leadT1ad

আহত যোদ্ধার বয়ানে জনতার জুলাই

কেমন দেশ চেয়েছিলেন মাথায় গুলি লেগেও বেঁচে ফেরা কাজল

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে শেখ হাসিনার দীর্ঘ কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতন হয়। এর জন্য গুলির সামনে দাঁড়িয়েছিলেন অজস্র মানুষ। অনেকে শহিদ হয়েছেন, অনেকেই আহত। যাঁরা আহত হয়েছিলেন, বদলে গেছে তাঁদের জীবন। গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে স্ট্রিম আজ কথা বলেছে জীবনবাজি রেখে লড়াই করা কয়েকজন যোদ্ধাদের সঙ্গে। আজকের প্রতিবেদনে রয়েছে আহত জুলাইযোদ্ধা কাজলের গল্প।

প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২৫, ১৬: ১৩
আপডেট : ০৫ আগস্ট ২০২৫, ১৮: ১০
কেমন দেশ চেয়েছিলেন মাথায় গুলি লেগেও বেঁচে ফেরা কাজল। স্ট্রিম গ্রাফিক

বেলা তখন আড়াইটা। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে পুলিশ। পুলিশের উপর্যুপরি আক্রমণে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা ভয় পেয়ে যায়, তাঁরা নিজেদের দমিয়ে রাখতে পারছিলেন না। এমন সময় তাদের একজন দুই হাত উপরে তুলে মহাসড়কের মাঝখানে আসেন পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে। ঠিক তখনই তাঁর মাথায় গুলি করা হয়। নিজেকে তাৎক্ষণিকভাবে সামলানোর চেষ্টা করেও সড়কের মাঝখানে লুটিয়ে পড়েন তিনি। তাঁর রক্তে ভেসে যেতে থাকে রাজপথ।

এই জুলাইযোদ্ধার নাম কাজল মিয়া। স্ট্রিমকে তিনি বলেন, আমি আন্দোলনকারীদের একত্রিত করার চেষ্টা করছিলাম। পাশাপাশি পুলিশকে জিজ্ঞেস করছিলাম, কেন তাঁরা এভাবে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি করছে। একজন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার সময়েই পেছনের সারিতে থাকা আরেক পুলিশসদস্য আমাকে গুলি করে। আমি জানি না, কিন্তু আমার দেশের কোনো পুলিশ ভাই এ রকম গুলি করতে পারে না। আমার মনে হয়, বাইরের দেশের কোনো এজেন্ট ছিল, তাঁরাই এইভাবে গুলি চালাইছে।

যে উদ্দেশ্যে আমি আন্দোলনে গেছিলাম, সেগুলোর কিছুই বর্তমান বাংলাদেশে নাই। ভবিষ্যতেও হবে কি না এটা আমি জানি না। আমার এখন মনে হয়, আমি অসম্ভব কিছু মনে হয় দেখতে চাইছিলাম, যেটা বাংলাদেশে আসলে সম্ভব না।
কাজল মিয়া, জুলাই যোদ্ধা

কাজল সড়কে পড়ে যাওয়ার পর তাঁর সহযোদ্ধারা ভেবেছিলেন, তিনি বেঁচে নেই। তাঁকে রাজধানীর মাতুয়াইলের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। কাজলের নিশ্বাস চলছে, তবে পুরোপুরি অচেতন তিনি। পরে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে দফায় দফায় অস্ত্রোপচারের পর ডাক্তারেরা উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে পাঠানোর পরামর্শ দেন। পরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সহায়তার থাইল্যান্ডের ব্যাংককে পাঠানো হয় কাজলকে। সেখানে ভেজথানি হাসপাতালে কয়েকমাস টানা চিকিৎসা চলছে তাঁর।

ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন কাজল। ফেসবুক থেকে নেওয়া
ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন কাজল। ফেসবুক থেকে নেওয়া

সেখান থেকে স্ট্রিমের সঙ্গে অনলাইনে কথা বলেছেন কাজল। সড়কের মাঝখানে হাত তুলে কি দেখাতে চেয়েছিলেন জানতে চাইলে কাজল বলেন, ‘আমি দেখলাম, আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ ক্ষিপ্র আক্রমণ করতেছিল। আমি দিশেহারা হয়ে গেছিলাম যে, আসলে কী করা উচিত। অন্যান্য শিক্ষার্থী যারা ছিল, তাঁরাও ভয় পেয়ে গেছে, কেউ আসলে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছিল না। ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়তেছিল।’

তিনি বলেন, ‘সেদিন প্রত্যেক মিনিটে মিনিটে হতাহত হইতেছিল। তখন আমার মাথায় কাজ করতেছিল যে, আমি যদি এদের একটু গোছায় রাখতে পারি, তাইলে হয়তো কিছু মানুষের প্রাণ কম যাবে। তাই আমি চেষ্টা করতেছিলাম, ছাত্রদের একটু আটকে রাখার। আমি সামনে গিয়ে ছাত্রদের আটকাচ্ছিলাম। বলতেছিলাম, দাঁড়াও আক্রমণ কইরো না। এর মধ্যে পুলিশের একজনের সঙ্গে আই কনট্যাক্ট হলো আমার, তাঁর সঙ্গে হাত তুইলা আমি কথা বললাম।’

কাজলের বাড়ি গোপালগঞ্জে। ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন কাজল। রাজনীতি চলাকালে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

শেখ হাসিনা যে ততক্ষণে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন সেটা জানতেন না কাজল। পুলিশের সঙ্গে কথা বলার জন্য হেঁটে এগিয়ে যান তিনি। পুলিশের ওই কর্মকর্তাকে কাজল বলেন, ‘আপনারা গুলি কেন করতেছেন? আমরা তো আপনাদের কিছুই বলি নাই। শেখ হাসিনা তো এতক্ষণে মনে হয় পালাইছে। আপনারা গুলি চালাচ্ছেন কেন ছাত্রদের ওপর।’

কাজল মিয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র ছিলেন। পড়াশোনা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের গেরুয়া এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি। গত বছরের জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হওয়ার পর তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে যুক্ত হন। ৩১ জুলাই পর্যন্ত সেখানেই বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয় ছিলেন কাজল।

সবসময় পাশে ছিলেন কাজলের স্ত্রী সিনথিয়া। ফেসবুক থেকে নেওয়া
সবসময় পাশে ছিলেন কাজলের স্ত্রী সিনথিয়া। ফেসবুক থেকে নেওয়া

কাজলের প্রথম বিবাহবার্ষিকী ছিল গত বছরের ১ আগস্ট। বিবাহবার্ষিকী উদযাপন করার জন্য তাঁর বড়ভাই রুবেল হাসানের নারায়ণগঞ্জের বাসায় যান তিনি। তিন দিন পর ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে যোগ দিতে বের হন কাজল। বড়ভাইয়ের বাসা থেকে বের হওয়ার সময় স্ত্রী সিনথিয়া আক্তার নিশিকে বলেন, এ রকম পরিস্থিতিতে ঘরে বসে থাকা যায় না। আমি মার্চ টু ঢাকায় যাচ্ছি, আমার কিছু হবে না। আমি চলে আসব, চিন্তা কইরো না।’

আহত হওয়ার ১৫ দিন পর জ্ঞান ফেরে কাজলের। তিনি বলেন, ‘জ্ঞান ফিরে দেখি আমার স্ত্রী আমার সঙ্গে কথা বলছে। সে বলছে, “তুমি যদি সুস্থ না হও তাহলে তোমার মায়ের সেবা করবে কে?” আমার মা একটু মানসিকভাবে অসুস্থ। স্ত্রীর কথা শোনার পর আমার প্রথম সেন্স কাজ করে, আমি কান্নাকাটি শুরু করছিলাম।’

ওরে (সিনথিয়া) আল্লাহ আসলে রহমত হিসেবেই পাঠাইছে। আমার জন্য আল্লাহ কর্তৃক উপহার। সে আমার এই দুঃসময়ে যে ভূমিকা রেখেছে, তা ভাষায় প্রকাশ করার উপায় নাই। প্রথম বিবাহবার্ষিকী কাটাতে না কাটাতেই আমি আহত হই, মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তেছিলাম। সে ওই সময় আমার চেয়ে বেশি যুদ্ধ করছে।
কাজল মিয়া, স্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে

তিনি বলেন, ‘সবাই ধরেই নিয়েছিল আমি বেঁচে নিই। আল্লাহর প্রতি শোকরিয়া যে তিনি আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আমি এখন সুস্থ আছি।’ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। সব ঠিক থাকলে চলতি মাসের (আগস্ট) ১৫ অথবা ১৬ তারিখে দেশে ফিরবেন বলে জানান কাজল।

স্ত্রী সিনথিয়ার প্রতি ঋণী উল্লেখ করে কাজল বলেন, ‘ওরে (সিনথিয়া) আল্লাহ আসলে রহমত হিসেবেই পাঠাইছে। আমার জন্য আল্লাহ কর্তৃক উপহার। সে আমার এই দুঃসময়ে যে ভূমিকা রেখেছে, তা ভাষায় প্রকাশ করার উপায় নাই। প্রথম বিবাহবার্ষিকী কাটাতে না কাটাতেই আমি আহত হই, মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তেছিলাম। সে ওই সময় আমার চেয়ে বেশি যুদ্ধ করছে। আমি তো আহত হয়ে অজ্ঞান ছিলাম, কিছু বুঝতে পারি নাই, ও তো সব দেখছে। আমাদের দ্বিতীয় বিবাহবার্ষিকী গেলো গত ১ আগস্ট। আমরা এখনো হাসপাতালে, দেশের বাইরে। একটা পুরা বছর সে আমার সেবা করতেছে।’

সহধর্মিণীর সঙ্গে জুলাইযোদ্ধা কাজল মিয়া। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
সহধর্মিণীর সঙ্গে জুলাইযোদ্ধা কাজল মিয়া। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

বড় ভাই রুবেল হাসান এবং ছোটভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন কাজল। তিনি বলেন, আমার ছোট ভাই সজলের সঙ্গে আন্দোলনের শুরুর দিকে আলোচনা হতো। সজল বলতো, শেখ হাসিনা আসলে ভালো করতেছে না। হাসিনার একটা সাজা হওয়া উচিত। আমি সজলকে বলেছিলাম, ‘এবার শেখ হাসিনা এমন একটা ভুল করতেছে, ছাত্রদের রক্ত যদি রাস্তায় একবার ঝড়ে, তাইলে এবার শেখ হাসিনার সময় শেষ। এই বলতে বলতেই শুরু হয়ে গেল এবং শেখ হাসিনা পালাইলো দেশ থেকে।

কাজলের বাড়ি গোপালগঞ্জে। ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন কাজল। রাজনীতি চলাকালে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে যোগ দিতে বের হন কাজল। বড়ভাইয়ের বাসা থেকে বের হওয়ার সময় স্ত্রী সিনথিয়া আক্তার নিশিকে বলেন, এ রকম পরিস্থিতিতে ঘরে বসে থাকা যায় না। আমি মার্চ টু ঢাকায় যাচ্ছি, আমার কিছু হবে না। আমি চলে আসব, চিন্তা কইরো না।’

এ বিষয়ে কাজল বলেন, ‘আমার বাড়ি গোপালগঞ্জে হওয়ার কারণে ছোটবেলা থেকে নৌকা, ছাত্রলীগ, বঙ্গবন্ধু- এগুলাই মাথায় ঢুকেছে। শেখ মুজিবুর রহমানকে আমার ভালোই লাগতো। ওই ধারাবাহিকতায় আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করেছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘পরে আমি দেখলাম, শেখ মুজিবুর রহমানের কোন আদর্শ বা চরিত্র ছাত্রলীগের মধ্যে কিছু নাই। নীতি-নৈতিকতা বলতে কিছু নাই ওদের ভেতরে। যত দুর্নীতি, যত স্বজনপ্রীতি, চান্দাবাজি—এইগুলা দিয়া সংগঠন চলে। আমি এগুলার প্রতিবাদ করতেছিলাম। পাশাপাশি আমি যে মেয়েকে ভালোবাসতাম, তাঁর পরিবার মানতেছিল না যে, আমি ছাত্রলীগ করি। বিষয়টা আমাকে কষ্ট দেয়, পরে আমি নামাজ-কালাম পড়া শুরু করি। সব মিলিয়ে ছাত্রলীগ আমাকে শিবির ট্যাগ দেয়।’

আমি দেখলাম, আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ ক্ষিপ্র আক্রমণ করতেছিল। আমি দিশেহারা হয়ে গেছিলাম যে, আসলে কী করা উচিত। অন্যান্য শিক্ষার্থী যারা ছিল, তাঁরাও ভয় পেয়ে গেছে, কেউ আসলে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছিল না। ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়তেছিল।
কাজল মিয়া, সড়কের মাঝখানে হাত তুলে দেখান প্রসঙ্গে

এ অবস্থায় অব্যাহতি দেওয়া হলে কাজল ওই সময় বলেছিলেন, ‘আপনারা অন্যায়কাজ করছেন, আমাকে অব্যাহতি দিয়ে আরও অন্যায় করলেন। এর বিচার একদিন হবে, এই জাহাঙ্গীরনগরেই হবে।’ কাজল স্ট্রিমকে বলেন, ‘এর বিচার হয়েছে, আমি ক্যাম্পাসে থাকা অবস্থাতেই তারা ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত হয়েছে, হল থেকে বিতাড়িত হয়েছে।’

ইনসাফ ও যোগ্যতার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে এমন দেশ দেখতে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন কাজল। তিনি বলেন, যে উদ্দেশ্যে আমি আন্দোলনে গেছিলাম, সেগুলোর কিছুই বর্তমান বাংলাদেশে নাই। ভবিষ্যতেও হবে কি না এটা আমি জানি না। আমার এখন মনে হয়, আমি অসম্ভব কিছু মনে হয় দেখতে চাইছিলাম, যেটা বাংলাদেশে আসলে সম্ভব না। সব মিলিয়ে হতাশ আমি, ইন্টেরিম সরকার আসলে ব্যর্থ। তাঁরা কোন অ্যাজেন্ডাই বাস্তবায়ন করতে পারে নাই। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের কি হবে, এটা নিয়া আমার যথেষ্ট দুশ্চিন্তা আছে।’

যে স্থানে যে মানুষটা যোগ্য তাঁকে যেন সে স্থানে বসানো হয়, এটাই কাজল মিয়ার চাওয়া। তিনি বলেন, ‘অযোগ্য মানুষকে দায়িত্বের জায়গায় বসালে, তাঁরা সেটাকে দখল দিয়ে রাখতে চায়। তাঁরা অত্যাচার, জুলুম করে। ন্যায়কে দমন করে। তাঁরা চেয়ারকে বেশি মূল্য দেয়, ফলে নৈতিকতার, মূল্যবোধের অবক্ষয় হয়।’

আগে থেকেই ডানপিঠে স্বভাবের ছিলেন কাজল। স্ট্রিম কোলাজ
আগে থেকেই ডানপিঠে স্বভাবের ছিলেন কাজল। স্ট্রিম কোলাজ

Ad 300x250

সম্পর্কিত