leadT1ad

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল: শেখ হাসিনার অপরাধ কী

শেখ হাসিনা নিজের অপরাধ খুঁজে না পেলেও আদালতে ঠিকই জমা পড়েছে তাঁর মানবতাবিরোধী অপরাধের একের পর এক নথি।

আহমেদ আল আমীন
ঢাকা
প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬: ১৫
শেখ হাসিনা নিজের অপরাধ খুঁজে না পেলেও আদালতে ঠিকই জমা পড়েছে তাঁর মানবতাবিরোধী অপরাধের একের পর এক নথি। স্ট্রিম গ্রাফিক

‘আমার অপরাধ কী’—গত বছর জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে গুলি চালিয়ে শত শত ছাত্র-জনতা হত্যার পরও প্রশ্নটি তুলেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পরও করেন একই প্রশ্ন। তবে শেখ হাসিনা নিজের অপরাধ খুঁজে না পেলেও আদালতে ঠিকই জমা পড়েছে তাঁর মানবতাবিরোধী অপরাধের একের পর এক নথি।

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে হত্যাযজ্ঞের নির্দেশ দেওয়া, উসকানিমূলক বক্তব্য, চিকিৎসায় বাধাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের একাধিক ঘটনা ধরে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে।

আজ রোববার তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম মামলায় শেষ ব্যক্তির সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ বিচারাধীন মামলাটিতে শেখ হাসিনার সঙ্গে আসামি তালিকায় ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তবে দোষ স্বীকার করে এ মামলায় রাজসাক্ষী হয়েছেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী মামুন।

শেখ হাসিনা প্রথম তাঁর অপরাধ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন গত বছরের ২৭ জুলাই রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে আন্দোলনে আহতদের দেখতে গিয়ে। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘অপরাধটা কী করেছি? আমার অপরাধ কী? আমার কি এটাই অপরাধ, মানুষের জীবনমান উন্নত করার জন্য কাজ করেছি।’

আলোচিত প্রশ্নটি আসে যখন

শেখ হাসিনা প্রথম তাঁর অপরাধ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন গত বছরের ২৭ জুলাই রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে আন্দোলনে আহতদের দেখতে গিয়ে। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘অপরাধটা কী করেছি? আমার অপরাধ কী? আমার কি এটাই অপরাধ, মানুষের জীবনমান উন্নত করার জন্য কাজ করেছি।’

অথচ ওই বক্তব্যের আগেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং তাঁর নিজ দল আওয়ামী লীগের সশস্ত্র নেতা-কর্মীর গুলিতে প্রাণ হারায় কয়েক শ মানুষ। আহতের সংখ্যা ছিল হাজার হাজার।

এমনকি ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে পালাতে বাধ্য হওয়ার পরও থামেনি তাঁর এই প্রশ্ন। ২০২৪ সালের ১০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে আপলোড করা একটি বক্তব্যে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, ‘তারা বলে, হাসিনার বিচার করবে। কী বিচার করবে, আমি কী অন্যায় করেছি?… আমার হাত দিয়ে তো কোনো খুন হয়নি।’

এ বিষয়ে বিচার সংশ্লিষ্টরা জানান, শেখ হাসিনার হাত দিয়ে হয়তো খুন হয়নি, কিন্তু হত্যার নির্দেশ গেছে তাঁর কাছ থেকেই। তিনিই জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড; আর মাস্টারমাইন্ড কখনও নিজে খুন করে না। সে খুনের নির্দেশ দেয় ও বাস্তবায়ন করে।

শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ অভিযোগপত্র জমা পড়ে চলতি বছরের ১ জুন। বিচার শুরু হয় ১০ জুলাই। তদন্ত সংস্থার অনুসন্ধান ও সাক্ষ্যের ভিত্তিতে মামলাটিতে আসামিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি অভিযোগ আনা হয়েছে।

প্রসিকিউশনের চোখে হাসিনার অপরাধনামা

শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ অভিযোগপত্র জমা পড়ে চলতি বছরের ১ জুন। বিচার শুরু হয় ১০ জুলাই। তদন্ত সংস্থার অনুসন্ধান ও সাক্ষ্যের ভিত্তিতে মামলাটিতে আসামিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি অভিযোগ আনা হয়েছে।

আদালতে দেওয়া অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, জুলাই আন্দোলনে ‘গণহত্যার’ মূল পরিকল্পনাকারী, নির্দেশদাতা ও প্রধান চালিকাশক্তি ছিলেন শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ প্রধানের চেয়ারে বসে তিনিই নিজ দেশের নাগরিকদের হত্যার পরিকল্পনা, ষড়যন্ত্র ও নির্দেশ দেন এবং সহযোগী, সহকর্মী ও অধীনস্তদের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করেন। এই সহযোগী তালিকায় আছেন বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ১৪ দলীয় জোটসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো।

মামলাটির বিষয়ে প্রসিকিউটর (অ্যাডমিন) গাজী এমএইচ তামিম স্ট্রিমকে জানান, গণহত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলাটির কার্যক্রম একেবারেই শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। রোববার তদন্ত কর্মকর্তা জ্যেষ্ঠ পুলিশ সুপার মো. আলমগীরের সাক্ষ্য নেওয়া শুরু হবে; এতে হয়তো দু-তিন দিন লাগতে পারে। পলাতক থাকায় আসামিপক্ষে সাফাই সাক্ষ্যগ্রহণের সুযোগ নেই। এরপর অন্য আইনি ধাপের মধ্য দিয়ে খুব শিগগিরই মামলাটির কার্যক্রম শেষ হবে।

মামলাটির বিষয়ে প্রসিকিউটর (অ্যাডমিন) গাজী এমএইচ তামিম স্ট্রিমকে জানান, গণহত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলাটির কার্যক্রম একেবারেই শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। রোববার তদন্ত কর্মকর্তা জ্যেষ্ঠ পুলিশ সুপার মো. আলমগীরের সাক্ষ্য নেওয়া শুরু হবে; এতে হয়তো দু-তিন দিন লাগতে পারে। পলাতক থাকায় আসামিপক্ষে সাফাই সাক্ষ্যগ্রহণের সুযোগ নেই। এরপর অন্য আইনি ধাপের মধ্য দিয়ে খুব শিগগিরই মামলাটির কার্যক্রম শেষ হবে।

উসকানিমূলক বক্তব্য

প্রসিকিউশনের দৃষ্টিতে শেখ হাসিনার প্রথম অপরাধ, উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলার সময় ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে ওই বক্তব্য দেন তিনি। সেখানে শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোকে অবজ্ঞার পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ ও ‘রাজাকারের নাতি-পুতি’ বলে উল্লেখ করেন। এর মাধ্যমে তিনি আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে ‘রাজাকার’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তাঁদের নির্মূলে প্ররোচনা দেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়, শেখ হাসিনার এই বক্তব্যের পর স্বভাবতই বিক্ষুব্ধ হন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আন্দোলনকারীদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা চালায় ছাত্রলীগের সশস্ত্র নেতা-কর্মী। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে ওই সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আইজিপি চৌধুরী মামুন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি। বরং অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করেন।

এছাড়া আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ তৎকালীন সরকারের মন্ত্রী-এমপি এবং আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোটের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা ওই বক্তব্যে উদ্বুদ্ধ হন। এরপর তাদের নির্দেশে সারা দেশে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালানো হয়। আর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের যে নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার নির্দেশ দেন, সেটিও ওই বক্তব্য থেকেই উদ্বুদ্ধ হয়ে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যে নির্দেশের ধারাবাহিকতায় ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে দেড় হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয় এবং ২৫ হাজারের বেশি মানুষকে গুরুতর জখম করা হয়।

হেলিকপ্টার, ড্রোন প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারে আন্দোলন দমনের নির্দেশ

অভিযোগে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুসারেই আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী মামুন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র (লেথাল উইপন) ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের হত্যা করতে নির্দেশনা দেন এবং কার্যকর করেন। অপরাধের নির্দেশ, সহায়তা, সম্পৃক্ততা ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এই মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে, যা আসামিদের জ্ঞাতসারে হয়েছে।

অভিযোগ প্রমাণে একাধিক অডিও রেকর্ড আদালতে দাখিল করা হয়েছে। এর মধ্যে গত বছরের ১৪ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামালের সঙ্গে ফোনালাপে শেখ হাসিনা ফের আন্দোলনরত শিক্ষর্থীদের ‘রাজাকার’ হিসেবে আখ্যা দেন। এছাড়া আন্দোলনকারীদের ফাঁসি দেওয়া ও গুলি করে হত্যার কথাও বলেন।

এই অভিযোগ প্রমাণে একাধিক অডিও রেকর্ড আদালতে দাখিল করা হয়েছে। এর মধ্যে গত বছরের ১৪ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামালের সঙ্গে ফোনালাপে শেখ হাসিনা ফের আন্দোলনরত শিক্ষর্থীদের ‘রাজাকার’ হিসেবে আখ্যা দেন। এছাড়া আন্দোলনকারীদের ফাঁসি দেওয়া ও গুলি করে হত্যার কথাও বলেন।

এর চারদিন পর ১৮ জুলাই শেখ হাসিনা এবং তাঁর ফুফাত ভাইয়ের ছেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের মধ্যে ফোনালাপ হয়। ওই কথোপকথনেও শেখ হাসিনা আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করার কথা বলেন। এছাড়া ড্রোনের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের অবস্থান শনাক্ত করে আটক এবং তাদের দমাতে হেলিকপ্টার ব্যবহারের নির্দেশের কথা উল্লেখ করেন।

শেখ হাসিনার এসব নির্দেশ বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি পর্যবেক্ষণ করতেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এ বিষয়ে ২৭ জুলাই যাত্রাবাড়ী থানার সামনের একটি ভিডিও আদালতে প্রদর্শন করা হয়। যেখানে পুলিশের ওয়ারি জোনের ডিসি ইকবাল মোবাইলে ধারণ করা—আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যার ভিডিও আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী মামুনকে দেখাচ্ছিলেন। ওই সময় ডিসি ইকবাল বলেন, ‘গুলি করি, মরে একটা, আহত হয় একটা, একটাই যায়, বাকিডি যায় না স্যার, এইডাই আতঙ্ক এবং দুশ্চিন্তার বিষয়।’

আহতদের চিকিৎসায় এবং মৃত্যুর প্রকৃত কারণ প্রকাশে বাধা

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরেকটি গুরুতর অভিযোগ, তাঁর নির্দেশনার কারণে আন্দোলনে আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসায় বাধা দেওয়া হয়। এমনকি গুলিতে নিহতদের মৃত্যু সনদে প্রকৃত কারণ লিখতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ লুকিয়ে ভিন্ন কারণ লিখতে বাধ্য করা হয়। নিহতদের জানাজা এবং কবরস্থ করতেও বাধা দেওয়া হয়। এছাড়া স্বজনের কাছে মৃতদেহ হস্তান্তর না করে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে গণকবরে দাফন এবং মরদেহ গুম করার উদ্দেশ্যে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগও আনা হয়েছে।

গত ৫ আগস্ট ঢাকার অদূরে আশুলিয়া থানার সামনে এবং আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ৬ ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে। তাদের মধ্যে গুলিতে প্রাণ হারানো পাঁচজনের মৃতদেহ পোড়ানো হয় এবং একজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।

অভিযোগে বলা হয়েছে, গত বছরের ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে স্বল্প দূরত্ব থেকে গুলি করে হত্যা করেন পুলিশের এএসআই আমির হোসেন ও কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়। তবে ‘গুলিতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে’ উল্লেখ না করে ‘মাথায় আঘাতজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে’ মর্মে সুরতহাল প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এছাড়া গুলিতে নিহতের তথ্য গোপন করতে ময়নাতদন্তকারী কর্মকর্তাকে চাপ দেন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত চিকিৎসকরা। এজন্য ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক চারবার প্রতিবেদন পরিবর্তনে বাধ্য হন। দায়ী ব্যক্তিদের আড়াল করতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আবু সাঈদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের আসামি করে হত্যা মামলাও করা হয়।

এতে আরও বলা হয়, হত্যা এবং মৃত্যুর প্রকৃত কারণ গোপনের উদ্দেশ্যে ‘সুরতহাল রিপোর্টে মিথ্যা তথ্য সংযোজন’, ‘পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বারবার পরিবর্তন’ এবং ‘মিথ্যা বর্ণনায় মামলা দায়েরের মাধ্যমে অমানবিক আচরণ করা হয়’, যা ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট অনুযায়ী মানবতাবিরোধী অপরাধ।

লাশে আগুন এবং জীবিত অবস্থায় পুড়িয়ে হত্যা

গত ৫ আগস্ট ঢাকার অদূরে আশুলিয়া থানার সামনে এবং আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ৬ ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে। তাদের মধ্যে গুলিতে প্রাণ হারানো পাঁচজনের মৃতদেহ পোড়ানো হয় এবং একজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।

অভিযোগে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার উসকানি, নির্দেশ ও প্ররোচনায় ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি দমনে আশুলিয়া এলাকার সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এবং তৎকালীন ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা আশুলিয়া থানা এলাকায় ছাত্র-জনতাকে গুলি ছুড়ে হত্যা করে। পরে সাজ্জাদ হোসেন সজল, আস-সাবুর, তানজিল মাহমুদ সুজয়, বায়েজীদ বোস্তামী, আবুল হোসেন নামে পাঁচজনের মরদেহে এবং গুরুতর আহত অবস্থায় একজনের শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

‘হত্যা’, ‘নির্যাতন’, ‘মৃত ও জীবিত অবস্থায় আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে হত্যা’র এ ঘটনা ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্টে মানবতাবিরোধী অপরাধ।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল স্ট্রিমকে বলেন, গণহত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিচার চলছে। তারা পলাতক থাকায় আইনজীবী নিয়োগ করেননি। তাদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী রয়েছেন। ন্যায়বিচারের আন্তর্জাতিক মান যেন বজায় থাকে তা দেখতে চাই। ন্যায়বিচার ও সত্য প্রতিষ্ঠিত হোক।

চাঁনখারপুলে ছয়জনকে গুলি করে হত্যা

গত বছরের ৫ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি দমনে শেখ হাসিনার নির্দেশে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হয়। এজন্য রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশমুখে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরই ধারাবাহিকতায় চাঁনখারপুলে কনস্টেবল সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ইমন ও নাসিরুল ইসলামের গুলিতে শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহাদী হাসান জুনায়েদ ওরফে মোস্তাকিন, মো. ইয়াকুব, রাকিব হাওলাদার, মোহাম্মদ ইসমামুল হক এবং মানিক মিয়া ওরফে শাহারিক নিহত হন।

অভিযোগে বলা হয়, শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী মামুনের নির্দেশনায় ওই হামলা হয়। এটি কার্যকর করেন ডিএমপির তৎকালীন কমিশনার হাবিবুর রহমান, যুগ্ম-কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল ও পরিদর্শক আরশাদ হোসেন।

অপরাধের ধরণ হিসেবে ওই ঘটনাকে ‘হত্যা’, ‘নির্দেশ’, ‘প্ররোচনা’, ‘উসকানি’, ‘সহায়তা’, ‘সম্পৃক্ততা’ ও ‘ষড়যন্ত্র’ বলে উল্লেখ করা হয়, যা ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট অনুযায়ী মানবতাবিরোধী অপরাধ।

সার্বিক বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল স্ট্রিমকে বলেন, গণহত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিচার চলছে। তারা পলাতক থাকায় আইনজীবী নিয়োগ করেননি। তাদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী রয়েছেন। ন্যায়বিচারের আন্তর্জাতিক মান যেন বজায় থাকে তা দেখতে চাই। ন্যায়বিচার ও সত্য প্রতিষ্ঠিত হোক।

Ad 300x250

সম্পর্কিত