leadT1ad

টিএসসিতে গণহত্যাকারীদের ছবি প্রদর্শনের প্রতিবাদ শিক্ষক নেটওয়ার্কের, প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি

বিবৃতিতে বলা হয়, যারা চব্বিশের নাম দিয়ে একাত্তরকে অবমূল্যায়নের চেষ্টা করে, তারা আসলে চব্বিশের শহীদদের আত্মত্যাগকেও ছোট করে ফেলে। জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিকে বিতর্কিত করে তাকে '৭১-এর মুখোমুখি দাঁড় করানোর এক ঘৃণ্য অপচেষ্টা শুরু করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির।

স্ট্রিম ডেস্কঢাকা
প্রকাশ : ০৬ আগস্ট ২০২৫, ১৯: ৩৫
আপডেট : ০৬ আগস্ট ২০২৫, ২০: ১১
টিএসসিতে গণহত্যাকারীদের ছবি প্রদর্শনের প্রতিবাদ শিক্ষক নেটওয়ার্কের। স্ট্রিম গ্রাফিকস

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথমবার্ষিকীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে চিহ্নিত গণহত্যাকারীদের ছবি প্রদর্শনের জন্য ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্রতি নিন্দা এবং প্রক্টরের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।

বিবৃতিতে বলা হয়, যারা চব্বিশের নাম দিয়ে একাত্তরকে অবমূল্যায়নের চেষ্টা করে, তারা আসলে চব্বিশের শহীদদের আত্মত্যাগকেও ছোট করে ফেলে। জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিকে বিতর্কিত করে তাকে '৭১-এর মুখোমুখি দাঁড় করানোর এক ঘৃণ্য অপচেষ্টা শুরু করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির।

আজ বুধবার (৬ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের প্রেস টিম এ বিবৃতি দেয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গতকাল ৫ আগস্ট ২০২৫ ছিল বাংলাদেশের জনগণের অভূতপূর্ব জাগরণের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বিজয়ের প্রথমবার্ষিকী। গত বছরের এই দিনে সারা বাংলাদেশের লড়াকু শহিদদের জীবন এবং আহত সন্তানদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আমরা শপথ নিতে চেয়েছি একটি বৈষম্যহীন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দেশ গড়ার। অথচ এই দিনে দাঁড়িয়ে আমরা দেখলাম, বাংলাদেশের অধিকাংশ গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামসহ মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির প্রাঙ্গণে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের আত্মদানকে অপমান করল ইসলামী ছাত্র শিবির। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যাকারী পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তাকারী আত্মস্বীকৃত স্বাধীনতাবিরোধী ও গণহত্যার দায়ে চিহ্নিত রাজাকারদের ছবি প্রদর্শনীতে স্থান দেওয়ার মাধ্যমে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে চব্বিশের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে, যা অত্যন্ত নিন্দনীয় একটি কাজ। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই।'

বিবৃতিতে শিক্ষক নেটওয়ার্ক আরও বলে, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মচারীদের ওপর গণহত্যা চালানোর দায়ে চিহ্নিত অপরাধীদের ছবি দিয়ে জুলাই উদযাপন করা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অত্যন্ত অপমানজনক। আমরা জানি, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষপাতদুষ্টতা রয়েছে এবং প্রক্রিয়াগত ত্রুটির কারণে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং শাস্তি নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে যা বিতর্কের ঊর্ধ্বে, তা হলো এই যুদ্ধাপরাধীদের একাত্তরের গণহত্যার দায় । কারণ, বিচার প্রশ্নবিদ্ধ হলেই অপরাধের দায় থেকে মুক্ত হওয়া যায় না।'

প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি

বিবৃতিতে শিবিরের প্রদর্শিত চিহ্নিত গণহত্যাকারীদের ছবি সরাতে দেরি করা, বহিরাগত শিবিরকর্মীদের ব্যাপারে শিথিলতা প্রদর্শনের মতো অভিযোগ এনে প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করে শিক্ষক নেটওয়ার্ক।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে নাগরিকেরা এসব ছবি প্রদর্শনীর বিরুদ্ধে তীব্র নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখালেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বা তার কার্যালয় সারা দিনে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি। পরবর্তী সময়ে আমরা সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানতে পারি যে, ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের তীব্র বিরোধিতা ও প্রতিবাদের মুখে প্রক্টরিয়াল টিম বেশ ধীর গতিতে এই ছবিগুলো অপসারণ করে।'

‘এ রকম একটি ঘটনা ৫ আগস্টের মতো দিনেই ঘটাতে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নিজের অদক্ষতা ও অক্ষমতা আরেকবার প্রমাণ করলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব যেমন প্রশাসনের একইভাবে মুক্তিযুদ্ধের সম্মান রক্ষা করাও তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব। সে দায়িত্ব পালনে তারা আবারও ব্যর্থ হয়েছেন। আমরা গত বছরের আগস্ট থেকেই দেখছি যে, ক্যাম্পাসের ভেতরে তোফাজ্জল ও সাম্য হত্যাকাণ্ড, শেখ হাসিনার গ্রাফিতি মুছে ফেলা, চারুকলার ভেতরে ঢুকে শোভাযাত্রার মোটিফে আগুন দেওয়া, একাধিক যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আমলে না নেওয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে প্রশাসনের প্রতি।'

এই ঘটনাটিসহ গত এক বছরে সংঘটিত একাধিক শৃঙ্খলাভঙ্গজনিত ঘটনায় দায়িত্ব পালনে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেওয়া প্রক্টরকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে বলেও বিবৃতিতে বলা হয়।

শিক্ষক নেটওয়ার্কের পাঁচ দফা দাবি

১। ইসলামী ছাত্র শিবিরকে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে যে তারা কখনই যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করবে না।

২। এই ঘটনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ক্ষমা চাইতে হবে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদের রক্তে রঞ্জিত এই ক্যাম্পাসে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের প্রতি স্পষ্ট প্রশাসনিক নির্দেশ জারি করতে হবে।

৩। এই ঘটনাটিসহ গত এক বছরে সংঘটিত একাধিক শৃঙ্খলাভঙ্গজনিত ঘটনায় দায়িত্ব পালনে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেওয়া প্রক্টরকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে।

৪। ইন্টারনেট ব্যবহার করে নারীদের হয়রানি রোধ করতে যেসব সংগঠন বা গ্রুপ ও গ্রুপের সদস্য এ সকল কাজে সক্রিয়, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

৫। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ক্যাম্পাসে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে এবং ছড়িয়ে দিতে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে স্মৃতি- চিরন্তনসহ যে-সকল স্থাপনা ও নিদর্শন মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীদের তালিকা ধারণ করে, সেসবের যথাযথ সুরক্ষা ও সংরক্ষণ করতে হবে।

Ad 300x250

মৃত্যুর মুখেও গাড়ি থেকে কেউ কাউকে ছেড়ে বের হননি

ঢাবিতে যুদ্ধাপরাধীদের ছবি প্রদর্শন: মুখোমুখি শিবির ও বামপন্থীরা

‘এই বছরেই তারেক রহমান দেশে আসবেন’

জামায়াতে ইসলামীকে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতার দায় স্বীকারের আহ্বান ৩২ বিশিষ্ট নাগরিকের

‘জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা ঘোষণাপত্রে প্রতিফলিত হয়নি’, সংশোধন চায় জামায়াত

সম্পর্কিত