.png)

স্ট্রিম প্রতিবেদক

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৯৭৫ সাল আলোচিত, ঘটনাবহুল ও অস্থির একটি বছর। একদলীয় বাকশাল গঠনের মধ্য দিয়ে ওই বছরের প্রথম দিকে অন্য সব রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক কর্মকর্তার নেতৃত্বে সংঘটিত হয় একটি রক্তাক্ত সেনা-অভ্যুত্থান। এতে শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন।
এরপর তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগেরই একটি অংশ ক্ষমতায় আসে। সেনাবাহিনীতে আরেকটি অভ্যুত্থান সংঘটিত হয় ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর। এদিন ১৫ আগস্টে অভ্যুত্থানকারীরা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। ৩ নভেম্বর জেলখানায় বন্দী অবস্থায় হত্যা করা হয় গুরুত্বপূর্ণ চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এ এইচ এম কামারুজ্জান ও ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে।
এসব ঘটনার একপর্যায়ে তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বন্দী হন। ৭ নভেম্বর এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তিনি মুক্ত হন। ওইদিন সংঘটিত হয় ৩ নভেম্বরের বিপরীতে আরেকটি অভ্যুত্থান।
এতে ৩ নভেম্বরের অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ, কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ টি এম হায়দার নিহত হন। কর্নেল শাফায়াত জামিল গ্রেপ্তার হন এবং অন্যরা বন্দী হন। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আবারও নতুন মোড় নেয়।
৭ নভেম্বরে সংঘটিত সেনা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দৃশ্যপটে আবির্ভূত হন সাধারণ সৈনিকদের সমর্থনপুষ্ট মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। সাধারণ জনগণও তাঁকে সমর্থন জানায়।
আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই সেনাবাহিনীর ভেতরে ক্রমে বিভাজন তৈরি হচ্ছিল। কেউ কেউ ১৫ আগস্টের হত্যাকারীদের বিচারের দাবি তুলছিলেন, অন্যদিকে একদল অফিসার নতুন ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চেয়েছিলেন। সেই দ্বন্দ্বই নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহকে রক্তক্ষয়ী করে তোলে।
৩ নভেম্বর ভোরে সেনাবাহিনীর একটি অংশ রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ সরকারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়। কর্নেল শাফায়াত জামিলসহ কয়েকজন কর্মকর্তা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সেনানিবাসে নড়াচড়া শুরু করেন। ভোর ৮টার মধ্যেই রাজধানীতে অভ্যুত্থানের বারুদ ছড়িয়ে পড়ে।
‘পঁচাত্তরের অস্থির সময়: ৩ নভেম্বর ৭ নভেম্বরের অকথিত ইতিহাস’ শীর্ষক বইয়ে কর্নেল শাফায়েত জামিল লিখেছেন, ওই দিন সকালে সেনাবাহিনীর দুটি কোম্পানি রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় অবস্থান নেয় এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ নেয়। সেনাবাহিনীর উচ্চপর্যায় ও মধ্যপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকে। একই সময়ে যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার উড্ডয়ন করে, যা চলমান পরিকল্পনার ইঙ্গিত দেয়।
৪ নভেম্বর খন্দকার মোশতাক আহমেদকে কার্যত গৃহবন্দী করা হয় প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটে। সেনাবাহিনীতে কমান্ডার বদল ও ব্যাটালিয়নের অবস্থান পরিবর্তনের মাধ্যমে শক্তি বিন্যাসের চেষ্টা হয়।
এ সময় ‘বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা’ নামে এক গোপন সংগঠন সৈনিকদের মধ্যে সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং লিফলেট বিলি শুরু করে। সৈনিকদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে যে, অফিসারদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে কিন্তু নিম্নপদস্থ সৈনিকরা বঞ্চিত।
৫ নভেম্বর সেনাপ্রধান খালেদ মোশাররফ সৈনিকদের শান্ত থাকার নির্দেশ দেন, কিন্তু ইতোমধ্যে সৈনিকদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছিল।
৬ নভেম্বর বিকেল থেকে ক্যান্টনমেন্টে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। ট্যাংকবাহিনী ও অন্যান্য ইউনিটের অবস্থান পরিবর্তন হয়। সন্ধ্যার পর থেকে স্লোগান ওঠে—‘সিপাহী সিপাহী ভাই ভাই, অফিসারদের রক্ত চাই’।
অফিসার ও সৈনিক স্তরের মধ্যে সংঘাত যখন তীব্র, তখন রাতের অন্ধকারে নতুন পরিকল্পনা নেওয়া হয় জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করার।
৭ নভেম্বরের ভোরে ইতিহাসের মোড় ঘুরে যায়। বন্দী অবস্থায় থাকা তৎকালীন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে সৈনিকরা মুক্ত করে নিয়ে আসে ২ ফিল্ড রেজিমেন্টে। এ সময় খালেদ মোশাররফ, কর্নেল হুদা ও কর্নেল হায়দার নিহত হন।
৭ নভেম্বরকে বিএনপি ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে পালন করে। জাসদ একে ‘সিপাহী–জনতার অভ্যুত্থান দিবস’ বলে উল্লেখ করে।
৭ নভেম্বরের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন এক অধ্যায় শুরু হয়। সেনাবাহিনীর ভেতরে ‘সৈনিক শ্রেণির’ ভূমিকা এক নতুন মাত্রা পায়, আর সাধারণ মানুষ ভেবেছিল স্থিতিশীলতার যুগ ফিরে আসবে।
এই পাঁচ দিনে সংঘটিত ঘটনাগুলোর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের ক্ষমতার কাঠামো একাধিকবার পরিবর্তিত হয়—প্রথমে অভ্যুত্থান, তারপর পাল্টা অভ্যুত্থান, এবং শেষ পর্যন্ত জিয়াউর রহমানের উত্থান। ৩ থেকে ৭ নভেম্বরের প্রতিটি দিন তাই স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অনিবার্য অধ্যায় হয়ে আছে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৯৭৫ সাল আলোচিত, ঘটনাবহুল ও অস্থির একটি বছর। একদলীয় বাকশাল গঠনের মধ্য দিয়ে ওই বছরের প্রথম দিকে অন্য সব রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক কর্মকর্তার নেতৃত্বে সংঘটিত হয় একটি রক্তাক্ত সেনা-অভ্যুত্থান। এতে শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন।
এরপর তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগেরই একটি অংশ ক্ষমতায় আসে। সেনাবাহিনীতে আরেকটি অভ্যুত্থান সংঘটিত হয় ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর। এদিন ১৫ আগস্টে অভ্যুত্থানকারীরা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। ৩ নভেম্বর জেলখানায় বন্দী অবস্থায় হত্যা করা হয় গুরুত্বপূর্ণ চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এ এইচ এম কামারুজ্জান ও ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে।
এসব ঘটনার একপর্যায়ে তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বন্দী হন। ৭ নভেম্বর এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তিনি মুক্ত হন। ওইদিন সংঘটিত হয় ৩ নভেম্বরের বিপরীতে আরেকটি অভ্যুত্থান।
এতে ৩ নভেম্বরের অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ, কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ টি এম হায়দার নিহত হন। কর্নেল শাফায়াত জামিল গ্রেপ্তার হন এবং অন্যরা বন্দী হন। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আবারও নতুন মোড় নেয়।
৭ নভেম্বরে সংঘটিত সেনা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দৃশ্যপটে আবির্ভূত হন সাধারণ সৈনিকদের সমর্থনপুষ্ট মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। সাধারণ জনগণও তাঁকে সমর্থন জানায়।
আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই সেনাবাহিনীর ভেতরে ক্রমে বিভাজন তৈরি হচ্ছিল। কেউ কেউ ১৫ আগস্টের হত্যাকারীদের বিচারের দাবি তুলছিলেন, অন্যদিকে একদল অফিসার নতুন ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চেয়েছিলেন। সেই দ্বন্দ্বই নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহকে রক্তক্ষয়ী করে তোলে।
৩ নভেম্বর ভোরে সেনাবাহিনীর একটি অংশ রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ সরকারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়। কর্নেল শাফায়াত জামিলসহ কয়েকজন কর্মকর্তা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সেনানিবাসে নড়াচড়া শুরু করেন। ভোর ৮টার মধ্যেই রাজধানীতে অভ্যুত্থানের বারুদ ছড়িয়ে পড়ে।
