leadT1ad

শেখ হাসিনার রায় কখন, কীভাবে কার্যকর হবে

প্রসিকিউটর জানান, দণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে যা করার ৩০ দিনের মধ্যেই করতে হবে। এ সময়সীমার পরে তারা আত্মসমর্পণ কিংবা গ্রেপ্তার হলে সরকার রায় কার্যকর করতে পারবে।

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ২১: ০৭
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

জুলাইয়ের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই মামলায় রাজসাক্ষী পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুর্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

ট্রাইব্যুনাল রায়ে উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনা ও কামালের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

১৭ নভেম্বর দেওয়া ট্রাইব্যুনালের এই রায়ের অনুলিপি আসামিরা কীভাবে পাবেন এবং তাদের মৃত্যুদণ্ড কখন কার্যকর হবে তা সামনে এসেছে। কারণ তিন আসামির মধ্যে শেখ হাসিনা ও কামাল পলাতক।

মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। তিনি জানান, রায় ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে আপিল না করলে ক্ষমতাচ্যুত দণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের আপিলের সুযোগ থাকবে না।

প্রসিকিউটর বলেন, ‘যদি তারা (দণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল) ৩০ দিনের মধ্যে আপিল না করেন, তাহলে তাঁরা গ্রেপ্তার হলে রায় কার্যকর হবে।’

ট্রাইব্যুনাল আইনের ২১ নম্বর ধারায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিলের অধিকার দেওয়া হয়েছে। এই ধারার ৩ উপধারায় বলা হয়েছে, দণ্ড ও সাজা প্রদান অথবা খালাস অথবা কোনো সাজা দেওয়ার তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হবে। এই সময়সীমা (রায় দেওয়ার ৩০ দিন পর) অতিক্রান্ত হওয়ার পর কোনো আপিল গ্রহণযোগ্য হবে না। আর ২১ নম্বর ধারার ৪ উপধারায় বলা হয়েছে, আপিল করার তারিখ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করতে হবে।

এক সাংবাদিক জানতে চান, শেখ হাসিনা ৩০ দিনের মধ্যে না আসেন, তিন মাস পরে আসেন, সেই ক্ষেত্রে আপিলের নিয়ম কী হবে? জবাবে প্রসিকিউটর তামিম বলেন, দেশে ফৌজদারি বিচারব্যবস্থায় দুটি পদ্ধতি আছে। একটি হলো– যেসব আইনে আপিলের সময়সীমা উল্লেখ নেই, সে ক্ষেত্রে আপিলের সময়সীমা নির্ধারণ হয় তামাদি আইন অনুযায়ী। তামাদি আইন অনুযায়ী, যেসব আপিলের সময়সীমা নির্ধারণ হয়, সেখানে আপিলের সময় পেরিয়ে গেলেও তামাদি আইনের পাঁচ ধারা অনুসারে ডিলে কন্ডোনেশনের (বিলম্ব মার্জনার আবেদন) সুযোগ আছে। অর্থাৎ দণ্ডবিধিতে যদি কাউকে শাস্তি দেওয়া হয়, তিনি নির্ধারিত সময়ে আপিল না করলেও পরে এসে আপিলের জন্য বিলম্ব মওকুফের জন্য আবেদন করতে পারেন।

তিনি বলেন, তবে বিশেষ আইনগুলোতে যেখানে আপিলের সময় আইনের মধ্যে বলা আছে, সে ক্ষেত্রে এই সময়সীমা পেরিয়ে গেলে বিলম্ব মার্জনার কোনো সুযোগ নেই। অর্থাৎ এই ৩০ দিন পার হয়ে গেলে ক্ষমা (বিলম্ব মাজর্না) করার আবেদনেরই আর কোনো সুযোগ নেই। সরকার এটি তখন কার্যকর করবে।

আরেক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, যা করার এই ৩০ দিনের মধ্যেই করতে হবে শেখ হাসিনা ও কামালকে? জবাবে প্রসিকিউটর বলেন, ‘আইন অনুযায়ী তা-ই হবে। ৩০ দিন পার হয়ে গেলে তারা গ্রেপ্তার হলে রায় কার্যকর হবে।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপিল বিভাগের একটি অথরিটি (কর্তৃত্ব) আছে কমপ্লিট জাস্টিস (পূর্ণ) করা। আইনে পরিষ্কার করা আছে, যদি কোনো বিশেষ আইনে আপিলের সময়সীমা নির্ধারণ করা থাকে, ওইটা পার হয়ে গেলে আর এই বিলম্ব সময় মওকুফ করা হবে না।

রায়ের পরবর্তী ধাপ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তামিম বলেন, পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনাল ১৭ নভেম্বর প্রথম রায় দিয়েছেন। রায়ের শেষ অংশে পরিষ্কারভাবে বলা আছে, একটি সার্টিফাইড অনুলিপি প্রসিকিউশন পাবে। মামলায় উপস্থিত একমাত্র আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন একটি কপি পাবেন।

তিনি জানান, মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকরের জন্য অনুলিপি ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের (জেলা প্রশাসক) কাছে পাঠানো হবে। রায়ের দাপ্তরিক কাজ শেষ হলেই এই কপি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছানো হবে।

রায়ের অনুলিপি পলাতক আসামিরা পাবেন কিনা– প্রশ্নে প্রসিকিউটর তামিম বলেন, যারা পলাতক, তারা ৩০ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণ করেন বা গ্রেপ্তার হন, তাহলে বিনা খরচে রায়ের একটি সার্টিফাইড কপি তারা পাবেন।

সাবেক আইজিপি মামুন কী এখন জামিনের আবেদন করতে পারবেন– এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালে তারা (দণ্ডপ্রাপ্তরা) আর কেউ কিছু চাইতে পারবেন না। ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক শেষ। এখন ট্রাইব্যুনালের কাছে তারা শুধু এই মামলার সার্টিফাইড কপি চাইতে পারবেন, সাক্ষীর জবানবন্দির সার্টিফাইড কপি চাইতে পারবেন বা যেসব নথি আছে, তা চাইতে পারবেন। তাদের এখন যত চাওয়া, তা নিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল বিভাগে আপিল করতে হবে। আপিল ফাইলিং অবস্থায় জামিন চাইতে পারবেন।

মামুনের পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের সাজায় জুলাই যোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা অসন্তুষ্ট। তারা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন যে, এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে চান। এ বিষয়ে প্রসিকিউটর তামিম বলেন, তারা যদি চান, আইন অনুযায়ী ৩০ দিনের মধ্যে আপিল বিভাগে যেতে পারবেন।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত