১৯৭১ সালের ৪ঠা এপ্রিল সামরিক বাহিনীর বাঙালি কর্মকর্তারা সিলেটের হবিগঞ্জের তেলিয়াপাড়া চা বাগানে এক বৈঠকে মিলিত হন। সেখানেই প্রণীত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের রণকৌশল, যা তেলিয়াপাড়া স্ট্র্যাটেজি নামে পরিচিত। অসংগঠিত ও বিচ্ছিন্নভাবে শুরু হওয়া এই যুদ্ধকে সংগঠিতভাবে পরিচালনা করার জন্য তেলিয়াপাড়া বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। ওই বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বাহিনী সম্পর্কিত সাংগঠনিক ধারণা এবং কমান্ড কাঠামোর রূপরেখা প্রণীত হয়।
সুমন সুবহান

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক বা তেলিয়াপাড়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার ভিতরে ভারত সীমান্ত ঘেঁষে রাস্তার দুই পাশে অবস্থিত তেলিয়াপাড়া চা-বাগান। বাগানের ভেতর পিচঢালা আঁকাবাঁকা রাস্তা। সমতল ও টিলাময় চা বাগানটা সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলায় অবস্থিত। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে তেলিয়াপাড়ার একটি বর্ণাঢ্য ইতিহাস রয়েছে।
৩নং সেক্টর কমান্ডার মেজর কেএম শফিউল্লাহ তাঁর হেড কোয়ার্টার স্থাপন করেন তেলিয়াপাড়া চা বাগানের বাংলোতে। সড়ক ও রেলপথে বৃহত্তর সিলেটে প্রবেশের ক্ষেত্রে মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়ার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এখান থেকে মুক্তিবাহিনী বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করা ছাড়াও তেলিয়াপাড়া চা-বাগানে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বড় প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গড়ে ওঠে।
মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এমএজি ওসমানীসহ কয়েকজন সেক্টর কমান্ডার বিভিন্ন সময়ে তেলিয়াপাড়া সফর করেন। ম্যানেজার বাংলোসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা ছিল মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সেনানায়কদের পদচারণায় মুখর।

১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল সকাল দশটায় চা বাগানের ম্যানেজার বাংলোয় স্বাধীনতা যুদ্ধের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এতে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী। তিনি ভারতের আগরতলা থেকে এসে বৈঠকে যোগ দেন।
তেলিয়াপাড়াকে প্রথম অস্থায়ী সেনাসদর গণ্য করে মুক্তিযুদ্ধকালে মুক্তিবাহিনীর শীর্ষপর্যায়ের নীতিনির্ধারণী ৩টি সভার মধ্যে প্রথম দুটি সভা এখানেই অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে তৎকালীন কর্নেল (অব.) এমএজি ওসমানী ছাড়াও লে. কর্নেল এম.এ রব, লে. কর্নেল সালাউদ্দিন মোহাম্মদ রেজা, মেজর কে.এম শফিউলস্নাহ, মেজর জিয়াউর রহমান, মেজর খালেদ মোশাররফ, মেজর কাজী নূরুজ্জামান, মেজর শাফায়াত জামিল, মেজর মঈনুল হোসেন চৌধুরী, মেজর নূরূল ইসলাম, মেজর আবু উসমান, মেজর সিআর দত্ত, কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী, ক্যাপ্টেন নাসিম, ক্যাপ্টেন আবদুল মতিন, লে. সৈয়দ ইব্রাহীম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিদ্রোহী মহকুমা প্রশাসক কাজী রকিবউদ্দিন, এমপিএ মৌলানা আসাদ আলী, ভারত সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে বিএসএফের পূর্বাঞ্চলীয় মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার ভিসি পান্ডে এবং আগরতলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ওমেস সায়গল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এই প্রথম বিদ্রোহী কমান্ডাররা তাদের আঞ্চলিক অবস্থান ও প্রতিরোধের খণ্ড খণ্ড চিত্রকে একত্রিত করে সারা দেশের সামরিক পরিস্থিতি উপলব্ধি করার সুযোগ পান। কিন্তু তারা যা জানতে পারেন তা মোটেই উৎসাহব্যাঞ্জক ছিল না। সব দিকেই পাকিস্তানী বাহিনী দ্রুত অগ্রসর হতে শুরু করেছে। সবখানেই বিদ্রোহীরা প্রতিরোধের যথাসাধ্য চেষ্টা করা সত্ত্বেও পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছে।
সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় এই সভাতেই একটি রাজনৈতিক সরকার গঠনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এছাড়াও সিদ্ধান্ত হয় যে বাংলাদেশ সরকার গঠন না হলেও বাস্তবতার প্রয়োজনে সেনাবাহিনী, ইপিআর, পুলিশ, আনসারের সদস্য এবং সাধারণ সশস্ত্র জনতাকে নিয়ে মুক্তিবাহিনী গঠন করা হবে। কর্নেল ওসমানী মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ বা প্রধান সেনাপতি থাকবেন।
ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বিদ্রোহী ইউনিটগুলোর ঊর্ধ্বতন ২৭ সেনাকর্মকর্তার উপস্থিতিতে এ বৈঠকেই দেশকে স্বাধীন করার শপথ এবং যুদ্ধের রণকৌশল গ্রহণ করা হয়। শপথবাক্য পাঠ করান এম এ জি ওসমানী। আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয় মুক্তিযুদ্ধের সুবিধার্থে বাংলাদেশকে মোট চারটি সামরিক অঞ্চলে ভাগ করা হবে, যার নেতৃত্বে থাকবেন মেজর জিয়াউর রহমান—চট্টগ্রাম অঞ্চল, মেজর কেএম সফিউল্লাহ—সিলেট অঞ্চল, মেজর খালেদ মোশাররফ—কুমিল্লা অঞ্চল এবং মেজর আবু ওসমান চৌধুরী—কুষ্টিয়া অঞ্চল।
আলোচনার শেষ পর্যায়ে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সিদ্ধান্ত হয়, গেরিলা যুদ্ধ তো চলবেই, গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা যখন পাকিস্তানি বাহিনীকে দুর্বল করে ফেলব, তখন সম্মুখ সমরের প্রয়োজন হতে পারে। সেই সম্মুখ সমরে যাওয়ার জন্য আমাদের ব্রিগেড প্রয়োজন হবে। এই ব্রিগেড শুধু সম্মুখ সমরের জন্যই নয়, দেশ স্বাধীন হলে আমাদের নতুন যে সেনাবাহিনী গড়ে উঠবে, এটা হবে তার ওপর ভিত্তি করে।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে জেড, এস ও কে ফোর্স নামে ০৩টি ব্রিগেড গঠন করা হয়। এছাড়াও সিদ্ধান্ত হয়, ভারী অস্ত্রশস্ত্র আর গোলাবারুদের অভাব মেটানোর জন্য তারা অবিলম্বে ভারতের সাহায্য প্রার্থনা করবেন।
এই সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ সরকার গঠনেরও আগে। সভার কোনো লিখিত কার্যবিবরণী রাখা হয়নি। তবে মৌখিকভাবে বাহিনীর সংগঠন, নেতৃত্ব ও যুদ্ধ পরিচালনার যেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল, তা পরবর্তী সময়ে গঠিত বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদন পায়।
১১ এপ্রিল নবগঠিত বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর বেতার ভাষণে এই সভার সিদ্ধান্তের কিছু অংশ উচ্চারিত হয়েছিল। পরে এই সভার সিদ্ধান্তগুলোকে পরিবর্ধন, পরিমার্জন, সংশোধন, সংযোজনের মাধ্যমে আরও সময়োপযোগী করে তোলা হয়। প্রধান সেনাপতি এমএজি ওসমানী পিস্তলের গুলি ছুড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের শুভ সূচনা করেন।
তেলিয়াপাড়া চা-বাগানে আমাদের সামরিক কর্মকর্তারা যেসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন তার সমর্থন মেলে অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের ১১ এপ্রিলের বেতারের ভাষণ থেকে। বাংলাদেশের নিজস্ব বেতার কেন্দ্রের অভাবে শিলিগুড়ির এক অনিয়মিত বেতার কেন্দ্র থেকে তা প্রচার করা হয়। পরে তা ‘আকাশবাণী’র নিয়মিত কেন্দ্রগুলো থেকে পুনঃপ্রচারিত হয়।
১৯৭১ সালের ২১ জুনের পরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণের কারণে তেলিয়াপাড়া চা-বাগানে স্থাপিত সেক্টর হেড কোয়ার্টার তুলে নেওয়া হয়।
হবিগঞ্জের মাধবপুরে তেলিয়াপাড়া ম্যানেজার বাংলোতে বুলেটের আকৃতিতে তৈরি একটি স্মৃতিসৌধের প্রবেশ পথে রয়েছে দুটি ফলক। তাতে অঙ্কিত রয়েছে কবি শামসুর রাহমানের ‘স্বাধীনতা তুমি’ শিরোনামের বিখ্যাত কবিতার পংক্তিমালা। দক্ষিণ দিকে লাগানো ফলকটি জানান দেয়, স্থানটি শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে নির্মিত।
সেখানে স্মৃতিফলকে রয়েছে রাজনৈতিক নেতা, সাবেক সেনা ও সরকারি কর্মকর্তা এবং মুক্তিযোদ্ধা ৩৩ জনের নামের তালিকা। চা-বাগানের সবুজের বেষ্টনীতে স্মৃতিসৌধ ছাড়াও আছে একটি প্রাকৃতিক জলাশয়। বর্ষায় এই জলাশয়টা লাল রঙের শাপলা ফুলে অপরূপ হয়ে ওঠে। স্মৃতিসৌধ থেকে একটু সামনে এগিয়ে গেলেই মহিমান্বিত সমাবেশের নীরব সাক্ষী সেই ম্যানেজার বাংলো।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক বা তেলিয়াপাড়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার ভিতরে ভারত সীমান্ত ঘেঁষে রাস্তার দুই পাশে অবস্থিত তেলিয়াপাড়া চা-বাগান। বাগানের ভেতর পিচঢালা আঁকাবাঁকা রাস্তা। সমতল ও টিলাময় চা বাগানটা সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলায় অবস্থিত। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে তেলিয়াপাড়ার একটি বর্ণাঢ্য ইতিহাস রয়েছে।
৩নং সেক্টর কমান্ডার মেজর কেএম শফিউল্লাহ তাঁর হেড কোয়ার্টার স্থাপন করেন তেলিয়াপাড়া চা বাগানের বাংলোতে। সড়ক ও রেলপথে বৃহত্তর সিলেটে প্রবেশের ক্ষেত্রে মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়ার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এখান থেকে মুক্তিবাহিনী বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করা ছাড়াও তেলিয়াপাড়া চা-বাগানে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বড় প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গড়ে ওঠে।
মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এমএজি ওসমানীসহ কয়েকজন সেক্টর কমান্ডার বিভিন্ন সময়ে তেলিয়াপাড়া সফর করেন। ম্যানেজার বাংলোসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা ছিল মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সেনানায়কদের পদচারণায় মুখর।

১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল সকাল দশটায় চা বাগানের ম্যানেজার বাংলোয় স্বাধীনতা যুদ্ধের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এতে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী। তিনি ভারতের আগরতলা থেকে এসে বৈঠকে যোগ দেন।
তেলিয়াপাড়াকে প্রথম অস্থায়ী সেনাসদর গণ্য করে মুক্তিযুদ্ধকালে মুক্তিবাহিনীর শীর্ষপর্যায়ের নীতিনির্ধারণী ৩টি সভার মধ্যে প্রথম দুটি সভা এখানেই অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে তৎকালীন কর্নেল (অব.) এমএজি ওসমানী ছাড়াও লে. কর্নেল এম.এ রব, লে. কর্নেল সালাউদ্দিন মোহাম্মদ রেজা, মেজর কে.এম শফিউলস্নাহ, মেজর জিয়াউর রহমান, মেজর খালেদ মোশাররফ, মেজর কাজী নূরুজ্জামান, মেজর শাফায়াত জামিল, মেজর মঈনুল হোসেন চৌধুরী, মেজর নূরূল ইসলাম, মেজর আবু উসমান, মেজর সিআর দত্ত, কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী, ক্যাপ্টেন নাসিম, ক্যাপ্টেন আবদুল মতিন, লে. সৈয়দ ইব্রাহীম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিদ্রোহী মহকুমা প্রশাসক কাজী রকিবউদ্দিন, এমপিএ মৌলানা আসাদ আলী, ভারত সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে বিএসএফের পূর্বাঞ্চলীয় মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার ভিসি পান্ডে এবং আগরতলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ওমেস সায়গল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এই প্রথম বিদ্রোহী কমান্ডাররা তাদের আঞ্চলিক অবস্থান ও প্রতিরোধের খণ্ড খণ্ড চিত্রকে একত্রিত করে সারা দেশের সামরিক পরিস্থিতি উপলব্ধি করার সুযোগ পান। কিন্তু তারা যা জানতে পারেন তা মোটেই উৎসাহব্যাঞ্জক ছিল না। সব দিকেই পাকিস্তানী বাহিনী দ্রুত অগ্রসর হতে শুরু করেছে। সবখানেই বিদ্রোহীরা প্রতিরোধের যথাসাধ্য চেষ্টা করা সত্ত্বেও পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছে।
সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় এই সভাতেই একটি রাজনৈতিক সরকার গঠনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এছাড়াও সিদ্ধান্ত হয় যে বাংলাদেশ সরকার গঠন না হলেও বাস্তবতার প্রয়োজনে সেনাবাহিনী, ইপিআর, পুলিশ, আনসারের সদস্য এবং সাধারণ সশস্ত্র জনতাকে নিয়ে মুক্তিবাহিনী গঠন করা হবে। কর্নেল ওসমানী মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ বা প্রধান সেনাপতি থাকবেন।
ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বিদ্রোহী ইউনিটগুলোর ঊর্ধ্বতন ২৭ সেনাকর্মকর্তার উপস্থিতিতে এ বৈঠকেই দেশকে স্বাধীন করার শপথ এবং যুদ্ধের রণকৌশল গ্রহণ করা হয়। শপথবাক্য পাঠ করান এম এ জি ওসমানী। আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয় মুক্তিযুদ্ধের সুবিধার্থে বাংলাদেশকে মোট চারটি সামরিক অঞ্চলে ভাগ করা হবে, যার নেতৃত্বে থাকবেন মেজর জিয়াউর রহমান—চট্টগ্রাম অঞ্চল, মেজর কেএম সফিউল্লাহ—সিলেট অঞ্চল, মেজর খালেদ মোশাররফ—কুমিল্লা অঞ্চল এবং মেজর আবু ওসমান চৌধুরী—কুষ্টিয়া অঞ্চল।
আলোচনার শেষ পর্যায়ে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সিদ্ধান্ত হয়, গেরিলা যুদ্ধ তো চলবেই, গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা যখন পাকিস্তানি বাহিনীকে দুর্বল করে ফেলব, তখন সম্মুখ সমরের প্রয়োজন হতে পারে। সেই সম্মুখ সমরে যাওয়ার জন্য আমাদের ব্রিগেড প্রয়োজন হবে। এই ব্রিগেড শুধু সম্মুখ সমরের জন্যই নয়, দেশ স্বাধীন হলে আমাদের নতুন যে সেনাবাহিনী গড়ে উঠবে, এটা হবে তার ওপর ভিত্তি করে।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে জেড, এস ও কে ফোর্স নামে ০৩টি ব্রিগেড গঠন করা হয়। এছাড়াও সিদ্ধান্ত হয়, ভারী অস্ত্রশস্ত্র আর গোলাবারুদের অভাব মেটানোর জন্য তারা অবিলম্বে ভারতের সাহায্য প্রার্থনা করবেন।
এই সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ সরকার গঠনেরও আগে। সভার কোনো লিখিত কার্যবিবরণী রাখা হয়নি। তবে মৌখিকভাবে বাহিনীর সংগঠন, নেতৃত্ব ও যুদ্ধ পরিচালনার যেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল, তা পরবর্তী সময়ে গঠিত বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদন পায়।
১১ এপ্রিল নবগঠিত বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর বেতার ভাষণে এই সভার সিদ্ধান্তের কিছু অংশ উচ্চারিত হয়েছিল। পরে এই সভার সিদ্ধান্তগুলোকে পরিবর্ধন, পরিমার্জন, সংশোধন, সংযোজনের মাধ্যমে আরও সময়োপযোগী করে তোলা হয়। প্রধান সেনাপতি এমএজি ওসমানী পিস্তলের গুলি ছুড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের শুভ সূচনা করেন।
তেলিয়াপাড়া চা-বাগানে আমাদের সামরিক কর্মকর্তারা যেসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন তার সমর্থন মেলে অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের ১১ এপ্রিলের বেতারের ভাষণ থেকে। বাংলাদেশের নিজস্ব বেতার কেন্দ্রের অভাবে শিলিগুড়ির এক অনিয়মিত বেতার কেন্দ্র থেকে তা প্রচার করা হয়। পরে তা ‘আকাশবাণী’র নিয়মিত কেন্দ্রগুলো থেকে পুনঃপ্রচারিত হয়।
১৯৭১ সালের ২১ জুনের পরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণের কারণে তেলিয়াপাড়া চা-বাগানে স্থাপিত সেক্টর হেড কোয়ার্টার তুলে নেওয়া হয়।
হবিগঞ্জের মাধবপুরে তেলিয়াপাড়া ম্যানেজার বাংলোতে বুলেটের আকৃতিতে তৈরি একটি স্মৃতিসৌধের প্রবেশ পথে রয়েছে দুটি ফলক। তাতে অঙ্কিত রয়েছে কবি শামসুর রাহমানের ‘স্বাধীনতা তুমি’ শিরোনামের বিখ্যাত কবিতার পংক্তিমালা। দক্ষিণ দিকে লাগানো ফলকটি জানান দেয়, স্থানটি শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে নির্মিত।
সেখানে স্মৃতিফলকে রয়েছে রাজনৈতিক নেতা, সাবেক সেনা ও সরকারি কর্মকর্তা এবং মুক্তিযোদ্ধা ৩৩ জনের নামের তালিকা। চা-বাগানের সবুজের বেষ্টনীতে স্মৃতিসৌধ ছাড়াও আছে একটি প্রাকৃতিক জলাশয়। বর্ষায় এই জলাশয়টা লাল রঙের শাপলা ফুলে অপরূপ হয়ে ওঠে। স্মৃতিসৌধ থেকে একটু সামনে এগিয়ে গেলেই মহিমান্বিত সমাবেশের নীরব সাক্ষী সেই ম্যানেজার বাংলো।

১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের প্রাক্কালে, যখন ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় সুনিশ্চিত, ঠিক সেই অন্তিম লগ্নে আল-বদর বাহিনীর নেতারা তাদের চূড়ান্ত বার্তা বা ‘আখেরি খিতাব’ দেন। এই বার্তাটি ছিল বাঙালি জাতির জন্য চরম বিপজ্জনক এক ঘোষণা।
১ ঘণ্টা আগে
আজ কবি বিনয় মজুমদারের মৃত্যুদিন। ‘নক্ষত্রের আলোয়’ থেকে ‘ফিরে এসো, চাকা’ বিনয়ের জীবনের যেমন কবিতার জন্যও ছিল বিশেষ এক পর্ব; সেই জীবন ও কবিতার পর্ব থেকে কখনও বের হতে পারেননি তিনি।
১ ঘণ্টা আগে
১৯৯৮ সাল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার প্রায় ২৭ বছর পর, পাকিস্তানের সামরিক ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় যোগ করলেন লেফট্যানেন্ট জেনারেল আমীর আবদুল্লাহ খান নিয়াজি। তিনি ছিলেন ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় আত্মসমর্পণকারী পাকিস্তানি বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার।
১ ঘণ্টা আগে
টাঙ্গাইল শাড়ির নাম এলেই এক ধরনের মমতাভরা গর্ব জেগে ওঠে। আজ যে শাড়িকে আমরা টাঙ্গাইল শাড়ি নামে চিনি, একসময় তার নাম ছিল ‘বেগম বাহার’। টাঙ্গাইল অঞ্চলের তাঁতিরা বহু প্রজন্ম ধরে যে বয়ন-কৌশল বাঁচিয়ে রেখেছেন, তার শিকড় প্রাচীন বাংলারই ইতিহাসে।
১৯ ঘণ্টা আগে