leadT1ad

আড়ানী পৌরসভার সাবেক মেয়রের বিরুদ্ধে দুটি মামলা

পৌরসভা থেকে গাড়ির তেল ও ভুয়া কর্মচারীর বেতনের টাকা আত্মসাৎ সাবেক মেয়রের

ব্যক্তিগত গাড়ি দাপ্তারিক কাজে ব্যবহার করতে চাইলে তা পৌর পরিষদ ও সরকারকে অবহিত করার নিয়ম থাকলেও তা করা হয়নি। এ ছাড় দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে বিভিন্ন মেয়াদে পরিচ্ছন্ন কর্মচারী হিসেবে পাঁচজনকে নিয়োগ দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেন মুক্তার আলী।

স্ট্রিম সংবাদদাতা
স্ট্রিম সংবাদদাতা
রাজশাহী

রাজশাহীর আড়ানী পৌরসভার সাবেক মেয়র মুক্তার আলী। সংগৃহীত ছবি

রাজশাহীর আড়ানী পৌরসভার নিজস্ব গাড়ি ও চালক ছিল না। তবে সরকারকে না জানিয়েই ব্যক্তিগত গাড়ির জ্বালানি হিসেবে পৌর তহবিল থেকে সাড়ে ১৪ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন সাবেক মেয়র মুক্তার আলী। এ ছাড়া পাঁচজন কর্মচারীর ভুয়া নিয়োগ দেখিয়ে তাদের বেতন-ভাতা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। এসব অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদকের সমন্বিত রাজশাহী জেলা কার্যালয়ে মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) দুটি মামলা করা হয়েছে। সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মাহবুবুর রহমান এই মামলা দুটি করেন।

মুক্তার আলী জেলার বাঘা উপজেলায় অবস্থিত আড়ানী পৌরসভা ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেয়র ছিলেন। তিনি আড়ানী পৌরসভার পিয়াদাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও পৌর আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। তাঁর বিরুদ্ধে অগ্নিসংযোগ, সন্ত্রাসী হামলা, মারপিটসহ বিভিন্ন অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে। বর্তমানে তিনি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন।

সরকারের পরিপত্র অনুযায়ী, ব্যক্তিগত গাড়ি দাপ্তারিক কাজে ব্যবহার করতে চাইলে তা পৌর পরিষদ ও সরকারকে অবহিত করতে হয়। সেক্ষেত্রে মেয়র প্রতিদিন ৭ লিটার তেল বরাদ্দ পাবেন। এ জন্য গাড়ির লগ বুকে যাতায়ত তথ্য লিখতে হবে। তবে মুক্তার আলী এসবের কোনো ধার ধারেননি।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, আড়ানী পৌরসভায় কোনো সরকারি জিপ ও চালক নেই। এজন্য মেয়র থাকাকালে মুক্তার আলী ব্যক্তিগত গাড়িটি ব্যবহার করতেন। এই গাড়ির জন্য ২০১৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি প্রতিদিন ৭ লিটার করে জ্বালানি তেলের খরচ নিয়েছেন পৌর তহবিল থেকে। এতে মোট ১ হাজার ৮৬৫ দিনের জন্য ১৩ হাজার ৫৫ লিটার তেল খরচ নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতি লিটার তেলের খরচ ৯৬ টাকা ১০ পয়সা ধরে তিনি ১২ লাখ ৫৪ হাজার ৫৮৫ টাকা তুলেন। সেই সঙ্গে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৪১৫ টাকা অগ্রিম নিয়েছেন তিনি। তবে অগ্রিমের বিপরীতে তিনি কোনো ভাউচারও জমা বা সমন্বয় করেননি।

দুদক জানিয়েছে, মুক্তার আলী ব্যক্তিগত গাড়ি দাপ্তরিক কাজে ব্যবহার দেখিয়ে পৌর তহবিল থেকে ১৪ লাখ ৫২ হাজার টাকা তুললেও পৌর পরিষদ বা সরকারকে কিছু জানাননি। গাড়ির কোনো লগবইও লিপিবদ্ধ করেননি। পরিপত্র না মেনে জ্বালানি তেলের টাকা নেওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়েছে।

এদিকে মুক্তার আলী মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে বিভিন্ন মেয়াদে পরিচ্ছন্ন কর্মচারী হিসেবে পাঁচজনকে নিয়োগ দেখান। এজন্য নুরুজ্জামান নাইম, শামীম আহাম্মেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, সঞ্জিব কুমার সাহা, আবু সাঈদ নাম উল্লেখ করেন তিনি। নিয়োগ বাবদ তাঁদের প্রত্যেকের বেতন দেখানো হয় ৯ হাজার টাকা। তবে বাস্তাবে এদের নিয়োগ দেওয়া হয়নি। কিন্তু তাঁদের বেতন-ভাতা দেখিয়ে ৪ লাখ ৪৮ হাজার টাকা তুলে নেন তৎকালীন মেয়র মুক্তার। এই ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করা হয়।

দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন জানান, ভুয়া নিয়োগ দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ এবং নিয়ম না মেনে তেলের নামে টাকা নিয়েছেন তৎকালীন মেয়র মুক্তার আলী। এটা দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারার শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়েছে। মামলার বিষয়টি আদালতকে অবহিত করা হয়েছে।

বাঘা থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মুক্তার আলী স্থানীয়দের কাছে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। মেয়র থাকাকালে ২০২১ সালের জুলাইয়ে বাড়িতে ঢুকে স্ত্রী-পুত্রসহ এক কলেজশিক্ষককে মারধরের ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে বাঘা থানায় একটি মামলা হয়। এর দুই দিন পর পাবনার ঈশ্বরদী থেকে মেয়র মুক্তার ও তাঁর শ্যালককে গ্রেপ্তার করা হয়।

এদিকে পুলিশের করা অস্ত্র আইনের একটি মামলায় ২০২২ সালের ৬ জুন পৌরসভার পিয়াদাপাড়া মহল্লার নিজ বাড়ি থেকে মুক্তার আলীকে গ্রেপ্তার করে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। পরে তাঁকে পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকেও তাঁকে বহিস্কার করা হয়।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান। পরে চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারিতে তাঁকে মহানগরী থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। এর পর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।

Ad 300x250

সম্পর্কিত