প্রায় এক বছরের আলোচনার পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আয়োজনে জুলাই সনদে ২৫টি দলের স্বাক্ষর নিশ্চিত হয়েছে। তবে গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং চার বাম দল অংশ না নেওয়ায় সনদে ঐক্যের চেয়ে অনৈক্যের ছাপই বেশি স্পষ্ট হয়েছে।
স্ট্রিম প্রতিবেদক
প্রায় এক বছরের আলোচনার পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আয়োজনে জুলাই সনদে ২৫টি দলের স্বাক্ষর নিশ্চিত হয়েছে। তবে গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং চার বাম দল অংশ না নেওয়ায় সনদে ঐক্যের চেয়ে অনৈক্যের ছাপই বেশি স্পষ্ট হয়েছে।
এদিকে, জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, আইনি সুরক্ষা, পুনর্বাসনের দাবিতে বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) গভীর রাতে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে একদল তরুণ। নিজেদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ দাবি করে তারা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার দাবি জানায়। এই বিক্ষোভের জের চলে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত যখন জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মঞ্চের সামনে অবস্থান নেওয়া ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ ধাওয়া দিয়ে ও টিয়ারশেল ছুড়ে সরিয়ে দেয় পুলিশ।
তাঁদের বিক্ষোভের জেরে জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ এর অঙ্গীকারনামার ৫ নম্বর দফার পরিবর্তন করা হয়েছে। এতে জুলাই যোদ্ধাদের স্বীকৃতির আইনগত ভিত্তির পাশাপাশি প্রাধান্য দেওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিজিবি এবং অতিরিক্ত পুলিশের নিরাপত্তা প্রহরায় বিকেল সাড়ে চারটায় শুরু হয় জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় বিকেল ৪টা ৩৭ মিনিটে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। বিকেল ৫টা ৫ মিনিটে রাজনীতিবিদরা সনদে স্বাক্ষর করেন। স্বাক্ষর করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ এবং আর সকল সদস্যরাও।
স্বাগত বক্তব্যে কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, বহুমত সত্ত্বেও দেশের সবাই যেকোনো ধরনের স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়ানোর বিষয়ে একমত।
জুলাই সনদ দিক-নির্দেশক হিসেবে ভবিষ্যত বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে পরিচালনা করবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, রাজনীতিতে মতপার্থক্য না থাকলে তা গণতান্ত্রিক হয় না। আমাদের মতের পার্থক্য থাকবে, পথের পার্থক্য থাকবে, কিন্তু এক জায়গায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এসময়ে তিনি জুলাই সনদ শিগগির বাস্তবায়ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত রাজনৈতিক দল ও ঐকমত্য কমিশনকে ড. ইউনূস ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, যাঁরা এই সনদ রচনা করেছেন, তাদের বিদ্যা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দেশের জন্য অনন্য অবদান রেখে গেছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে স্বাক্ষরিত এই সনদ রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে আগামী নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ, মর্যাদাপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্যভাবে আয়োজিত করতে সহায়তা করবে।
জুলাই আন্দোলনে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যে পরিবর্তন এসেছে তা ওই গণঅভ্যুত্থানের ফলে সম্ভব হয়েছে। জুলাই সনদকে গণঅভুত্থানের দ্বিতীয় অংশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আজকে যে কাজটা করলাম, এখানে স্বাক্ষর করলাম সবাই মিলে। সেটা দিয়ে বাংলাদেশের পরিবর্তন হবে। এই পরিবর্তন সম্ভব হলো সেই গণঅভ্যুত্থানের কারণে, ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের কারণে। সেটা তারা করেছিলো বলেই আজকে আমরা এ সুযোগ পেলাম। তাদের জন্যই এই দিনটা করা সম্ভব হয়েছে।
তবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী তরুণদের নিয়ে গড়া এনসিপির সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অনুপস্থিতি নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “আমরা নির্বাচনের কথা বলেছি। এই সুর, যে সুর আজকে আমরা বাজালাম, সেই সুর নিয়ে আমরা নির্বাচনের দিকে যাবো—এই সুর ঐক্যের সুর।”
তিনি বলেন, এই সুরকে সামনে রেখে আগামী ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আজকে ঐক্যের ব্যাপারে আমরা যেমন সনদ করলাম। রাজনীতির ব্যাপারেও, নির্বাচনের ব্যাপারেও, রাজনৈতিক নেতারা বসে, বিভিন্ন দলের নেতারা বসে একটা সনদ করেন কীভাবে নির্বাচনটা করবেন। তিনি রাজনৈতিক নেতাদের আহ্বান জানান যেনো ঐকমত্য কমিশন বা কমিটি নিয়ে বসে নির্বাচন কীভাবে সুন্দরভাবে, উৎসবমুখরভাবে ও ইতিহাসে স্মরণীয়ভাবে করা যায় তা চূড়ান্ত করার জন্য।
সনদ স্বাক্ষরের আগে জোরপূর্বক সরানো হলো ‘জুলাই যোদ্ধাদের’, ১০ তরুণ আহত
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে বিক্ষোভ শুরু করে নিজেদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ দাবি করা একদল তরুণ। তারা আজকেও এই বিক্ষোভ জারি রাখে। এক পর্যায়ে দুপুরে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ‘জুলাই সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানস্থলে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ মঞ্চে এসে তাদের দাবি পূরণে জুলাই সনদে সংশোধনী আনার ঘোষণা দেন।
আলী রিয়াজের অনুরোধের পর ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ একটি অংশ অনুষ্ঠানস্থল থেকে বের হয়ে যেতে থাকলেও আরেকটি অংশ ভেতরে স্লোগান দিতে থাকে। এরকম দশ মিনিট চলতে থাকলে পুলিশ তাঁদের বের হওয়ার জন্য তাগাদা দেয়।
এক পর্যায়ে বের হলেও জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে প্রধান ফটকে এসে পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতি ও পরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন তাঁরা। এসময় পুলিশ লাঠিপেটা করে তাঁদের বের করে দেয়।
দুই ঘণ্টা পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার পর বৃষ্টির মধ্যে বিকেলের আগে পরিস্থিতি শান্ত হয়। বিক্ষুব্ধদের ঢিল ছোড়াছুড়ি, পুলিশের লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ এবং সাউন্ড গ্রেনেড ফাটানোর মধ্যে উভয় পক্ষের অন্তত ২৭ জন আহত হন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে আহত ১০ ‘জুলাই যোদ্ধাকে’ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে তাঁদের কারো অবস্থাই গুরুতর নয় বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
আহতরা হলেন— সিনথিয়া মিম, শফিকুল ইসলাম, শফিউল্লাহ, হাবিব উল্লাহ, তানভিরুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, আতিকুল গাজী, রাকিব, লাইলি।
এদিকে, খামার বাড়ি মোড়ে একজন পুলিশ সদস্য ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ দ্বারা আহত হয়েছেন বলে জানা গেলেও তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আহত আতিকুল গাজী জানান, তার বাসা উত্তরা এলাকায়। আজ স্বাক্ষর হতে যাওয়া জুলাই সনদের প্রতিবাদ জানাতে তাঁরা মানিক মিয়া এভিনিউতে এসেছিলেন। সেখান থেকে পুলিশ তাদের অন্যায়ভাবে সরিয়ে দিতে লাঠিচার্জ করে। এলোপাতাড়ি লাঠির আঘাতে আহত হন তাঁরা।
এদিকে দাবি মেনে নেওয়ার পরও কেন জুলাই যোদ্ধারা বের হতে চায়নি জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও থেকে আসা এক ‘জুলাই যোদ্ধা’ দুলাল ইসলাম স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমাদের দাবি যা যা ছিল তা মানা হয়নি।‘কোন দাবিটি মানা হয়নি জানতে চাইলে তিনি আর উত্তর দিতে চাননি।’
মিরপুর থেকে আসা রাসেল মোল্লা বলেন, তিনি ফেসবুকের এক পেজের (জুলাই যোদ্ধা) মাধ্যমে জানতে পারেন যে আজকে (শুক্রবার) রাজনৈতিক দলগুলো যদি জুলাই সনদ স্বাক্ষর করে ফেলে তবে জুলাই আহত এবং নিহতদের আইনি সুরক্ষার কোনো নিশ্চয়তা থাকবে না। যে সরকারই আসুক সকলের লক্ষ্য হবেন তাঁরাই।
সংশোধনের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, সেটি যথেষ্ট নয়। কী ধরণের সংযোজন দরকার জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, আইনি স্বীকৃতি থেকে শুরু করে চিকিৎসা, চাকরিতে প্রাধান্য সব আলাদা করে উল্লেখ করতে হবে। এখানে যেভাবে উল্লেখ করা হয়েছে তা আই-ওয়াশ।
স্বাক্ষর ২৪টি দলের, উপস্থিত থাকলেও পরে করবে গণফোরাম, আসেনি এনসিপিসহ বামপন্থী চার দল
জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫–এ স্বাক্ষর করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। পাঁচটা পাঁচ মিনিটে প্রথমে রাজনৈতিক দলগুলোর দুজন করে প্রতিনিধি ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ও সদস্যরা স্বাক্ষর করেন। এরপর পাঁচটা সাত মিনিটে সনদে স্বাক্ষর করেন প্রধান উপদেষ্টা। স্বাক্ষরের পরে তাঁরা সনদ উঁচিয়ে ধরে দেখান।
বিএনপির পক্ষে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ স্বাক্ষর করেন। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে স্বাক্ষর করেন নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। এবি পার্টির পক্ষে চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন ও সিনিয়র সহ-সভাপতি তানিয়া রব, গণ-অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর ও সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন সনদে স্বাক্ষর করেন।
এছাড়া লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), খেলাফত মজলিস, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট-এনপিপি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা), ১২ দলীয় জোট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাকের পার্টি, জাতীয় গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, এবং আমজনতার দলের প্রতিনিধিরা সনদে স্বাক্ষর করেন।
উপস্থিত থাকলেও স্বাক্ষর করেনি গণফোরাম। তবে গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেছেন, যেহেতু সংবিধানে থাকা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বাদ দেওয়া হচ্ছে না। অর্থাৎ তাদের মূল দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। সুতরাং পরে সনদে স্বাক্ষর করে দেবেন।
এদিকে, অনুষ্ঠানে আসেনি এনসিপি এবং চার বাম দল– বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী), বাংলাদেশ জাসদ।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর ইস্কাটনে নেভি কলোনিতে ‘জাতীয় শ্রমিক শক্তি’ নামে এনসিপির অঙ্গ সংগঠনের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে জাতীয় নাগিরক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, কিছু রাজনৈতিক দলের জুলাই সনদে স্বাক্ষর করার নাম জাতীয় ঐক্য নয়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে আজকের সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে না আসার ঘোষণা দেয় সিপিবি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদের নেতারা। সনদে কেন স্বাক্ষর করবেন, তার যে কারণগুলো তাঁরা বলেছিলেন, তার মধ্যে একটি ছিল স্বাধীনতার ঘোষণা বাদ দেওয়ার সুপারিশের বিষয়টি।
যা বলছে রাজনৈতিক দলগুলো
জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই সনদ স্বাক্ষরের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আমরা একটি গণতান্ত্রিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র কাঠামো অর্জন করতে পারবো। যে রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্য দিয়ে আমাদের নতুন যাত্রা শুরু হবে। শক্তিশালী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান নির্মিত হবে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো নির্মিত হবে, রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা হবে। রাষ্ট্রের কোনো অঙ্গ আরেকটি অঙ্গের উপর কর্তৃত্ব প্রদর্শন করতে পারবে না।
এদিকে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের ভাষ্য, এই জাতি ৫৪ বছরে বারবার যে নানা অপকর্ম-অপশাসনের সম্মুখীন হয়েছিল, আজকের এই জাতীয় সনদ আমরা যারা সবার ঐকমত্যের মাধ্যমে সিগনেচার করেছি, এটা যদি সত্যিকার অর্থে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে এখানে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন হবে।'
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর বলেন, গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিবর্তনের একটি ব্যাপক জনমত এবং জন-আকাঙ্ক্ষা গড়ে উঠেছে। সেটির প্রতি সম্মান দেখিয়ে গণ-অভ্যুত্থানের সরকার বিভিন্ন সংস্কারের লক্ষ্যে সংস্কার কমিটির পাশাপাশি একটি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন করে দিয়েছিল। তারা একটি জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন করেছে।
নুর বলেন, 'জুলাই সনদে শহীদ পরিবার এবং আহতদের স্বীকৃতি, পুনর্বাসন এবং এই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী নেতাদের সুরক্ষার বিষয়টি শুরুর দিকে কিছুটা অস্পষ্ট ছিল। যার ফলে আজকে আমরা দেখেছি, সারা দেশের কিছু বিক্ষুব্ধ জুলাই যোদ্ধা এই অনুষ্ঠানে এসেছিল। যার ফলে একটি অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঘটেছিল। ওই যে বলে, "দাগ থেকে অনেক সময় দারুণ কিছু হয়", অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও সেই ঘটনার প্রেক্ষাপটে কিন্তু সরকার শেষ দিকে এসে জুলাই সনদ সংশোধন করে এই জুলাই যোদ্ধা, তাদের পরিবার এবং তাদের আইনি সুরক্ষা, ক্ষতিপূরণ ও শহীদ পরিবারগুলোর মর্যাদার বিষয়ে একটা ধারা যুক্ত করেছে।'
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, এই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে সবশেষ আলোচনা হয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একইসঙ্গে গণভোটও হবে। সেখানে গণভোটের মাধ্যমে জণগণ জুলাই জাতীয় সনদকে অনুমোদন দেবে এবং যারা সংসদ সদস্য হবে তারা আগামীতে এই সনদ বাস্তবায়ন করবে। এই বাস্তবায়ন কাজটা হবে সাংসদদের বাধ্যবাধকতা।'
জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শেষে আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তারা এ কথা বলেন।
পরবর্তীতে জুলাই সনদে স্বাক্ষরের সুযোগ রয়েছে: ধর্ম উপদেষ্টা
জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যেসব রাজনৈতিক দল আজ অংশগ্রহণ করেনি, তারা চাইলে পরবর্তীতে অংশগ্রহণ ও স্বাক্ষরের সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন। আজ শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) আশুলিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
জুলাই সনদে এনসিপি স্বাক্ষর না করা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “তারা আজকে অংশগ্রহণ না করলেও ওখানে পরে অংশগ্রহণের সুযোগ আছে। তাদের যেই দাবিগুলো আছে, সেগুলো সরকার বিবেচনা করবে এবং এটা যদি পূরণ করা যায়, তাদের সঙ্গে সমঝোতায় আসা যায়, তাহলে তারা স্বাক্ষর করবেন। এবং এটা বলা আছে যে যারা আজকে স্বাক্ষর করতে পারবেন না, তারা পরবর্তীতে স্বাক্ষর করতে পারবেন”।
প্রায় এক বছরের আলোচনার পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আয়োজনে জুলাই সনদে ২৫টি দলের স্বাক্ষর নিশ্চিত হয়েছে। তবে গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং চার বাম দল অংশ না নেওয়ায় সনদে ঐক্যের চেয়ে অনৈক্যের ছাপই বেশি স্পষ্ট হয়েছে।
এদিকে, জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, আইনি সুরক্ষা, পুনর্বাসনের দাবিতে বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) গভীর রাতে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে একদল তরুণ। নিজেদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ দাবি করে তারা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার দাবি জানায়। এই বিক্ষোভের জের চলে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত যখন জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মঞ্চের সামনে অবস্থান নেওয়া ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ ধাওয়া দিয়ে ও টিয়ারশেল ছুড়ে সরিয়ে দেয় পুলিশ।
তাঁদের বিক্ষোভের জেরে জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ এর অঙ্গীকারনামার ৫ নম্বর দফার পরিবর্তন করা হয়েছে। এতে জুলাই যোদ্ধাদের স্বীকৃতির আইনগত ভিত্তির পাশাপাশি প্রাধান্য দেওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিজিবি এবং অতিরিক্ত পুলিশের নিরাপত্তা প্রহরায় বিকেল সাড়ে চারটায় শুরু হয় জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় বিকেল ৪টা ৩৭ মিনিটে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। বিকেল ৫টা ৫ মিনিটে রাজনীতিবিদরা সনদে স্বাক্ষর করেন। স্বাক্ষর করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ এবং আর সকল সদস্যরাও।
