leadT1ad

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের ‘গোপন বৈঠক’ ঘিরে যা জানা গেল

স্ট্রিম প্রতিবেদকঢাকা
প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২৫, ১৩: ০৬
গতকাল বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সেনা সদরে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিং। সংগৃহীত ছবি

রাজধানীতে সম্প্রতি ‘গোপন বৈঠক’করেছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বৈঠক ঘিরে ২২ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের খবরে দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে। এ ঘটনায় এক মেজর পদমর্যাদার সেনা কর্মকর্তাকেও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সেনাবাহিনী। বৃহস্পতিবার ঢাকায় সেনা সদরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়েছে।

'সরকারবিরোধী বৈঠক' বলছে পুলিশ

গত ৮ জুলাই ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা সংলগ্ন একটি কনভেনশন সেন্টারে দলটির ওই বৈঠক হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। এটিকে ‘সরকারবিরোধী গোপন বৈঠক’ উল্লেখ করে ভাটারা থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।

মামলার নথিতে বলা হয়েছে, গত ৮ জুলাই বসুন্ধরাসংলগ্ন কে বি কনভেনশন সেন্টারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ একটি গোপন বৈঠকের আয়োজন করে। দিনব্যাপী বৈঠকটিতে আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের পাশাপাশি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মিলে ৩০০-৪০০ জন অংশ নেন। দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার লক্ষ্যে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ওই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল বলে মামলায় উল্লেখ করেছে পুলিশ।

বৈঠকে পরিকল্পনা করা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ পাওয়ার পর সারা দেশ থেকে লোকজন এসে ঢাকায় সমবেত হবেন। তারা ঢাকার শাহবাগ মোড় দখল করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে দেশে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করবেন।

প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগে সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত

গোপন ওই বৈঠকে সেনাবাহিনীর এক মেজর অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ‘প্রশিক্ষণ দিয়েছেন’ বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।

সেনা সদরের ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে সেনা সদরের মিলিটারি অপারেশনস পরিদপ্তরের (কর্নেল স্টাফ) কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম জানান, ওই মেজরের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে তারা অবগত আছেন।

সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেওয়া আরেক সেনা কর্মকর্তা মিলিটারি অপারেশনসের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, ঘটনাটি জানার পর ওই মেজরকে সেনাবাহিনীর হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে তদন্ত চলমান জানিয়ে অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তা দোষী প্রমাণিত হলে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ব্রিফিংয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়।

গোপালগঞ্জ ইস্যুতে সেনাবাহিনীর বক্তব্য

ব্রিফিংয়ে গোপালগঞ্জের সাম্প্রতিক ইস্যুও ওঠে এসেছে। গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কর্মসূচিতে দফায় দফায় হামলা চলে। সেখানে এনসিপি নেতাদের জীবননাশের হুমকি থাকায় তাদের সরিয়ে নিতে সেনাবাহিনী সহযোগিতা করেছে বলে জানান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজিম-উদ-দৌলা। তিনি বলেন, এখানে বিশেষ কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতি সেনাবাহিনীর আলাদা নজর থাকার কারণ নেই। দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর কাছে সকলেই সমান। যেখানে জনদুর্ভোগ ও জীবননাশের হুমকি থাকে সেখানে সেনাবাহিনী কঠোর হয়। জনসাধারণকে সহযোগিতা করা হয়। গোপালগঞ্জে যদি সেনাবাহিনী সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করতো, তাহলে সেখানে অনেক হতাহত বা জীবননাশের ঘটনা ঘটতে পারতো।

তিনি বলেন, গোপালগঞ্জে যে ঘটনাটি হয়েছে সেটি দুঃখজনক। তবে সেটি কোন প্রেক্ষাপটে ঘটেছে, কেন সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বল প্রয়োগ করতে হয়েছিল সে ব্যাপারেও সরকারি পর্যায়ে একটি উচ্চপর্যায়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একজন বিচারপতিকে সভাপতি করে তদন্ত কমিটি খুঁজে বের করবে যে কীভাবে হয়েছে, কেন হয়েছে, প্রেক্ষাপট কী ছিল। আমরা সে পর্যন্ত অপেক্ষা করি।

'সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রটেকশন দিয়ে যাচ্ছে'

পার্বত্য অঞ্চলে সন্ত্রাসীদের সংঘাতকে সেনাবাহিনী কীভাবে দেখছে-ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, চাঁদাবাজি ও মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায়ের জন্য দুষ্কৃতকারীরা এসব করে থাকে। এগুলো বন্ধে সেনাবাহিনীর কার্যক্রম ও অভিযান অব্যাহত আছে। ভবিষ্যতেও চলমান থাকবে। বান্দরবানের আর্মি ক্যাম্প গুটিয়ে নেওয়া, কুকিচিন, আরাকান আর্মি ও বান্দরবানে অস্ত্র কেনা-বেচা নিয়ে এক প্রশ্নে কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রটেকশন দিয়ে যাচ্ছে এবং ভালোভাবে দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ক্যাম্পগুলোতে সেনাবাহিনীর আভিযানিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। আভিযানিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে যদি সেনাবাহিনীর আরও ক্যাম্পের প্রয়োজন হয়, তাহলে টেম্পোরারি অপারেটিং বেইস করে আভিযানিক কার্যক্রম চালানো হবে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত