leadT1ad

নিজ গ্রামে শায়িত হলেন ফায়ার ফাইটার শামীম আহমেদ

আমার সন্তানদের তুমি দেখে রেখো: স্ত্রীকে বলেছিলেন শামীম

গাজীপুরের টঙ্গীতে রাসায়নিক গুদামে আগুন নেভাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া ‘ফায়ার ফাইটার’ শামীম আহমেদ রুকেলকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শায়িত করা হয়েছে। চাকরিতে যোগদানের কয়েক বছর আগে শামীমের বাবা মারা যান। এরপর থেকে তিনি পরিবারের সবার দেখভাল করতেন। তাঁকে ঘিরে পরিবারের অনেক আশা ছিল বলে জানা আত্মীয়-স্বজনেরা।

স্ট্রিম সংবাদদাতা
কেন্দুয়া, নেত্রকোণা
প্রয়াত ফায়ার ফাইটার শামীম আহমেদের ছবি হাতে স্বজনেরা। সংগৃহীত ছবি

গাজীপুরের টঙ্গীতে রাসায়নিক গুদামে আগুন নেভাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া ‘ফায়ার ফাইটার’ শামীম আহমেদ রুকেলকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শায়িত করা হয়েছে। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার মাসকা ইউনিয়নের পিজাহাতী গ্রামে আজ বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

মৃত্যুর আগে স্ত্রী মনিরা আক্তারকে ফায়ার ফাইটার শামীম বলেছিলেন, ‘আমার সন্তানদের তুমি দেখে রেখো, আর আমাকে মাফ করে দিও।’ স্বামীকে শেষ বিদায়ের আগে এই কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন মনিরা।

জানাজার আগে শামীম আহমেদকে ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়া হয় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. এমদাদুল হক তালুকদার, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীসহ স্থানীয় লোকজন। রাজনীতিকদের মধ্যে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ড. রফিকুল ইসলাম হিলালীসহ অন্যরা জানাজায় অংশ নেন ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।

ফায়ার ফাইটার শামীম আহমেদের কফিনে রাষ্ট্রীয় শ্রদ্ধা। স্ট্রিম ছবি
ফায়ার ফাইটার শামীম আহমেদের কফিনে রাষ্ট্রীয় শ্রদ্ধা। স্ট্রিম ছবি

দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে হারালো পরিবার

চাকরিতে যোগদানের কয়েক বছর আগে শামীমের বাবা মারা যান। এরপর থেকে তিনি পরিবারের সবার দেখভাল করতেন। তাঁকে ঘিরে পরিবারের অনেক আশা ছিল বলে জানা আত্মীয়-স্বজনেরা।

বড় ভাই সবুজ মিয়া জানান, শামীমের স্ত্রী মনিরা আক্তার এবং তিন শিশু সন্তান নাবিল (১১), হুমায়রা আক্তার (৯) ও ওহী আক্তার (৫) রেখে গেছেন। তাঁর মৃত্যুতে পরিবারের একমাত্র নির্ভরশীল ব্যক্তিকে হারিয়েছেন তাঁরা।

জানাজায় অংশ নিতে আসা লোকজন জানান, কৃষক পরিবারের সন্তান শামীম আহমেদ। ছয় ভাই ও এক বোনের মধ্যে একমাত্র তিনি ছিলেন একমাত্র সরকারি চাকরিজীবী। ছোটবেলা থেকেই পরোপকারী, বন্ধু-বৎসল ও বিনয়ী স্বভাবের ছিলেন তিনি।

শ্রদ্ধা জানাতে এলাকাবাসীর ভীড়

প্রায় ২২ বছর ধরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে কর্মরত থেকে অসংখ্য মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় কাজ করেছেন শামীম আহমদে। গতকাল তাঁর মৃত্যুর খবরটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশের পর গ্রামের বাড়ি এলাকার মানুষের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। তাঁর আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধা জানাতে ও তাঁর পরিবারকে সহমর্মিতা জানাতে বুধবার জানাজার সময় ভীড় করেন এলাকার লোকজন।

পরিবারের ভরসার মানুষকে হারিয়ে শামীমের পরিবার এখন অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পড়েছে বলে জানান তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীরা। কেন্দুয়ার সংবাদকর্মী লাইমুন হোসেন ভুঁইয়াসহ এলাকাবাসী বলেন, ‘এই সমস্ত বীর ব্যক্তিকে সরকারিভাবে দায়িত্ব নিয়ে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দরকার। তবে সরকারি যে নীতিমালা রয়েছে সেই অনুযায়ী সহযোগিতায় এই পরিবারটি ঘুড়ে দাঁড়ানো অসম্ভব। তাই সমাজের দানশীল ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

যে দুর্ঘটনা মৃত্যু ফায়ার ফাইটারের

সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে গাজীপুরের টঙ্গী শিল্পাঞ্চলের একটি কারখানার একটি রাসায়নিক গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। টঙ্গী সাহারা মার্কেটের সেমিপাকা টিনশেড গুদামে লাগা আগুন নির্বাপনের দায়িত্ব পালনকালে গুরুতর দগ্ধ হন শামীম আহমেদসহ চারজন। তাঁদের মধ্যে শামীমসহ দুজন ফায়ার ফাইটারের শরীরের প্রায় শতভাগ পুড়ে যায়।

রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার দুপুর ৩টার দিকে মারা যান শামীম। আগুনে তাঁর শরীরের প্রায় ৯৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। একদিনের ব্যবধানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরেক ফায়ার ফাইটার নুরুল হুদাও চলে গেলেন। জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ বুধবার দুপুর পৌনে তিনটার দিকে তিনি মারা যান।

Ad 300x250

সম্পর্কিত