leadT1ad

সয়াবিন তেলের দাম নিয়ে সরকার-ব্যবসায়ী মুখোমুখি

প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ১৭
সয়াবিন তেল। সংগৃহীত ছবি

ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে আবার মুখোমুখি অবস্থানে সরকার ও ব্যবসায়ীরা। ঘোষণা ছাড়াই ভোক্তা পর্যায়ে সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়েছে আমদানিকারক ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান। এবার এক লাফে লিটারে বোতলজাতে বাড়ানো হয়েছে ৯ টাকা। আর খোলা তেলে বেড়েছে ৫ টাকা।

সরকার বলছে, এই দাম বাড়ানোর কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। আলোচনা করে এর সমাধান করা হবে। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘কোম্পানিগুলো একত্রিত হয়ে তেলের দাম বাড়িয়েছে। তারা যা করেছেন, তার আইনগত কোনো ভিত্তি নেই।’

কোম্পানিগুলোর দাবি, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ছে। সরকারকে জানিয়েই তারা মূল্য সমন্বয় করেছেন। এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের কোনো সম্মতি নেওয়া হয়নি। আমাদের সঙ্গে তাদের কোনো কথা হয়নি। আমরা আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করেছি। এখন আমরা আলোচনা করে কর্মপন্থা ঠিক করব। তারা (ব্যবসায়ীরা) যা করেছে, তার আইনগত কোনো ভিত্তি নেই।’

শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘মঙ্গলবারও ক্রয় কমিটিতে ৫০ লাখ লিটার সয়াবিন ও এক কোটি লিটার রাইসব্রান তেল কেনার অনুমোদন দিয়েছি। বর্তমানে যে দামে বাজারে তেল রয়েছে, এই তেল তার চেয়ে ২০ টাকা কমে কেনা হবে। কাজেই বাজারে বেশি দামে তেল বিক্রির কোনো যৌক্তিক কারণ আমি দেখছি না।’

কোম্পানিগুলোর ওপর সরকারের কী নিয়ন্ত্রণ নেই– এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘নিয়ন্ত্রণ আছে কিনা, তা আমাদের পদক্ষেপের মাধ্যমে জানতে পারবেন। নিয়ন্ত্রণ নিশ্চয়ই রয়েছে।’ নিয়ন্ত্রণ থাকলে মন্ত্রণালয়কে পাশ কাটিয়ে দাম বাড়াল কীভাবে– প্রশ্নে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘সেটি ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞাসা করুন। আমরা পদক্ষেপ নেব; আলোচনায় বসেছি। এর আগেও তারা দাম বাড়িয়েছিল, আমরা একমত পোষণ না করায় বাড়াতে পারেনি।’ আইন লঙ্ঘন করে থাকলে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

এর আগে গত অক্টোবরে হঠাৎ করে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেন ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, ট্যারিফ কমিশন, প্রতিযোগিতা কমিশন, দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), বাংলাদেশ ব্যাংক– সবাই মিলেই মূল্যায়নটা হয়। এটা হচ্ছে আইন। ইচ্ছে করলেই কেউ ভোজ্যতেলের দাম বাড়াতে পারে না।

তিনি বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে আমাদেরও বাড়াতে হবে। কমলে আমাদেরও কমাতে হবে। এখানে কারও কিছু করার নেই। এটা তো কারও ঘরের জিনিস না। বাজারের খবর কী, সেটা বিশ্বের সবাই জানেন।

বুধবার সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ঋণপত্র (এলসি) খুলে যে মালপত্র আনা হচ্ছে, এটার মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করা না হলে লোকসানের কারণে ভবিষ্যতে আবার বুকিং করতে পারব না। বুকিং করতে না পারলে তেলের সংকট হবে। তখন ১০০ টাকা বেশি দিয়েও তেল পাওয়া যাবে না। এ জন্য নিয়মিত আইনটা অনুসরণ করতে হবে।

১৫ দিন বা এক মাস পরপর দাম সমন্বয় করলে সুবিধা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, এটা করা গেলে একসঙ্গে এত দাম বাড়ে না। দু-তিন টাকা করে বাড়ে। গেল দু-তিন মাস দাম সমন্বয় হয়নি বলে, এবার বেশি বেড়েছে। গত আগস্টে আন্তর্জাতিক বাজারে পাম তেলের দাম কমেছিল। আমরাও ১৯ টাকা কমিয়েছি।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) জ্যেষ্ঠ গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই সরকার ও ভোজ্যতেলের আমদানিকারকরা বসে দাম নির্ধারণ করেন। এ ক্ষেত্রে উৎপাদক বা সরবরাহকারীদের খরচ মিলিয়ে এটা নির্ধারণ করা হয়। ব্যবসায়ীরা সরকারি নির্দেশনার বাইরে এককভাবে এটা করলে, পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কারণ, ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণ করতে হবে। আর সরকার তো একটা আইনি কাঠামোর মধ্যে চলে।

আইন কী বলছে

অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৫৬-এর ধারা ৩-এ বলা হয়েছে, ‘সরকার, যতদূর কোনো অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের সরবরাহ বজায় রাখার বা বৃদ্ধির জন্য অথবা ন্যায্যমূল্যে ন্যায্যসংগত বিতরণ ও প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় বা সমীচীন বলিয়া প্রতীয়মান হবে, প্রজ্ঞাপিত আদেশের মাধ্যমে সেই পণ্যের উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, রক্ষণ, মজুদ, চলাচল, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ, হস্তান্তর, অর্জন, ব্যবহার বা ভোগ এবং ব্যবসা ও বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ বা নিষিদ্ধ করার বিধান করতে পারবে।’ একই ধারার উপধারা (খ)-এ বলা হয়েছে, ‘কোনো অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ক্রয় বা বিক্রয়ের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে সরকার।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত