প্রিমিয়ার ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এইচ বি এম ইকবাল ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে অর্থ পাচারের ঘটনায় ব্যাংকটিকে ২ কোটি ২০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। একই সঙ্গে, এই অনিয়মে জড়িত থাকার দায়ে ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম রিয়াজুল করিমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মোট এক কোটি ২৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
বিএফআইইউর তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, এইচ বি এম ইকবাল ও তাঁর পরিবারের চার সদস্য ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৩২ লাখ ৫০ হাজার ৩১১ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪০ কোটি টাকা) বিদেশে খরচ করেছেন, যা আইনত নির্ধারিত সীমার চেয়ে অনেক বেশি। এই অর্থ দিয়ে দুবাইয়ে সম্পদ কেনা হয়েছে বলেও জানা গেছে। আগামী রবিবারের মধ্যে জরিমানার এই অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যে কারণে যত জরিমানা
বিএফআইইউর চিঠিতে বলা হয়েছে, অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইন লঙ্ঘন করে নিয়মবহির্ভূতভাবে রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট (আরএফসিডি) হিসাব খোলা, তাতে অবৈধভাবে অর্থ জমা, ক্রেডিট কার্ডে এনডোর্সমেন্টসহ বিভিন্ন নিয়ম লঙ্ঘন করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা পাচারে সহায়তা করায় প্রিমিয়ার ব্যাংককে এক কোটি ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এছাড়া, অন্য একটি গ্রাহক প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি রিটেনশন কোটা (ইআরকিউ) হিসাব থেকে এক লাখ ডলার এইচ বি এম ইকবাল ও তাঁর ছেলের হিসাবে স্থানান্তরের মাধ্যমে চুরির ঘটনায় আরও এক কোটি টাকা জরিমানা করা হয়।
একই সঙ্গে দায়ী কর্মকর্তাদেরও পৃথকভাবে জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে সাবেক এমডি এম রিয়াজুল করিমকে ৩০ লাখ, বর্তমান অতিরিক্ত এমডি সৈয়দ নওশের আলীকে ৩০ লাখ এবং বনানী শাখার তৎকালীন অপারেশন ম্যানেজার মনিরুল করিম লিটনকে ২২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া, ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ব্যাংকের কার্ড ডিভিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্বে থাকা প্রত্যেক কর্মকর্তাকে ১০ লাখ টাকা করে এবং ২২ বার নিয়ম লঙ্ঘন করে ক্রেডিট কার্ডের সীমা খুলে দেওয়ায় জাকির হোসেন জিতুকে ২২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
অপরাধের ধরন
বিএফআইইউর তদন্ত অনুযায়ী, এইচ বি এম ইকবাল, তাঁর তিন সন্তান মোহাম্মদ ইমরান ইকবাল, মইন ইকবাল ও নওরীন ইকবাল এবং পুত্রবধূ ইয়াসনা পূজা ইকবালের নামে থাকা ১৮টি আন্তর্জাতিক ক্রেডিট ও ৪টি প্রিপেইড কার্ডের মাধ্যমে এই বিপুল অর্থ পাচার করা হয়। এর বড় অংশই খরচ হয়েছে দুবাইয়ে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ইকবাল পরিবারসহ বর্তমানে দুবাইয়ে অবস্থান করছেন এবং সেখানকার পাম জুমেইরাহতে তাঁদের একাধিক সম্পদ রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবু জাফরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান জরিমানার বিষয়টি শুনেছেন বলে জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, প্রিমিয়ার ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর প্রায় ৩০ বছর চেয়ারম্যান ছিলেন এইচ বি এম ইকবাল। গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তিনি দেশের বাইরে রয়েছেন। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করলে বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করে।