নীলফামারীর উত্তরা রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) টানা দুই দিন বন্ধ থাকার পর আজ বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে পুনরায় চালু হয়েছে। তবে বন্ধ আছে শ্রমিক আন্দোলনের সূতিকাগার এভারগ্রিন কোম্পানির কারখানাটি। আগামী শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) ওই কারখানাও খুলবে বলে জানা গেছে।

এদিকে উদ্ভুত পরিস্থিতি ও সংঘর্ষের ঘটনায় কোনো পক্ষ মামলা করবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া এভারগ্রিনের ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের পুর্নবহাল করা হবে। বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত উত্তরা ইপিজেডের ভেতর চলা বহুপক্ষীয় একটি বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। এতে মেনে নেওয়া হয় শ্রমিকদের ২৩ দফা দাবি।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ইপিজেডের দুটি ফটকের (গেট) মধ্যে পেছনেরটি ছোট ফকট দিয়ে শ্রমিকদের প্রবেশ করতে দেখা গেছে। তবে সামনের ফটক তখনও বন্ধ ছিল। হতাহতের ঘটনায় কাজে ফেরা শ্রমিকদের চোখে-মুখে তখনো ছিল বিষন্নতার ছাপ।

উত্তরা ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল জব্বার আজ বৃহস্পতিবার থেকে উত্তরা ইপিজেড খোলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, শ্রমিকদের দাবিগুলো নিয়ে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং সমস্যার সমাধান হয়েছে।

বুধবার সন্ধ্যার ওই বৈঠকে বেপজা, জেলা প্রশাসন, শ্রমিক প্রতিনিধি, কারখানা মালিক, পুলিশ প্রশাসন, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের অংশগ্রহণ করেন। এতে গৃহীত প্রস্তব প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, সমস্যা নিরসনে শ্রমিকদের ২৩ দফা দাবির বিষয়ে বৈঠকে পর্যালোচনা করা হয়। শ্রমিক অসন্তোষ নিরসন ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতেই ইউপিজেড খোলাসহ অন্যান্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

উত্তরা ইপিজেডের ভেতর দেশ-বিদেশের ২৭টি কারখানা রয়েছে। এতে কাজ করছেন ৬৫ হাজারের অধিক শ্রমিক। মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) আন্দোলনের উদ্ভুত পরিস্থিতি সব কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। মোতায়েন করা হয় বিজিবি, সেনা ও পুলিশের যৌথ বাহিনী। এতে বুধবার দিনভর সেখানে শ্রমিক-কর্মচারীদের কোনো আনাগোনা দেখা যায়নি। সাধারণত কর্মচাঞ্চল্যে ভরা ইপিজেড এলাকা তখন একেবারেই জনশূন্য হয়ে পড়ে।

বিচার দাবিতে মানববন্ধন

এদিকে উত্তরা ইপিজেডে আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর গুলিবর্ষণ ও শ্রমিক নিহতের ঘটনা তদন্ত এবং জড়িতদের বিচার দাবি করেছে শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম (এসএনএফ)। একই সঙ্গে হতাহত শ্রমিকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর পল্টনে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে এই দাবি জানায় তারা।

এর আগে উত্তরা ইপিজেডে এভারগ্রিন কোম্পানি নামের একটি প্রতিষ্ঠানে ৫১ জন শ্রমিককে ছাটাই ও বন্ধ কেন্দ্রে করে মঙ্গলবার আন্দোলনে নামে শ্রমিকরা। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে হাবিব ইসলাম (২১) নামে এক শ্রমিক নিহত হন। আহত হন অন্তত ২১ জন। এর পর্যায়ে হাবিবের মরদেহ হাসপাতাল থেকে এনে সড়কে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। পরে স্বজনরা তাঁর মরদেহ বাড়ি নিয়ে যান। রাতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়।

এদিকে সৃষ্ট ঘটনার তদন্তে বেপজার পক্ষ থেকে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শ্রমিক নিহতের ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। তবে পুলিশের পক্ষে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে থানায়।