেছিলেন ইফতেখার মাহমুদ। তিনি যেন সেই একা হাঁটা মানুষের দলে। জীবন থেকে তাঁর দ্রুত প্রস্থান সেই দর্শনেরই প্রতিফলন করে। কোনো শিকলে বাঁধা পড়েননি তিনি, বরং শিকলকেই মুক্তি দিয়েছেন নিজের ভেতর থেকে। তাঁর মৃত্যু কোনো সমাপ্তি নয়—এ যেন এক অন্তহীন হাঁটার নতুন বাঁক।
হাঁটা নিয়ে এত কথা বলছি, কারণ ‘হাটা’ নিয়ে এক ধরনের গর্ব হতো আমার। ভাবতাম, আমার মতো হাঁটতে পারে না কেউ। একবার পুরান ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হেঁটে হেঁটে ধানমন্ডি ১৫ নম্বরের মেসে ফিরেছিলাম। আর কারও সাধ্য আছে, এতটা পথ হাঁটার?
আমার সেই গর্ব কাচের চুড়ির মতো ভেঙে পড়ে ইউটিউবে একটি ভিডিও দেখে। এক সৌম্য-কান্তি ভদ্রলোক ডায়াসের সামনে দাঁড়িয়ে বলছেন, তিনি বনানী থেকে উত্তরা হেঁটে গেছেন! ভদ্রলোকের নাম ইফতেখার মাহমুদ। পরে জানলাম, তিনি লেখক ও শিক্ষক।
রংপুরের নানাবাড়িতে ১৯৮০ সালের ৬ মে জন্ম নেওয়া এই মানুষটি শৈশবেই বুঝেছিলেন, জীবনের নিয়ম মানা মানেই সবসময় জীবন সুশৃঙ্খল নয়। তাই ক্যাডেট কলেজ থেকে পাওয়া শৃঙ্খলা তাঁকে বাঁধতে পারেনি। এমনকি বিসিএসের শান্ত-সুন্দর-নিরাপদ জীবনও তাঁকে আটকাতে পারেনি। তিনি বেছে নিলেন সাহিত্য, শিক্ষকতা আর চিন্তার অনিশ্চিত পথ। যাঁরা কেবল ফলাফল দেখেন, তাঁরা বুঝবেন না, এই সিদ্ধান্ত ছিল এক গভীর বিদ্রোহের নাম।
আইন পড়াতেন, কিন্তু পাঠ দিতেন জীবনের। ক্লাসরুমে দাঁড়িয়ে বলতেন, ‘ন্যায় কেবল আদালতের নয়, ন্যায়ের বাসা মানুষের ভিতরে।’ সেই ভিতরের ন্যায়ের চর্চাই ছিল তাঁর আসল অধ্যাপনা।
ইফতেখার মাহমুদ বই লিখেছেন বেশ কয়েকটি। ‘শিকড়ে শাখায় মেঘে’, ‘হে দিগ্বিদিক, হে অদৃশ্য’, ‘হুমায়ূন আহমেদের ভঙ্গি ও ভঙ্গুরতা’, ‘অনুপস্থিত’—এই বইগুলো পেয়েছে পাঠকপ্রিয়তাও। তাঁর প্রতিটি লেখা ছিল আসলে আত্মার আত্মজীবনী। তিনি যেন শব্দে শব্দে জীবন খনন করতেন। ঢাকা ওয়াকিং ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে একবার ‘হাঁটা’ শব্দটি নিয়ে টানা ২৭ মিনিট কথা বলেছিলেন। কি বিস্ময়! একটুও পুনরাবৃত্তি নয়, কেবল হাঁটা থেকে জীবনের দিকনির্দেশ খুঁজে ফিরেছেন।
ব্রেইন ক্যান্সার যখন তাঁর শরীরকে গ্রাস করছে, তখনো তিনি নিজেকে করুণার পাত্র হতে দেননি। কারও কাছে নরম মুখে বলেননি, ‘আমি অসুস্থ’। বরং হাসিমুখে খোঁজ নিয়েছেন অন্যের। তাঁর হাসি যেন বলে দিত, কষ্ট আড়াল করে মর্যাদায় বাঁচতে শেখো। এমন মানুষের শত্রু থাকা সম্ভব নয়। ছিলও না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শত্রুতা করল ক্যানসার।
ইফতেখার মাহমুদ একবার লিখেছিলেন, ‘থামাতে গেলে নিজেকেই থামতে হয়। বেঁধে রাখার অজুহাতে শিকলও কিন্তু বাঁধা পড়ে থাকে।’ ইফতেখার মাহমুদ থেমে গেলেন আজ। আর চিরতরে বেঁধে ফেললেন আমাদের।
আজ হেমন্তের রোদে, গাছের ছায়ায়, পাখির ডাকের ভীড়ে ইফতেখার মাহমুদ শুয়ে আছেন। কিন্তু আমরা জানি, তিনি ঠিক আমাদের পাশেই হাঁটছেন। তাঁর একমাত্র মেয়ে মনীষা জানে, তার বাবা হারিয়ে যাননি, তিনি কেবল এক অদৃশ্য পথে হাঁটতে শুরু করেছেন।
ইফতেখার মাহমুদ এখন নীরব, কিন্তু তাঁর চিন্তা, তাঁর লেখার ভেতরকার ন্যায়বোধ, আর সেই শিশুসুলভ হাসি আমাদের সময়ের এক আলোকিত দলিল হয়ে থাকবে।
জীবন এক দীর্ঘ হাঁটা। তিনি হাঁটছিলেন। এখন তিনি বাতাস হয়ে হাঁটছেন।
লেখক: কথাসাহিত্যিক

‘যদি দ্রুত যেতে চাও, একা হাঁটো। আর যদি জীবন উপভোগ করতে চাও, অনেকের সাথে হাঁটো।’— হাঁটা নিয়ে এক আলোচনায় এমন দর্শনের কথা বলেছিলেন ইফতেখার মাহমুদ। তিনি যেন সেই একা হাঁটা মানুষের দলে। জীবন থেকে তাঁর দ্রুত প্রস্থান সেই দর্শনেরই প্রতিফলন করে। কোনো শিকলে বাঁধা পড়েননি তিনি, বরং শিকলকেই মুক্তি দিয়েছেন নিজের ভেতর থেকে। তাঁর মৃত্যু কোনো সমাপ্তি নয়—এ যেন এক অন্তহীন হাঁটার নতুন বাঁক।
হাঁটা নিয়ে এত কথা বলছি, কারণ ‘হাটা’ নিয়ে এক ধরনের গর্ব হতো আমার। ভাবতাম, আমার মতো হাঁটতে পারে না কেউ। একবার পুরান ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হেঁটে হেঁটে ধানমন্ডি ১৫ নম্বরের মেসে ফিরেছিলাম। আর কারও সাধ্য আছে, এতটা পথ হাঁটার?
আমার সেই গর্ব কাচের চুড়ির মতো ভেঙে পড়ে ইউটিউবে একটি ভিডিও দেখে। এক সৌম্য-কান্তি ভদ্রলোক ডায়াসের সামনে দাঁড়িয়ে বলছেন, তিনি বনানী থেকে উত্তরা হেঁটে গেছেন! ভদ্রলোকের নাম ইফতেখার মাহমুদ। পরে জানলাম, তিনি লেখক ও শিক্ষক।
রংপুরের নানাবাড়িতে ১৯৮০ সালের ৬ মে জন্ম নেওয়া এই মানুষটি শৈশবেই বুঝেছিলেন, জীবনের নিয়ম মানা মানেই সবসময় জীবন সুশৃঙ্খল নয়। তাই ক্যাডেট কলেজ থেকে পাওয়া শৃঙ্খলা তাঁকে বাঁধতে পারেনি। এমনকি বিসিএসের শান্ত-সুন্দর-নিরাপদ জীবনও তাঁকে আটকাতে পারেনি। তিনি বেছে নিলেন সাহিত্য, শিক্ষকতা আর চিন্তার অনিশ্চিত পথ। যাঁরা কেবল ফলাফল দেখেন, তাঁরা বুঝবেন না, এই সিদ্ধান্ত ছিল এক গভীর বিদ্রোহের নাম।
আইন পড়াতেন, কিন্তু পাঠ দিতেন জীবনের। ক্লাসরুমে দাঁড়িয়ে বলতেন, ‘ন্যায় কেবল আদালতের নয়, ন্যায়ের বাসা মানুষের ভিতরে।’ সেই ভিতরের ন্যায়ের চর্চাই ছিল তাঁর আসল অধ্যাপনা।
ইফতেখার মাহমুদ বই লিখেছেন বেশ কয়েকটি। ‘শিকড়ে শাখায় মেঘে’, ‘হে দিগ্বিদিক, হে অদৃশ্য’, ‘হুমায়ূন আহমেদের ভঙ্গি ও ভঙ্গুরতা’, ‘অনুপস্থিত’—এই বইগুলো পেয়েছে পাঠকপ্রিয়তাও। তাঁর প্রতিটি লেখা ছিল আসলে আত্মার আত্মজীবনী। তিনি যেন শব্দে শব্দে জীবন খনন করতেন। ঢাকা ওয়াকিং ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে একবার ‘হাঁটা’ শব্দটি নিয়ে টানা ২৭ মিনিট কথা বলেছিলেন। কি বিস্ময়! একটুও পুনরাবৃত্তি নয়, কেবল হাঁটা থেকে জীবনের দিকনির্দেশ খুঁজে ফিরেছেন।
ব্রেইন ক্যান্সার যখন তাঁর শরীরকে গ্রাস করছে, তখনো তিনি নিজেকে করুণার পাত্র হতে দেননি। কারও কাছে নরম মুখে বলেননি, ‘আমি অসুস্থ’। বরং হাসিমুখে খোঁজ নিয়েছেন অন্যের। তাঁর হাসি যেন বলে দিত, কষ্ট আড়াল করে মর্যাদায় বাঁচতে শেখো। এমন মানুষের শত্রু থাকা সম্ভব নয়। ছিলও না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শত্রুতা করল ক্যানসার।
ইফতেখার মাহমুদ একবার লিখেছিলেন, ‘থামাতে গেলে নিজেকেই থামতে হয়। বেঁধে রাখার অজুহাতে শিকলও কিন্তু বাঁধা পড়ে থাকে।’ ইফতেখার মাহমুদ থেমে গেলেন আজ। আর চিরতরে বেঁধে ফেললেন আমাদের।
আজ হেমন্তের রোদে, গাছের ছায়ায়, পাখির ডাকের ভীড়ে ইফতেখার মাহমুদ শুয়ে আছেন। কিন্তু আমরা জানি, তিনি ঠিক আমাদের পাশেই হাঁটছেন। তাঁর একমাত্র মেয়ে মনীষা জানে, তার বাবা হারিয়ে যাননি, তিনি কেবল এক অদৃশ্য পথে হাঁটতে শুরু করেছেন।
ইফতেখার মাহমুদ এখন নীরব, কিন্তু তাঁর চিন্তা, তাঁর লেখার ভেতরকার ন্যায়বোধ, আর সেই শিশুসুলভ হাসি আমাদের সময়ের এক আলোকিত দলিল হয়ে থাকবে।
জীবন এক দীর্ঘ হাঁটা। তিনি হাঁটছিলেন। এখন তিনি বাতাস হয়ে হাঁটছেন।
লেখক: কথাসাহিত্যিক
.png)

ঐক্যমত্য কমিশন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের চুড়ান্ত সুপারিশমালা হস্তান্তর করেছে। তবে অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলের দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ কিছু মতামত ও প্রস্তাবনা পাশ কাটিয়ে যাওয়ায় এই সনদ এখন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু।
৩ ঘণ্টা আগে
প্রায় ৫৪ বছরের যাত্রাপথে বাংলাদেশের কৃষি বড় ধরনের রূপান্তরের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে। প্রতিনিয়ত আমাদের চাষযোগ্য জমির পরিমাণ কমছে এবং শিল্পায়ন বাড়ছে। ফলে আগামী দশকের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখন থেকেই পরিকল্পনা নেওয়া দরকার।
৮ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা একটি বহুধা বিভক্ত ও বৈষম্যমূলক কাঠামোতে পরিণত হয়েছে। নীতিগত পঙ্গুত্ব, শিক্ষকদের অবমূল্যায়ন এবং শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে নীতিনির্ধারকদের সংযোগহীনতা এর মূল কারণ, যা একটি জ্ঞানহীন প্রজন্ম ও সামাজিক বিভাজন তৈরি করছে।
১ দিন আগে
আগস্ট-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি ক্রান্তিকাল পার করছে। সামষ্টিক অর্থনীতিতে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও সার্বিক কর্মচাঞ্চল্যে গতি ফেরানো এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা, সংকট উত্তরণের পথ এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে ঢাকা স্ট্রিম-এর সঙ্গে কথা বলেছেন অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন
২ দিন আগে