leadT1ad

বাল্ক আকারে টিসিবির সয়াবিন তেল বাজারে কতটা প্রভাব ফেলবে

দেশের বাজারে ঘাটতি ও বেশি দামের কারণে বাল্ক আকারে (জাহাজে বিপুল পরিমাণ পণ্য আনা) পরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানি করতে চায় ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)।

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা
প্রকাশ : ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ০৮
দেশে কার্ডধারী এক কোটি পরিবারকে ভর্তুকিমূল্যে খাদ্যপণ্য সরবরাহ করে টিসিবি। স্ট্রিম গ্রাফিক

দেশের বাজারে ঘাটতি ও বেশি দামের কারণে বাল্ক আকারে (জাহাজে বিপুল পরিমাণ পণ্য আনা) পরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানি করতে চায় ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। সংস্থাটি বলছে, এ পদ্ধতিতে তেল এনে স্থানীয় প্যাকেজিং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বোতলজাত করে সরবরাহ করলে সাশ্রয়ের পাশাপাশি বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে কার্ডধারী এক কোটি পরিবারকে ভর্তুকিমূল্যে খাদ্যপণ্য সরবরাহ করে টিসিবি। সংস্থাটির দেওয়া পণ্যের মধ্যে চাল, ডাল, পেঁয়াজের পাশাপাশি রয়েছে সয়াবিন তেলও। বর্তমান বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে প্রতি লিটার ১৯০ টাকায়। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কথা বলে লিটারে আরও ১০ টাকা বাড়ানোর দাবি করেছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। এমন উচ্চমূল্যের কারণে অনেক দিন ধরেই টিসিবির সরবরাহ করা পণ্যের মধ্যে চাহিদা শীর্ষে রয়েছে সয়াবিন তেল।

কেন এই সিদ্ধান্ত

টিসিবির দেওয়া তথ্যমতে, প্রতি মাসে প্রায় ২০ মিলিয়ন (দুই কোটি) লিটার সয়াবিন তেলের চাহিদা রয়েছে, যার অধিকাংশই স্থানীয় সরবরাহকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে সংস্থাটি। তবে সরকার নির্ধারিত দামে অনেক প্রতিষ্ঠানই এখন দরপত্রে অংশ নেয় না। ফলে নিয়মিত তেল সরবরাহে হিমশিম অবস্থা তাদের।

টিসিবির একাধিক কর্মকর্তা জানান, গত কয়েক মাস ধরে প্রয়োজনীয় বোতলজাত সয়াবিন তেল সংগ্রহে ব্যর্থ হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। কয়েকবার টেন্ডার আহ্বান করেও তেল কিনতে পারেননি তাঁরা। আন্তর্জাতিক বাজারের কথা বলে সরবরাহকারীরা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাবি করছেন।

এ বিষয়ে টিসিবির মুখপাত্র ও উপপরিচালক (বাণিজ্যিক) শাহাদত হোসেন স্ট্রিমকে বলেন, দেশে ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটাতে একক উৎসের ওপর নির্ভরশীল না হওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। এজন্য সয়াবিন তেলের পাশাপাশি রাইস ব্র্যান, পাম অয়েলের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সরকার চেষ্টা করছে, বিদেশ থেকে যে ক্যাটাগরিতে পণ্য আমদানিতে সাশ্রয় হবে এবং জনগণ কম মূল্যে ভোজ্য তেল পাবে সেই মাধ্যম ব্যবহার করতে।

বাজারে কতটুকু ফিরবে স্থিতিশীলতা

কম দাম এবং স্থানীয় সরবরাহ ব্যবস্থায় চাপ কমানোয় টিসিবির এ সিদ্ধান্ত বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দামের ওঠানামা, বৈশ্বিক সরবরাহ সংকট এবং অভ্যন্তরীণ বাজারের ভারসাম্য রক্ষা করা সহজ না। তবে বাল্কে সয়াবিন তেল আমদানি করা গেলে একদিকে খরচ কমবে, অন্যদিকে ভোক্তাদের চাহিদা পূরণ করা যাবে। এক কোটি পরিবার টিসিবির সয়াবিন তেল পেলে স্বভাবতই বাজারে চাহিদা কমে আসবে। এতে ভোজ্য তেলের দামে স্থিতিশীলতা ফিরতে পারে।

টিসিবির মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘টিসিবি বোতলের পাশাপাশি বাল্ক আকারে তেল আনার চেষ্টা করছে। এতে যদি খরচ কম পড়ে, তাহলে ব্যাপক পরিমাণে এনে স্থানীয় কোনো প্যাকেজিং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বোতলজাত করে সরবরাহ করা যাবে। এতে সরকারের সাশ্রয় হবে। বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে। ঘাটতিও কমবে।’

এ ছাড়া বাল্ক হিসেবে সয়াবিন তেল আমদানি করতে পারলে সরকারের ভর্তুকিও কমবে। টিসিবির তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ট্রাকে পণ্য বিক্রির জন্য ১ হাজার ১৮১ কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে সরকার। গত অর্থবছরে এই ভর্তুকির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ নানা কারণে ভর্তুকি দিন দিন বাড়ছে। এখন কম দামে সয়াবিন তেল কিনতে পারলে এই ভর্তুকি কিছুটা হলেও কমবে।

টিসিবি কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে ট্রাকসেলের মাধ্যমে সয়াবিন তেল, মসুর ডাল ও চিনি বিক্রি করছে টিসিবি। রমজান মাসে যুক্ত হয় ছোলা ও খেজুর। বিশেষ প্রয়োজনে পেঁয়াজ ও আলুও সরবরাহ করা হয়। আগামী নভেম্বর থেকে চা, লবণ, ডিটারজেন্ট ও দুই ধরনের সাবান যুক্ত করে পাঁচটি নতুন পণ্য বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিষয়:

তেলের দাম
Ad 300x250

সম্পর্কিত