সিপিডির এক জরিপ বলছে, ঢাকার যাত্রীদের প্রতি দুই ঘণ্টায় ৪৬ মিনিট যানজটে আটকে থাকতে হয়, যা বছরে জনপ্রতি প্রায় ২৭৬ ঘণ্টার সমান। এই অচলাবস্থার কারণে প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে বিপুল পরিমাণ কর্মঘণ্টা, যার আর্থিক ক্ষতি বছরে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
আবদুল্লাহ কাফি
রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় থাকেন মুরাদ হোসেন। গুলিস্তানে তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন মোহাম্মদপুর থেকে গুলিস্তানে তাঁর যাতায়াত।
মুরাদ হোসেন স্ট্রিমকে বলেন, ‘মোহাম্মদপুর থেকে গুলিস্তান যাইতে আমি এক ঘন্টা আগে বাসা থেকে বের হই। এখন প্রায় দিনই দেখি রাস্তা বন্ধ। কোনো না কোনো আন্দোলন চলতেছে। এতে দোকানে যাইতে দেরি হয়। আমাদের ক্ষতি বাড়ে।’
রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় থাকেন তাসিন খান। কাজ করেন উত্তরার এক করপোরেট প্রতিষ্ঠানে। তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘এমনিতেই ঢাকা একটা জ্যামের শহর। এর মধ্যে যদি আন্দোলন করে রাস্তা অবরোধ করে দেওয়া হয়, তাহলে খুবই বিপদ। গাড়িতে বসে থেকে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। চাইলেও অফিসে সময় মতো যেতে পারি না। অফিসের কাজটা আর মনযোগ দিয়ে করতে পারি না।’
অ্যাম্বুলেন্সচালক মো. আমির হোসেন। রোগী নিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশে যাতায়াত করেন তিনি। আমির স্ট্রিমকে বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা অ্যাম্বুলেন্সের জন্য রাস্তা ছেড়ে দিলেও ঢাকা শহরের এক জায়গায় রাস্তা বন্ধ হলে পুরো ঢাকাই অচল হয়ে যায়। তখন আর কোনো দিক দিয়েই যাওয়া যায় না।’
যানজটের কারণে ঢাকায় প্রতিদিন লাখ লাখ কর্মঘন্টা নষ্ট হয়। দৈনিক ক্ষতি হয় কোটি কোটি টাকার। সেই সঙ্গে শারীরিক, মানসিক ক্ষতি তো আছেই।
এক বছরে যত আন্দোলন
দিন নেই রাত নেই, রাস্তা অবরোধ করে ঢাকায় চলছে আন্দোলন। কারও দাবি স্থায়ী চাকরি তো কেউ চান সরকারিকরণ। কেউ চান নিয়োগ আবার কেউ দাবি তোলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের। চতুর্থ শ্রেণি (এমএলএসএস) থেকে ক্যাডার সার্ভিস, অটোরিকশা থেকে অটোপাস—বাদ যায়নি কেউ। কারও আন্দোলনই যেন থামছে না।
২০২৪ সালের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই শুরু হয় আন্দোলন, সমাবেশ আর দাবি আদায়ের ‘মহোৎসব’।
২০২৪ সালের ১৭ নভেম্বর জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমরা আপনাদের প্রতিটি দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল। আমরা ধৈর্য্য সহকারে আপনাদের কথা শুনতে চাই।’
তবে সড়ক অবরোধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করার অনুরোধ করে তিনি বলেন, আপনারা নির্দিষ্ট চ্যানেল মেইনটেইন করে আপনাদের দাবি-দাওয়া পেশ করবেন।’
কিন্তু রাস্তা অবরোধ থামেনি। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারের দেওয়া তথ্য মতে, ‘২০২৫ সালের ৫ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত ঢাকায় প্রতিদিন প্রায় ৫টি করে আন্দোলন হয়। গত এক বছরে ঢাকায় মোট ১৬০৪টি আন্দোলন হয়েছে। এর অধিকাংশই হয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কোনো সড়ক অবরোধ করে।
আন্দোলনে ক্ষতি কী?
২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চের এক গবেষণায় ঢাকাকে বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতির শহর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, ১৫২টি দেশের ১২০০-এর বেশি শহরের মধ্যে ঢাকার যানবাহনের গতি সবচেয়ে কম।
ওই গবেষণায় আরও বলা হয়, ২০০৭ সালে ঢাকায় যানবাহনের গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ছিল ২১ কিলোমিটার। ২০২২ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটারে। অন্যদিকে, মানুষের হাঁটার গতি ঘণ্টায় প্রায় ৫ কিলোমিটার। এ থেকে বোঝা যায়, বর্তমানে ঢাকায় গাড়িতে চলার চেয়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছা যায় দ্রুত।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক জরিপ বলছে, ঢাকার যাত্রীদের প্রতি দুই ঘণ্টায় ৪৬ মিনিট যানজটে আটকে থাকতে হয়, যা বছরে জনপ্রতি প্রায় ২৭৬ ঘণ্টার সমান। এই অচলাবস্থার কারণে প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে বিপুল পরিমাণ কর্মঘণ্টা, যার আর্থিক ক্ষতি বছরে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক শামসুল হক স্ট্রিমকে বলেন, ‘রাস্তা ব্লক করার মতো জিনিসগুলো অধিকাংশ সময় অনির্ধারিত থাকে। ফলে আগাম কোনো প্রস্তুতিও নেওয়া যায় না। তাই একটা মানুষ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গন্তব্যে গিয়ে তার শ্রমঘণ্টার যেই বিনিয়োগটা করতে পারত, সেটা করতে পারে না। এইটা হলো ডাইরেক্ট লস। এছাড়া শারীরিক, মানসিক এবং আর্থিক ক্ষতিগুলো হলো ইনডাইরেক্ট লস।’
সম্প্রতি এই ক্ষতি আরও বেড়েছে কি না, জানতে চাইলে শামসুল হক বলেন, ‘অবশ্যই বেড়েছে। তখন মোটরসাইকেলের সংখ্যা এত ছিল না, এত গাড়ি ছিল না এবং বাংলা টেসলাও ছিল না। ফলে গবেষকেরা যে ক্ষতিটা দেখিয়েছেন, তখনও কিন্তু ঢাকা এতটা বিশৃঙ্খল ছিল না। এখন বিশৃঙ্খলা একদম মারাত্মক পর্যায়ে গেছে। তার মানে ক্ষতিও আরও অনেক বেশি হচ্ছে।’
অর্থনৈতিক ক্ষতি
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) ২০২১ সালে করা এক গবেষণায় বলা হয়, শুধু ঢাকা শহরের যানজটের কারণে দেশের জিডিপির ২ দশমিক ৯ শতাংশ ক্ষতি হচ্ছে। আর্থিক মূল্যে এর পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা।
গবেষকরা আরও উল্লেখ করেছেন, অপরিকল্পিত নগর সম্প্রসারণের মতো পরোক্ষ ক্ষতিগুলো যোগ করলে সার্বিক ক্ষতি জিডিপির ৬ শতাংশের বেশি হতে পারে।
নগর, স্বাস্থ্য ও ন্যায়বিচার নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক সাইফুদ্দিন আহমেদ ২০২৪ সালে জানিয়েছেন, ঢাকায় যানজটের কারণে প্রতিদিন ৮২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। অর্থমূল্যে যা প্রায় ১৩৯ কোটি এবং বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) পরিচালক অধ্যাপক শাকিল হুদা স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমার যে প্রতিদিন অফিসে যেতে দেরি হচ্ছে, এজন্য আমি বেতন পাই না। জ্যামে আটকে থাকা সময়টাতে যে কোনো কাজ করতে পারলাম না, ওই সময়ের টাকাটা তো নষ্ট হলো।’
শাকিল হুদা আরও বলেন, ‘আরেকটা বিষয় হলো, যে কাজ আজকে হওয়ার কথা, আমার দেরির জন্য সেটা ধরুন কালকে হলো। সেজন্য তো এক্সট্রা পে করতে হয়। সমস্ত কাজে এভাবে অতিরিক্ত পে করতে হয়। এখানেই আসলে আমাদের কোটি কোটি টাকা নষ্ট হচ্ছে।’
এছাড়া দীর্ঘ যানজটে আটকে থাকার কারণে গাড়িরও ক্ষতি হয়। এতে বিভিন্ন যন্ত্রাংশের আয়ুষ্কাল কমে যায়। যানবাহনের রক্ষণাবেক্ষণ ও জ্বালানি খরচ বাড়ে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কল্যাণপুর বিআরটিসি বাস ডিপোর উপ-মহাব্যাবস্থাপক শাহরিয়ার বুলবুল স্ট্রিমকে বলেন, ‘যানজটের কারণে বিভিন্ন রকম ক্ষতি হয়। যেমন গাড়ির ইঞ্জিনের আয়ুষ্কাল কমে যায়, গিয়ার বক্সের সমস্যা হয়। ডিস্কের সমস্যা হয়। এ ছাড়া অতিরিক্ত তেল তো পোড়েই।’
অন্যদিকে যানজটের কারণে বাড়ছে গাড়ির ভাড়া। বিশেষ করে রাইড-শেয়ারিং অ্যাপের খরচ। যানজট বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব প্ল্যাটফর্মে ভাড়াও ধাপে ধাপে বাড়ে। ফলে সাধারণ যাত্রীদের খরচও বৃদ্ধি পায়।
স্বাস্থ্য ও মানসিক ক্ষতি
দীর্ঘ সময় যানজটে থাকার কারণে মানসিক ও শারীরিক ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দীর্ঘসময় যানজটে বসে থাকার ফলে মাথাব্যথা, অতিরিক্ত ঘাম, পানিশূন্যতা, শ্রবণ সমস্যা, শ্বাসকষ্ট, ধুলাজনিত অ্যালার্জি ও চোখের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক আহমেদ হেলাল স্ট্রিমকে বলেন, ‘বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যানজটের কারণে মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রধানত মানুষের মধ্যে মানসিক চাপ বাড়ে। মানসিক চাপটা তাকে উদ্বিগ্নতা বা অ্যাংজাইটির মতো রোগে আক্রান্ত করতে পারে। এই চাপ বিষণ্ণতা বাড়াতে পারে। এ ছাড়া আচরণজনিত সমস্যা, বিহেভিওরাল ডিসঅর্ডার হতে পারে।’
আহমেদ হেলাল আরও বলেন, ‘যানজটের কারণে শারীরিক স্বাস্থ্যেরও অবনতি ঘটে। দীর্ঘ সময় বসে থাকলে মানুষের শরীরের বিভিন্ন গিটগুলোতে ব্যথা হতে পারে। ভিড়ের ভেতর বেশিক্ষণ বসে থাকলে ড্রপলেট ইনফেকশন হতে পারে। গাড়ির ধোঁয়া থেকে শ্বাসনালীর সমস্যা হতে পারে।’
অন্যদিকে যানজটে দাঁড়িয়ে থাকলেও অধিকাংশ গাড়ির ইঞ্জিন চালু থাকে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এতে প্রচুর পরিমাণে কার্বন পরিবেশের সঙ্গে মিশে। ফলে বায়ুদূষণ ঘটছে। অবিরাম হর্ন বাজানোর ফলে শব্দদূষণও বাড়চ্ছে।
রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় থাকেন মুরাদ হোসেন। গুলিস্তানে তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন মোহাম্মদপুর থেকে গুলিস্তানে তাঁর যাতায়াত।
মুরাদ হোসেন স্ট্রিমকে বলেন, ‘মোহাম্মদপুর থেকে গুলিস্তান যাইতে আমি এক ঘন্টা আগে বাসা থেকে বের হই। এখন প্রায় দিনই দেখি রাস্তা বন্ধ। কোনো না কোনো আন্দোলন চলতেছে। এতে দোকানে যাইতে দেরি হয়। আমাদের ক্ষতি বাড়ে।’
রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় থাকেন তাসিন খান। কাজ করেন উত্তরার এক করপোরেট প্রতিষ্ঠানে। তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘এমনিতেই ঢাকা একটা জ্যামের শহর। এর মধ্যে যদি আন্দোলন করে রাস্তা অবরোধ করে দেওয়া হয়, তাহলে খুবই বিপদ। গাড়িতে বসে থেকে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। চাইলেও অফিসে সময় মতো যেতে পারি না। অফিসের কাজটা আর মনযোগ দিয়ে করতে পারি না।’
অ্যাম্বুলেন্সচালক মো. আমির হোসেন। রোগী নিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশে যাতায়াত করেন তিনি। আমির স্ট্রিমকে বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা অ্যাম্বুলেন্সের জন্য রাস্তা ছেড়ে দিলেও ঢাকা শহরের এক জায়গায় রাস্তা বন্ধ হলে পুরো ঢাকাই অচল হয়ে যায়। তখন আর কোনো দিক দিয়েই যাওয়া যায় না।’
যানজটের কারণে ঢাকায় প্রতিদিন লাখ লাখ কর্মঘন্টা নষ্ট হয়। দৈনিক ক্ষতি হয় কোটি কোটি টাকার। সেই সঙ্গে শারীরিক, মানসিক ক্ষতি তো আছেই।
এক বছরে যত আন্দোলন
দিন নেই রাত নেই, রাস্তা অবরোধ করে ঢাকায় চলছে আন্দোলন। কারও দাবি স্থায়ী চাকরি তো কেউ চান সরকারিকরণ। কেউ চান নিয়োগ আবার কেউ দাবি তোলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের। চতুর্থ শ্রেণি (এমএলএসএস) থেকে ক্যাডার সার্ভিস, অটোরিকশা থেকে অটোপাস—বাদ যায়নি কেউ। কারও আন্দোলনই যেন থামছে না।
২০২৪ সালের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই শুরু হয় আন্দোলন, সমাবেশ আর দাবি আদায়ের ‘মহোৎসব’।
২০২৪ সালের ১৭ নভেম্বর জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমরা আপনাদের প্রতিটি দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল। আমরা ধৈর্য্য সহকারে আপনাদের কথা শুনতে চাই।’
তবে সড়ক অবরোধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করার অনুরোধ করে তিনি বলেন, আপনারা নির্দিষ্ট চ্যানেল মেইনটেইন করে আপনাদের দাবি-দাওয়া পেশ করবেন।’
কিন্তু রাস্তা অবরোধ থামেনি। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারের দেওয়া তথ্য মতে, ‘২০২৫ সালের ৫ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত ঢাকায় প্রতিদিন প্রায় ৫টি করে আন্দোলন হয়। গত এক বছরে ঢাকায় মোট ১৬০৪টি আন্দোলন হয়েছে। এর অধিকাংশই হয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কোনো সড়ক অবরোধ করে।
আন্দোলনে ক্ষতি কী?
২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চের এক গবেষণায় ঢাকাকে বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতির শহর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, ১৫২টি দেশের ১২০০-এর বেশি শহরের মধ্যে ঢাকার যানবাহনের গতি সবচেয়ে কম।
ওই গবেষণায় আরও বলা হয়, ২০০৭ সালে ঢাকায় যানবাহনের গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ছিল ২১ কিলোমিটার। ২০২২ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটারে। অন্যদিকে, মানুষের হাঁটার গতি ঘণ্টায় প্রায় ৫ কিলোমিটার। এ থেকে বোঝা যায়, বর্তমানে ঢাকায় গাড়িতে চলার চেয়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছা যায় দ্রুত।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক জরিপ বলছে, ঢাকার যাত্রীদের প্রতি দুই ঘণ্টায় ৪৬ মিনিট যানজটে আটকে থাকতে হয়, যা বছরে জনপ্রতি প্রায় ২৭৬ ঘণ্টার সমান। এই অচলাবস্থার কারণে প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে বিপুল পরিমাণ কর্মঘণ্টা, যার আর্থিক ক্ষতি বছরে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক শামসুল হক স্ট্রিমকে বলেন, ‘রাস্তা ব্লক করার মতো জিনিসগুলো অধিকাংশ সময় অনির্ধারিত থাকে। ফলে আগাম কোনো প্রস্তুতিও নেওয়া যায় না। তাই একটা মানুষ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গন্তব্যে গিয়ে তার শ্রমঘণ্টার যেই বিনিয়োগটা করতে পারত, সেটা করতে পারে না। এইটা হলো ডাইরেক্ট লস। এছাড়া শারীরিক, মানসিক এবং আর্থিক ক্ষতিগুলো হলো ইনডাইরেক্ট লস।’
সম্প্রতি এই ক্ষতি আরও বেড়েছে কি না, জানতে চাইলে শামসুল হক বলেন, ‘অবশ্যই বেড়েছে। তখন মোটরসাইকেলের সংখ্যা এত ছিল না, এত গাড়ি ছিল না এবং বাংলা টেসলাও ছিল না। ফলে গবেষকেরা যে ক্ষতিটা দেখিয়েছেন, তখনও কিন্তু ঢাকা এতটা বিশৃঙ্খল ছিল না। এখন বিশৃঙ্খলা একদম মারাত্মক পর্যায়ে গেছে। তার মানে ক্ষতিও আরও অনেক বেশি হচ্ছে।’
অর্থনৈতিক ক্ষতি
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) ২০২১ সালে করা এক গবেষণায় বলা হয়, শুধু ঢাকা শহরের যানজটের কারণে দেশের জিডিপির ২ দশমিক ৯ শতাংশ ক্ষতি হচ্ছে। আর্থিক মূল্যে এর পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা।
গবেষকরা আরও উল্লেখ করেছেন, অপরিকল্পিত নগর সম্প্রসারণের মতো পরোক্ষ ক্ষতিগুলো যোগ করলে সার্বিক ক্ষতি জিডিপির ৬ শতাংশের বেশি হতে পারে।
নগর, স্বাস্থ্য ও ন্যায়বিচার নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক সাইফুদ্দিন আহমেদ ২০২৪ সালে জানিয়েছেন, ঢাকায় যানজটের কারণে প্রতিদিন ৮২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। অর্থমূল্যে যা প্রায় ১৩৯ কোটি এবং বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) পরিচালক অধ্যাপক শাকিল হুদা স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমার যে প্রতিদিন অফিসে যেতে দেরি হচ্ছে, এজন্য আমি বেতন পাই না। জ্যামে আটকে থাকা সময়টাতে যে কোনো কাজ করতে পারলাম না, ওই সময়ের টাকাটা তো নষ্ট হলো।’
শাকিল হুদা আরও বলেন, ‘আরেকটা বিষয় হলো, যে কাজ আজকে হওয়ার কথা, আমার দেরির জন্য সেটা ধরুন কালকে হলো। সেজন্য তো এক্সট্রা পে করতে হয়। সমস্ত কাজে এভাবে অতিরিক্ত পে করতে হয়। এখানেই আসলে আমাদের কোটি কোটি টাকা নষ্ট হচ্ছে।’
এছাড়া দীর্ঘ যানজটে আটকে থাকার কারণে গাড়িরও ক্ষতি হয়। এতে বিভিন্ন যন্ত্রাংশের আয়ুষ্কাল কমে যায়। যানবাহনের রক্ষণাবেক্ষণ ও জ্বালানি খরচ বাড়ে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কল্যাণপুর বিআরটিসি বাস ডিপোর উপ-মহাব্যাবস্থাপক শাহরিয়ার বুলবুল স্ট্রিমকে বলেন, ‘যানজটের কারণে বিভিন্ন রকম ক্ষতি হয়। যেমন গাড়ির ইঞ্জিনের আয়ুষ্কাল কমে যায়, গিয়ার বক্সের সমস্যা হয়। ডিস্কের সমস্যা হয়। এ ছাড়া অতিরিক্ত তেল তো পোড়েই।’
অন্যদিকে যানজটের কারণে বাড়ছে গাড়ির ভাড়া। বিশেষ করে রাইড-শেয়ারিং অ্যাপের খরচ। যানজট বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব প্ল্যাটফর্মে ভাড়াও ধাপে ধাপে বাড়ে। ফলে সাধারণ যাত্রীদের খরচও বৃদ্ধি পায়।
স্বাস্থ্য ও মানসিক ক্ষতি
দীর্ঘ সময় যানজটে থাকার কারণে মানসিক ও শারীরিক ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দীর্ঘসময় যানজটে বসে থাকার ফলে মাথাব্যথা, অতিরিক্ত ঘাম, পানিশূন্যতা, শ্রবণ সমস্যা, শ্বাসকষ্ট, ধুলাজনিত অ্যালার্জি ও চোখের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক আহমেদ হেলাল স্ট্রিমকে বলেন, ‘বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যানজটের কারণে মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রধানত মানুষের মধ্যে মানসিক চাপ বাড়ে। মানসিক চাপটা তাকে উদ্বিগ্নতা বা অ্যাংজাইটির মতো রোগে আক্রান্ত করতে পারে। এই চাপ বিষণ্ণতা বাড়াতে পারে। এ ছাড়া আচরণজনিত সমস্যা, বিহেভিওরাল ডিসঅর্ডার হতে পারে।’
আহমেদ হেলাল আরও বলেন, ‘যানজটের কারণে শারীরিক স্বাস্থ্যেরও অবনতি ঘটে। দীর্ঘ সময় বসে থাকলে মানুষের শরীরের বিভিন্ন গিটগুলোতে ব্যথা হতে পারে। ভিড়ের ভেতর বেশিক্ষণ বসে থাকলে ড্রপলেট ইনফেকশন হতে পারে। গাড়ির ধোঁয়া থেকে শ্বাসনালীর সমস্যা হতে পারে।’
অন্যদিকে যানজটে দাঁড়িয়ে থাকলেও অধিকাংশ গাড়ির ইঞ্জিন চালু থাকে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এতে প্রচুর পরিমাণে কার্বন পরিবেশের সঙ্গে মিশে। ফলে বায়ুদূষণ ঘটছে। অবিরাম হর্ন বাজানোর ফলে শব্দদূষণও বাড়চ্ছে।
নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও অপরাধের শাস্তি কঠোর করতে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ সংশোধন করে এর খসড়া অনুমোদন করেছেন উপদেষ্টা পরিষদ।
১ ঘণ্টা আগেফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যুগের চাহিদা অনুযায়ী ডিজিটাল দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে কওমি শিক্ষার্থীরা অনলাইন শিক্ষাসহ আধুনিক প্রযুক্তির বিভিন্ন সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে, যা তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াবে। এরপর আইসিটি বিভাগের মাধ্যমে আমরা তাদের উচ্চস্তরের প্রশিক্ষণ করাবো।
২ ঘণ্টা আগেচাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেল ও ছাত্র শিবির সমর্থিত প্যানেল বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
৩ ঘণ্টা আগেশিবলীর সহকর্মী সোহেল রানা বলেন, ‘এটি হিট স্ট্রোকের মতো একটি ঘটনা বলে চিকিৎসকেরা আমাদের জানিয়েছেন। হাসপাতাল থেকে আমাদের সরাসরি কোনো বিস্তারিত চিকিৎসা সার্টিফিকেট দেওয়া হয়নি। তবে অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (লগবুকে নাম রেজিস্ট্রেশনের স্লিপ) তার পরিবারকে দেওয়া হয়েছে।’
৪ ঘণ্টা আগে