leadT1ad

শিশু সাজিদের বাঁচার আশা নেই, বন্ধ করা হয়েছে অক্সিজেন

স্ট্রিম সংবাদদাতা
স্ট্রিম সংবাদদাতা
রাজশাহী

প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯: ৪৬
তানোর গভীর নলকূপের গর্তে পড়া শিশু সাজিদকে উদ্ধার অভিযান। স্ট্রিম ছবি

রাজশাহীর তানোরে গভীর নকল কূপের জন্য খোঁড়া গর্তে পড়ে যাওয়া শিশু সাজিদের বাঁচার আর আশা নেই। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সরু গর্তের ভেতর অক্সিজেন সরবরাহ। ৩৫ ফুটের পর গর্তের মাটি জমে যাওয়ায় তার নিচে অক্সিজেন পাঠানোও সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

এদিকে শুরুতে ৩০ ফুটের পর শিশুটিকে পাওয়া যাবে বলে ধারণা করেছিলেন উদ্ধারকর্মীরা। কিন্তু ৪২ ফুট পর্যন্ত মাটি খনন করে গিয়েও পাওয়া যায়নি। তবে উদ্ধার অভিযান চালু রেখেছেন তাঁরা।

শিশু সাজিদ উদ্ধার অভিযানের ২৭ ঘণ্টা পর আজ বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান ফায়ার সার্ভিসের অপারেশন ও মেইনটেনেন্স বিভাগের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী। শিশু সাজিদ উপজেলার কলমা ইউনিয়নের কোয়েলহাট পূর্বপাড়া গ্রামের রাকিবুল ইসলামের ছেলে।

এর আগে বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে গভীর নলকূপ বসানোর জন্য খনন করার ৮ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের একটি গর্তে পড়ে যায় ২ বছর বয়সি শিশু সাজিদ। এ দিন দুপুর ২টার দিকে উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল। অভিযানে একে একে যোগ দেয় ৮টি ইউনিট। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত উদ্ধার কাজ শেষ হয়নি।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, তাঁরা ক্যামেরা নামিয়ে দেখেছেন, ৩০ ফুটের পর মাটি ও খড় জমে গেছে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আসার আগেই বাচ্চাটিকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন স্থানীয়রা। তখন এসব ঢুকে যায়। মাটি ও খড় আটকে থাকা অবস্থায় অক্সিজেন পাঠিয়ে লাভ নেই। তাই অক্সিজেন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

শিশু সাজিদকে উদ্ধার অভিযান দেখতে উৎসুক লোকজনের ভিড়। স্ট্রিম ছবি
শিশু সাজিদকে উদ্ধার অভিযান দেখতে উৎসুক লোকজনের ভিড়। স্ট্রিম ছবি

এদিকে বিকাল চারটার দিকে তানোর ফায়ার সার্ভিসের একজন সদস্য জানিয়েছিলেন, গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত গর্তের ভেতর শিশুটির আওয়াজ পেয়েছিলেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তবে পরে আর কোনো আওয়াজ পাওয়া যায়নি। শিশুটির বেঁচে থাকার সম্ভাবনার বিষয়ে সন্ধ্যায় তাজুল চৌধুরী বলেন, ‘আপনারা যা ধারণা করছেন, আমরাও সেটিই ধারণা করছি। এখন অলমাইটি (সর্বশক্তিমান) আল্লাহ চাইলে সবকিছুই হতে পারে।’

পরিচালক তাজুল চৌধুরী জানান, বরেন্দ্র এলাকায় সাধারণত ১০০ থেকে ১৮০ ফুট পর্যন্ত এমন বোরিং করা হয় পানির সন্ধানে। তাঁরা জেনেছেন যে, শিশু পড়ে যাওয়া গর্তটি ৯০ ফুট গভীর করে খনন করা হয়েছিল। তাঁরা সে পর্যন্তই যেতে চান। এ জন্য ওই গর্তের পাশে তিনটি এক্সকাভেটর দিয়ে খনন করা হচ্ছে। প্রতি ১০ ফুট খননের পরপর সুড়ঙ্গ কেটে গর্তটি দেখবেন। এ ছাড়া ম্যানুয়াল পদ্ধতিতেও তাঁরা চেষ্টা করবেন। উদ্ধার না হওয়া অভিযান চলমান থাকবে বলেও জানান তিনি।

বাড়ির পাশে খোলা পড়ে ছিল ৩টি গর্ত

শিশু সাজিদের বাড়ি পাশে সেচের জন্য গভীর নলকূপ বসাতে পর পর তিনটি স্থানে খনন করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা কছির উদ্দিন। কিন্তু কোথাও পানি না পেয়ে নলকূপ বসাতে পারেননি। পরে পরিত্যক্ত অবস্থায় উন্মুক্ত ফেলে রাখা হয় গর্তগুলো। এর একটিতে পড়ে যায় শিশু সাজিদ।

সাজিদের পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, দুর্ঘটনার পর কছির উদ্দিন একবার ঘটনাস্থলে দেখতে এসেছিলেন। তারপর তিনি গা-ঢাকা দিয়েছেন। তিনি স্থানীয় জামায়াত ইসলামীর একটি ওয়ার্ড কমিটির রোকন আব্দুল করিমের ভাই। ভাইয়ের সুবাদে তিনিও জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

কছির উদ্দিনের জমির পাশেই সাজিদের বাবা রাকিবুল ইসলামের বাড়ি। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁর বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, সাজিদের মা রুনা খাতুনকে নিয়ে বসে আছেন তাঁর মা শেফালী বেগম। সাজিদের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে তার নানি শেফালী বেগম বললেন, ‘সবাই আমাদের ছোট বাচ্চাটার জন্য দোয়া করেন, যাতে তাকে আমরা ফেরত পাই।’

সাজিদকে উদ্ধারের অগ্রগতি দেখতে ঘটনাস্থলে তাঁর মাসহ স্বজনরা। স্ট্রিম ছবি
সাজিদকে উদ্ধারের অগ্রগতি দেখতে ঘটনাস্থলে তাঁর মাসহ স্বজনরা। স্ট্রিম ছবি

সাজিদের মা রুনা খাতুন কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘কছির উদ্দিন ৩ জায়গা খুঁড়েছিল। ২ বছর ধরে বন্ধ না করে গর্তগুলো এভাবে ফেলে রেখেছিল। কেন ফেলে রেখেছিল? আমি কছিরের শাস্তি চাই, তাঁর বিচার চাই।’

তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহীনুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের সাথে কছির উদ্দিনের দেখা হয়নি। আমরা তাঁকে পাইনি।’ তাঁকে আটক করা হবে কি না— জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘তদন্ত চলছে। আমরা এটা দেখছি।’

‘আমার ছাওয়ালেক কাড়া নিও না’

শিশু সাজিদকে উদ্ধারের জন্য নির্ঘুম রাত কেটেছে উদ্ধারকর্মীদের। সঙ্গে উৎকণ্ঠায় রাত কেটেছে স্বজনদেরও। আজ সন্তানকে ফিরে পেতে ঘটনাস্থলের অদূরে মা রুনা খাতুন আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছিল চারপাশ। এ সময় তিনি বিলাপ করতে থাকেন, ‘আল্লাহ তুমি কাড়া (কেড়ে) নিও না আল্লাহ’ বলে।

আহাজারি করতে করতে মা রুনা খাতুন বলেন, ‘আল্লাহ আমার ছাওয়ালেক (ছেলে) কত কষ্ট করে মানুষ (বড়) করেছি। আল্লাহ তুমি কাড়া (কেড়ে) নিও না। আল্লাহ আমি কষ্ট করে মানুষ (বড়) করব। তুমি কাড়া (কেড়ে) নিও না আল্লাহ। তুমি আমার ছাওয়ালেক (ছেলে) আমার বুকে আইনা দাও আল্লাহ।’

বৃহস্পতিবার সকাল হতে না হতে উদ্ধার অভিযান স্থলে শত শত উৎসুক মানুষ ভিড় জমিয়েছে। তাদের সরাতে বেগ পেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের।

Ad 300x250

সম্পর্কিত