leadT1ad

জুলাই সনদের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ, দিনভর যানজট-ভোগান্তি

আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, যতদিন পর্যন্ত জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হয়, ততদিন তাঁরা শাহবাগে অবস্থান করবেন। রাত নয়টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অবরোধ চলছে।

স্ট্রিম প্রতিবেদকঢাকা
প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২৫, ২১: ৩০
শাহবাগে 'জুলাই যোদ্ধাদের' আন্দোলন চলাকালে পথচলতি মানুষের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বাগবিতণ্ডা হয়। স্ট্রিম ছবি

পা টেনে টেনে হাঁটছেন ওমর ফারুক। তাঁর এক হাতে ছাতা, অন্য হাতে ব্যান্ডেজ। বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা শেষে নীলক্ষেত যাচ্ছেন তিতুমীর কলেজের এই শিক্ষার্থী। তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘গতকাল এক্সিডেন্ট করেছি। আজ মহাখালী থেকে শাহবাগ এসে দেখি রাস্তা বন্ধ। রিকশা, গাড়ি কিছুই পাচ্ছি না। বাধ্য হয়ে হেঁটেই যাচ্ছি।‘

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সকাল ১১টায় শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত এবং শহীদ পরিবারের সদস্যরা। ‘জুলাই যোদ্ধা সংসদ’ এর ব্যানারে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন সারাদেশ থেকে আসা প্রায় দেড় হাজার মানুষ। তাঁদের দাবি জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং স্থায়ী বিধানে যুক্ত করা।

কর্মসূচি চলাকালে মৎস্যভবন মোড়, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, শাহবাগ থানা ও কাঁটাবন এলাকার রাস্তা বন্ধ করে দেন ‘জুলাই যোদ্ধারা’। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, যতদিন পর্যন্ত জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হয়, ততদিন তাঁরা শাহবাগে অবস্থান করবেন। রাত নয়টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অবরোধ চলছে।

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থেকে এসেছেন মোহাম্মদ রুবেল মিয়া। তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমরা মির্জাপুর থেকে ২৫ জনের মতো এসেছি। গত বছরের জুলাইয়ে গুলি খাইছি। এই জুলাইয়ে সনদ বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন করতেছি। আমাদের কষ্টের শেষ নাই। দেশের জন্য জীবন দিছি, এখন মনে হয় স্বীকৃতির জন্যও জীবন দেওয়া লাগবে।‘

জুলাই সনদের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই। স্ট্রিম ছবি
জুলাই সনদের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই। স্ট্রিম ছবি

রাজধানীর মিরপুর-১২ এলাকায় জুস এবং খেজুরের দোকান আছে মঈনুল ইসলামের। নিজের ব্যবসা বন্ধ করে জুলাই সনদের দাবি নিয়ে এসেছেন শাহবাগে। আহত শরীরের ছবি দেখিয়ে তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমার শরীরের ৪০টার বেশি ছররা গুলি লেগেছে। অনেকগুলো এখনও বের করতে পারি নাই। আমরা জীবন দিতে ভয় করি নাই কিন্তু এরা সনদ দিতে ভয় পাচ্ছে। কী হাস্যকর কথা! আমরাও এর শেষ দেখে ছাড়বো। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগ ছাড়বো না।’

এদিকে দুপুর ১২টা থেকে ঢাকায় বৃষ্টি হচ্ছে। এমন দিনে শাহবাগ মোড় অবরোধ করায় যানজট তৈরি হয় আশপাশের এলাকায়। দুর্ভোগে পড়েছেন বারডেম, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা রোগী, অফিসকর্মী, এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং সাধারণ যাত্রীরা। যানবাহন না পেয়ে ক্ষোভও ঝেড়েছেন অনেকে। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়েছেন অনেক ভুক্তভোগী।

রাজধানীর জুরাইন থেকে ভাগ্নি রেশমাকে নিয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেন নাজমা আক্তার। সকালে ঠিকঠাক আসতে পারলেও ফিরতি পথে পড়েছেন ভোগান্তিতে। যানবাহন না পেয়ে বসে আছেন শাহবাগ থানার সামনে। তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘পুরা এলাকাডা বন্ধ কইরা দিছে। এরা কী মানুষ! কোনো গাড়ি পাইতেছি না। আমার রোগী হাঁটতে পারতেছে না। আবার তাঁরে আমি কোলেও নিতে পারতেছি না। কিভাবে বাড়ি যাবো, কিছুই বুঝতে পারতেছি না।’

পুলিশের রোড ব্লকার ব্যবহার করে সড়ক অবরোধ করেছেন আন্দোলনকারীরা। শাহবাগ, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই। স্ট্রিম ছবি
পুলিশের রোড ব্লকার ব্যবহার করে সড়ক অবরোধ করেছেন আন্দোলনকারীরা। শাহবাগ, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই। স্ট্রিম ছবি

আন্দোলনকারীরা অ্যাম্বুলেন্স ছেড়ে দিচ্ছেন। তবে ভোগান্তিতে পড়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ডাক্তার আসিফ মাহমুদ জীবন। স্ট্রিমকে আসিফ বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে আমিও ছিলাম। তাঁরা আন্দোলন করুক। দাবি জানাক তাতে কোনো সমস্যা নাই। আমি তাঁদের দাবির সঙ্গে একমত কিন্তু রাস্তা আটকে মানুষকে কষ্ট দিয়ে এসব করার তো কোনো মানে নাই।’

জনদুর্ভোগের বিষয়টি নিয়ে জুলাই যোদ্ধা সংসদের সদস্যসচিব মোহাম্মদ আপন স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমার সহযোদ্ধারা রাত তিনটা-চারটায় শাহবাগ আসা শুরু করে। আমি সকাল সাতটা থেকে এখানে অবস্থান করছি। আমরা ১০টা পর্যন্ত ফুটওভার ব্রিজের ওপর দাঁড়ায়ে ছিলাম। আমাদের সব লোক আসার পর চিন্তা করলাম, আজকে তো এইচএসসি পরীক্ষা, মানুষের অফিস আছে। তাদের ভোগান্তিতে ফেলা যাবে না। তাই ছাত্ররা পরীক্ষায় বসার পর, কর্মজীবীরা অফিসে ঢোকার পর আমরা রাস্তা অবরোধ করি।’

পরবর্তী কর্মসূচি বিষয়ে জানতে চাইলে আপন বলেন, ‘আমরা অর্ধমৃত। মরা মানুষ। মরা মানুষ তো লড়তে পারে না। লাশ পড়ে আছে এখানে। যখন দাফন হবে, তখন রাস্তা পরিষ্কার হবে। আই মিন, যখন জুলাই ঘোষণাপত্র দেবে, তখন এই লাশ সরে যাবে।’

আন্দোলন চলাকালে দুপুরের পর শাহবাগ এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম।

মাসুদ আলম স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমরা আলোচনা করছি। কথা বলছি। এখানে জোর করলে, বল প্রয়োগ করলে একটা ঝামেলা হবে। সেটা আমরা জানি। তারচেয়ে ওরা এখানে থাকুক। জনগণ বুঝুক, দুর্দশা যে হচ্ছে, তাঁদের সাফারিংসটা যে হচ্ছে, কেন হচ্ছে? কারা করছে? এই জিনিসটা জনগণ বুঝুক।’

দুর্ভোগ নিরসনে পুলিশের দায় কী প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমাদের দায় আছে জন্যই সকাল থেকে কাজ করছি। উপদেষ্টা মহোদয় এবং কমিশনারের সঙ্গে কথা বলছি। তাঁরা এখানে আসবেন।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত