leadT1ad

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নবীনবরণে র‍্যাগিংয়ের অভিযোগ

স্ট্রিম সংবাদদাতা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০: ০১
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। সংগৃহীত ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) সিনিয়রদের র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ এনেছেন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা। ভুক্তভোগীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৫৪ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী।

গতকাল রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিনেই নবীনবরণের পর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ক্লাসরুমে পরিচিত হওয়ার নামে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের টানা আড়াই ঘণ্টা ক্লাসরুমে আটকে রেখে অকথ্য ভাষা ব্যবহার করে মানসিক চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁরা।

অভিযোগ অনুযায়ী, ৫৩ ব্যাচের প্রায় ১৮-২০ জন সিনিয়র শিক্ষার্থী এবং ৫২ ব্যাচের কয়েকজন শিক্ষার্থী এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নবীনবরণ শেষে সিনিয়ররা আমাদের একটি রুমে ডেকে আনেন। এসময় ৫৩ ব্যাচের কয়েকজন সিনিয়রের নেতৃত্বে কয়েকজন নারী সহপাঠী ও ৫২ ব্যাচের কয়েকজন শিক্ষার্থী ম্যানার শেখানোর নামে হুমকি ও ভয় দেখায়।

তারা আরও জানান, সেখানেই দুইজন নারী শিক্ষার্থী কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং ছেলেরা ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৫৪ ব্যাচের এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, শিক্ষকদের বক্তব্য শেষ হলে কয়েকজন সিনিয়র ব্রেকের পর দেড়টার দিকে ডিপার্টমেন্টে থাকতে বলে। এসময় আমাদের ব্যাচের ৬৮ জন শিক্ষার্থীকেই থাকতে বলা হয়। এরপর দেড়টার দিকে ১৫-২০ জন সিনিয়র রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দেয়। সবাই উপস্থিত না থাকায় তারা আমাদের শ্রেণি প্রতিনিধিকে ধমক দেয়। একপর্যায়ে তারা আমাদের গালিগালাজ শুরু করে। আমাদের ছেলে সহপাঠীদের দাঁড় করিয়ে নেশাখোর বলে গালি দেয়। চুল কাটার ধরন নিয়েও কটু কথা বলে। একপর্যায়ে একজন শিক্ষক কক্ষে প্রবেশ করলে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। তিনি আমাদের জিজ্ঞেস করেন, আমাদের সঙ্গে কিছু ঘটেছে কি না। তখন আমাদের একজন বান্ধবী কান্নায় ভেঙে পড়ে।

জানা যায়, ওই শিক্ষকের নাম রনি বসাক। তিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্বে আছেন। এ বিষয়ে জানতে তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। তবে ফোন রিসিভ না হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি।

যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁদের মধ্যে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এরকম কিছুই ঘটেনি। সবকিছু সমাধান হয়েছে। এটাকে বাড়ানোর কিছু নাই, কমানোরও কিছু নাই।‘

অভিযোগের বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৫২ ব্যাচের এক শিক্ষার্থী স্ট্রিমকে বলেন, ‘যেমনটা ছড়িয়েছে তেমন কিছুই হয়নি সেখানে। আমরাসহ ৫৩ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা শুধু তাদের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। আমরা আমাদের পরিচয় দিয়েছিলাম ও তাদের পরিচয় জানতে চেয়েছি। তারা ক্যাম্পাসে নতুন হওয়ায় এটাকে র‍্যাগ ভেবেছে। তাছাড়া তাদের সাথে যেনো খারাপ ব্যাবহার না করে এ ব্যাপারে ৫৩ ব্যাচকেও বলেছিলাম।‘

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সজীব বালা বলেন, ‘আমরা এখনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। আমরা এটা সমাধানের জন্য চেষ্টা করছি। লিখিত অভিযোগ পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।‘

এদিকে খোঁজ নিয়ে অভিযুক্তদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের কয়েকজনের নামও এসেছে। এই বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন বাবর স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমি এই মাত্র এই খবরটা শুনলাম। যদি এই ন্যক্কারজনক কাজের সঙ্গে ছাত্রদলের কেউ যুক্ত থাকে তাহলে তদন্ত করে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।‘

তবে নবীন শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, অভিযুক্তরা তাদের জানিয়েছে এসব আচরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতির অংশ এবং এসব নিয়ে কারও বিচার হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, ‘যদি শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে র‍্যাগিংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য প্রমাণ আমরা পাই তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। আইআর বিভাগে যা হয়েছে তা সম্পর্কে বিভাগের চেয়ারম্যান আমাকে অবগত করেছেন। তবে এ বিষয়ে আমরা কোনো অভিযোগপত্র পাইনি। বিভাগের চেয়ারম্যান আমাকে বলেছেন যে তিনি নিজে এবং বিভাগের শিক্ষার্থী কল্যাণ উপদেষ্টা মিলে বিষয়টি মিটমাট করেছেন। আমি এই বিষয়টি অ্যাপ্রিসিয়েট করি। শিক্ষার্থীদের কাছে আমার উপদেশ থাকবে তারা যেন র‍্যাগিংয়ের মত কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকে।‘

Ad 300x250

সম্পর্কিত