leadT1ad

এক হাঙ্গেরীয় অভিবাসীর গল্প জিতল বুকার, কী আছে ‘ফ্লেশ’ উপন্যাসে

হাঙ্গেরীয়-ব্রিটিশ লেখক ডেভিড সা–লাই তাঁর উপন্যাস ‘ফ্লেশ’–এর জন্য লন্ডনে মর্যাদাপূর্ণ বুকার পুরস্কার জিতেছেন। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় লন্ডনের ওল্ড বিলিংসগেটে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তাঁকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক

হাঙ্গেরীয়-ব্রিটিশ লেখক ডেভিড সা–লাই তাঁর উপন্যাস ‘ফ্লেশ’–এর জন্য লন্ডনে মর্যাদাপূর্ণ বুকার পুরস্কার জিতেছেন। সংগৃহীত ছবি

হাঙ্গেরীয়-ব্রিটিশ লেখক ডেভিড সা–লাই তাঁর উপন্যাস ‘ফ্লেশ’–এর জন্য লন্ডনে মর্যাদাপূর্ণ বুকার পুরস্কার জিতেছেন। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় লন্ডনের ওল্ড বিলিংসগেটে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তাঁকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানিয়েছে।

উপন্যাসটি লেখা হয়েছে নির্যাতিত এক হাঙ্গেরীয় অভিবাসীর জীবন নিয়ে। ইস্তভান নামের এক মৌন স্বভাবের মানুষের অর্থ উপার্জন ও হারানোর গল্প। সহজ ও সংক্ষিপ্ত ভাষায় লেখা বইটিতে ইস্তভানের কিশোর বয়সের এক সম্পর্ক থেকে শুরু করে যুক্তরাজ্যে তাঁর সংগ্রামী জীবন এবং শেষে লন্ডনের উচ্চবিত্ত সমাজে তাঁর অবস্থান—এই পথচলার কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে।

বিচারকেরা যা বললেন

ছয়টি বই নিয়ে বিচারকেরা পাঁচ ঘন্টারও বেশি সময়ে ধরে আলোচনা করেছেন। কিন্তু যে বইটিতে তাঁরা বারবার ফিরে গেছেন, সেটি হলো ‘ফ্লেশ’। বিচারকদের মতে, ‘ফ্লেশ’-এর মতো উপন্যাস আগে পড়েননি তাঁরা। অনেক দিক থেকে মনে হবে, বইটি খুবই ‘ডার্ক’। তবে পড়তে পড়তে আনন্দে ভরে ওঠে তাঁদের মন।

হাঙ্গেরীয়-ব্রিটিশ লেখক ডেভিড সা–লাই। সংগৃহীত ছবি
হাঙ্গেরীয়-ব্রিটিশ লেখক ডেভিড সা–লাই। সংগৃহীত ছবি

বিচারকদের সভাপতি রোডি ডয়েল ‘ফ্লেশ’ সম্পর্কে বলেছেন, ‘উপন্যাসের শেষে এসেও আমরা জানতে পারিনি প্রধান চরিত্র ইস্তভান দেখতে কেমন। অথচ এটাকে কোনো ঘাটতি মনে হয় না—বরং উল্টোটা। যেন ইস্তভানের অনুপস্থিত শব্দ, বা তাঁর না বলা কথাগুলোই আমাদের তাঁকে চিনিয়ে দেয়। বইয়ের শুরুতে আমরা জানি, সে কাঁদছে—কারণ তাঁর সঙ্গী তাকে কাঁদতে বারণ করে। গল্পের পরের দিকে বুঝতে পারি তাঁর মাথায় টাক পড়েছে। কারণ সে অন্য এক পুরুষের চুল দেখে হিংসা করে।’

এছাড়াও তিনি আরও বলেন, ‘আমি এমন কোনো উপন্যাস পড়িনি, যেখানে পৃষ্ঠার সাদা জায়গাও এত অর্থবহভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। মনে হয়, লেখক ডেভিড সা-লাই যেন পাঠককে আহ্বান করছেন সেই ফাঁকা জায়গাগুলো পূরণ করতে, পর্যবেক্ষণ করতে। লেখাটি সংযত, আর সেটাই তার বড় শক্তি। প্রতিটি শব্দ গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি শব্দগুলোর মধ্যের ফাঁকও অর্থ বহন করে। আর আমরা যখন বইটি পড়ি, পৃষ্ঠা উল্টাই, তখন মনে হয়, ভালো লাগছে আমরা বেঁচে আছি, পড়ছি, অনুভব করছি।’

কী নিয়ে এই উপন্যাস

প্রবহমান উপন্যাস ফ্লেশ এক ব্যক্তির কৈশোর থেকে বার্ধক্যে পৌঁছানোর গল্প। যেখানে একের পর এক নিয়ন্ত্রণের বাইরে ঘটে যাওয়া ঘটনাই তাকে ধীরে ধীরে ভেঙে দেয়।

পনেরো বছর বয়সী ইস্তভান হাঙ্গেরির এক নীরব অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে মায়ের সঙ্গে থাকে। নতুন শহরে এসে লাজুক এই কিশোর স্কুলের সামাজিক নিয়মকানুন বুঝে উঠতে পারে না। দ্রুত একা হয়ে পড়ে। তাঁর একমাত্র সঙ্গী হয়ে ওঠে পাশের ফ্ল্যাটের এক বিবাহিতা নারী। যার বয়স ইস্তভানের মায়ের সমান। তাদের দেখা–সাক্ষাৎ গোপন সম্পর্কে রুপ নেয়। যা ইস্তভান নিজেও পুরোপুরি বুঝতে পারে না। আর সেখান থেকেই তার জীবনের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যেতে থাকে।

বছর গড়ায়, আর সময়ের সঙ্গে ইস্তভান ভেসে ওঠে একবিংশ শতকের অর্থ ও ক্ষমতার জোয়ারে। সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে লন্ডনের ধনী অভিজাত সমাজে তার পদচারণা। ভালোবাসা, অন্তরঙ্গতা, মর্যাদা ও সম্পদের টানাপোড়েনে সে পেয়ে যায় অকল্পনীয় ধন। কিন্তু সেই প্রাপ্তিই শেষ পর্যন্ত তার পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

ফ্লেশ আসলে গভীর এক প্রশ্ন তোলে। কী চালিত করে মানবজীবন, কী তাকে অর্থ দেয়, আর কী তা ভেঙে দেয়।

প্রবহমান উপন্যাস ফ্লেশ এক ব্যক্তির কৈশোর থেকে বার্ধক্যে পৌঁছানোর গল্প। যেখানে একের পর এক নিয়ন্ত্রণের বাইরে ঘটে যাওয়া ঘটনাই তাকে ধীরে ধীরে ভেঙে দেয়। পনেরো বছর বয়সী ইস্তভান হাঙ্গেরির এক নীরব অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে মায়ের সঙ্গে থাকে। নতুন শহরে এসে লাজুক এই কিশোর স্কুলের সামাজিক নিয়মকানুন বুঝে উঠতে পারে না।

কে এই ডেভিড সা-লাই

ডেভিড সা–লাই প্রথম হাঙ্গেরীয়-ব্রিটিশ লেখক, যিনি বুকার পুরস্কার জিতেছেন। কানাডায় জন্ম নেওয়া সা–লাই লেবানন, যুক্তরাজ্য ও হাঙ্গেরিতে বসবাস করেছেন। বর্তমানে ভিয়েনায় থাকেন তিনি।

এখন পর্যন্ত ছয়টি বই লিখেছেন তিনি। যেগুলো ২০টিরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। পাশাপাশি লিখেছেন কয়েকটি বিবিসি রেডিও নাটকও।

সা–লাইয়ের প্রথম উপন্যাস ‘লন্ডন অ্যান্ড দ্য সাউথ-ইস্ট’ (২০০৮)-এর জন্য বেটি ট্রাস্ক ও জিওফ্রি ফ্যাবার মেমোরিয়াল পুরস্কার পান। তাঁর ‘অল দ্যাট ম্যান ইজ’ উপন্যাসটি গর্ডন বার্ন পুরস্কার ও প্লিম্পটন প্রাইজ ফর ফিকশন অর্জন করে। ২০১৬ সালে বুকার পুরস্কারের জন্য শর্টলিস্টেও স্থান পায় উপন্যাসটি। ২০১৯ সালে ছোটগল্প সংকলন ‘টার্বুলেন্স’-এর জন্য তিনি অ্যাজ হিল পুরস্কার পান তিনি। ‘ফ্লেশ’ তাঁর ছয় নম্বর বই।

২০১০ সালে দ্য টেলিগ্রাফ-এর তালিকায় তিনি ৪০ বছরের কম বয়সী সেরা ২০ ব্রিটিশ লেখকের একজন হিসেবে মনোনীত হন। ২০১৩ সালে গ্রান্টা পত্রিকা তাঁকে ‘বেস্ট অব ইয়ং ব্রিটিশ নভেলিস্ট’–এর একজন হিসেবে নির্বাচিত করে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত