leadT1ad

পুলিশি হেফাজতে ইশতিয়াকের মৃত্যু: আপিলের রায় সোমবার পর্যন্ত মুলতবি

স্ট্রিম প্রতিবেদকঢাকা
প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০২৫, ২০: ৫১
নিহত ইশতিয়াক হোসেন (জনি)। সংগৃহীত ছবি

ঢাকার পল্লবী থানায় পুলিশের হেফাজতে থাকার সময় নির্যাতনের শিকার হন গাড়িচালক ইশতিয়াক হোসেন (জনি)। ২০১৪ সালের এই ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার আপিলের ওপর রায় ঘোষণা শুরু করেছেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার (১০ আগস্ট) বেলা পৌনে ১১টায় রায় প্রদান শুরু করেন এবং বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ঘোষণা চালিয়ে আগামীকাল সোমবার (১১ আগস্ট) পরবর্তী রায় ঘোষণার সময় নির্ধারণ করেছেন।

মামলাটি ২০১৩ সালে প্রণীত নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনের অধীনে দায়ের করা প্রথম মামলা। ২০১৪ সালের ৭ আগস্ট ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলাটি দায়ের করে নিহত ইশতিয়াক হোসেনের ভাই ইমতিয়াজ হোসেন।

দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়ার পর ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ওই আদালত পল্লবী থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) জাহিদুর রহমান, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রাশেদুল হাসান ও এএসআই কামরুজ্জামানসহ পাঁচ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১ লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেন। একই সঙ্গে প্রত্যেককে ২ লাখ টাকা করে বাদী বা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেন। অপরদিকে পুলিশের সোর্স সুমন ও রাসেল সাত বছর কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।

এই রায়ের বিরুদ্ধে জাহিদুর রহমান, রাশেদুল হাসান ও রাসেল তিন আসামি ২০২০ সালে হাইকোর্টে পৃথক আপিল করেন। ২০২১ সালে হাইকোর্ট আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। গত ৯ জুলাই থেকে আপিল শুনানি শুরু হয়। ৭ আগস্ট শুনানি শেষে আদালত রায়ের দিন নির্ধারণ করেন। আজ রোববার প্রথম দিনের রায় প্রদান শুরু হয়।

রায় ঘোষণার সময় আসামিপক্ষে সিনিয়র আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও আইনজীবী মো. আবদুর রাজ্জাক এবং রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বদিউজ্জামান তপাদার আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বাদীপক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস এম রেজাউল করিম।

আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. আবদুর রাজ্জাক জানান, প্রথম দিনের রায়ে মামলার রাষ্ট্রপক্ষের ২৪ জন সাক্ষীর বক্তব্য ও তাদের জেরা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে রায় ঘোষণা এখনো অসম্পূর্ণ থাকায় আগামীকাল তা চালিয়ে নেওয়া হবে।

মামলার পটভূমি ও ঘটনা

মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলে পল্লবীর ১১ নম্বর সেকশনের বি ব্লকের ইরানি ক্যাম্প এলাকার মো. বিল্লালের গায়েহলুদের অনুষ্ঠানে পুলিশের সোর্স সুমন নারীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। এ সময় সেখানে থাকা ইশতিয়াক ও তার ভাই ইমতিয়াজ সুমনের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়ে। সুমনের ফোনে পুলিশ আসে এবং ইশতিয়াক ও ইমতিয়াজকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে দুই ভাইকে পুলিশের হাতে নির্যাতন করা হয়। ইশতিয়াকের অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে এবং তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মামলায় বলা হয়, ওই ঘটনায় ২০১৪ সালের ৭ আগস্ট ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়। বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশনা দেওয়া হয়। তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়, যার ভিত্তিতে পাঁচ জনকে অভিযুক্ত ও পাঁচ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়। তদন্ত চলাকালীন এএসআই রাশেদুল ও কামরুজ্জামানকে নতুন করে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

মামলার আইনগত দিক

নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩-এর ধারা ৪ ও ৫ অনুযায়ী, সরকারি কর্মকর্তা বা পুলিশ হেফাজতে থাকা ব্যক্তিকে নির্যাতন বা অবহেলা করে তার মৃত্যু হলে দায়ীদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। এই আইনের অধীনে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হলো যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা মৃত্যুদণ্ড। পাশাপাশি জরিমানা এবং ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিধান রয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মোনাকেব বাহার স্ট্রিমকে বলেন, ‘নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩-এর ধারা ৪ অনুযায়ী, পুলিশ কিংবা সরকারি কর্মকর্তা যেকোনো ব্যক্তিকে নির্যাতন করলে কিংবা অবহেলা করে তার মৃত্যু হলে এটি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। ধারা ৫ অনুযায়ী দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। এর মাধ্যমে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনা প্রতিরোধে আইনটি একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে।’

রাষ্ট্রপক্ষের তথ্য অনুসারে, দণ্ডিত পাঁচ আসামির মধ্যে কামরুজ্জামান (তৎকালীন এএসআই) শুরু থেকে পলাতক। অপর আসামি সুমন সাজা ভোগ করে বেরিয়েছেন।

Ad 300x250

জুলাই হত্যার বিচারে ‘ক্যাঙারু কোর্ট’-এর পুনরাবৃত্তি হবে না: প্রেস সচিব

শিবির উপস্থিত থাকায় উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠক থেকে ওয়াক আউট বামপন্থীদের একাংশের

এনসিপিসহ নতুন ১৬ দল নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক যাচাইয়ে উত্তীর্ণ

ছাত্রদলের কমিটিতে ছাত্রলীগ কর্মী, পদে আছেন হত্যা মামলার আসামিও

উৎসবের ছোঁয়া লাগলেও অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময় বাংলাদেশের জন্য এখনো কঠিন

সম্পর্কিত