leadT1ad

রোহিঙ্গা ঢলের ৮ বছর

‘আগের রাতের ঘটনা সবকিছু ছিন্ন-ভিন্ন করে দেয়’

সীমান্তের ওপারে কয়েকদিন ধরে গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। এতে নতুন করে রোহিঙ্গা নাগরিকেরা নৌকায় নাফ নদ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছেন। এতে নতুন করে ‘২৫ আগস্ট’ পরিস্থিতি তৈরির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

স্ট্রিম সংবাদদাতাউখিয়া, কক্সবাজার
প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২৫, ১৮: ৩৯
নতুন করে রোহিঙ্গা নাগরিকেরা নৌকায় নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছেন। সংগৃহীত ছবি

‘২৫ আগস্ট তারিখটি চিরদিনের মতো আমার স্মৃতিতে খোদাই হয়ে গেছে। এক রাত, যা আমার স্বপ্নকে পরিণত করেছিল হতাশায়। এক রাত, যা বদলে দিয়েছিল আমার জীবনের গতিপথ।’

২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের ভয়াবহ স্মৃতি এভাবেই বলছিলেন রোহিঙ্গা তরুণ মোহাম্মদ সাদেক (২৫)। তিনি বলেন, তখন আমি কেবল একজন ছাত্র— ভবিষ্যতের জন্য স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষায় ভরা। জীবন ছিল স্বাভাবিক, ছিল সামনে এগোনোর অগণিত পরিকল্পনা। কিন্তু ২৫ আগস্টের আগের রাতের ঘটনা সবকিছু ছিন্ন-ভিন্ন করে দেয়।’

শুধু সাদেক নয়, মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর নিপীড়নের মুখে তছনছ হয়ে গেছে তাঁর মতো অনেকের স্বপ্ন। ২০১৭ সালের দ্বিতীয়ার্ধে নিজ দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন রোহিঙ্গারা। ওই বছরের ২৫ আগস্ট থেকে শুরু হয়ে পরবর্তী তিন মাসে নতুন করে প্রায় ৮ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ উপজেলায় আশ্রয় নেন। এর পর আট বছর অতিবাহিত চললেও এই মানুষগুলোর নিজ দেশে ফেরার পথ হয়নি সুগম হয়নি এখনো।

২০২২ সাল থেকে প্রতিবছর ২৫ আগস্ট দিনটি ‘রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। এরই মধ্যে নতুন করে ‘২৫ আগস্ট’ পরিস্থিতি তৈরির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে তাঁদের মনে।

নতুন করে ‘২৫ আগস্টের’ শঙ্কা

সরকার ও জাতিসংঘের সমন্বিত তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৩ লাখেরও বেশি। চলতি আগস্টে আবারও বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা জড়ো হয়েছেন সীমান্তের ওপারে। এতে বাংলাদেশে উঁকি দিচ্ছে আরেকটি নতুন ২৫ আগস্ট। আবারও তাঁদের অনুপ্রবেশের শঙ্কায় স্থানীয় বাসিন্দারাও।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের টেকনাফ অংশে ওপারে কয়েকদিন ধরে গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে।

শুক্রবার (২২ আগস্ট) রাত ১১টা থেকে শুরু হওয়া এই গোলাগুলির শব্দ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে শনিবার সকাল পর্যন্ত শোনা গেছে। এতে নতুন করে রোহিঙ্গা নাগরিকেরা নৌকায় নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছেন। তবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বিজিবি।

দেশের সীমান্তরক্ষী বিজিবি জানিয়েছে, গত সপ্তাহ থেকে শুরু কের ৫ দিনে ৩ শতাধিক রোহিঙ্গাকে অনুপ্রবেশে বাঁধা দেওয়া হয়েছে। বিজিবির টেকনাফ ২ ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। কোনোভাবেই যেন নতুন কেউ আসতে না পারেন, এ জন্য সীমান্তের ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে শক্ত নজরদারির পাশাপাশি টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে।’

রোহিঙ্গারা আসার পর নানা সমস্যায় জড়িত স্থানীয় বাসিন্দারা। নতুন করে অনুপ্রবেশের পরিস্থিতি হওয়ায় তারা রয়েছে আতঙ্কে। স্থানীয় অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি প্রকৌশলী রবিউল হোসাইন বলেন, ‘আমরা এই সংকটের সমাধান চাই। কোনোভাবেই রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না। আশ্রিতদের ক্যাম্পের বাইরে অনিয়ন্ত্রিত বিচরণসহ অপরাধ রুখতে সরকারকে কঠোর হতে হবে।’

ফিরতে চান রোহিঙ্গারাও

এদিকে রোহিঙ্গা গণহত্যা স্মরণ দিবসে উখিয়ার ৪ নম্বর ক্যাম্পে সমাবেশ করেছেন রোহিঙ্গা। এতে রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মোহাম্মদ কামাল বলেন, ‘আমাদের কেবল নিরাপদ প্রত্যাবাসন চাই। মর্যাদা ছাড়া বাঁচতে চাই না, বিশ্বকে আমাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।’

রোহিঙ্গা তরুণী জাহাননূর বলেন, আজও রাখাইনে চলমান সহিংসতায় তাঁদের আত্মীয়স্বজন প্রাণ হারাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি তাই তাঁদের আবেদন, ‘আমাদের বাঁচান, আমাদের ফিরতে দিন।’

রবিবার (২৪ আগস্ট) থেকে কক্সবাজারে চলমান ‘রোহিঙ্গা বিষয়ক অংশীজন সংলাপ’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনের বক্তব্য দেন বৈশ্বিক রোহিঙ্গা রাজনৈতিক প্লাটফর্ম আরকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল কাউন্সিলের (এআরএনসি) সহসভাপতি নেই সান লুইন। তিনি ‘আশা করছি বাংলাদেশের এই আয়োজনের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে আমাদের আওয়াজ পৌঁছে যাবে যে আমরা নিরাপদ, মর্যাদা এবং অধিকার নিয়ে মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে মুখিয়ে আছি।’

গুরুত্ব পাচ্ছে অংশীজন সম্মেলন

তিন দিনব্যাপী ওই সংলাপে অংশ নিয়েছেন ৪০টি দেশের প্রতিনিধি, কূটনীতিক, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার প্রতিনিধি, সরকারের কর্মকর্তারা। চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদর দপ্তরে ১০৭ দেশের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হবে রোহিঙ্গাবিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলন। এর প্রস্তুতি হিসেবে অংশীজনদের সঙ্গে কক্সবাজার এই সম্মেলনকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

ইউএনএইচসিআরের যোগাযোগ কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন বলেন, ‘সংকটের সমাধান মিয়ানমারে নিহিত, এবং রোহিঙ্গারা যখন পরিস্থিতি অনুকূল হবে, তখন স্বেচ্ছায়, নিরাপদে এবং মর্যাদার সাথে তারা বাড়িতে ফিরতে পারবে।’

Ad 300x250

যে ছয় মাস আছি, প্রত্যেক জেলায় লিগ্যাল এইডের ব্যবস্থা করে যাব: আইন উপদেষ্টা

মুসলমানি-বাংলা থেকে বাংলাদেশি: ভাষার রাজনৈতিক বিভাজন

রোহিঙ্গারা অধিকার নিয়ে মিয়ানমারে ফিরতে প্রস্তুত: খলিলুর রহমান

ভারতের নতুন নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের পাটশিল্পে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা

‘রোহিঙ্গা সংকট স্থবির হয়ে আছে, সমাধানে আঞ্চলিক-আন্তর্জাতিক সক্রিয়তা জরুরি’

সম্পর্কিত