‘পঁচাত্তরের অস্থির সময়: ৩ নভেম্বর ৭ নভেম্বরের অকথিত ইতিহাস’ শীর্ষক বইয়ে কর্নেল শাফায়েত জামিল লিখেছেন, ওই দিন সকালে সেনাবাহিনীর দুটি কোম্পানি রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় অবস্থান নেয় এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ নেয়। সেনাবাহিনীর উচ্চপর্যায় ও মধ্যপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকে। একই সময়ে যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার উড্ডয়ন করে, যা চলমান পরিকল্পনার ইঙ্গিত দেয়।
৪ নভেম্বর খন্দকার মোশতাক আহমেদকে কার্যত গৃহবন্দী করা হয় প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটে। সেনাবাহিনীতে কমান্ডার বদল ও ব্যাটালিয়নের অবস্থান পরিবর্তনের মাধ্যমে শক্তি বিন্যাসের চেষ্টা হয়।
এ সময় ‘বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা’ নামে এক গোপন সংগঠন সৈনিকদের মধ্যে সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং লিফলেট বিলি শুরু করে। সৈনিকদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে যে, অফিসারদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে কিন্তু নিম্নপদস্থ সৈনিকরা বঞ্চিত।
৫ নভেম্বর সেনাপ্রধান খালেদ মোশাররফ সৈনিকদের শান্ত থাকার নির্দেশ দেন, কিন্তু ইতোমধ্যে সৈনিকদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছিল।
৬ নভেম্বর বিকেল থেকে ক্যান্টনমেন্টে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। ট্যাংকবাহিনী ও অন্যান্য ইউনিটের অবস্থান পরিবর্তন হয়। সন্ধ্যার পর থেকে স্লোগান ওঠে—‘সিপাহী সিপাহী ভাই ভাই, অফিসারদের রক্ত চাই’।
অফিসার ও সৈনিক স্তরের মধ্যে সংঘাত যখন তীব্র, তখন রাতের অন্ধকারে নতুন পরিকল্পনা নেওয়া হয় জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করার।
৭ নভেম্বরের ভোরে ইতিহাসের মোড় ঘুরে যায়। বন্দী অবস্থায় থাকা তৎকালীন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে সৈনিকরা মুক্ত করে নিয়ে আসে ২ ফিল্ড রেজিমেন্টে। এ সময় খালেদ মোশাররফ, কর্নেল হুদা ও কর্নেল হায়দার নিহত হন।
৭ নভেম্বরকে বিএনপি ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে পালন করে। জাসদ একে ‘সিপাহী–জনতার অভ্যুত্থান দিবস’ বলে উল্লেখ করে।
৭ নভেম্বরের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন এক অধ্যায় শুরু হয়। সেনাবাহিনীর ভেতরে ‘সৈনিক শ্রেণির’ ভূমিকা এক নতুন মাত্রা পায়, আর সাধারণ মানুষ ভেবেছিল স্থিতিশীলতার যুগ ফিরে আসবে।
এই পাঁচ দিনে সংঘটিত ঘটনাগুলোর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের ক্ষমতার কাঠামো একাধিকবার পরিবর্তিত হয়—প্রথমে অভ্যুত্থান, তারপর পাল্টা অভ্যুত্থান, এবং শেষ পর্যন্ত জিয়াউর রহমানের উত্থান। ৩ থেকে ৭ নভেম্বরের প্রতিটি দিন তাই স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অনিবার্য অধ্যায় হয়ে আছে।
.png)

যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া বলেছেন, ১৯৭৫ সালের সিপাহি-জনতার বিপ্লব ও ২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান একই সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট থেকে সৃষ্টি হয়েছিল। তিনি বলেন, এই দুটি গণআন্দোলনের পেছনের পরিস্থিতির মধ্যে খুব সামান্যই পার্থক্য রয়েছে।
১ ঘণ্টা আগে
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক (সম্মান) প্রোগ্রামে আবশ্যিক বিষয় হিসেবে ‘বাংলাদেশের ইতিহাস: ভাষা, সংস্কৃতি ও পরিচয়’ কোর্স যুক্ত করা হয়েছে।
৩ ঘণ্টা আগে
নির্বাচনে গুরুতর আচরণ বিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় প্রার্থিতা বাতিলের স্পষ্ট বিধান যুক্ত করেই সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধি-২০২৫ চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
৩ ঘণ্টা আগে
এবার দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আন্দোলনে নামছেন। প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকের চাকরি দশম গ্রেডে উন্নীত করাসহ তিন দাবিতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালনের কথা জানিয়েছেন তাঁরা।
৭ ঘণ্টা আগে