স্ট্রিম প্রতিবেদক
সেপ্টেম্বরে মাসে দেশে ধর্ষণ, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন ও গণপিটুনিতে নিহতের সংখ্যা বেড়েছে। মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) থেকে প্রকাশিত সেপ্টেম্বরের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) এমএসএফ এই প্রতিবেদনটি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও নিজেদের অনুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এই পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন তৈরি করেছে এমএসএফ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গণপিটুনি ও মব সহিংসতার মতো আইন হাতে তুলে নেওয়ার ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এতে নিহত ও আহতের সংখ্যা বেড়ে নাগরিকদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এছাড়া নারী ও শিশুদের ওপর সহিংসতার ঘটনা যেমন ধর্ষণ, ধর্ষণ চেষ্টা, যৌন হয়রানি, হত্যা এবং শিশু ও নারীদের ওপর শারীরিক নির্যাতন বেড়েছে যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
প্রতিবেদনটি দেশের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির চিত্র তুলে ধরেছে। এই প্রতিবেদনে দেখা যায়, গণপিটুনিতে নিহতের সংখ্যা সামান্য বেড়ে আগস্টের ২৩ জন থেকে সেপ্টেম্বরে ২৪ জনে দাঁড়িয়েছে।
নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতারোধে দেশে যথেষ্ট কঠোর আইন থাকা সত্বেও অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর ও দৃশ্যমান ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছে এমএসএফ। ফলে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তাহীনতার জায়গাটি প্রকট আকার ধারণ করেছে বলে সংস্থাটি।
এমএসএফ জানিয়েছে, এ সহিংসতার মূল কারণ হিসেবে কাজ করছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি। ফলে অপরাধীরা বারবার নৃশংস অপরাধ করার সাহস পাচ্ছে। পারিবারিক সহিংসতার এই ভয়াবহ পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে মেনে নেওয়ার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে প্রয়োজন দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিচারব্যবস্থাকে দ্রুত ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে, যাতে অপরাধীরা কোনোভাবেই আইনের ফাঁক গলে বের হতে না পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয় ভুমিকার কারণে নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা একই ধারাবাহিকতায় ঘটেই চলেছে। যা নাগরিক জীবনে উদ্বেগ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে ৩৬১টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে যা গত মাসের তুলনায় ১২টি বেশী। এ মাসে ধর্ষণের ঘটনা ৫৩টি, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ১৩টি, ধর্ষণ ও হত্যা ৩টি। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৫ জন প্রতিবন্ধী কিশোরী ও নারী।
উল্লেখ্য যে, ধর্ষণের শিকার ৫৩ জনের মধ্যে ১৫ জন শিশু, ১৮ জন কিশোরী রয়েছে, অপরদিকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২ জন শিশু, ৩ জন কিশোরী ও ৮ জন নারী এবং ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়েছেন ২ জন শিশু ও ১ জন কিশোরী। ধর্ষণের চেষ্টা ২৮টি, যৌন হয়রানি ২৪টি, শারীরিক নির্যাতনের ৯৯টি ঘটনা ঘটেছে। এসিড নিক্ষেপে আক্রান্ত হয়েছেন ১ জন পুরুষ ও ২ জন নারী।
এমএসএফ’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে একই ধারাবাহিকতায় গণপিটুনিতে হতাহতের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েই চলেছে। চলতি সময়ে গণপিটৃনির সংখ্যা আশংকাজনক বেড়ে যাওয়ায় জনমনে নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি প্রশ্নাতীতভাবে ভাবিয়ে তুলেছে। এছাড়াও ধর্ষণ এবং ধর্ষণ চেষ্টার হার বেড়ে যাওয়ায় ধর্ষণে অভিযুক্তদের ধরে গণপিটুনি দেয়ার প্রবণতা প্রকটভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে। পাশাপাশি নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কর্মীদের পাওয়া মাত্র গণপিটুনি দিয়ে আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর নিকট সোপর্দ করার লক্ষণীয় প্রভাব থাকায় জনমনে আতংক বিরাজ করছে।
