leadT1ad

গুলিবিদ্ধ হয়ে পিছিয়ে গেলেও আবু সাঈদকে আবার গুলি করা হয়: আদালতে সাক্ষী

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সংগৃহীত ছবি

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে গুলি করার মুহূর্তের বর্ণনা দিয়েছেন মামলার এক সাক্ষী। তিনি আদালতে বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়ানো অবস্থায় আবু সাঈদকে গুলি করা হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে কিছুটা পিছিয়ে গেলেও তাঁকে আবার গুলি করা হয়।

গত বছরের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় আজ মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ এই সাক্ষ্য দেন প্রত্যক্ষদর্শী ও মামলার ১৩ নম্বর সাক্ষী ইমরান আহমেদ। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক উপাচার্য হাসিবুর রশীদসহ ৩০ জন এ মামলার আসামি।

আজ বেলা সাড়ে ১১টায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করেন। প্যানেলের অন্য সদস্যরা হলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।

ঘটনার দিনের বর্ণনা দিয়ে তৎকালীন কারমাইকেল কলেজের শিক্ষার্থী ইমরান আহমেদ বলেন, ১৬ জুলাই শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বেরোবির গেটে পৌঁছালে পুলিশ প্রথমে বাধা দেয়। এরপর কোনো রকম সতর্কবার্তা ছাড়াই পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে এবং অতর্কিতে লাঠিপেটা শুরু করে। এই আঘাতেই আবু সাঈদের মাথার পেছনে মারাত্মক আঘাত লাগে এবং রক্ত পড়া শুরু হয়।

ইমরান আহমেদ তাঁর জবানবন্দিতে আরও বলেন, আক্রমণকারী পুলিশ যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের ভেতরে অবস্থান নেয়, তখন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আগে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে অবস্থান করছিলেন। শিক্ষকদের মধ্যে মশিউর রহমান ও আসাদ মণ্ডল এবং কর্মকর্তাদের মধ্যে রাফিউল হাসান রাসেল, মনিরুজ্জামান পলাশ, হাফিজুর রহমান তুফানসহ আরও কয়েকজন ভেতরে ছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ করে ইমরান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কোনো ভূমিকা রাখেনি বা অবৈধভাবে অবস্থানরত বহিরাগত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেনি। উপরন্তু, প্রক্টর ছাত্রলীগ ও পুলিশের সঙ্গে কিছুক্ষণ অবস্থান করার পর চলে যান।’

সাক্ষী আরও অভিযোগ করেন, ভেতরে অবস্থান নেওয়া আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পুলিশ সদস্যরা ভেতর থেকে ছাত্রদের লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়েন। পুলিশ কর্মকর্তারা ভেতর থেকে গুলি করতে করতে বেরিয়ে আসতে থাকেন।

আবু সাঈদকে গুলির মুহূর্তের বর্ণনা দিয়ে ইমরান বলেন, ‘পুলিশ কর্মকর্তারা ভেতর থেকে গুলি করতে করতে বেরিয়ে আসতে থাকলে গেটের সামনে থাকা ছাত্ররা ছত্রভঙ্গ হয়ে ছোটাছুটি শুরু করে। এ অবস্থায় শহীদ আবু সাঈদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটের সামনে দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে যান এবং গুলিবিদ্ধ হন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সামান্য একটু পিছিয়ে গেলে আবারও গুলিবিদ্ধ হন।’

আবু সাঈদের শেষ মুহূর্তের বর্ণনা দিয়ে সাক্ষী বলেন, ‘আবু সাঈদ সড়ক বিভাজক পার হয়ে একটু পেছনে এলে আয়ান নামের একজন তাঁকে ধরে। এরপর সাজু রায়সহ আরও কয়েকজন আবু সাঈদকে ধরে হাসপাতালে নিয়ে যান। আনুমানিক এক ঘণ্টা পর আমরা খবর পাই, হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক আবু সাঈদকে মৃত ঘোষণা করেছেন।’

এই হত্যাকাণ্ডের জন্য পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তাদের সুনির্দিষ্টভাবে অভিযুক্ত করে ইমরান বলেন, ‘তৎকালীন পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামান, ডিসি (ক্রাইম) আবু মারুফ, এডিসি (ডিবি) শাহ নুর আলম পাটোয়ারী, এসি আরিফ, তাজহাট থানার ওসি রবিউলের নেতৃত্বে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মশিউর রহমান, আসাদ মণ্ডল, কর্মকর্তা রাফিউল হাসান রাসেল, হাফিজুর রহমান তুফান ও মনিরুজ্জামান পলাশের সহযোগিতায় এএসআই আমির হোসেন ও কনস্টেবল সুজন চন্দ্রের গুলিতে আবু সাঈদের মৃত্যু হয়।’

সাক্ষ্য শেষে ইমরান বলেন, ‘যাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় আবু সাঈদের মৃত্যু হয়েছে, সহযোদ্ধা ও প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে আমি তাদের প্রত্যেকের শাস্তি দাবি করছি।’

এ মামলায় গ্রেপ্তার ছয় আসামি হলেন—এএসআই আমির হোসেন, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, বেরোবির সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম এবং ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী, রাফিউল হাসান রাসেল ও আনোয়ার পারভেজ। সাবেক উপাচার্যসহ ২৪ আসামি এখনো পলাতক।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত