আজ আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস
স্ট্রিম প্রতিবেদক
বাংলাদেশে থামছে না বাল্যবিবাহ। আইন, সরকারি ও বেসরকারি নানা উদ্যোগও হচ্ছে না ফলপ্রসু। যদিও আইন অনুযায়ী, ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়ের বিয়ে দেওয়া অপরাধ। সবচেয়ে বেশি বাল্যবিবাহ হয়, বিশ্বে এমন দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান এখন অষ্টম। আর এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে।
জাতিসংঘের জনসংখ্যাবিষয়ক সংস্থা-ইউএনএফপিএ-র বৈশ্বিক জনসংখ্যা পরিস্থিতি ২০২৫ বিষয়ক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৫১ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই৷ খুব কম বয়সে মা-ও হচ্ছেন অনেকে, যা তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বাড়াচ্ছে৷ প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সি এক হাজার মেয়ের মধ্যে ৭১ জন এক বা একাধিক সন্তানের মা৷
বাড়ছে বাল্যবিয়ে
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-র সর্বশেষ প্রতিবেদন ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স ২০২৩’ অনুযায়ী ১৫ বছর বয়স হওয়ার আগেই ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হচ্ছে। আর ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে বিয়ে হয় ৪১ দশমিক ৬ শাতাংশ নারীর।
সরকারি এই হিসাবে রক্ষণশীলতার অভিযোগ রয়েছে। তবে প্রতিবেদনটিতে দেখা যায়, বাংলাদেশে বাল্য বিয়ে বেড়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে ১৮ বছর বয়সের আগে বিয়ের হার ছিল ৩১ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০২২ সালে ছিল ৪০ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ২০২৩ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১.৬ শতাংশে৷
সরকারি ও প্রতিবেদনে বলা হয়, বাল্যবিবাহের সবচে বেশি পরিস্থিতি দেখা গেছে রাজশাহী বিভাগে। এ বিভাগে ১৮ বছেরর আগে ৫৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ নারীর বিয়ে হয়। এর পরের অবস্থানে থাকা খুলনায় বাল্য বিয়ে হয় ৫১ দশমিক ১২ শতাংশ নারীর। আর সবচে কম বাল্য বিয়ে হয় সিলেট বিভাগে। এই বিভাগে বাল্যবিয়ের হার ১৫ শতাংশ।
বিসিএসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ১৫ বছর বয়সের ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। এ বয়সসীমাতেও বেড়েছে বাল্যবিয়ে। ২০১৮ সালে ছিল ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০২২ সালে ছিল ৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ। কিছুটা বেড়ে ২০২৩ সালে যা দাড়িয়েছে ৮ দশমিক ২৫ শতাংশে।
এই বয়সীমার বাল্যবিয়েতেও এগিয়ে রয়ছে রাজশাহী বিভাগ। এই বিভাগে ১৫ বছেরর আগে বাল্যবিয়ে হয় ১৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ মেয়ের। খুলনা বিভাগে ১২.২৪ শতাংশ। সব কম সিলেট বিভাগে। এই বিভাগে ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয় ১৫ বছর বয়সের আগে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের ২০২১ সালে করা এক গবেষণায় দেখা যায়, করোনার কারণে দেশে বাল্যবিয়ে শতকরা ১৩ ভাগ বেড়েছে৷ যা ছিল ২৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ৷
গত ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে ইউনিসেফ, ইউএন উইমেন ও প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত 'গার্ল গোলস: হোয়াট হ্যাজ চেঞ্জড ফর গার্লস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে ৫১ .৪ শতাংশ নারীর বিয়ে হচ্ছে ১৮ বছর হওয়ার আগে৷
২০২৪ সালের জুন মাসে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ঢাকায় একটি অনুষ্ঠান হয়। সেখানে ইউএনএফপিএ-র তৎকালীন প্রতিনিধি ক্রিস্টিন বলেন, ‘বাংলাদেশকে বাল্যবিবাহ নির্মূলের চেষ্টা আরও ২২ গুণ বাড়াতে হবে৷’
ঝুঁকি
বাল্যবিয়ের কারণে নারীরা শৈশব থেকেই নানাবিধ ঝুঁকির মধ্যে পড়েন। বাল্যবিয়ের ঝুঁকিগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি ভয়াবহ। শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়ার আগেই তাঁদের গর্ভধারণ করতে হয়। ফলে মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গর্ভধারণ ও প্রসবজনিত মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ বাল্যবিয়ে। যারা ১৫ বছরের আগে গর্ভবতী হয়, তাদের মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি ২০-এর কোঠায় থাকা নারীদের চেয়ে পাঁচগুণ বেশি। সঙ্গে থাকে তাদের দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক ও সামাজিক কষ্ট। বাল্যবিয়ে এবং অপ্রাপ্ত বয়সে গর্ভধারণের ফলে শিশু মৃত্যুহারও বৃদ্ধি পায়।
বাল্যবিবাহ মেয়েদের শিক্ষা ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতার পথ রুদ্ধ করে। নারীদের শিক্ষা থেকে ঝড়ে পরার অন্যতম কারণ বাল্যবিয়ে। এতে অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতাও বাড়ে।
কারণ ও প্রতিকার
সমাজ বিজ্ঞানীরা মনে করেন, বাংলাদেশে বাল্য বিয়ের উচ্চ হারের পেছনে যেসব কারণ রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম দারিদ্র্য। এখনো অনেক পরিবারে মেয়েদের ‘বোঝা’ মনে করে। এছাড়া রয়েছে নিরাপত্তাজনিত কারণ। নারীদের একটা বড় অংশ প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানির শিকার হন।
ইউএনএফপিএ-র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের বহুমাত্রিক কারণ রয়েছে। এর মূল কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে লিঙ্গ বৈষম্য, সামাজিক প্রথা ও অর্থনৈতিক সংকট। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা সেবার অভাব— বিশেষ করে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকারের প্রতিবন্ধকতা বাল্যবিয়ের সমস্যাটিকে আরও জটিল করে তুলছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মানবিক সংকট, অস্পষ্ট আইনি কাঠামোকেও বাল্যবিয়ে বৃদ্ধির কারণ হিসাবে দেখিয়েছে ইউএনএফপিএ।
বাল্য সম্পর্কে সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নিলেও এর সুফল মিলছে সামান্য। ২০১৭ সালে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন পাশ করে সরকার। তাতে বেশ কিছু ধারায় কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়। ইউএনএফপিএ মনে করে, মেয়েদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে বাল্যবিয়ে কমতে পারে। এছাড়াও সংস্থাটি জানিয়েছে, সমাজ ও পরিবারের মধ্যে গভীর বোঝাপড়া, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা এবং নীতিমালা জোরদার করা গেলে বাল্যবিয়ে কমে আসতে পারে।
আইন
বাংলাদেশের আইনে প্রাপ্ত বয়স্ক কোন নারী বা পুরুষ বাল্যবিয়ে করলে ২ বছরের কারাদণ্ড ও ১ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় এবং অর্থদণ্ড অনাদায়ে ৩ মাস কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। এছাড়া অপ্রাপ্ত বয়স্ক কোন নারী বা পুরুষ বাল্যবিয়ে করলে তারক্ষেত্রে ১ মাসের আটকাদেশ, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় ধরনের শাস্তি পেতে পারেন।
বাল্যবিয়ে রোধে একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ সরকার। এই কর্মপরিকল্পনার লক্ষ্য হলো ২০৩০ সালের মধ্যে বাল্যবিয়ে নির্মূল করা এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিবাহ পুরোপুরি বন্ধ করা। জাতীয়, জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটিও করা হয়েছে। সেই সঙ্গে জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩ ও নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে ন্যাশনাল হেল্পলাইন ১০৯-ও চালু করেছে সরকার।
তবুও বাল্যবিয়ে রোধ করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) উপ-পরিচালক (লিগ্যাল) অ্যাড. মোহাম্মদ বরকত আলী স্ট্রিমকে বলেন, ‘বাল্যবিয়ে রোধে শিক্ষা, সভা-সমাবেশ দরকার। আইন আছে কিন্তু আইনের বাস্তবায়ন নাই, আইনের প্রয়োগ দরকার।’
বরকত আলী আরও বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের জন্য কমিটি করা আছে, জেলা পর্যায়ে আছে, উপজেলা পর্যায়ে আছে। সেই কমিটিগুলো অ্যাক্টিভেট কতটুকু? তারা কতটা সক্রিয়ভাবে কাজ করছে? সেইগুলো দেখার বিষয় আছে।’
সামাজিক সচেতনতার কথাও বলেছেন এই আইনজীবী। বরকত আলী বলেন, ‘শুধু কমিটি কাজ করলে হবে না, যারা সমাজের লোকজন তাদেরও সচেতন হওয়া দরকার আছে। বাল্যবিবাহের যে বাজে প্রভাব পড়ছে সমাজের উপরে, সেই প্রভাব সম্পর্কে তাদের ধারণা দেওয়া দরকার।’
সর্বোপরি, বাল্যবিয়ে শুধুমাত্র একটি ব্যক্তিগত সমস্যা নয়; এটি পুরো সমাজের জন্য একটি গভীর সংকট। শৈশব হারানো মেয়েরা স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক স্বাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির মুখোমুখি হয়। আইন, নীতি, শিক্ষা ও সচেতনতা মিলিয়ে কার্যকর প্রচেষ্টা ছাড়া এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। তাই পরিবারের, সমাজের ও সরকারের সক্রিয় ভূমিকা ছাড়া বাল্যবিয়ে রোধ করা অসম্ভব। মেয়েদের ক্ষমতায়ন, শিক্ষার প্রসার এবং সামাজিক বোঝাপড়া গড়ে তোলা ছাড়া দেশের ভবিষ্যত নিরাপদ করা যায় না।
বাংলাদেশে থামছে না বাল্যবিবাহ। আইন, সরকারি ও বেসরকারি নানা উদ্যোগও হচ্ছে না ফলপ্রসু। যদিও আইন অনুযায়ী, ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়ের বিয়ে দেওয়া অপরাধ। সবচেয়ে বেশি বাল্যবিবাহ হয়, বিশ্বে এমন দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান এখন অষ্টম। আর এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে।
জাতিসংঘের জনসংখ্যাবিষয়ক সংস্থা-ইউএনএফপিএ-র বৈশ্বিক জনসংখ্যা পরিস্থিতি ২০২৫ বিষয়ক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৫১ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই৷ খুব কম বয়সে মা-ও হচ্ছেন অনেকে, যা তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বাড়াচ্ছে৷ প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সি এক হাজার মেয়ের মধ্যে ৭১ জন এক বা একাধিক সন্তানের মা৷
বাড়ছে বাল্যবিয়ে
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-র সর্বশেষ প্রতিবেদন ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স ২০২৩’ অনুযায়ী ১৫ বছর বয়স হওয়ার আগেই ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হচ্ছে। আর ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে বিয়ে হয় ৪১ দশমিক ৬ শাতাংশ নারীর।
সরকারি এই হিসাবে রক্ষণশীলতার অভিযোগ রয়েছে। তবে প্রতিবেদনটিতে দেখা যায়, বাংলাদেশে বাল্য বিয়ে বেড়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে ১৮ বছর বয়সের আগে বিয়ের হার ছিল ৩১ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০২২ সালে ছিল ৪০ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ২০২৩ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১.৬ শতাংশে৷
সরকারি ও প্রতিবেদনে বলা হয়, বাল্যবিবাহের সবচে বেশি পরিস্থিতি দেখা গেছে রাজশাহী বিভাগে। এ বিভাগে ১৮ বছেরর আগে ৫৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ নারীর বিয়ে হয়। এর পরের অবস্থানে থাকা খুলনায় বাল্য বিয়ে হয় ৫১ দশমিক ১২ শতাংশ নারীর। আর সবচে কম বাল্য বিয়ে হয় সিলেট বিভাগে। এই বিভাগে বাল্যবিয়ের হার ১৫ শতাংশ।
বিসিএসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ১৫ বছর বয়সের ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। এ বয়সসীমাতেও বেড়েছে বাল্যবিয়ে। ২০১৮ সালে ছিল ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০২২ সালে ছিল ৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ। কিছুটা বেড়ে ২০২৩ সালে যা দাড়িয়েছে ৮ দশমিক ২৫ শতাংশে।
এই বয়সীমার বাল্যবিয়েতেও এগিয়ে রয়ছে রাজশাহী বিভাগ। এই বিভাগে ১৫ বছেরর আগে বাল্যবিয়ে হয় ১৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ মেয়ের। খুলনা বিভাগে ১২.২৪ শতাংশ। সব কম সিলেট বিভাগে। এই বিভাগে ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয় ১৫ বছর বয়সের আগে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের ২০২১ সালে করা এক গবেষণায় দেখা যায়, করোনার কারণে দেশে বাল্যবিয়ে শতকরা ১৩ ভাগ বেড়েছে৷ যা ছিল ২৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ৷
গত ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে ইউনিসেফ, ইউএন উইমেন ও প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত 'গার্ল গোলস: হোয়াট হ্যাজ চেঞ্জড ফর গার্লস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে ৫১ .৪ শতাংশ নারীর বিয়ে হচ্ছে ১৮ বছর হওয়ার আগে৷
২০২৪ সালের জুন মাসে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ঢাকায় একটি অনুষ্ঠান হয়। সেখানে ইউএনএফপিএ-র তৎকালীন প্রতিনিধি ক্রিস্টিন বলেন, ‘বাংলাদেশকে বাল্যবিবাহ নির্মূলের চেষ্টা আরও ২২ গুণ বাড়াতে হবে৷’
ঝুঁকি
বাল্যবিয়ের কারণে নারীরা শৈশব থেকেই নানাবিধ ঝুঁকির মধ্যে পড়েন। বাল্যবিয়ের ঝুঁকিগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি ভয়াবহ। শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়ার আগেই তাঁদের গর্ভধারণ করতে হয়। ফলে মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গর্ভধারণ ও প্রসবজনিত মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ বাল্যবিয়ে। যারা ১৫ বছরের আগে গর্ভবতী হয়, তাদের মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি ২০-এর কোঠায় থাকা নারীদের চেয়ে পাঁচগুণ বেশি। সঙ্গে থাকে তাদের দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক ও সামাজিক কষ্ট। বাল্যবিয়ে এবং অপ্রাপ্ত বয়সে গর্ভধারণের ফলে শিশু মৃত্যুহারও বৃদ্ধি পায়।
বাল্যবিবাহ মেয়েদের শিক্ষা ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতার পথ রুদ্ধ করে। নারীদের শিক্ষা থেকে ঝড়ে পরার অন্যতম কারণ বাল্যবিয়ে। এতে অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতাও বাড়ে।
কারণ ও প্রতিকার
সমাজ বিজ্ঞানীরা মনে করেন, বাংলাদেশে বাল্য বিয়ের উচ্চ হারের পেছনে যেসব কারণ রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম দারিদ্র্য। এখনো অনেক পরিবারে মেয়েদের ‘বোঝা’ মনে করে। এছাড়া রয়েছে নিরাপত্তাজনিত কারণ। নারীদের একটা বড় অংশ প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানির শিকার হন।
ইউএনএফপিএ-র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের বহুমাত্রিক কারণ রয়েছে। এর মূল কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে লিঙ্গ বৈষম্য, সামাজিক প্রথা ও অর্থনৈতিক সংকট। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা সেবার অভাব— বিশেষ করে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকারের প্রতিবন্ধকতা বাল্যবিয়ের সমস্যাটিকে আরও জটিল করে তুলছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মানবিক সংকট, অস্পষ্ট আইনি কাঠামোকেও বাল্যবিয়ে বৃদ্ধির কারণ হিসাবে দেখিয়েছে ইউএনএফপিএ।
বাল্য সম্পর্কে সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নিলেও এর সুফল মিলছে সামান্য। ২০১৭ সালে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন পাশ করে সরকার। তাতে বেশ কিছু ধারায় কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়। ইউএনএফপিএ মনে করে, মেয়েদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে বাল্যবিয়ে কমতে পারে। এছাড়াও সংস্থাটি জানিয়েছে, সমাজ ও পরিবারের মধ্যে গভীর বোঝাপড়া, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা এবং নীতিমালা জোরদার করা গেলে বাল্যবিয়ে কমে আসতে পারে।
আইন
বাংলাদেশের আইনে প্রাপ্ত বয়স্ক কোন নারী বা পুরুষ বাল্যবিয়ে করলে ২ বছরের কারাদণ্ড ও ১ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় এবং অর্থদণ্ড অনাদায়ে ৩ মাস কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। এছাড়া অপ্রাপ্ত বয়স্ক কোন নারী বা পুরুষ বাল্যবিয়ে করলে তারক্ষেত্রে ১ মাসের আটকাদেশ, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় ধরনের শাস্তি পেতে পারেন।
বাল্যবিয়ে রোধে একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ সরকার। এই কর্মপরিকল্পনার লক্ষ্য হলো ২০৩০ সালের মধ্যে বাল্যবিয়ে নির্মূল করা এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিবাহ পুরোপুরি বন্ধ করা। জাতীয়, জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটিও করা হয়েছে। সেই সঙ্গে জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩ ও নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে ন্যাশনাল হেল্পলাইন ১০৯-ও চালু করেছে সরকার।
তবুও বাল্যবিয়ে রোধ করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) উপ-পরিচালক (লিগ্যাল) অ্যাড. মোহাম্মদ বরকত আলী স্ট্রিমকে বলেন, ‘বাল্যবিয়ে রোধে শিক্ষা, সভা-সমাবেশ দরকার। আইন আছে কিন্তু আইনের বাস্তবায়ন নাই, আইনের প্রয়োগ দরকার।’
বরকত আলী আরও বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের জন্য কমিটি করা আছে, জেলা পর্যায়ে আছে, উপজেলা পর্যায়ে আছে। সেই কমিটিগুলো অ্যাক্টিভেট কতটুকু? তারা কতটা সক্রিয়ভাবে কাজ করছে? সেইগুলো দেখার বিষয় আছে।’
সামাজিক সচেতনতার কথাও বলেছেন এই আইনজীবী। বরকত আলী বলেন, ‘শুধু কমিটি কাজ করলে হবে না, যারা সমাজের লোকজন তাদেরও সচেতন হওয়া দরকার আছে। বাল্যবিবাহের যে বাজে প্রভাব পড়ছে সমাজের উপরে, সেই প্রভাব সম্পর্কে তাদের ধারণা দেওয়া দরকার।’
সর্বোপরি, বাল্যবিয়ে শুধুমাত্র একটি ব্যক্তিগত সমস্যা নয়; এটি পুরো সমাজের জন্য একটি গভীর সংকট। শৈশব হারানো মেয়েরা স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক স্বাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির মুখোমুখি হয়। আইন, নীতি, শিক্ষা ও সচেতনতা মিলিয়ে কার্যকর প্রচেষ্টা ছাড়া এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। তাই পরিবারের, সমাজের ও সরকারের সক্রিয় ভূমিকা ছাড়া বাল্যবিয়ে রোধ করা অসম্ভব। মেয়েদের ক্ষমতায়ন, শিক্ষার প্রসার এবং সামাজিক বোঝাপড়া গড়ে তোলা ছাড়া দেশের ভবিষ্যত নিরাপদ করা যায় না।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন। অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
১ ঘণ্টা আগেআন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) শতাধিক সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নতুন করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে যাচ্ছে— সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো এমন দাবিকে ‘ভিত্তিহীন গুজব’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
১ ঘণ্টা আগেজুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় গণহত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় আগামীকাল রোববার (১২ অক্টোবর) যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবে প্রসিকিউশন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ, এ সংক্রান্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
২ ঘণ্টা আগেজুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান ১৫ অক্টোবর বুধবারের পরিবর্তে ১৭ অক্টোবর শুক্রবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। জনসাধারণের অংশগ্রহণের সুবিধার্থে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এ অনুষ্ঠান আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
২ ঘণ্টা আগে