leadT1ad

‘বিপজ্জনক পর্যায়ে’ যাচ্ছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি, চাপ সামলাতে হাসপাতালে হিমশিম

ঢামেকের ডেঙ্গু ওয়ার্ডের ভেতরে গেলে সহজেই বোঝা যায় রোগীর চাপ কতটা। বেড না পেয়ে মাটিতেই পাতা বিছানার সারি আর রোগী ও স্বজনদের ভিড়। রোগ থেকে মুক্তি পেতে মানুষ হাসপাতালে আশ্রয় নেয়। কিন্তু সেই হাসপাতালই যেন হয়ে উঠেছে রোগ ছড়ানোর কেন্দ্র। ঢামেক হাসপাতাল চত্বরেই তৈরি হচ্ছে এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র।

ঢামেকের ডেঙ্গু ওয়ার্ডের ভেতরে রোগীর চাপ। স্ট্রিম ছবি

গত কয়েকদিন থেকেই তীব্র জ্বরে ভুগছিলেন বরিশাল সদরের বাসিন্দা শাহ আলমের স্ত্রী আরজিনা বেগম। তিন দিনের মাথায় শাহ আলম নিজেও জ্বরে আক্রান্ত হন। স্থানীয় হাসপাতালে গিয়ে টেস্ট করানোর পর স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই ডেঙ্গু ধরা পড়ে। অবস্থা আরও খারাপের দিকে গেলে বরিশাল থেকে তাঁদের নিয়ে আসা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। ঢামেকের নতুন বিল্ডিংয়ের চতুর্থ তলায় ডেঙ্গু ওয়ার্ডে মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) শাহ আলমের সঙ্গে কথা হয় স্ট্রিমের।

গত চারদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছেন শাহ আলম, তাঁর স্ত্রীও একই ওয়ার্ডে ভর্তি। এই দুই রোগীর দেখাশোনা করছেন শাহ আলমের বোন জোবাইদা। পেশায় চা-দোকানদার শাহ আলম জানালেন, গত চারদিন ধরে খেতে পারছেন না, পেট ব্যথা, আর নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘সারা রাইত ঘুমাইতে পারি না, বাচ্চাদের দিয়ে চিন্তা হয়, ওদের বাড়ি রেখে এসেছি।’

শাহ আলমের মতো আরো শত শত ডেঙ্গু রোগীর ভিড় ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে। শুধু এখানেই নয়, ঢাকার অন্যান্য হাসপাতালগুলোতেও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আগের ২৪ ঘণ্টায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী ভর্তি হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, ৩২ জন। এর চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে শুধু মহাখালীতে ডিএনসিসির ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালে, ৪৪ জন।

হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। স্ট্রিম ছবি
হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। স্ট্রিম ছবি

ঢামেকের ডেঙ্গু ওয়ার্ডের ভেতরে গেলে সহজেই বোঝা যায় রোগীর চাপ কতটা। বেড না পেয়ে মাটিতেই পাতা বিছানার সারি আর রোগী ও স্বজনদের ভিড়। ওয়ার্ডেই কথা হলো এনায়েত নামে আরেকজনের সঙ্গে। প্রবাসফেরত এনায়েতের ১৪ বছর বয়সী ছেলে আফতাব ডেঙ্গু আক্রান্ত। তিনি জানালেন, আজ ছয়দিন হলো কুয়েত থেকে দেশে ফিরেছেন। কিন্তু সন্তানের অসুস্থতার কারণে দেশে ফেরার আনন্দ নেই তাঁর। তিনদিন ধরে হসপাতালেই সময় কাটাচ্ছেন।

এমন রোগী ক্রমাগত বেড়েই চলেছে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে। রোগীর ভিড়ে চিকিৎসক বা নার্সও খুব একটা চোখে পড়লো না। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, পুরো ওয়ার্ডের দায়িত্বে আছেন মাত্র একজন নার্স ও একজন ওয়ার্ড বয়। ‘সঙ্কট আছে’ মেনে নিয়ে হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা ডা. রওনক জাহান নাহার বলেন, ‘আমি এই ওয়ার্ডের দায়িত্বে এসেছি দুদিন আগে। তবে এই দুদিনে দেখলাম রোগীর সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে, সেটা ভালোভাবে সামাল দেওয়ার মত যথেষ্ট জনবল বা সুযোগ-সুবিধা নেই।’

‘আমাদের এই ওয়ার্ডের ধারণক্ষমতা ৩০ থকে ৩৫ জন, কিন্তু এই যে দেখেন এখানে রোগীর আত্মীয়-স্বজনসহ মানুষ রয়েছে ৫০-৬০ জনের বেশি, অধিদপ্তর থেকে যথাযথ চিকিৎসক দেওয়া হলেও কিন্তু এই ডেডিকেটেড ওয়ার্ড ম্যানেজ করার জন্য যে বাড়তি, নার্স ও ওয়ার্ড বয় প্রয়োজন তার ঘাটতি রয়েছে। যে কারণে আমরা সেবা দিয়ে যাচ্ছি কিন্তু আমরা হিমশিম খাচ্ছি।’

ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ থেকে অক্টোবরের ৬ তারিখ সকাল পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৭০ জন। রওনক জাহানের মতে এ সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে এবং সেটা ‘বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে গেছে’ এবং সেটা গত বছরের তুলনায়ও অনেক বেশি।

ঢামেকের ডেঙ্গু ওয়ার্ডের ভেতরে গেলে সহজেই বোঝা যায় রোগীর চাপ কতটা। বেড না পেয়ে মাটিতেই পাতা বিছানার সারি আর রোগী ও স্বজনদের ভিড়। ওয়ার্ডেই কথা হলো এনায়েত নামে আরেকজনের সঙ্গে। প্রবাসফেরত এনায়েতের ১৪ বছর বয়সী ছেলে আফতাব ডেঙ্গু আক্রান্ত। তিনি জানালেন, আজ ছয়দিন হলো কুয়েত থেকে দেশে ফিরেছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে হাসপাতালে ডেঙ্গুর নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে ৭৮২ জন যার মাঝে ৩৪৩ জন ঢাকায়, আর ৪৩৯ জন ঢাকার বাইরে।

বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় অক্টোবর মাসে আরও অবনতি ঘটতে পারে ডেঙ্গু পরিস্থিতির। তবে ডা. রওনক জাহানের মতে এবারের শঙ্কার জায়গা হচ্ছে, অনেকেই দ্বিতীয় বা তৃতীয়বারের মত আক্রান্ত হওয়া এবং তাদের অনেকের এমন উপসর্গ দেখা দেয় যেটা ডেঙ্গুর সাধারণ উপসর্গের সঙ্গে মেলে না। যেমন দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া (যেমন ৩-৫ দিনেও কমে না), ওষুধ চলার পরও বমি, পেটে পানি জমে যাওয়া, বুকে পানি জমে যাওয়া, পেতে প্রচণ্ড ব্যথা, মস্তিষ্কের প্রদাহ, খিঁচুনি হওয়া, শরীরে পানি জমে যাওয়া, হাত পা ফুলে যাওয়া।

একজন প্রসূতি নারীর কথা জানান ডা. রওনক জাহান, যার কোনো জ্বর ছিল না কিন্তু বমি হচ্ছিল। গাইনি ডাক্তারের কাছে বমির প্রতিকার নিতে গেলে সেই চিকিৎসক টেস্ট করাতে বলেন এবং পরবর্তী সময়ে দেখা যায়, তিনি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত। বর্তমানে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়ে গেছেন তিনি।

হাসপাতালেই ডেঙ্গুর প্রজননক্ষেত্র

রোগ থেকে মুক্তি পেতে মানুষ হাসপাতালে আশ্রয় নেয়। কিন্তু সেই হাসপাতালই যেন হয়ে উঠেছে রোগ ছড়ানোর কেন্দ্র। ঢামেক হাসপাতাল চত্বরেই তৈরি হচ্ছে এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র আর সেখান থেকেই ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু। আক্রান্ত রোগীদের মশারি না দেওয়ায় হাসপাতালের ভেতর জন্ম নেওয়া মশার কামড়েই আরও বাড়ছে সংক্রমণ।

হাসপাতালের প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, জরুরি বিভাগের পাশেই ময়লার স্তূপে একাধিক পাত্রে জমে আছে পানি। সেই পানিতেই জন্ম নিচ্ছে এডিস মশার লার্ভা। শুধু জরুরি বিভাগ নয়, ঢাকা মেডিকেলের চারপাশেই ছড়িয়ে রয়েছে ডাবের খোসা, ওয়ানটাইম কাপ, মাটির পাত্র সবখানেই জমে থাকা পানিতে চাষ হচ্ছে এডিস মশার বংশ।

জরুরি বিভাগের পাশেই ময়লার স্তূপে একাধিক পাত্রে জমে আছে পানি। স্ট্রিম ছবি
জরুরি বিভাগের পাশেই ময়লার স্তূপে একাধিক পাত্রে জমে আছে পানি। স্ট্রিম ছবি

ডেঙ্গু ওয়ার্ডের ভেতর গিয়ে দেখা যায়, আশেপাশে পানি জমে আছে অনেক পাত্রে, যার অধিকাংশ ভরা এডিসের লার্ভায়। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসা করা হলে প্রথমে নানা অজুহাত দিলেও পরে দায় স্বীকার করেন তারা। পরে ফেলে দেওয়া হয় লার্ভা ভরা বালতির পানি।

কেবিন এলাকাতেও একই চিত্র। টবে গাছ না থাকলেও জমে আছে পানি, যেন বহুদিন ধরেই কেউ খেয়াল করেনি। সেই জমা পানিতেই জন্ম নিচ্ছে এডিসের লার্ভা ও মশা। অন্যদিকে, ডেঙ্গু রোগীদের বেডে কোথাও দেখা যায়নি মশারি। ফলে, আক্রান্ত রোগীদের কামড়ে মশার মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে অন্যদের মধ্যেও।

মশারি কেন নেই জানতে চাইলে ওয়ার্ড ইনচার্জ দাবি করেন, ‘সব ডেঙ্গু রোগী মশারির ভেতরেই আছেন।’ কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে সেই দাবির কোনো প্রমাণ মেলেনি। পরে ব্যর্থ হয়ে দায় চাপান রোগী ও স্বজনদের ওপর। তাঁর ভাষায়, ‘যেহেতু এটা জেনারেল ওয়ার্ড, গরমের একটা ব্যাপার আছে। আবার রোগীর লোকজনও সচেতন না, মশাকে তারা গুরুত্ব দেয় না।’

জানালার পাশেই পরিচ্ছন্নতার অভাবে জমেছে ময়লার স্তূপ। স্ট্রিম ছবি
জানালার পাশেই পরিচ্ছন্নতার অভাবে জমেছে ময়লার স্তূপ। স্ট্রিম ছবি

এতসব অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে ওয়ার্ডের দায়িতে থাকা ডা. রওনক জাহান বলেন, ‘এসব তো নার্সদের কাজ, তাদের বুঝিয়ে দেওয়া আছে। তারা তাদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করছে না, তাদের কিছু বললে রোগীর ওপর দায় দিচ্ছেন।

ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার বাড়ছে: যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এইচ এম নাজমুল আহসান স্ট্রিমকে জানান, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুহারের বৃদ্ধি মূলত কয়েকটি কারণে ঘটছে। তাঁর মতে, রোগীরা অনেক সময় বেশি দেরিতে হাসপাতালে আসেন। ডেঙ্গু নিয়ে আগের মতো মানুষের সতর্কতা নেই বা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। এছাড়া, অন্যান্য সংক্রামক রোগের সঙ্গে আক্রান্ত হওয়া এবং রোগীদের ঢাকায় রেফার করার প্রক্রিয়াও মৃত্যুহার বাড়াচ্ছে।’

ডা. নাজমুল আরও উল্লেখ করেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর মোট আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কম, তবে মৃত্যুহার বেড়েছে। এর পেছনে প্রধান কারণ হলো, মানুষ ডেঙ্গুকে আগের মতো গুরুত্ব দিচ্ছে না, বিশেষ করে যখন একই সময়ে অন্যান্য ভাইরাসও ছড়িয়ে পড়ছে।’

পরিসংখ্যান দেখায়, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত ২১৫ জন ডেঙ্গুতে মারা গেছেন, যার মধ্যে ৯১ দশমিক ৫৬ শতাংশ শিশু, কিশোর ও তরুণ। বছরের প্রথম পাঁচ মাসে মারা গেছেন ২৩ জন, জুনে ১৯, জুলাইয়ে ৪১, আগস্টে ৩৯ এবং সেপ্টেম্বরের ৭৬ জন, অক্টোবরের প্রথম ছয়দিনেই ১৭ জন।

ডেঙ্গু ওয়ার্ডে মশারি কেন নেই জানতে চাইলে ওয়ার্ড ইনচার্জ দাবি করেন, ‘সব ডেঙ্গু রোগী মশারির ভেতরেই আছেন।’ কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে সেই দাবির কোনো প্রমাণ মেলেনি। পরে ব্যর্থ হয়ে দায় চাপান রোগী ও স্বজনদের ওপর।

ডা. নাজমুলের ভাষ্য অনুযায়ী, দেরিতে চিকিৎসা শুরু করা এবং রোগীদের ঢাকায় রেফার করার বিলম্ব এই সংখ্যা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

চিকিৎসকরা সতর্ক করেন, মৌসুমের বাইরে বা সারা বছর ডেঙ্গু মোকাবিলায় জনসচেতনতা কম থাকায় মৃত্যু ও জটিলতার ঝুঁকি ক্রমেই বেড়ে চলেছে। তারা পরামর্শ দিচ্ছেন, বয়সে ছোট ও একাধিক রোগে আক্রান্ত রোগীদের দ্রুত স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং শুধু গুরুতর অবস্থার রোগীদের ঢাকায় রেফার করা উচিত।

ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন জানিয়েছেন, অনিয়মিত বৃষ্টি ও মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে। তাঁর আশঙ্কা, যদি আবহাওয়া পরিস্থিতি ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের উন্নতি না হয়, তাহলে আগামী কয়েক সপ্তাহে সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে।

কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, সাধারণত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। কিন্তু এ বছর টানা বৃষ্টির কারণে সংক্রমণের সময়কাল কিছুটা পিছিয়ে গেছে, ফলে অক্টোবরেই সবচেয়ে বেশি প্রকোপ দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

তাঁর মতে, ডেঙ্গু মোকাবিলায় শুধু সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন কমিউনিটি-ভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি যার মধ্যে ইনসেক্ট গ্রোথ রেগুলেটর (আইজিআর) ট্যাবলেট বিতরণ এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।

রোগ থেকে মুক্তি পেতে মানুষ হাসপাতালে আশ্রয় নেয়। কিন্তু সেই হাসপাতালই যেন হয়ে উঠেছে রোগ ছড়ানোর কেন্দ্র। ঢামেক হাসপাতাল চত্বরেই তৈরি হচ্ছে এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র আর সেখান থেকেই ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু। আক্রান্ত রোগীদের মশারি না দেওয়ায় হাসপাতালের ভেতর জন্ম নেওয়া মশার কামড়েই আরও বাড়ছে সংক্রমণ।

জেলা পর্যায়ে চিকিৎসা জোরদার না হলে মৃত্যু ঝুঁকি বাড়বে

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এফসিপিএস কোর্সে প্রশিক্ষণরত চিকিৎসক ডা. নাজমুল সাকিব বলেন, বর্তমানে ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীদের অধিকাংশই ঢাকার বাইরের এলাকা থেকে আসছেন। তিনি জানান, ‘আমরা কেবল তাদেরই ভর্তি নিচ্ছি, যাদের অবস্থা গুরুতর বা যাদের বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ।’

ডা. সাকিব বলেন, ডেঙ্গুর প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। পাশাপাশি, শরীরে পানির ঘাটতি রোধে প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার—যেমন শরবত, ডাবের পানি, ওরস্যালাইন এবং ফলের রস গ্রহণ করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে এডিস মশার কামড় থেকে বাঁচতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এইচ. এম. নাজমুল আহসান জানান, গুরুতর অসুস্থ রোগীদের প্রায়ই জেলা থেকে রাজধানীর বড় হাসপাতালে রেফার করা হয়। ‘যখন এসব রোগী ঢাকায় পৌঁছান, তখন তাদের অবস্থা সাধারণত সংকটাপন্ন থাকে। অনেকে রাজধানীর বাইরে আক্রান্ত হলেও ঢাকায় এসে মারা যান এটাই শহরে মৃত্যুহার বেশি হওয়ার একটি বড় কারণ’, বলেন তিনি।

এইচ. এম. নাজমুল আহসানের মতে, চিকিৎসা শুরুর আগে সময়ক্ষেপণই ডেঙ্গু মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। অনেক জেলা থেকে রোগীদের ঢাকায় আসতে সাত-আট ঘণ্টা সময় লাগে, এরপর ভর্তি প্রক্রিয়াতেও দেরি হয়। ‘যদি কোনো রোগী আগে থেকেই শকে থাকে, তাহলে এই বিলম্বই প্রাণঘাতী হয়ে দাঁড়ায়’, বলেন ডা. আহসান।

এইচ. এম. নাজমুল আহসান জোর দিয়ে বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা জেলা পর্যায়েই দিতে হবে। শুধু গুরুতর অবস্থায় রোগীদের ঢাকায় পাঠানো উচিত।’

ডা. আহসান আরও বলেন, ‘রোগী যদি শকে থাকে, তাহলে তাকে প্রথমে স্থিতিশীল করে তবেই স্থানান্তর করা উচিত। কিন্তু অনেক হাসপাতালেই তা করা হয় না। ফলে রোগীরা ‘ডিকম্পেনসেটেড শক’ অবস্থায় ঢাকায় এসে পৌঁছান, যখন মৃত্যুর ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত