leadT1ad

ঢাকায় অপর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেট, স্যানিটেশন ব্যবস্থার অভাব

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ১৭: ০১
অপর্যাপ্ত ও অপরিচ্ছন্ন টয়লেটের কারণে রাজধানীর নারীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন। স্ট্রিম ছবি

রাজধানী ঢাকায় প্রয়োজনের তুলনায় পাবলিক টয়লেটের সংখ্যা কম। যেসব পাবলিক টয়লেট চালু আছে সেগুলোর মান নিয়েও প্রশ্ন আছে। অনেক টয়লেটেই নেই স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে হাত ধোওয়ার ব্যবস্থা। ফলে টয়লেট নিয়ে প্রতিদিনই বিপাকে পড়ছেন হাজারো পথচারী, কর্মজীবী নারী, শ্রমজীবী ও ভাসমান জনগোষ্ঠী। তাঁদের কাছে ব্যবহারযোগ্য টয়লেটের অভাব এক নিত্য সমস্যা।

এমন পরিস্থিতিতে আজ বুধবার (১৯ নভেম্বর) পালিত হচ্ছে বিশ্ব টয়লেট দিবস। স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনা করে বিশ্ব টয়লেট দিবস পালন শুরু হয়। ২০০১ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে এলেও ২০১৩ সালে জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে এর স্বীকৃতি দেয়। দিনটির উদ্দেশ্য স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহারে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য টয়লেটের সুবিধা নিশ্চিত করা।

স্বাধীন অলাভজনক সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ’-এর তথ্যমতে, ঢাকার মোট জনসংখ্যা প্রায় আড়াই কোটি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায় পাবলিক টয়লেট আছে ৭০টি। ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, এর মধ্যে অন্তত ১৫টিই বন্ধ।

অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেলের তথ্য বলছে, এই সিটির আওতায় ১১৬টি পাবলিক টয়লেট রয়েছে। দুই সিটির পাবলিক টয়লেটের এ সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিনে কয়েকটি পাবলিক টয়লেট ঘুরে দেখা গেছে, সবকটিতেই নারী ও পুরুষদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা রয়েছে। তবে কিছু টয়লেটের অবস্থা ছিল অপরিচ্ছন্ন। যেমন মিরপুর জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামসংলগ্ন পাবলিক টয়লেটে হাত ধোওয়ার জন্য সাবান বা হ্যান্ডওয়াশের ব্যবস্থা নেই। একই অবস্থা ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরের পাবলিক টয়লেটেরও।

নগরবাসীর অভিযোগ, বেশিরভাগ পাবলিক টয়লেটেই হাত ধোয়ার সঠিক ব্যবস্থা নেই। স্ট্রিম ছবি
নগরবাসীর অভিযোগ, বেশিরভাগ পাবলিক টয়লেটেই হাত ধোয়ার সঠিক ব্যবস্থা নেই। স্ট্রিম ছবি

তবে রাজধানীর ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডের পাবলিক টয়লেট ছিল পরিচ্ছন্ন। নারীদের স্যানিটারি ন্যাপকিন মেশিনের ব্যবস্থা, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের উপযোগী প্রবেশপথ, হাত ধোওয়ার ও পানি পান করার সুবিধা, এমনকি গোসল করার ব্যবস্থাও আছে সেখানে।

গ্রাহকদের উন্নত পরিষেবা দিতে ওয়াটারএইড বাংলাদেশের চালু করা ‘পথের দাবি’ শীর্ষক বিশেষ সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইনের অংশ এই পাবলিক টয়লেটটি। এই ক্যাম্পেইনের আওতায় রয়েছে রাজধানীর ২০টি টয়লেট। তবে এই ক্যাম্পেইনের আওতায় থাকা পান্থকুঞ্জের পাবলিক টয়লেটটিতে অবশ্য হাত ধোওয়ার জন্য সাবান বা হ্যান্ডওয়াশের ব্যবস্থা নেই।

নগরবাসীর ভোগান্তি

অপর্যাপ্ত ও অপরিচ্ছন্ন টয়লেটের কারণে রাজধানীর নারীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন। টয়লেটের অভাব বা অনুপযোগী অবস্থা এড়িয়ে দীর্ঘসময় ধরে প্রস্রাব চেপে রাখা, পানি কম খাওয়া—এসব কারণে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে।

নগরবাসীর অভিযোগ, বেশিরভাগ পাবলিক টয়লেটেই হাত ধোয়ার সঠিক ব্যবস্থা নেই। কোথাও পানি থাকলেও নেই সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ। অনেক টয়লেটের হাত ধোয়ার বেসিন নষ্ট পড়ে থাকে, পানি জমে থাকে, কোনো কোনো জায়গায় আবার পানিও ঠিকমতো আসে না। টয়লেট নোংরা থাকার পেছনে ব্যবস্থাপনার ঘাটতির অভিযোগও করছেন তাঁরা।

ঢাকার জনঘনত্ব বিবেচনায় প্রতিটি জনবহুল এলাকার হাঁটার দূরত্বেই একটি টয়লেট থাকা উচিত। স্ট্রিম ছবি
ঢাকার জনঘনত্ব বিবেচনায় প্রতিটি জনবহুল এলাকার হাঁটার দূরত্বেই একটি টয়লেট থাকা উচিত। স্ট্রিম ছবি

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষার্থী ওজিফা দৃষ্টির সঙ্গে দেখা মিরপুর ন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম সংলগ্ন পাবলিক টয়লেটের সামনে। তিনি স্ট্রিমকে বলেন, বাধ্য হয়েই এখানে এসেছি। নারীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা আছে। কিন্তু টয়লেটের পরিবেশ ভালো না। হাত ধোওয়ার জন্য শুধু পানি আছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার জনঘনত্ব বিবেচনায় প্রতিটি জনবহুল এলাকার হাঁটার দূরত্বেই একটি টয়লেট থাকা উচিত। কিন্তু বাস্তবে অনেক এলাকায় আধাঘণ্টা ঘুরলেও একটি ব্যবহারযোগ্য টয়লেট পাওয়া যায় না। বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, ফুটপাথ, বাজার, পার্ক—সব জায়গাতেই টয়লেট-সংকট প্রকট। শ্রমজীবী মানুষ, ডেলিভারি কর্মী, রিকশাচালক, যাত্রীসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের জন্য এটি প্রতিদিনের কষ্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে। তা ছাড়া টয়লেটের অভাবে অনেকেই খোলা জায়গায় প্রস্রাব করেন, যা পরিবেশদূষণ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ স্ট্রিমকে বলেন, টয়লেটের অভাব বা ব্যবহার-অযোগ্যর কারণে লাখ লাখ পথচারী, ছিন্নমূল মানুষ, রিকশাচালক, হকার ও দিনমজুররা বাধ্য হয়ে দেয়াল, ড্রেন, ফুটপাত, গলি বা সড়কের ধারে প্রস্রাব করেন। বলতে গেলে পুরো ঢাকা শহরই পাবলিক টয়লেটে পরিণত হয়েছে। এ কারণে কলেরা, ডায়রিয়া, টাইফয়েড, ডিসেন্ট্রি ও হেপাটাইটিসের মতো জলবাহিত সংক্রামক রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। সামগ্রিকভাবে এটি শহরের জনস্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষতি করছে।

সিটি করপোরেশনের আওতায় থাকা পাবলিক টয়লেটগুলো ইজারার মাধ্যমে চলছে। স্ট্রিম ছবি
সিটি করপোরেশনের আওতায় থাকা পাবলিক টয়লেটগুলো ইজারার মাধ্যমে চলছে। স্ট্রিম ছবি

তিনি আরও বলেন, নীতিগত অগ্রাধিকারের অভাব এ সমস্যার মূলে। সিটি করপোরেশনের বাজেটে টয়লেট রক্ষণাবেক্ষণ নিম্ন অগ্রাধিকারের বিষয়। যে কারণে এই খাতে বরাদ্দ সামান্য এবং তদারকি প্রায় নেই। প্রতিবন্ধীবান্ধব নকশা, নারী সংবেদনশীলতা, পানি, আলো, নিরাপত্তা, পরিচ্ছন্নতা—এসব কিছুকে সমন্বিতভাবে ধরেই শহরের পাবলিক টয়লেট পরিকল্পনা হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।

জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নিশাত পারভীন স্ট্রিমকে বলেন, সিটি করপোরেশনের আওতায় থাকা পাবলিক টয়লেটগুলো ইজারার মাধ্যমে চলছে। এর মধ্যে কিছু পাবলিক টয়লেটের অবস্থা ভালো, কিছু আছে মোটামুটি। আবার কিছু টয়লেটের অবস্থা খারাপ, সেটি আমরা জানি। যেসব পাবলিক টয়লেটের মান খারাপ সেগুলোর সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া একটি প্রকল্পের আওতায় এবার আরও ১১টি পাবলিক টয়লেট করার কাজ চলছে; জায়গা নির্ধারণ করে এগুলোর নির্মাণকাজ শুরু হবে। একই প্রকল্পের আওতায় ৩০টির মতো ওয়াশ কর্নারও থাকবে।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত