leadT1ad

দুই-একদিনের মধ্যেই প্রজ্ঞাপন: কে হচ্ছেন জনপ্রশাসন সচিব

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৩: ২৯
স্ট্রিম গ্রাফিক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি কয়েক মাস। এমন সময়ে শূন্য হওয়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে কে বসছেন তা নিয়ে সচিবালয় ও প্রশাসনের উচ্চমহলে চলছে আলোচনা। নির্বাচনের সময় সরকারি কর্মকর্তাদের পদায়ন ও রদবদলে জনপ্রশাসন সচিবের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনেও রয়েছে আগ্রহ। এমন পরিস্থিতিতে আগামীকাল রোববার কিংবা সোমবারের মধ্যে নতুন জনপ্রশাসন সচিব নিয়োগের প্রজ্ঞাপন হতে পারে বলে জানা গেছে।

মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, কোনো কোনো রাজনৈতিক দল তাদের পছন্দের কর্মকর্তাকে পদটিতে বসাতে চেষ্টা করছেন। আবার কিছু জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ওই পদে বসতে তদবির করছেন। এর মধ্যে খালেদা জিয়ার একান্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করা এবং বর্তমানে ভূমি সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদসহ পাঁচ থেকে ছয় কর্মকর্তার নাম আলোচনায় রয়েছে।

এদিকে, রাজনৈতিক বিবেচনায় এই নিয়োগ না দিতে পরামর্শ দিয়েছেন জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেছেন, এই পদে দক্ষ, যোগ্য ও স্বচ্ছ কাউকে নিয়োগ দেওয়া উচিত, যাতে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের প্রশ্ন তৈরি না হয়।

গত বছর গণ–অভ্যুত্থানের পর তৎকালীন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীকে সরিয়ে দেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তাঁর পরিবর্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব পদে দুই বছরের চুক্তিতে নিয়োগ পান মোখলেসুর রহমান। তবে নিয়োগের ১৩ মাসের মাথায় গত ২১ সেপ্টেম্বর মোখলেসুর রহমানকে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে বদলি করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এরপর থেকে পদটি খালি রয়েছে। বর্তমানে অতিরিক্ত হিসেবে জনপ্রশাসন সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন অতিরিক্ত সচিব আবু শাহীন আসাদুজ্জামান।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অংশ নিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ঢাকা ছাড়েন ২২ সেপ্টেম্বর। ৯ দিনের নিউইয়র্ক সফর শেষে গত বৃহস্পতিবার তিনি দেশে ফিরেছেন। মূলত তিনি দেশে না থাকায় জনপ্রশাসন সচিব নিয়োগে দেরি হয়েছে।

আলোচনায় যাঁরা

মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়ে, জনপ্রশাসন সচিব পদে নিয়োগ নিয়ে এখন পর্যন্ত পাঁচ থেকে ছয়জন কর্মকর্তার নাম আলোচনায় আছে। তাঁদের বেশিরভাগই চুক্তিতে নিয়োগ পেয়েছেন। এর মধ্যে ভূমি সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদের নাম বেশি শোনা যাচ্ছে। খালেদা জিয়া বিরোধীদলীয় নেতা থাকাকালে তাঁর একান্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। ২০১৩ সালে উপসচিব থেকে যুগ্ম সচিব হন সালেহ আহমেদ। একই পদে থেকে ২০২০ সালে অবসরে যান প্রশাসন ক্যাডারের সপ্তম ব্যাচের এই কর্মকর্তা। গত বছরের ২ অক্টোবর দুই বছরের চুক্তিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় তাঁকে।

এ ছাড়া এই পদে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলামেরও নাম শোনা যাচ্ছে। গত ২৭ মার্চ গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের একাদশ ব্যাচের এই কর্মকর্তাকে। দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও ২০১০ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত তাঁকে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