এমএসএফ জানিয়েছে, এ মাসে অন্তত ৪৩টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। যেখানে ২৪ জন নিহত ও ৩৬ জন গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। গণপিটুনির শিকার ২০ জনকে আহতাবস্থায় পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। গণপিটুনিতে নিহতের মধ্যে ছয়জন ছিনতাইয়ের অভিযোগে, ১০ জন চুরির অভিযোগে, এক জন সন্দেজনক চুরির অভিযোগে, তিনজনকে চাঁদাবাজির অভিযোগে, তিন জনকে ডাকাতি, একজনকে অজ্ঞাত কারণে হত্যা করা হয়। অপরদিকে ১৩ জনকে চুরির অভিযোগে, চার জনকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে, চার জন যৌন হয়রানির অভিযোগে, পাঁচ জনকে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী হওয়ার অভিযোগে আহত করা হয়েছে। এ ছাড়া সন্দেহজনক চুরি, চাঁদাবাজি, কটূক্তি, প্রতারণা, অপহরণ এ ধরনের অপরাধজনিত কারণে ১০ জনকে গণপিটুনি দিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।
সংস্থাটি জানিয়েছে, অপরদিকে এ মাসে মব সন্ত্রাসের মাধ্যমে বেশ কয়েকজন ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে জোরপূর্বক চুল কেটে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে, যা মর্যাদাহানিকর, অমানবিক, বেআইনি ও মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লংঘন। প্রকাশ্যে চুল কেটে দেওয়া অবশ্যই ভুক্তভোগীর মৌলিক অধিকার ও ব্যক্তিস্বাধীনতার চরম লংঘন। এ ধরনের ঘটনা রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করতে হবে যাতে কোন নাগরিকের মর্যাদাহানিকর অমানবিক ও বেআইনি আচরণ না ঘটে এবং দায়ী ব্যক্তিদের সনাক্ত করে আইন আওতায় এনে যথাযথ বিচারের ব্যবস্থা করা হয়।
সনাতন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উদ্যাপন চলছে, এরপরও ক্রমান্বয়ে আশঙ্কা ও উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে বলে জানিয়েছে এমএসএফ।
সংস্থাটি জানিয়েছে, গত মাসে (আগস্ট) ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছিল আটটি। এ মাসে ইতোমধ্যে তা বেড়ে দ্বিগুণে দাঁড়িয়েছে। সরকারের উচ্চতর পর্যায় থেকে নির্বিঘ্নে ও উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গোৎসবে পূজার্থীদের আশ্বস্ত করা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পরও পূজার প্রাক্কালে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আশ্বস্ত হওয়ার বিষয়টি দুরূহ মধ্যে থেকে যায়।
এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৫ মাসে বিক্ষোভ দমনের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক বিচারবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের দুইটি ঘটনায় গুলিতে ৪ জন নিহত ও অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে হওয়া সংঘর্ষের ঘটনাও উল্লেখ করে এমএসএফ। সংস্থাটি মনে করে, খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত ভয়াবহ সহিংস ঘটনায় তিনজনের বিচারবহির্ভূত হত্যা, গণধর্ষণ, কথিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা এবং বাজারের অসংখ্য দোকানপাটে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে যা দুঃখজনক ও স্থানীয় মানুষের জীবন, নিরাপত্তা ও জীবিকার ওপর প্রভাব ফেলেছে এমএসএফ ঘটনার যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছে।
এমএসএফ জানিয়েছে, আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে আসামির মৃত্যুর বিষয়ের সুষ্ঠু তদন্ত না হওয়া জনমনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক করে। প্রতিটি হেফাজতে মৃত্যুর নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া আবশ্যক বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
এমএসএফ জানায়, সেপ্টেম্বরে গাজীপর, সিলেট, মৌলভীবাজার, বাগেরহাট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন থানা হাজতে ২ বন্দির আত্মহত্যাসহ মোট ৫ জনের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এমএসএফ মনে করে, যে কোনো ব্যক্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করা পুলিশের আইনি দায়িত্ব, ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুর ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জবাবদিহি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের মানবাধিকার ও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা।
এমএসএফ মনে করে, সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে যেভাবে শারীরিক মানসিক এবং আইনি হয়রানি, আক্রমণ, হুমকি ও লাঞ্ছিত করা হচ্ছে, তা শুধু অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়। বরং সৎ-সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধ করে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে বাধা দেওয়া হচ্ছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দৃশ্যমান হচ্ছে না। এখনো মতপ্রকাশ ও তথ্যের স্বাধীনতার অধিকার সুরক্ষিত হয় নাই। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাংবাদিকদের হত্যা বা নির্যাতনের ব্যাপারে দায়মুক্তির সংস্কৃতি লক্ষ্য করা গেছে।
এমএসএফ জানিয়েছে, নতুন খসড়া আইনগুলোর মাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিসর আবারও সংকুচিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। অপরদিকে সাংবাদিকদের ওপর হামলা, হুমকি, নির্যাতন, নিপীড়ন, মামলা, গ্রেফতার, সেন্সরশিপ বা ভীতি প্রদর্শনের সংস্কৃতি চালু হয়, তখন তা কেবল সংবাদপত্র নয়, বরং সমগ্র গণতান্ত্রিক সমাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এ মাসেও সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে মানবাধিকার লংঘনের চিত্র ছিল অত্যন্ত উদ্বেগজনক। যদিও গতমাসের চেয়ে এ মাসে ঘটনার সংখ্যা কিছুটা কমেছে।
এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন জেলায় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ২৯টি ঘটনায় ৬৩ জন সাংবাদিক নানাভাবে হামলা, আইনি হয়রানি, হুমকি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আক্রান্ত সাংবাদিকদের মধ্যে ২৪ জন সাংবাদিক তাঁদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় আহত ও হামলার শিকার হয়েছেন। লাঞ্ছনা, হয়রানি এবং হুমকির শিকার হয়েছেন ৩৭ জন সাংবাদিক, একজন সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। একজন সাংবাদিক পুলিশের হয়রানির কারণে আত্মহত্যা করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়াও ২ জন সাংবাদিকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
সেপ্টেম্বরে মাসে দেশে ধর্ষণ, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন ও গণপিটুনিতে নিহতের সংখ্যা বেড়েছে। মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) থেকে প্রকাশিত সেপ্টেম্বরের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) এমএসএফ এই প্রতিবেদনটি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও নিজেদের অনুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এই পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন তৈরি করেছে এমএসএফ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গণপিটুনি ও মব সহিংসতার মতো আইন হাতে তুলে নেওয়ার ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এতে নিহত ও আহতের সংখ্যা বেড়ে নাগরিকদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এছাড়া নারী ও শিশুদের ওপর সহিংসতার ঘটনা যেমন ধর্ষণ, ধর্ষণ চেষ্টা, যৌন হয়রানি, হত্যা এবং শিশু ও নারীদের ওপর শারীরিক নির্যাতন বেড়েছে যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
প্রতিবেদনটি দেশের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির চিত্র তুলে ধরেছে। এই প্রতিবেদনে দেখা যায়, গণপিটুনিতে নিহতের সংখ্যা সামান্য বেড়ে আগস্টের ২৩ জন থেকে সেপ্টেম্বরে ২৪ জনে দাঁড়িয়েছে।
নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতারোধে দেশে যথেষ্ট কঠোর আইন থাকা সত্বেও অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর ও দৃশ্যমান ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছে এমএসএফ। ফলে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তাহীনতার জায়গাটি প্রকট আকার ধারণ করেছে বলে সংস্থাটি।
এমএসএফ জানিয়েছে, এ সহিংসতার মূল কারণ হিসেবে কাজ করছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি। ফলে অপরাধীরা বারবার নৃশংস অপরাধ করার সাহস পাচ্ছে। পারিবারিক সহিংসতার এই ভয়াবহ পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে মেনে নেওয়ার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে প্রয়োজন দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিচারব্যবস্থাকে দ্রুত ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে, যাতে অপরাধীরা কোনোভাবেই আইনের ফাঁক গলে বের হতে না পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয় ভুমিকার কারণে নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা একই ধারাবাহিকতায় ঘটেই চলেছে। যা নাগরিক জীবনে উদ্বেগ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে ৩৬১টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে যা গত মাসের তুলনায় ১২টি বেশী। এ মাসে ধর্ষণের ঘটনা ৫৩টি, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ১৩টি, ধর্ষণ ও হত্যা ৩টি। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৫ জন প্রতিবন্ধী কিশোরী ও নারী।
উল্লেখ্য যে, ধর্ষণের শিকার ৫৩ জনের মধ্যে ১৫ জন শিশু, ১৮ জন কিশোরী রয়েছে, অপরদিকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২ জন শিশু, ৩ জন কিশোরী ও ৮ জন নারী এবং ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়েছেন ২ জন শিশু ও ১ জন কিশোরী। ধর্ষণের চেষ্টা ২৮টি, যৌন হয়রানি ২৪টি, শারীরিক নির্যাতনের ৯৯টি ঘটনা ঘটেছে। এসিড নিক্ষেপে আক্রান্ত হয়েছেন ১ জন পুরুষ ও ২ জন নারী।
এমএসএফ’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে একই ধারাবাহিকতায় গণপিটুনিতে হতাহতের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েই চলেছে। চলতি সময়ে গণপিটৃনির সংখ্যা আশংকাজনক বেড়ে যাওয়ায় জনমনে নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি প্রশ্নাতীতভাবে ভাবিয়ে তুলেছে। এছাড়াও ধর্ষণ এবং ধর্ষণ চেষ্টার হার বেড়ে যাওয়ায় ধর্ষণে অভিযুক্তদের ধরে গণপিটুনি দেয়ার প্রবণতা প্রকটভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে। পাশাপাশি নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কর্মীদের পাওয়া মাত্র গণপিটুনি দিয়ে আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর নিকট সোপর্দ করার লক্ষণীয় প্রভাব থাকায় জনমনে আতংক বিরাজ করছে।
এমএসএফ জানিয়েছে, এ মাসে অন্তত ৪৩টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। যেখানে ২৪ জন নিহত ও ৩৬ জন গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। গণপিটুনির শিকার ২০ জনকে আহতাবস্থায় পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। গণপিটুনিতে নিহতের মধ্যে ছয়জন ছিনতাইয়ের অভিযোগে, ১০ জন চুরির অভিযোগে, এক জন সন্দেজনক চুরির অভিযোগে, তিনজনকে চাঁদাবাজির অভিযোগে, তিন জনকে ডাকাতি, একজনকে অজ্ঞাত কারণে হত্যা করা হয়। অপরদিকে ১৩ জনকে চুরির অভিযোগে, চার জনকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে, চার জন যৌন হয়রানির অভিযোগে, পাঁচ জনকে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী হওয়ার অভিযোগে আহত করা হয়েছে। এ ছাড়া সন্দেহজনক চুরি, চাঁদাবাজি, কটূক্তি, প্রতারণা, অপহরণ এ ধরনের অপরাধজনিত কারণে ১০ জনকে গণপিটুনি দিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।
সংস্থাটি জানিয়েছে, অপরদিকে এ মাসে মব সন্ত্রাসের মাধ্যমে বেশ কয়েকজন ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে জোরপূর্বক চুল কেটে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে, যা মর্যাদাহানিকর, অমানবিক, বেআইনি ও মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লংঘন। প্রকাশ্যে চুল কেটে দেওয়া অবশ্যই ভুক্তভোগীর মৌলিক অধিকার ও ব্যক্তিস্বাধীনতার চরম লংঘন। এ ধরনের ঘটনা রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করতে হবে যাতে কোন নাগরিকের মর্যাদাহানিকর অমানবিক ও বেআইনি আচরণ না ঘটে এবং দায়ী ব্যক্তিদের সনাক্ত করে আইন আওতায় এনে যথাযথ বিচারের ব্যবস্থা করা হয়।
সনাতন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উদ্যাপন চলছে, এরপরও ক্রমান্বয়ে আশঙ্কা ও উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে বলে জানিয়েছে এমএসএফ।
সংস্থাটি জানিয়েছে, গত মাসে (আগস্ট) ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছিল আটটি। এ মাসে ইতোমধ্যে তা বেড়ে দ্বিগুণে দাঁড়িয়েছে। সরকারের উচ্চতর পর্যায় থেকে নির্বিঘ্নে ও উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গোৎসবে পূজার্থীদের আশ্বস্ত করা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পরও পূজার প্রাক্কালে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আশ্বস্ত হওয়ার বিষয়টি দুরূহ মধ্যে থেকে যায়।
এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৫ মাসে বিক্ষোভ দমনের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক বিচারবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের দুইটি ঘটনায় গুলিতে ৪ জন নিহত ও অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে হওয়া সংঘর্ষের ঘটনাও উল্লেখ করে এমএসএফ। সংস্থাটি মনে করে, খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত ভয়াবহ সহিংস ঘটনায় তিনজনের বিচারবহির্ভূত হত্যা, গণধর্ষণ, কথিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা এবং বাজারের অসংখ্য দোকানপাটে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে যা দুঃখজনক ও স্থানীয় মানুষের জীবন, নিরাপত্তা ও জীবিকার ওপর প্রভাব ফেলেছে এমএসএফ ঘটনার যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছে।
এমএসএফ জানিয়েছে, আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে আসামির মৃত্যুর বিষয়ের সুষ্ঠু তদন্ত না হওয়া জনমনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক করে। প্রতিটি হেফাজতে মৃত্যুর নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া আবশ্যক বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
এমএসএফ জানায়, সেপ্টেম্বরে গাজীপর, সিলেট, মৌলভীবাজার, বাগেরহাট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন থানা হাজতে ২ বন্দির আত্মহত্যাসহ মোট ৫ জনের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এমএসএফ মনে করে, যে কোনো ব্যক্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করা পুলিশের আইনি দায়িত্ব, ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুর ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জবাবদিহি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের মানবাধিকার ও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা।
এমএসএফ মনে করে, সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে যেভাবে শারীরিক মানসিক এবং আইনি হয়রানি, আক্রমণ, হুমকি ও লাঞ্ছিত করা হচ্ছে, তা শুধু অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়। বরং সৎ-সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধ করে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে বাধা দেওয়া হচ্ছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দৃশ্যমান হচ্ছে না। এখনো মতপ্রকাশ ও তথ্যের স্বাধীনতার অধিকার সুরক্ষিত হয় নাই। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাংবাদিকদের হত্যা বা নির্যাতনের ব্যাপারে দায়মুক্তির সংস্কৃতি লক্ষ্য করা গেছে।
এমএসএফ জানিয়েছে, নতুন খসড়া আইনগুলোর মাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিসর আবারও সংকুচিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। অপরদিকে সাংবাদিকদের ওপর হামলা, হুমকি, নির্যাতন, নিপীড়ন, মামলা, গ্রেফতার, সেন্সরশিপ বা ভীতি প্রদর্শনের সংস্কৃতি চালু হয়, তখন তা কেবল সংবাদপত্র নয়, বরং সমগ্র গণতান্ত্রিক সমাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এ মাসেও সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে মানবাধিকার লংঘনের চিত্র ছিল অত্যন্ত উদ্বেগজনক। যদিও গতমাসের চেয়ে এ মাসে ঘটনার সংখ্যা কিছুটা কমেছে।
এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন জেলায় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ২৯টি ঘটনায় ৬৩ জন সাংবাদিক নানাভাবে হামলা, আইনি হয়রানি, হুমকি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আক্রান্ত সাংবাদিকদের মধ্যে ২৪ জন সাংবাদিক তাঁদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় আহত ও হামলার শিকার হয়েছেন। লাঞ্ছনা, হয়রানি এবং হুমকির শিকার হয়েছেন ৩৭ জন সাংবাদিক, একজন সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। একজন সাংবাদিক পুলিশের হয়রানির কারণে আত্মহত্যা করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়াও ২ জন সাংবাদিকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান কেবল মিয়ানমারের ভেতরেই সম্ভব। মিয়ানমারের সাহসী পদক্ষেপ ছাড়া রোহিঙ্গাদের দুর্দশার অবসান হবে না।
২৩ মিনিট আগেরোহিঙ্গাদের জন্য নতুন করে ৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।
৩৫ মিনিট আগেনিউইয়র্কে জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ পরিষদে (ইউএনজিএ) অংশগ্রহণ শেষে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
১ ঘণ্টা আগেকার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ লোকজন-নেতাকর্মীদের নিয়ে সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনারের (এসএমপি) একটি নির্দেশনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
১ ঘণ্টা আগে