স্বাগত বক্তব্যে কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, বহুমত সত্ত্বেও দেশের সবাই যেকোনো ধরনের স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়ানোর বিষয়ে একমত।
জুলাই সনদ দিক-নির্দেশক হিসেবে ভবিষ্যত বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে পরিচালনা করবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, রাজনীতিতে মতপার্থক্য না থাকলে তা গণতান্ত্রিক হয় না। আমাদের মতের পার্থক্য থাকবে, পথের পার্থক্য থাকবে, কিন্তু এক জায়গায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এসময়ে তিনি জুলাই সনদ শিগগির বাস্তবায়ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত রাজনৈতিক দল ও ঐকমত্য কমিশনকে ড. ইউনূস ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, যাঁরা এই সনদ রচনা করেছেন, তাদের বিদ্যা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দেশের জন্য অনন্য অবদান রেখে গেছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে স্বাক্ষরিত এই সনদ রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে আগামী নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ, মর্যাদাপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্যভাবে আয়োজিত করতে সহায়তা করবে।
জুলাই আন্দোলনে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যে পরিবর্তন এসেছে তা ওই গণঅভ্যুত্থানের ফলে সম্ভব হয়েছে। জুলাই সনদকে গণঅভুত্থানের দ্বিতীয় অংশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আজকে যে কাজটা করলাম, এখানে স্বাক্ষর করলাম সবাই মিলে। সেটা দিয়ে বাংলাদেশের পরিবর্তন হবে। এই পরিবর্তন সম্ভব হলো সেই গণঅভ্যুত্থানের কারণে, ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের কারণে। সেটা তারা করেছিলো বলেই আজকে আমরা এ সুযোগ পেলাম। তাদের জন্যই এই দিনটা করা সম্ভব হয়েছে।
তবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী তরুণদের নিয়ে গড়া এনসিপির সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অনুপস্থিতি নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “আমরা নির্বাচনের কথা বলেছি। এই সুর, যে সুর আজকে আমরা বাজালাম, সেই সুর নিয়ে আমরা নির্বাচনের দিকে যাবো—এই সুর ঐক্যের সুর।”
তিনি বলেন, এই সুরকে সামনে রেখে আগামী ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আজকে ঐক্যের ব্যাপারে আমরা যেমন সনদ করলাম। রাজনীতির ব্যাপারেও, নির্বাচনের ব্যাপারেও, রাজনৈতিক নেতারা বসে, বিভিন্ন দলের নেতারা বসে একটা সনদ করেন কীভাবে নির্বাচনটা করবেন। তিনি রাজনৈতিক নেতাদের আহ্বান জানান যেনো ঐকমত্য কমিশন বা কমিটি নিয়ে বসে নির্বাচন কীভাবে সুন্দরভাবে, উৎসবমুখরভাবে ও ইতিহাসে স্মরণীয়ভাবে করা যায় তা চূড়ান্ত করার জন্য।
সনদ স্বাক্ষরের আগে জোরপূর্বক সরানো হলো ‘জুলাই যোদ্ধাদের’, ১০ তরুণ আহত
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে বিক্ষোভ শুরু করে নিজেদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ দাবি করা একদল তরুণ। তারা আজকেও এই বিক্ষোভ জারি রাখে। এক পর্যায়ে দুপুরে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ‘জুলাই সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানস্থলে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ মঞ্চে এসে তাদের দাবি পূরণে জুলাই সনদে সংশোধনী আনার ঘোষণা দেন।
আলী রিয়াজের অনুরোধের পর ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ একটি অংশ অনুষ্ঠানস্থল থেকে বের হয়ে যেতে থাকলেও আরেকটি অংশ ভেতরে স্লোগান দিতে থাকে। এরকম দশ মিনিট চলতে থাকলে পুলিশ তাঁদের বের হওয়ার জন্য তাগাদা দেয়।
এক পর্যায়ে বের হলেও জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে প্রধান ফটকে এসে পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতি ও পরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন তাঁরা। এসময় পুলিশ লাঠিপেটা করে তাঁদের বের করে দেয়।