জনপ্রশাসন সচিব হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনিও নিয়োগ পেতে পারেন। গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর তাঁকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। বিসিএস ১৯৮২ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের এই কর্মকর্তা ২০০১ সালে তিনি উপসচিব হন। ২০০৬ সালে তিনি অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদোন্নতি পান। তবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে তাঁকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) নিয়োগ করা হয়। চার বছর ওএসডি থাকার পর ২০১৩ সালে তাঁকে চাকরি থেকে অবসর দেওয়া হয়।

এ ছাড়া আলোচনায় রয়েছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব রেজাউল মাকছুদ জাহেদী। গত ৭ এপ্রিল স্থানীয় সরকার বিভাগে সচিব হিসেবে যোগ দেন তিনি। এর আগে তিনি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিসিএস প্রশাসন সার্ভিসের সদস্য হিসেবে তিনি ১৯৯৪ সালে সহকারী কমিশনার ও ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন।

এদিকে, জনপ্রশাসন সচিব হিসেবে এমন কাউকে নিয়োগ দেওয়া উচিত, যিনি সততা ও যোগ্যতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক সচিব একে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার। শনিবার তিনি স্ট্রিমকে বলেন, এই পদে এমন একজন পেশাদার আমলাকে নিয়োগ দেওয়া উচিত, যিনি পুরো প্রশাসনকে অল্প সময়ের মধ্যে গুছিয়ে আনতে পারবেন।

সরকারি চাকরিজীবীর সঙ্গে রাজনীতির সরাসরি কোনো সম্পর্ক থাকার কথা নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একজন সিভিল সার্ভেন্ট (সরকারি কর্মচারী) মানেই হচ্ছেন অরাজনৈতিক। সারা বিশ্বজুড়েই এই চর্চা হয়ে আসছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশেও রাজনৈতিকভাবে কেউ সিভিল সার্ভেন্ট হিসেবে নিয়োগ পেলে তাঁর আগের পরিচয় থাকে না। নিয়োগের পর থেকে তিনি সরকারের জন্য কাজ করেন। আর আমাদের দেশে তো সবাই ক্যারিয়ার সিভিল সার্ভেন্ট। কাজেই আমাদের দেশের সিভিল সার্ভিসে রাজনৈতিক চিন্তা মাথায় আসারই কোনো কারণ নেই। যদি আসে, সেটা ভুল হবে।’

তিনি আরও বলেন, আমরা যদি একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রত্যাশা করি, তাহলে আমাদের জনপ্রশাসনও হতে হবে তেমনই। নতুন জনপ্রশাসন সচিব যিনি হবেন, তিনি এমন লোকদেরই বাছাই করে পদায়ন করবেন, যারা নিরপেক্ষতা বজায় রেখে নির্বাচনটি করবেন। যারা কোনো দলের হবে না।

নিজের মন্ত্রণালয়কে গোছানোই হবে জনপ্রশাসন সচিবের কাজ মন্তব্য করে সাবেক এই আমলা বলেন, ‘তাঁকে অভ্যন্তরীণভাবে মন্ত্রণালয়কে ভালোভাবে চালাতে হবে। পাশাপাশি জেলা প্রশাসক (ডিসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) মাঠ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে সৎ ও যোগ্য লোকদের পদায়ন করতে হবে। সরকারকে সেভাবেই পরামর্শ দেবেন। যারা কোনো দলের পক্ষপাত না হয়ে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনটি বের করে নিয়ে আসতে পারবেন।’

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘জনপ্রশাসন এমনিতেই অনেক খারাপ অবস্থায় আছে। এত দুর্বল প্রশাসন আর কখনো দেখা যায়নি। এখনো যদি জনপ্রশাসনকে ঠিকমতো সাজাতে না পারে, তাহলে তাদের (সরকার) পক্ষে একটি ভালো নির্বাচন করা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে, আরও দেরি হলে ভালো নির্বাচনের আশা করা যায় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘নিরপেক্ষ, দক্ষ ও যোগ্য লোককে এই মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে। যদি রাজনৈতিক দলগুলো দেখে, অন্য দলের কাউকে ওখানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তখন বাকি দলগুলো তা মেনে নেবে না। প্রথম থেকেই সরকার নিরপেক্ষ লোকজনকে নিয়োগ দেয়নি। এখন সেই সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত