গত বছরের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর রামপুরায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের তথ্য জানতে পুলিশ হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মীদের ওপর চাপ দিয়েছিল বলে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন একজন সাক্ষী। ফেমাস স্পেশালাইজড হাসপাতালের তৎকালীন স্টাফ নার্স লিংকন মাঝি আজ মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ এই জবানবন্দি দেন।
রামপুরায় মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় আজ মোট তিনজন সাক্ষী জবানবন্দি দিয়েছেন। অন্য দুই সাক্ষী পুলিশ সদস্য।
আদালতে ১১তম সাক্ষী হিসেবে লিংকন মাঝি ২০২৪ সালের ১৯ জুলাইয়ের ঘটনার বর্ণনায় বলেন, ‘সেদিন জুমার নামাজের পরপরই আমাদের হাসপাতালের ভেতর থেকে বাইরে গুলির শব্দ শুনতে পাই। কিছুক্ষণ পর গুলিবিদ্ধ রোগী আসতে থাকে—প্রায় ৮০ থেকে ১০০ জন। আমরা তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিই এবং গুরুতর আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাই।’
গুলিবিদ্ধ আমির হোসেনকে উদ্ধারের ঘটনা বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘সেদিন বিকেল চারটার দিকে হাসপাতালের ল্যান্ডলাইন ফোনে খবর আসে—রামপুরা থানার সামনে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে আছেন। আমাদের হাসপাতালের ডা. জিহাদ, আমি ও আরও দুজন সেখানে যাই। তাঁকে হাসপাতালে এনে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পরে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়।’
সাক্ষী আরও বলেন, কিছুদিন পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে তিনি জানতে পারেন, গুলিবিদ্ধ ওই ব্যক্তি ছিলেন আমির হোসেন। এরপরই পুলিশ তাঁদের ওপর চাপ প্রয়োগ শুরু করে।
পুলিশি চাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রামপুরা থানার পক্ষ থেকে তখন আমাদের হাসপাতালের ডা. জিহাদ, ম্যানেজার আনোয়ার হোসেন ও অ্যাম্বুলেন্সচালক সিরাজকে ডেকে তাঁদের ওপর আমির হোসেনের ঠিকানা জানার জন্য চাপ দেওয়া হয়।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘পরে জানতে পারি, পুলিশ কর্মকর্তা চঞ্চল ও তারেক আমির হোসেনকে গুলি করেছিলেন।’
এর আগে মামলার নবম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার ফিল্ড অফিসার এএসআই (নিরস্ত্র) মো. বায়জীদ খান। দশম সাক্ষী হিসেবে রামপুরা থানার এসআই (নিরস্ত্র) মো. শাহিন মিয়া তাঁর জবানবন্দি দেন।
সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ট্রাইব্যুনাল মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী সোমবার, ১৭ নভেম্বর, দিন ধার্য করেন।
সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে প্রসিকিউটর তামীম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ তিনজন সাক্ষী জবানবন্দি দিয়েছেন। এ পর্যন্ত ১১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। মামলাটি ১৯ জুলাই শহীদ নাদিম, শিশু মুসা খান ও তার দাদি মায়া ইসলাম হত্যাসহ আমির হোসেনকে গুলি করার ঘটনায় দায়ের করা হয়েছে।’
১৩ নভেম্বর শেখ হাসিনার মামলার রায়কে ঘিরে উত্তেজনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আদালতের বিচারপ্রক্রিয়া এড়িয়ে সহিংসতা, যানবাহনে আগুন দেওয়া বা জনদুর্ভোগ তৈরি করা গ্রহণযোগ্য নয়।’ তিনি জানান, এ কারণে সুপ্রিম কোর্ট, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় ও প্রসিকিউশন অফিসসহ আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
জুলাই আন্দোলন সম্পর্কিত নতুন ফাঁস হওয়া অডিও-ভিডিও নিয়ে প্রশ্নের জবাবে প্রসিকিউটর তামীম বলেন, ‘আমরা সেগুলো দেখেছি। সেখানে সাবেক এক মন্ত্রী ও এক উপদেষ্টার কথোপকথনে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ওপর কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করতে দেখা গেছে। তদন্ত সংস্থা নিশ্চয়ই এসব বিষয় আমলে নেবে।’