leadT1ad

৭০ শতাংশ মানুষের বিশ্বাস নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে

অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমের প্রতি সমর্থন কমার প্রবণতা থাকলেও দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করেন আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।

স্ট্রিম প্রতিবেদকঢাকা
প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৫, ২১: ২৩
সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এক ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে জরিপটির প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সংগৃহীত ছবি

অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমের প্রতি সমর্থন কমার প্রবণতা থাকলেও দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করেন আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।

ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) এবং ভয়েস ফর রিফর্মের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত ‘থার্ড পালস সার্ভে’ থেকে এই তথ্য এসেছে। সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এক ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে জরিপটির প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

জরিপটি চালানো হয় ১ থেকে ২০ জুলাই ২০২৫-এ। জরিপের ফলাফল উপস্থাপনকালে বিআইজিডি ফেলো অব প্র্যাকটিস সৈয়দা সেলিনা আজিজ জানান, ৫ হাজার ৪৮৯ জন উত্তরদাতা এই টেলিফোন জরিপে অংশ নেন।

জরিপে দেখা যায়, জুলাইয়ের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মদক্ষতার স্কোর কমে ৬৩ পয়েন্টে নেমে গেছে। ২০২৪ সালের অক্টোবরে এই মান ছিল ৬৮ পয়েন্ট। তার আগে আগস্টে ছিল ৭৫।

সময়ের সঙ্গে সরকারের কর্মদক্ষতায় এই নিম্নমুখী প্রবণতা সত্ত্বেও ৭০ শতাংশ উত্তরদাতার বিশ্বাস, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। অন্যদিকে মাত্র ১৫ শতাংশ মনে করেন তা হবে না।

এক প্রশ্নের জবাবে বিআইজিডির সিনিয়র ফেলো এবং গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক মির্জা এম হাসান বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বিচারব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে মানুষের মনে নানা প্রশ্ন থাকতে পারে। তবে তাঁরা বিশ্বাস করেন যে অন্তর্বর্তী সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে এবং নির্বাচনও অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হবে।

নির্বাচনের সময় ঘোষণার আগে জুলাইয়ের ১ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে প্রায় ৫৫ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, তাঁরা চান নির্বাচন ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে হোক। এর মধ্যে ৪৪% চেয়েছেন ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নির্বাচন হোক।

সৈয়দা সেলিনা বলেন, আট মাস আগে মূল্যবৃদ্ধি ছিল মানুষের প্রধান উদ্বেগের বিষয়। কিন্তু এখন তা সরে গিয়ে স্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যু।

জরিপে দেখা যায়, সংস্কারের বিষয়ে মানুষ যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তার মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কিত ইস্যুর হার প্রায় ৫৭ শতাংশ। দ্বিতীয় বৃহত্তম উদ্বেগ হলো নির্বাচন ও রাজনীতি নিয়ে—প্রায় ৩৮ শতাংশ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ও বিআইজিডির সিনিয়র ফেলো ড. আসিফ শাহান বলেন, সাধারণত রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বাড়লে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হয়। কিন্তু এই প্রথমবার দেখা গেল, রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে বলে মানুষ বিশ্বাস করলেও তাঁরা মনে করছেন, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এখনও সামগ্রিকভাবে ভালো।

তাঁর মতে, এটা সম্ভবত এই কারণে যে, কাঁচাবাজারে পণ্যের দাম এখনও মানুষের নাগালের মধ্যে রয়েছে।

৬৮ শতাংশ মানুষ সংস্কারের পরে নির্বাচন চায়

জনগণ সংস্কার বোঝে না, এমন দাবি খণ্ডন করে বক্তারা বলেন, এটি রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসকদের তৈরি করা একটি বয়ান। মানুষ যাতে সংস্কার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ না করে সেজন্যই এই বয়ান ছড়ানো হয়েছে।

জরিপ অনুযায়ী, ৫১ শতাংশ উত্তরদাতা কার্যকর সংস্কারের পরই নির্বাচন চায়। আংশিক মৌলিক সংস্কারের পর নির্বাচন চায় ১৭ শতাংশ। আর সংস্কার ছাড়াই নির্বাচন সমর্থন করেন ১৪ শতাংশ উত্তরদাতা। এ ছাড়া মাত্র ১৩ শতাংশ বলেন, তারা সংস্কার সম্পর্কে কিছু জানেন না। ৪ শতাংশ কোনো উত্তরই দেননি।

ড. আসিফ শাহান বলেন, পরিসংখ্যান দেখায় যে ৮৩ শতাংশ উত্তরদাতা সংস্কার সম্পর্কে জানেন। এ থেকে প্রমাণিত হয়, জনগণ সংস্কার বিষয়ে অজ্ঞ নয়, বরং তাঁরা আনুষ্ঠানিক ভাষার পরিবর্তে নিজেদের ভাষায় মত প্রকাশ করেন।

মির্জা এম হাসান বলেন, সত্য জানার পরও দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসকরা নিজেদের স্বার্থে ভিন্নভাবে কথা বলেন, যাতে মানুষকে সংস্কার প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখা যায়।

ভোটের পছন্দে এগিয়ে বিএনপি, দ্বিতীয় জামায়াত

জরিপ অনুযায়ী, ১২ শতাংশ উত্তরদাতা বিএনপিকে ভোট দিতে চান। জামায়াতে ইসলামীকে ভোট দেবেন ১০ দশমিক ৪ শতাংশ। আর এনসিপিকে দেবেন ২ দশমিক ৮ শতাংশ।

আবার, নিজ নিজ আসনে কে জিততে পারেন এমন প্রশ্নে ৩৮ শতাংশ মনে করেন বিএনপি জিতবে। ১৩ শতাংশ মনে করেন জামায়াত জিতবে। আর মাত্র ১ শতাংশ মনে করেন এনসিপি জিতবে।

তবে জরিপে কোন আসন থেকে কতজন অংশ নিয়েছেন, তা প্রকাশ করা হয়নি।

সেলিনা আজিজ বলেন, যেহেতু এটি দ্রুত সম্পন্ন হওয়া একটি টেলিফোন জরিপ ছিল, তাই অনেকেই সরাসরি নিজের পছন্দ জানাতে চাননি। কিন্তু কোন দল জিততে পারে—এই প্রশ্নে তারা তৎক্ষণাৎ উত্তর দিয়েছেন।

ড. আসিফ শাহান বলেন, এই পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যায় কেন পিআর-এর মতো বিষয় আলোচনায় এসেছে।

তরুণেরা কোন দিকে ঝুঁকছে

এনসিপির জনপ্রিয়তা শুধু শহরেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং গ্রামীণ এলাকাতেও পৌঁছাতে শুরু করেছে। এটা এনসিপির জন্য ইতিবাচক বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

জরিপে দেখা গেছে, ২৭ বছরের নিচের তরুণ ভোটারদের বেশিরভাগ (১২ শতাংশ) জামায়াতকে সমর্থন করেন। বিএনপির পক্ষে এই হার ৯ শতাংশ। এনসিপির জন্য এই হার ৪ শতাংশ। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের প্রায় ২৫ শতাংশের বয়স ছিল ১৮ থেকে ২৫।

বিআইজিডির সিনিয়র ফেলো মির্জা এম হাসান বলেন, আশ্চর্যের বিষয় হল, তরুণদের মধ্যে জামায়াত সর্বোচ্চ সমর্থন পেয়েছে। এরপরে রয়েছে বিএনপি। আবার, নবগঠিত রাজনৈতিক দল হলেও ৪ শতাংশ তরুণ উত্তরদাতা এনসিপিকে সমর্থন করেছেন, যা তাদের জন্য বড় সাফল্য।

প্রায় ৫০ শতাংশ ভোটার সিদ্ধান্তহীনতায়

বক্তারা বলেন, জরিপে দেখা গেছে বিএনপির সমর্থন কমছে। প্রায় ৫০ শতাংশ উত্তরদাতা এখনও কোনও সিদ্ধান্ত জানায়নি।

জরিপ অনুযায়ী, ১২ শতাংশ উত্তরদাতা বিএনপিকে ভোট দিতে চায়। অথচ গত বছরের অক্টোবরে এই হার ছিল ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ। জামায়াতের জন্য এই হার জুলাইয়ে ছিল ১০ দশমিক ৪ শতাংশ, আর গত বছরের অক্টোবরে ছিল ১১ দশমিক ২ শতাংশ।

৪৮ শতাংশ উত্তরদাতা এখনও কাকে ভোট দেবেন তা ঠিক করেননি। গত বছরের অক্টোবরে এই হার ছিল ৩৭ দশমিক ৬ শতাংশ।

ড. আসিফ শাহান বলেন, এনসিপি বাদে সব রাজনৈতিক দলের সমর্থন কমেছে। আশ্চর্যের বিষয়, সিদ্ধান্তহীন মানুষের হার বেড়ে ৪৮ শতাংশ হয়েছে—যা উত্তরদাতাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক।

এই সিদ্ধান্তহীনদের মধ্যে অনেকেই বিএনপির সমর্থক হতে পারেন। যাঁরা বর্তমান পরিস্থিতির কারণে নিজের পছন্দ প্রকাশ করতে চান না। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ আওয়ামী লীগের সমর্থকও হতে পারেন। যে কারণে তাঁরা এখনও অনিশ্চয়তায় আছেন। কিন্তু এই পরিসংখ্যানের সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক হল, এটি বিএনপির জন্য নেতিবাচক চিত্র তুলে ধরছে।

বিএনপির সমর্থকরা খোলাখুলি মত প্রকাশ করতে না পারলে দলটির অগ্রগতি ব্যাহত হতে পারে। তা ছাড়া, এই দ্বিধাগ্রস্ত পরিস্থিতি সিদ্ধান্তহীনদের বিপরীত দিকে যেতে প্রভাবিত করতে পারে।

Ad 300x250

সিলেটে অবাধে সাদাপাথর লুট: নেপথ্যে কারা

থানা হেফাজতে ইশতিয়াকের মৃত্যু: ২ পুলিশের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল

মার্কিন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এনসিপি প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ

জুলাই ঘোষণাপত্রকে ‘প্রতারণা’ আখ্যা দিয়ে ৬০ ছাত্রনেতার প্রত্যাখ্যান

মৃত্যুর আগে শেষ বার্তায় যা লিখেছিলেন আল-জাজিরার সাংবাদিক আনাস

সম্পর্কিত