.png)
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের চতুর্থ দিন

স্ট্রিম প্রতিবেদক

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের চতুর্থ দিনে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ও আচরণবিধি নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছেন দলগুলোর নেতারা। সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতার আলোকে কমিশনকে দুর্বল উল্লেখ করে সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তাঁরা।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) সংলাপের দুই সেশনে অংশ নেয় ১২টি রাজনৈতিক দল। তারা আচরণবিধির বিভিন্ন ধারা নিয়ে আপত্তি জানায় এবং আরপিও ও বিধিমালা পুনর্মূল্যায়নের দাবি তোলে।
সংলাপে অংশ নেওয়া দলগুলো হলো—বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি (বিএমজেপি), ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণসংহতি আন্দোলন, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বিএনপি, গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি), নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি (বিআরপি) এবং বাসদ (মার্কসবাদী)। কথা থাকলেও সংলাপে আসেনি বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি নির্বাচনী বিধিমালা ও আইনে পরিবর্তনের আগে ইসির উদ্যোগ নিয়েই প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, “নির্বাচনসংক্রান্ত কাজ এককভাবে করা সম্ভব নয়। সব অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে আপনাদের একটা সমন্বিত মতামত তৈরি করা দরকার। বিশেষভাবে এই মুহূর্তে, যখন দেশ একটি গণতান্ত্রিক প্রত্যাবর্তনের প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে এবং যেখানে আমাদের ন্যূনতম জাতীয় ঐকমত্য খুব জরুরি, তখন এই আলাপ-আলোচনা আরও গুরুত্বপূর্ণ।” সংলাপকে আরও অর্থবহ করতে দলগুলোর পরামর্শ বিবেচনায় নিয়ে আরপিও ও আচরণবিধি পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানান সাকি।
বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান এবং গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানও একই প্রস্তাব দেন।
নির্বাচন কমিশনকে আরও দৃঢ় ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, এনসিপিকে শাপলা কলি প্রতীক দেওয়ার মাধ্যমে ইসির দুর্বলতা স্পষ্ট হয়েছে। তাঁর মতে, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে নতজানু হওয়া যাবে না। ইসিকে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করতে হবে।
সংলাপে জোনায়েদ সাকি, বাসদ (মার্কসবাদী) ও গণতান্ত্রিক বাম জোটের সমন্বয়ক মাসুদ রানা, নাগরিক ঐক্যের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কবীর হাসান এবং বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টির চেয়ারম্যান এম আবু হানিফ হৃদয় সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ইসির আরও জোরালো, নিরপেক্ষ ও কার্যকর ভূমিকায় জোর দেন।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘নির্বাচনী আচরণ প্রয়োগের ক্ষেত্রে যদি আরও কোনো পরিপত্র জারি করে স্পষ্টকরণের প্রয়োজন হয়, তা করা হবে। আমি নিশ্চিত কমিশন এগুলো নিয়ে আলোচনা করবে। কয়েকটি বিষয় আছে, যেগুলোর বিষয়ে সম্ভবত একটু ক্ল্যারিফিকেশন প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা আপনাদের বক্তব্য শুনেছি। যদি প্রয়োজন হয় তবে কিছু সন্নিবেশিত হতে পারে। আর প্রয়োজন না হলে কিছুই সন্নিবেশিত হবে না।’
সমালোচনার মুখে আচরণবিধি
এনডিএম মহাসচিব মোমিনুল আমিন জোটের প্রতীকে নির্বাচন বাতিল, আচরণবিধির কঠোরতা প্রত্যাহার এবং মাঠ প্রশাসনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার দাবি জানান।
ইসির সংলাপে দলের প্রস্তাব যথাযথভাবে বিবেচনায় না নেওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। তাঁর মতে, একটি সুষ্ঠু, শক্তিশালী ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে কমিশনকে বাস্তবতা বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এনডিএম মহাসচিব জানান, তফসিল ঘোষণার ঠিক আগে সরকারের সংশোধনীতে জোট করলেও নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে—যা রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী কৌশলকে জটিল করে তুলেছে।
তিনি বলেন, ‘জোট করার মূল উদ্দেশ্যই হলো শক্তিশালী একটি প্রতীক নিয়ে ভোটারদের কাছে পরিষ্কার বার্তা পৌঁছে দেওয়া। আইন করে এই অধিকার কেড়ে নেওয়া যায় না।’
যুগ্ম সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম মুসা বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন (ইসি) যে আচরণবিধি প্রণয়ন করেছে, তা বাংলাদেশের নির্বাচন সংস্কৃতি ও বাস্তবতার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। পোস্টারিং, মাইকিং, গণসংযোগ—যা নির্বাচনের স্বাভাবিক উৎসবমুখর পরিবেশ গড়ে তোলে—সেগুলোকে উপেক্ষা করে এমন বিধান তৈরি হয়েছে, যার বাস্তবায়নের জন্য ইসির প্রয়োজনীয় সক্ষমতাও নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই বিধিমালা বাস্তবায়নের জন্য ইসির কোনো পর্যায়ে সুস্পষ্ট মেকানিজম নেই। তদন্ত কমিটি কীভাবে গঠন হবে, কারা তদন্ত করবে—তা অস্পষ্ট। অভিযোগ কমিটির কাছে যাবে, আবার কমিশনের কাছেও যেতে পারবে—ফলে জটিলতা বাড়বে।’
ইসির মাঠ কর্মকর্তারা অভিযোগ আমলে না নিলে বা ব্যবস্থা না নিলে প্রার্থীদের কী প্রতিকার মিলবে—এ বিষয়েও কোনো নির্দেশনা নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জহিরুল ইসলাম মুসা বলেন, কাপড় বা চটের ব্যানার বাধ্যতামূলক করার নির্দেশনা বাস্তবসম্মত নয়। তাঁর ভাষায়, ‘ঢাকায় এসে সংগঠিত হওয়া কর্মী–সমর্থকদের অল্প সময়ে কাপড়ের ব্যানার প্রিন্ট করে এলাকায় পাঠানো প্রায় অসম্ভব।’ এতে নতুন বা আর্থিকভাবে দুর্বল প্রার্থী বঞ্চিত হবে বলেও তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, ‘বিলবোর্ডে কাপড় ব্যবহারের শর্ত বাতাসপ্রবণ এলাকায় কার্যকর নয়। আর একটি বিলবোর্ড নির্মাণে যেখানে এক লাখ টাকার বেশি খরচ হয়, সেটি কীভাবে ভোটারপ্রতি মাত্র ১০ টাকা বা মোট ৫০ লাখ টাকার ব্যয়সীমার মধ্যে সম্ভব হবে—তা স্পষ্ট নয়।’
বাংলাদেশে নির্বাচনের সঙ্গে সহিংসতার দীর্ঘ সম্পর্ক তুলে ধরে তিনি প্রস্তাব করেন, অভ্যন্তরীণ সহিংসতায় কেউ নিহত বা আহত হলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের বিধান রাখা উচিত।
তারেক রহমানের ছবি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণই হবে ইসির প্রথম সক্ষমতা পরীক্ষা—এমন দাবি তুলে তিনি বলেন, ‘আচরণবিধির ৭(চ) ধারা অনুযায়ী প্রার্থী শুধু নিজের ছবি, দলীয় প্রতীক ও দলীয় প্রধানের ছবি ব্যবহার করতে পারবেন। বিএনপির দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া। সে ক্ষেত্রে তারেক রহমান বা জিয়াউর রহমানের ছবি ব্যবহার করলে ইসিকে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে।’
সিসিটিভি ক্যামেরা রাখছে না ইসি
সংলাপে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ. এইচ. এম. হামিদুর রহমান আযাদ ইসির প্রস্তুতির প্রশংসা করলেও ‘এক্সিকিউটিভ লেভেল’ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘সর্ষের মধ্যে ভূত আছে কি না, খতিয়ে দেখতে হবে।’
তিনি প্রমাণ সংরক্ষণের সুবিধার্থে ‘বডি ওর্ন ক্যামেরার’ বদলে সিসিটিভি ব্যবহারের দাবি তোলেন।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘তাদের হিসাবে সিসিটিভি ব্যবহার করলে খরচ হবে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। এরপরও ব্যবহার করলে সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের বড় সমস্যা তৈরি হবে।’
দিনের শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘ব্যয় বৃদ্ধি এবং সংরক্ষণের সমস্যার কারণেই এই পদক্ষেপ থেকে সরে এসেছেন তারা।’ তাঁর ভাষায়, ‘বডি ওর্ন ক্যামেরা কিছু লেভেলে আমাদের উদ্দেশ্য পূরণ করবে।’
আপাতত ডাক পাচ্ছে না জাতীয় পার্টিসহ আট দল
ইসির জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক মো. রুহুল আমিন মল্লিক বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংলাপের জন্য যে সূচি করা হয়েছিল, তা আজ বিকেলের সংলাপের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে।’
তবে আগের দিন জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আপনারা অচিরেই আমাদের পরিকল্পনা জানতে পারবেন।’
ইসি জানায়, দেশে নিবন্ধিত দল রয়েছে ৫৯টি। এর মধ্যে তিনটির নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। চার দিনে ৮টি সংলাপে ৪৮টি দল অংশ নিয়েছে। তৃণমূল বিএনপি অংশ নেয়নি।
সূত্রগুলো জানায়, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণহত্যার মামলায় বিচার চলায় আওয়ামী লীগকে ডাকেনি ইসি। একইভাবে ডাক পায়নি জাতীয় পার্টি, জাতীয় পার্টি (মঞ্জু), বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি (রাশেদ খান মেনন), জাসদ (হাসানুল হক ইনু) ও তরিকত ফেডারেশন।
প্রবাসীদের গণভোট নিয়ে হয়নি সিদ্ধান্ত
সংলাপে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার প্রবাসীদের গণভোট দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। পরে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারীও একই প্রশ্ন করেন।
দিনের শেষ সেশনে সিইসি এ. এম. এম. নাসির উদ্দিন বলেন, গণভোট পরিচালনার জন্য স্পষ্ট আইন প্রণয়ন জরুরি। আইন ছাড়া ব্যালট, ব্যালট বাক্স বা পুরো কাঠামো–কোনোটিই নির্ধারণ করা সম্ভব নয়।
সিইসি বলেন, পূর্বে জিয়াউর রহমান ও এরশাদ সরকার গণভোট আইন করেছিলেন। এখন নতুন আইন প্রয়োজন। আইন হওয়ার পর ইসি প্রস্তুতি শুরু করবে। প্রবাসীদের ভোট নিয়ে তিনি আলাদা কিছু বলেননি।
প্রবাসীদের গণভোট নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, আইন হওয়ার আগে কিছু বলার নেই। নির্দেশনা না আসায় এখনো কোনো প্রস্তুতিও নেওয়া হয়নি। আইন হলে প্রস্তুতির ধরন–সময় সব ঠিক করা হবে।

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের চতুর্থ দিনে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ও আচরণবিধি নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছেন দলগুলোর নেতারা। সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতার আলোকে কমিশনকে দুর্বল উল্লেখ করে সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তাঁরা।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) সংলাপের দুই সেশনে অংশ নেয় ১২টি রাজনৈতিক দল। তারা আচরণবিধির বিভিন্ন ধারা নিয়ে আপত্তি জানায় এবং আরপিও ও বিধিমালা পুনর্মূল্যায়নের দাবি তোলে।
সংলাপে অংশ নেওয়া দলগুলো হলো—বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি (বিএমজেপি), ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণসংহতি আন্দোলন, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বিএনপি, গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি), নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি (বিআরপি) এবং বাসদ (মার্কসবাদী)। কথা থাকলেও সংলাপে আসেনি বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি নির্বাচনী বিধিমালা ও আইনে পরিবর্তনের আগে ইসির উদ্যোগ নিয়েই প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, “নির্বাচনসংক্রান্ত কাজ এককভাবে করা সম্ভব নয়। সব অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে আপনাদের একটা সমন্বিত মতামত তৈরি করা দরকার। বিশেষভাবে এই মুহূর্তে, যখন দেশ একটি গণতান্ত্রিক প্রত্যাবর্তনের প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে এবং যেখানে আমাদের ন্যূনতম জাতীয় ঐকমত্য খুব জরুরি, তখন এই আলাপ-আলোচনা আরও গুরুত্বপূর্ণ।” সংলাপকে আরও অর্থবহ করতে দলগুলোর পরামর্শ বিবেচনায় নিয়ে আরপিও ও আচরণবিধি পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানান সাকি।
বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান এবং গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানও একই প্রস্তাব দেন।
নির্বাচন কমিশনকে আরও দৃঢ় ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, এনসিপিকে শাপলা কলি প্রতীক দেওয়ার মাধ্যমে ইসির দুর্বলতা স্পষ্ট হয়েছে। তাঁর মতে, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে নতজানু হওয়া যাবে না। ইসিকে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করতে হবে।
সংলাপে জোনায়েদ সাকি, বাসদ (মার্কসবাদী) ও গণতান্ত্রিক বাম জোটের সমন্বয়ক মাসুদ রানা, নাগরিক ঐক্যের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কবীর হাসান এবং বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টির চেয়ারম্যান এম আবু হানিফ হৃদয় সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ইসির আরও জোরালো, নিরপেক্ষ ও কার্যকর ভূমিকায় জোর দেন।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘নির্বাচনী আচরণ প্রয়োগের ক্ষেত্রে যদি আরও কোনো পরিপত্র জারি করে স্পষ্টকরণের প্রয়োজন হয়, তা করা হবে। আমি নিশ্চিত কমিশন এগুলো নিয়ে আলোচনা করবে। কয়েকটি বিষয় আছে, যেগুলোর বিষয়ে সম্ভবত একটু ক্ল্যারিফিকেশন প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা আপনাদের বক্তব্য শুনেছি। যদি প্রয়োজন হয় তবে কিছু সন্নিবেশিত হতে পারে। আর প্রয়োজন না হলে কিছুই সন্নিবেশিত হবে না।’
সমালোচনার মুখে আচরণবিধি
এনডিএম মহাসচিব মোমিনুল আমিন জোটের প্রতীকে নির্বাচন বাতিল, আচরণবিধির কঠোরতা প্রত্যাহার এবং মাঠ প্রশাসনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার দাবি জানান।
ইসির সংলাপে দলের প্রস্তাব যথাযথভাবে বিবেচনায় না নেওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। তাঁর মতে, একটি সুষ্ঠু, শক্তিশালী ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে কমিশনকে বাস্তবতা বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এনডিএম মহাসচিব জানান, তফসিল ঘোষণার ঠিক আগে সরকারের সংশোধনীতে জোট করলেও নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে—যা রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী কৌশলকে জটিল করে তুলেছে।
তিনি বলেন, ‘জোট করার মূল উদ্দেশ্যই হলো শক্তিশালী একটি প্রতীক নিয়ে ভোটারদের কাছে পরিষ্কার বার্তা পৌঁছে দেওয়া। আইন করে এই অধিকার কেড়ে নেওয়া যায় না।’
যুগ্ম সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম মুসা বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন (ইসি) যে আচরণবিধি প্রণয়ন করেছে, তা বাংলাদেশের নির্বাচন সংস্কৃতি ও বাস্তবতার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। পোস্টারিং, মাইকিং, গণসংযোগ—যা নির্বাচনের স্বাভাবিক উৎসবমুখর পরিবেশ গড়ে তোলে—সেগুলোকে উপেক্ষা করে এমন বিধান তৈরি হয়েছে, যার বাস্তবায়নের জন্য ইসির প্রয়োজনীয় সক্ষমতাও নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই বিধিমালা বাস্তবায়নের জন্য ইসির কোনো পর্যায়ে সুস্পষ্ট মেকানিজম নেই। তদন্ত কমিটি কীভাবে গঠন হবে, কারা তদন্ত করবে—তা অস্পষ্ট। অভিযোগ কমিটির কাছে যাবে, আবার কমিশনের কাছেও যেতে পারবে—ফলে জটিলতা বাড়বে।’
ইসির মাঠ কর্মকর্তারা অভিযোগ আমলে না নিলে বা ব্যবস্থা না নিলে প্রার্থীদের কী প্রতিকার মিলবে—এ বিষয়েও কোনো নির্দেশনা নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জহিরুল ইসলাম মুসা বলেন, কাপড় বা চটের ব্যানার বাধ্যতামূলক করার নির্দেশনা বাস্তবসম্মত নয়। তাঁর ভাষায়, ‘ঢাকায় এসে সংগঠিত হওয়া কর্মী–সমর্থকদের অল্প সময়ে কাপড়ের ব্যানার প্রিন্ট করে এলাকায় পাঠানো প্রায় অসম্ভব।’ এতে নতুন বা আর্থিকভাবে দুর্বল প্রার্থী বঞ্চিত হবে বলেও তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, ‘বিলবোর্ডে কাপড় ব্যবহারের শর্ত বাতাসপ্রবণ এলাকায় কার্যকর নয়। আর একটি বিলবোর্ড নির্মাণে যেখানে এক লাখ টাকার বেশি খরচ হয়, সেটি কীভাবে ভোটারপ্রতি মাত্র ১০ টাকা বা মোট ৫০ লাখ টাকার ব্যয়সীমার মধ্যে সম্ভব হবে—তা স্পষ্ট নয়।’
বাংলাদেশে নির্বাচনের সঙ্গে সহিংসতার দীর্ঘ সম্পর্ক তুলে ধরে তিনি প্রস্তাব করেন, অভ্যন্তরীণ সহিংসতায় কেউ নিহত বা আহত হলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের বিধান রাখা উচিত।
তারেক রহমানের ছবি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণই হবে ইসির প্রথম সক্ষমতা পরীক্ষা—এমন দাবি তুলে তিনি বলেন, ‘আচরণবিধির ৭(চ) ধারা অনুযায়ী প্রার্থী শুধু নিজের ছবি, দলীয় প্রতীক ও দলীয় প্রধানের ছবি ব্যবহার করতে পারবেন। বিএনপির দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া। সে ক্ষেত্রে তারেক রহমান বা জিয়াউর রহমানের ছবি ব্যবহার করলে ইসিকে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে।’
সিসিটিভি ক্যামেরা রাখছে না ইসি
সংলাপে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ. এইচ. এম. হামিদুর রহমান আযাদ ইসির প্রস্তুতির প্রশংসা করলেও ‘এক্সিকিউটিভ লেভেল’ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘সর্ষের মধ্যে ভূত আছে কি না, খতিয়ে দেখতে হবে।’
তিনি প্রমাণ সংরক্ষণের সুবিধার্থে ‘বডি ওর্ন ক্যামেরার’ বদলে সিসিটিভি ব্যবহারের দাবি তোলেন।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘তাদের হিসাবে সিসিটিভি ব্যবহার করলে খরচ হবে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। এরপরও ব্যবহার করলে সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের বড় সমস্যা তৈরি হবে।’
দিনের শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘ব্যয় বৃদ্ধি এবং সংরক্ষণের সমস্যার কারণেই এই পদক্ষেপ থেকে সরে এসেছেন তারা।’ তাঁর ভাষায়, ‘বডি ওর্ন ক্যামেরা কিছু লেভেলে আমাদের উদ্দেশ্য পূরণ করবে।’
আপাতত ডাক পাচ্ছে না জাতীয় পার্টিসহ আট দল
ইসির জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক মো. রুহুল আমিন মল্লিক বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংলাপের জন্য যে সূচি করা হয়েছিল, তা আজ বিকেলের সংলাপের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে।’
তবে আগের দিন জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আপনারা অচিরেই আমাদের পরিকল্পনা জানতে পারবেন।’
ইসি জানায়, দেশে নিবন্ধিত দল রয়েছে ৫৯টি। এর মধ্যে তিনটির নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। চার দিনে ৮টি সংলাপে ৪৮টি দল অংশ নিয়েছে। তৃণমূল বিএনপি অংশ নেয়নি।
সূত্রগুলো জানায়, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণহত্যার মামলায় বিচার চলায় আওয়ামী লীগকে ডাকেনি ইসি। একইভাবে ডাক পায়নি জাতীয় পার্টি, জাতীয় পার্টি (মঞ্জু), বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি (রাশেদ খান মেনন), জাসদ (হাসানুল হক ইনু) ও তরিকত ফেডারেশন।
প্রবাসীদের গণভোট নিয়ে হয়নি সিদ্ধান্ত
সংলাপে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার প্রবাসীদের গণভোট দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। পরে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারীও একই প্রশ্ন করেন।
দিনের শেষ সেশনে সিইসি এ. এম. এম. নাসির উদ্দিন বলেন, গণভোট পরিচালনার জন্য স্পষ্ট আইন প্রণয়ন জরুরি। আইন ছাড়া ব্যালট, ব্যালট বাক্স বা পুরো কাঠামো–কোনোটিই নির্ধারণ করা সম্ভব নয়।
সিইসি বলেন, পূর্বে জিয়াউর রহমান ও এরশাদ সরকার গণভোট আইন করেছিলেন। এখন নতুন আইন প্রয়োজন। আইন হওয়ার পর ইসি প্রস্তুতি শুরু করবে। প্রবাসীদের ভোট নিয়ে তিনি আলাদা কিছু বলেননি।
প্রবাসীদের গণভোট নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, আইন হওয়ার আগে কিছু বলার নেই। নির্দেশনা না আসায় এখনো কোনো প্রস্তুতিও নেওয়া হয়নি। আইন হলে প্রস্তুতির ধরন–সময় সব ঠিক করা হবে।
.png)

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেছেন, অবৈধভাবে আমদানি ও চোরাচালানকৃত এবং ক্লোন করা ফোন বন্ধ করা হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
১ ঘণ্টা আগে
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১ ঘণ্টা আগে
নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় সড়কে সরকারি রাস্তার পাশের ৩১টি মেহগনি গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে বিএনপি এক ইউনিয়ন সভাপতির বিরুদ্ধে। উপজেলার মাসকা ইউনিয়নের দিঘলী–আলমপুর সড়ক পাকা করার অযুহাতে গাছগুলো কাটেন ওই ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম ভুঁইয়া সুমন।
৩ ঘণ্টা আগে
বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে শপথ নিতে পারেননি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) কার্যনির্বাহী সদস্য আকাশ দাস।
৩ ঘণ্টা আগে