আজ আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস
স্ট্রিম ডেস্ক

আজ আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস। এই দিনটি মূলত স্মরণ করিয়ে দেয় যে প্রতিবন্ধকতা কোনো ব্যক্তির মূল্য বা সক্ষমতার সীমা নির্ধারণ করে না। জাতিসংঘের মতে, প্রতিবন্ধিতা বলতে বোঝায় দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক, মানসিক, বুদ্ধিবৃত্তিক বা ইন্দ্রিয়গত প্রতিবন্ধকতা এবং সমাজের বিভিন্ন বাধার সম্মিলিত প্রভাব, যা একজন মানুষের সমাজে সমানভাবে অংশগ্রহণের সক্ষমতাকে সীমিত করে।
বিশ্বজুড়ে এমন অসংখ্য মানুষ আছেন, যাদের শারীরিক বা ইন্দ্রিয়গত সীমাবদ্ধতা থাকলেও সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, প্রযুক্তি বা সৃজনশীল জগতে তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। কারও চলাচলের সীমাবদ্ধতা ছিল, কেউ দৃষ্টি বা শ্রবণশক্তি হারিয়েছেন, তবুও তাঁরা নিজেদের কাজে থেমে থাকেননি। বরং তাঁরা দেখিয়েছেন, মানুষের সক্ষমতা দেহের সঙ্গে নয়, কাজের ধারাবাহিকতা, যুক্তি, মনন এবং সুযোগের ব্যবহারের সঙ্গে যুক্ত।
বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং, দৃষ্টি–শ্রবণহীন মানুষের ভাষাজগতে নতুন পথ তৈরি করা হেলেন কেলার, শ্রবণশক্তিহীন অবস্থায় সংগীত রচনায় অব্যাহত থাকা বেটোফেন, দীর্ঘ শারীরিক অসুস্থতা নিয়েও শিল্পচর্চায় স্থির থাকা ফ্রিদা কাহলো এবং হুইলচেয়ারের ওপর নির্ভর করেও এক দেশের নেতৃত্ব দেওয়া ফ্র্যাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট—সবাই দেখিয়েছেন প্রতিবন্ধকতা মানবসম্ভাবনার সীমা নয়। একইভাবে আন্দ্রেয়া বোটচেল্লি, মারলি ম্যাটলিন, নিক ভুইসিক, টেম্পল গ্র্যান্ডিন, অস্কার পিস্টোরিয়াস, ক্রিস্টি ব্রাউন, স্টিভি ওয়ান্ডার, হেবেন গিরমা, স্টিফেন উইল্টশায়ার ও অ্যারন ফোথেরিংহামের মতো মানুষরা তাঁদের নিজ নিজ কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন, সাফল্য কোনো ইন্দ্রিয়ের ঘাটতির ওপর নির্ভর করে না; বরং সঠিক সহায়তা ও ধারাবাহিক প্রয়াসই মানুষের প্রকৃত শক্তি নির্ধারণ করে।
স্টিফেন হকিং-এর গল্প অনেকের কাছে ‘অসাধারণ সংগ্রাম’ হিসেবে বলা হয়, কিন্তু তাঁর জীবন বুঝতে গেলে প্রথমেই জানা দরকার তিনি মূলত একজন বিজ্ঞানী ছিলেন। বিশের কোঠায় থাকা অবস্থায় তাঁর মোটর নিউরন ডিজিজ ধরা পড়ে। মজার বিষয় হলো, তার গবেষণাজীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর বেশিরভাগই হয়েছে এই পক্ষাঘাতগ্রস্ত অবস্থায়।

চিকিৎসকেরা বলেছিলেন, তাঁর সামনে হয়তো আর বেশি সময় নেই। কিন্তু হকিং সেই পূর্বানুমান ভুল প্রমাণ করে আরো পাঁচ দশক সক্রিয় ছিলেন। ধীরে ধীরে চলাচল, কথা বলা এবং স্বাভাবিক শারীরিক ক্ষমতা সবই ক্ষীণ হতে থাকে, কিন্তু চিন্তাশক্তি ও গবেষণা এসবের কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি।
গবেষণা করতে করতেই তিনি পদার্থবিজ্ঞানের কসমোলজি নিয়ে তাঁর ধারণা তুলে ধরেন। ব্ল্যাক হোল কীভাবে শক্তি বিকিরণ করতে পারে, সেই ধারণা আগে কারও ছিল না। গণিত, তত্ত্ব ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের সংযোগ ঘটিয়ে তিনি মহাবিশ্বকে নতুনভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন।
হকিং-এর জীবনের একটি বড় বাস্তব শিক্ষা হলো শারীরিক সীমাবদ্ধতার কারণে কেউ পেশাগত বা বৌদ্ধিক কাজে পিছিয়ে থাকবে, এটা কোনোভাবেই স্বাভাবিক হওয়া উচিত নয়। তিনি স্পিচ-সিনথেসাইজার ব্যবহার করে কথা বলতেন, হুইলচেয়ারের সঙ্গে যুক্ত কম্পিউটার দিয়ে লেখালেখি করতেন, সহায়তাকারী কর্মীর ওপর নির্ভর করতেন। এটাই ছিল তাঁর স্বাভাবিক ব্যবস্থা।
লুডভিগ ফান বেটোফেন বিখ্যাত জার্মান সুরকার ও পিয়ানোবাদক। জীবনের শুরুতে সম্পূর্ণ স্বাভাবিকভাবে সংগীতচর্চা করতেন, কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর শ্রবণশক্তি কমতে থাকে। প্রথমে হালকা শব্দ শুনতে অসুবিধা হতো, পরে কথোপকথন বুঝতে সমস্যা, আর শেষ দিকে তিনি প্রায় পুরোপুরি বধির হয়ে যান। একজন সুরকারের জন্য এটি খুব বড় ধাক্কা। কারণ সংগীত তো মূলত শুনে বোঝা যায়। কিন্তু বেটোফেন এখানে ভিন্নভাবে পথ খুঁজে নেন। তিনি পিয়ানো বাজানোর সময় হাত ও শরীরে যে কম্পন অনুভব হতো, সেটাকে সুর বোঝার উপায় হিসেবে ব্যবহার করতেন। পাশাপাশি তিনি নোটেশন নিয়ে এতটাই দক্ষ ছিলেন যে কাগজে লেখা নোট দেখেই পুরো সুর কল্পনা করতে পারতেন।

শ্রবণশক্তির সমস্যার কারণে বেটোফেনের কাজের ধরন বদলে যায়। বাহিরের শব্দের ওপর নির্ভর না করে তিনি নিজের ভেতরের সংগীতবোধকে কাজে লাগান। আশ্চর্যের বিষয় হলো, সবচেয়ে বিখ্যাত কম্পোজিশন তৈরির সময় তিনি প্রায় কিছুই শুনতে পেতেন না। তিনি অর্কেস্ট্রাকে নিজের তৈরি সুর বাজাতে দেখে কেমন লাগছে, তা তিনি শুনতে পেতেন না, কিন্তু জানতেন তিনি ঠিক কাজটাই করেছেন।
ফ্রিদা কাহলোর জীবন মূলত শারীরিক সীমাবদ্ধতা, ব্যথা এবং দীর্ঘ অসুস্থতার সঙ্গে সহাবস্থানের গল্প। ছোটবেলায় পোলিওতে আক্রান্ত হওয়া এবং অল্প বয়সে ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনার কারণে তাঁর শরীরে বহু স্থায়ী আঘাত তৈরি হয়। দীর্ঘদিন বিছানায় থাকতে হয়েছে, অসংখ্য অস্ত্রোপচার হয়েছে, চলাফেরাতেও সীমাবদ্ধতা ছিল। কিন্তু ফ্রিদা এসবকে কোনোদিন লুকিয়ে রাখেননি। তিনি নিজের বাস্তব ব্যথা, দুর্বলতা, সম্পর্কের সংকট, পরিচয় এসবকেই শিল্পের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন।

তাঁর আত্মপ্রতিকৃতিগুলোর বিশেষত্ব এখানেই যে তিনি কখনো নিজেকে ‘অসাধারণ’ হিসেবে দেখাননি, আবার নিজেকে ভয় বা অসহায়তার প্রতীকও বানাননি। বরং একজন সাধারণ মানুষের মতোই, নিজের অভিজ্ঞতাকে সরাসরি ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি একাধারে একজন নারীবাদী, একজন প্রতিবন্ধী শিল্পী, একজন মেক্সিকান রাজনৈতিক সক্রিয় কর্মী এবং এক অন্তর থেকে ফুটে ওঠা চিত্রশিল্পী।
ফ্রিদা দেখিয়েছেন প্রতিবন্ধকতা মানুষের পরিচয়ের একটি অংশ, কিন্তু সেটাই মানুষকে সংজ্ঞায়িত করে না। সৃষ্টি করা, কাজ করা, নিজের গল্প বলা—এসবের অধিকার সবারই আছে। তাঁর শিল্প আজও বিশ্বজুড়ে আলোচিত হয়, কারণ তিনি সত্যিকারের অভিজ্ঞতাকে লুকাননি; তাকে রূপান্তরিত করেছেন।
হেলেন কেলারের জন্ম হয়েছিল উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে, যে সময়টিতে দৃষ্টি এবং শ্রবণ প্রতিবন্ধী মানুষদের নিয়ে সমাজে ভুল ধারণাই ছিল বেশি। শিক্ষা বা ব্যক্তিগত বিকাশের সুযোগ তখন প্রায় ছিল না। দুই বছর বয়সে অসুখের কারণে হেলেন দৃষ্টি ও শ্রবণ দুটোই হারান। এর ফলে তাঁর চারপাশের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। পরিবারের সদস্যরা তাঁকে ভালোবাসলেও তাঁকে শেখানোর মতো কোনো পদ্ধতি তাঁরা জানতেন না।

হেলেনের জীবনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল তাঁর শিক্ষক অ্যানি সুলিভানের। সুলিভান নিজেও আংশিক দৃষ্টিহীন ছিলেন, তাই সীমাবদ্ধতার অভিজ্ঞতা তাঁর নিজেরও ছিল। তিনিই প্রথম হেলেনকে শেখান, হাতের তালুতে স্পর্শই হতে পারে ভাষা শেখার পদ্ধতি। পরে স্পর্শ-ভিত্তিক সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ, ব্রেইল, এমনকি ঠোঁটের নড়াচড়া স্পর্শ করে বোঝার মতো পদ্ধতিও তাঁর দক্ষতার অংশ হয়ে ওঠে।
শিক্ষা পাওয়ার পরে হেলেন শুধু ব্যক্তিগত উন্নতিতেই থেমে থাকেননি। তিনি উচ্চশিক্ষা শেষ করেন যা পৃথিবীতে দৃষ্টি-শ্রবণ দুটোই হারানো কারো জন্য তখন প্রায় অসম্ভব বলে ধরা হতো। লেখালেখি শুরু করেন, বই ও প্রবন্ধ প্রকাশ করেন, জনসভায় বক্তৃতা দেন। হেলেন কেলার সমাজ-রাজনীতি নিয়েও স্পষ্ট অবস্থান রাখতেন। নারী অধিকার, প্রতিবন্ধী মানুষের শিক্ষা, শ্রমিক অধিকার, ভোটাধিকার—এসব বিষয় নিয়ে তিনি নিয়মিত লেখালেখি ও প্রচারণা চালিয়েছেন। তাঁর সময়ে প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার বলতে আলাদা করে কিছু ছিল না; কিন্তু হেলেন দেখিয়েছেন, শিক্ষা ও সুযোগ দিলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও সমাজকে প্রভাবিত করতে পারেন, নীতিনির্ধারণেও ভূমিকা রাখতে পারেন। দৃষ্টিহীন কিংবা বধির হওয়া তাঁর যুক্তি বা মানবিক অবস্থানকে কোনোভাবেই দুর্বল করেনি।
ফ্র্যাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট যুক্তরাষ্ট্রের ৩২তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ৩৯ বছর বয়সে তিনি পোলিওতে আক্রান্ত হন, যার ফলে তাঁর দুটি পা স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যায়। জীবনের বাকি সময় তিনি মূলত হুইলচেয়ার, ব্রেস, এবং সহায়ক যন্ত্র ব্যবহার করতেন। জনসমক্ষে তাঁকে খুব কমই হুইলচেয়ারে দেখা যেত, কারণ তখনকার রাজনৈতিক-সামাজিক পরিস্থিতিতে নেতার শারীরিক সীমাবদ্ধতাকে দুর্বলতা হিসেবে দেখা হতো। কিন্তু শারীরিক সীমাবদ্ধতা তাঁর নেতৃত্ব, সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা রাষ্ট্রনীতি পরিচালনায় কোনো বাধা তৈরি করেনি।

রুজভেল্টের মেয়াদকালে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বড় দুটি সংকটের মুখোমুখি হয়—মহামন্দা ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। মহামন্দা মোকাবিলায় তিনি চালু করেন ‘নিউ ডিল’, যা কর্মসংস্থান, অবকাঠামো, সামাজিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তন আনে। পরে যুদ্ধের সময় তিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, জোট গঠন এবং কৌশলগত সিদ্ধান্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। যুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্বব্যবস্থার ধারণা গঠনে তাঁর অবদান জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার ভিত্তি তৈরি করে।

আজ আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস। এই দিনটি মূলত স্মরণ করিয়ে দেয় যে প্রতিবন্ধকতা কোনো ব্যক্তির মূল্য বা সক্ষমতার সীমা নির্ধারণ করে না। জাতিসংঘের মতে, প্রতিবন্ধিতা বলতে বোঝায় দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক, মানসিক, বুদ্ধিবৃত্তিক বা ইন্দ্রিয়গত প্রতিবন্ধকতা এবং সমাজের বিভিন্ন বাধার সম্মিলিত প্রভাব, যা একজন মানুষের সমাজে সমানভাবে অংশগ্রহণের সক্ষমতাকে সীমিত করে।
বিশ্বজুড়ে এমন অসংখ্য মানুষ আছেন, যাদের শারীরিক বা ইন্দ্রিয়গত সীমাবদ্ধতা থাকলেও সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, প্রযুক্তি বা সৃজনশীল জগতে তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। কারও চলাচলের সীমাবদ্ধতা ছিল, কেউ দৃষ্টি বা শ্রবণশক্তি হারিয়েছেন, তবুও তাঁরা নিজেদের কাজে থেমে থাকেননি। বরং তাঁরা দেখিয়েছেন, মানুষের সক্ষমতা দেহের সঙ্গে নয়, কাজের ধারাবাহিকতা, যুক্তি, মনন এবং সুযোগের ব্যবহারের সঙ্গে যুক্ত।
বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং, দৃষ্টি–শ্রবণহীন মানুষের ভাষাজগতে নতুন পথ তৈরি করা হেলেন কেলার, শ্রবণশক্তিহীন অবস্থায় সংগীত রচনায় অব্যাহত থাকা বেটোফেন, দীর্ঘ শারীরিক অসুস্থতা নিয়েও শিল্পচর্চায় স্থির থাকা ফ্রিদা কাহলো এবং হুইলচেয়ারের ওপর নির্ভর করেও এক দেশের নেতৃত্ব দেওয়া ফ্র্যাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট—সবাই দেখিয়েছেন প্রতিবন্ধকতা মানবসম্ভাবনার সীমা নয়। একইভাবে আন্দ্রেয়া বোটচেল্লি, মারলি ম্যাটলিন, নিক ভুইসিক, টেম্পল গ্র্যান্ডিন, অস্কার পিস্টোরিয়াস, ক্রিস্টি ব্রাউন, স্টিভি ওয়ান্ডার, হেবেন গিরমা, স্টিফেন উইল্টশায়ার ও অ্যারন ফোথেরিংহামের মতো মানুষরা তাঁদের নিজ নিজ কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন, সাফল্য কোনো ইন্দ্রিয়ের ঘাটতির ওপর নির্ভর করে না; বরং সঠিক সহায়তা ও ধারাবাহিক প্রয়াসই মানুষের প্রকৃত শক্তি নির্ধারণ করে।
স্টিফেন হকিং-এর গল্প অনেকের কাছে ‘অসাধারণ সংগ্রাম’ হিসেবে বলা হয়, কিন্তু তাঁর জীবন বুঝতে গেলে প্রথমেই জানা দরকার তিনি মূলত একজন বিজ্ঞানী ছিলেন। বিশের কোঠায় থাকা অবস্থায় তাঁর মোটর নিউরন ডিজিজ ধরা পড়ে। মজার বিষয় হলো, তার গবেষণাজীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর বেশিরভাগই হয়েছে এই পক্ষাঘাতগ্রস্ত অবস্থায়।

চিকিৎসকেরা বলেছিলেন, তাঁর সামনে হয়তো আর বেশি সময় নেই। কিন্তু হকিং সেই পূর্বানুমান ভুল প্রমাণ করে আরো পাঁচ দশক সক্রিয় ছিলেন। ধীরে ধীরে চলাচল, কথা বলা এবং স্বাভাবিক শারীরিক ক্ষমতা সবই ক্ষীণ হতে থাকে, কিন্তু চিন্তাশক্তি ও গবেষণা এসবের কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি।
গবেষণা করতে করতেই তিনি পদার্থবিজ্ঞানের কসমোলজি নিয়ে তাঁর ধারণা তুলে ধরেন। ব্ল্যাক হোল কীভাবে শক্তি বিকিরণ করতে পারে, সেই ধারণা আগে কারও ছিল না। গণিত, তত্ত্ব ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের সংযোগ ঘটিয়ে তিনি মহাবিশ্বকে নতুনভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন।
হকিং-এর জীবনের একটি বড় বাস্তব শিক্ষা হলো শারীরিক সীমাবদ্ধতার কারণে কেউ পেশাগত বা বৌদ্ধিক কাজে পিছিয়ে থাকবে, এটা কোনোভাবেই স্বাভাবিক হওয়া উচিত নয়। তিনি স্পিচ-সিনথেসাইজার ব্যবহার করে কথা বলতেন, হুইলচেয়ারের সঙ্গে যুক্ত কম্পিউটার দিয়ে লেখালেখি করতেন, সহায়তাকারী কর্মীর ওপর নির্ভর করতেন। এটাই ছিল তাঁর স্বাভাবিক ব্যবস্থা।
লুডভিগ ফান বেটোফেন বিখ্যাত জার্মান সুরকার ও পিয়ানোবাদক। জীবনের শুরুতে সম্পূর্ণ স্বাভাবিকভাবে সংগীতচর্চা করতেন, কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর শ্রবণশক্তি কমতে থাকে। প্রথমে হালকা শব্দ শুনতে অসুবিধা হতো, পরে কথোপকথন বুঝতে সমস্যা, আর শেষ দিকে তিনি প্রায় পুরোপুরি বধির হয়ে যান। একজন সুরকারের জন্য এটি খুব বড় ধাক্কা। কারণ সংগীত তো মূলত শুনে বোঝা যায়। কিন্তু বেটোফেন এখানে ভিন্নভাবে পথ খুঁজে নেন। তিনি পিয়ানো বাজানোর সময় হাত ও শরীরে যে কম্পন অনুভব হতো, সেটাকে সুর বোঝার উপায় হিসেবে ব্যবহার করতেন। পাশাপাশি তিনি নোটেশন নিয়ে এতটাই দক্ষ ছিলেন যে কাগজে লেখা নোট দেখেই পুরো সুর কল্পনা করতে পারতেন।

শ্রবণশক্তির সমস্যার কারণে বেটোফেনের কাজের ধরন বদলে যায়। বাহিরের শব্দের ওপর নির্ভর না করে তিনি নিজের ভেতরের সংগীতবোধকে কাজে লাগান। আশ্চর্যের বিষয় হলো, সবচেয়ে বিখ্যাত কম্পোজিশন তৈরির সময় তিনি প্রায় কিছুই শুনতে পেতেন না। তিনি অর্কেস্ট্রাকে নিজের তৈরি সুর বাজাতে দেখে কেমন লাগছে, তা তিনি শুনতে পেতেন না, কিন্তু জানতেন তিনি ঠিক কাজটাই করেছেন।
ফ্রিদা কাহলোর জীবন মূলত শারীরিক সীমাবদ্ধতা, ব্যথা এবং দীর্ঘ অসুস্থতার সঙ্গে সহাবস্থানের গল্প। ছোটবেলায় পোলিওতে আক্রান্ত হওয়া এবং অল্প বয়সে ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনার কারণে তাঁর শরীরে বহু স্থায়ী আঘাত তৈরি হয়। দীর্ঘদিন বিছানায় থাকতে হয়েছে, অসংখ্য অস্ত্রোপচার হয়েছে, চলাফেরাতেও সীমাবদ্ধতা ছিল। কিন্তু ফ্রিদা এসবকে কোনোদিন লুকিয়ে রাখেননি। তিনি নিজের বাস্তব ব্যথা, দুর্বলতা, সম্পর্কের সংকট, পরিচয় এসবকেই শিল্পের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন।

তাঁর আত্মপ্রতিকৃতিগুলোর বিশেষত্ব এখানেই যে তিনি কখনো নিজেকে ‘অসাধারণ’ হিসেবে দেখাননি, আবার নিজেকে ভয় বা অসহায়তার প্রতীকও বানাননি। বরং একজন সাধারণ মানুষের মতোই, নিজের অভিজ্ঞতাকে সরাসরি ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি একাধারে একজন নারীবাদী, একজন প্রতিবন্ধী শিল্পী, একজন মেক্সিকান রাজনৈতিক সক্রিয় কর্মী এবং এক অন্তর থেকে ফুটে ওঠা চিত্রশিল্পী।
ফ্রিদা দেখিয়েছেন প্রতিবন্ধকতা মানুষের পরিচয়ের একটি অংশ, কিন্তু সেটাই মানুষকে সংজ্ঞায়িত করে না। সৃষ্টি করা, কাজ করা, নিজের গল্প বলা—এসবের অধিকার সবারই আছে। তাঁর শিল্প আজও বিশ্বজুড়ে আলোচিত হয়, কারণ তিনি সত্যিকারের অভিজ্ঞতাকে লুকাননি; তাকে রূপান্তরিত করেছেন।
হেলেন কেলারের জন্ম হয়েছিল উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে, যে সময়টিতে দৃষ্টি এবং শ্রবণ প্রতিবন্ধী মানুষদের নিয়ে সমাজে ভুল ধারণাই ছিল বেশি। শিক্ষা বা ব্যক্তিগত বিকাশের সুযোগ তখন প্রায় ছিল না। দুই বছর বয়সে অসুখের কারণে হেলেন দৃষ্টি ও শ্রবণ দুটোই হারান। এর ফলে তাঁর চারপাশের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। পরিবারের সদস্যরা তাঁকে ভালোবাসলেও তাঁকে শেখানোর মতো কোনো পদ্ধতি তাঁরা জানতেন না।

হেলেনের জীবনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল তাঁর শিক্ষক অ্যানি সুলিভানের। সুলিভান নিজেও আংশিক দৃষ্টিহীন ছিলেন, তাই সীমাবদ্ধতার অভিজ্ঞতা তাঁর নিজেরও ছিল। তিনিই প্রথম হেলেনকে শেখান, হাতের তালুতে স্পর্শই হতে পারে ভাষা শেখার পদ্ধতি। পরে স্পর্শ-ভিত্তিক সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ, ব্রেইল, এমনকি ঠোঁটের নড়াচড়া স্পর্শ করে বোঝার মতো পদ্ধতিও তাঁর দক্ষতার অংশ হয়ে ওঠে।
শিক্ষা পাওয়ার পরে হেলেন শুধু ব্যক্তিগত উন্নতিতেই থেমে থাকেননি। তিনি উচ্চশিক্ষা শেষ করেন যা পৃথিবীতে দৃষ্টি-শ্রবণ দুটোই হারানো কারো জন্য তখন প্রায় অসম্ভব বলে ধরা হতো। লেখালেখি শুরু করেন, বই ও প্রবন্ধ প্রকাশ করেন, জনসভায় বক্তৃতা দেন। হেলেন কেলার সমাজ-রাজনীতি নিয়েও স্পষ্ট অবস্থান রাখতেন। নারী অধিকার, প্রতিবন্ধী মানুষের শিক্ষা, শ্রমিক অধিকার, ভোটাধিকার—এসব বিষয় নিয়ে তিনি নিয়মিত লেখালেখি ও প্রচারণা চালিয়েছেন। তাঁর সময়ে প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার বলতে আলাদা করে কিছু ছিল না; কিন্তু হেলেন দেখিয়েছেন, শিক্ষা ও সুযোগ দিলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও সমাজকে প্রভাবিত করতে পারেন, নীতিনির্ধারণেও ভূমিকা রাখতে পারেন। দৃষ্টিহীন কিংবা বধির হওয়া তাঁর যুক্তি বা মানবিক অবস্থানকে কোনোভাবেই দুর্বল করেনি।
ফ্র্যাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট যুক্তরাষ্ট্রের ৩২তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ৩৯ বছর বয়সে তিনি পোলিওতে আক্রান্ত হন, যার ফলে তাঁর দুটি পা স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যায়। জীবনের বাকি সময় তিনি মূলত হুইলচেয়ার, ব্রেস, এবং সহায়ক যন্ত্র ব্যবহার করতেন। জনসমক্ষে তাঁকে খুব কমই হুইলচেয়ারে দেখা যেত, কারণ তখনকার রাজনৈতিক-সামাজিক পরিস্থিতিতে নেতার শারীরিক সীমাবদ্ধতাকে দুর্বলতা হিসেবে দেখা হতো। কিন্তু শারীরিক সীমাবদ্ধতা তাঁর নেতৃত্ব, সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা রাষ্ট্রনীতি পরিচালনায় কোনো বাধা তৈরি করেনি।

রুজভেল্টের মেয়াদকালে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বড় দুটি সংকটের মুখোমুখি হয়—মহামন্দা ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। মহামন্দা মোকাবিলায় তিনি চালু করেন ‘নিউ ডিল’, যা কর্মসংস্থান, অবকাঠামো, সামাজিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তন আনে। পরে যুদ্ধের সময় তিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, জোট গঠন এবং কৌশলগত সিদ্ধান্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। যুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্বব্যবস্থার ধারণা গঠনে তাঁর অবদান জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার ভিত্তি তৈরি করে।

‘ফাদার, আপনি চলে যান। ওরা আপনাকে মেরে ফেলবে।’ শেলাবুনিয়ার গ্রামবাসী অনুরোধ করেন তাঁকে। শান্ত চোখে তাকালেন তিনি। ভাঙা ভাঙা বাংলায় বললেন, ‘আমার সন্তানেরা বিপদে, আর আমি বাবা হয়ে পালিয়ে যাব? আমি কোথাও যাব না। তোমাদের সঙ্গেই থাকব, তোমাদের সঙ্গেই মরব।’
৩ ঘণ্টা আগে
৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১। প্যারিসের অরলি বিমানবন্দর। হাড়কাঁপানো শীতের দুপুর। রানওয়েতে দাঁড়িয়ে আছে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের বিশাল বোয়িং ৭২০ বিমান, ফ্লাইট ৭১২। গন্তব্য করাচি হয়ে ঢাকা। সিটবেল্ট বেঁধে তৈরি যাত্রীরা। ইঞ্জিনে থ্রাস্ট দেওয়ার অপেক্ষায় পাইলট।
১ দিন আগে
এআই চ্যাটবট খুলে প্রথম উত্তরটাই আমরা এখন ‘ঠিক’ ধরে নিই। দ্রুত সমাধান আমাদের তৃপ্তি দেয় ঠিকই, কিন্তু গবেষণা বলছে এই ভরসাই ধীরে ধীরে কমিয়ে দিচ্ছে আমাদের নিজের ভাবনা, যাচাই আর সমালোচনামূলক চিন্তার ক্ষমতা।
১ দিন আগে
শীত এসে গেছে। তুলনামূলক আরামদায়ক হলেও ঠান্ডা, সর্দি-কাশি, জ্বর হওয়ার আশঙ্কা এ সময়ে অনেক বেশি। কিন্তু এমন কেন হয়, প্রতিকারই-বা কী? পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ও ভাইস প্রিন্সিপাল ডা. ফারুক আহাম্মদ।
২ দিন আগে