দুই ঘণ্টা পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার পর বৃষ্টির মধ্যে বিকেলের আগে পরিস্থিতি শান্ত হয়। বিক্ষুব্ধদের ঢিল ছোড়াছুড়ি, পুলিশের লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ এবং সাউন্ড গ্রেনেড ফাটানোর মধ্যে উভয় পক্ষের অন্তত ২৭ জন আহত হন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে আহত ১০ ‘জুলাই যোদ্ধাকে’ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে তাঁদের কারো অবস্থাই গুরুতর নয় বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
আহতরা হলেন— সিনথিয়া মিম, শফিকুল ইসলাম, শফিউল্লাহ, হাবিব উল্লাহ, তানভিরুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, আতিকুল গাজী, রাকিব, লাইলি।
এদিকে, খামার বাড়ি মোড়ে একজন পুলিশ সদস্য ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ দ্বারা আহত হয়েছেন বলে জানা গেলেও তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আহত আতিকুল গাজী জানান, তার বাসা উত্তরা এলাকায়। আজ স্বাক্ষর হতে যাওয়া জুলাই সনদের প্রতিবাদ জানাতে তাঁরা মানিক মিয়া এভিনিউতে এসেছিলেন। সেখান থেকে পুলিশ তাদের অন্যায়ভাবে সরিয়ে দিতে লাঠিচার্জ করে। এলোপাতাড়ি লাঠির আঘাতে আহত হন তাঁরা।
এদিকে দাবি মেনে নেওয়ার পরও কেন জুলাই যোদ্ধারা বের হতে চায়নি জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও থেকে আসা এক ‘জুলাই যোদ্ধা’ দুলাল ইসলাম স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমাদের দাবি যা যা ছিল তা মানা হয়নি।‘কোন দাবিটি মানা হয়নি জানতে চাইলে তিনি আর উত্তর দিতে চাননি।’
মিরপুর থেকে আসা রাসেল মোল্লা বলেন, তিনি ফেসবুকের এক পেজের (জুলাই যোদ্ধা) মাধ্যমে জানতে পারেন যে আজকে (শুক্রবার) রাজনৈতিক দলগুলো যদি জুলাই সনদ স্বাক্ষর করে ফেলে তবে জুলাই আহত এবং নিহতদের আইনি সুরক্ষার কোনো নিশ্চয়তা থাকবে না। যে সরকারই আসুক সকলের লক্ষ্য হবেন তাঁরাই।
সংশোধনের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, সেটি যথেষ্ট নয়। কী ধরণের সংযোজন দরকার জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, আইনি স্বীকৃতি থেকে শুরু করে চিকিৎসা, চাকরিতে প্রাধান্য সব আলাদা করে উল্লেখ করতে হবে। এখানে যেভাবে উল্লেখ করা হয়েছে তা আই-ওয়াশ।
স্বাক্ষর ২৪টি দলের, উপস্থিত থাকলেও পরে করবে গণফোরাম, আসেনি এনসিপিসহ বামপন্থী চার দল
জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫–এ স্বাক্ষর করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। পাঁচটা পাঁচ মিনিটে প্রথমে রাজনৈতিক দলগুলোর দুজন করে প্রতিনিধি ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ও সদস্যরা স্বাক্ষর করেন। এরপর পাঁচটা সাত মিনিটে সনদে স্বাক্ষর করেন প্রধান উপদেষ্টা। স্বাক্ষরের পরে তাঁরা সনদ উঁচিয়ে ধরে দেখান।
বিএনপির পক্ষে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ স্বাক্ষর করেন। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে স্বাক্ষর করেন নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। এবি পার্টির পক্ষে চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন ও সিনিয়র সহ-সভাপতি তানিয়া রব, গণ-অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর ও সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন সনদে স্বাক্ষর করেন।
এছাড়া লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), খেলাফত মজলিস, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট-এনপিপি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা), ১২ দলীয় জোট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাকের পার্টি, জাতীয় গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, এবং আমজনতার দলের প্রতিনিধিরা সনদে স্বাক্ষর করেন।
উপস্থিত থাকলেও স্বাক্ষর করেনি গণফোরাম। তবে গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেছেন, যেহেতু সংবিধানে থাকা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বাদ দেওয়া হচ্ছে না। অর্থাৎ তাদের মূল দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। সুতরাং পরে সনদে স্বাক্ষর করে দেবেন।
এদিকে, অনুষ্ঠানে আসেনি এনসিপি এবং চার বাম দল– বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী), বাংলাদেশ জাসদ।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর ইস্কাটনে নেভি কলোনিতে ‘জাতীয় শ্রমিক শক্তি’ নামে এনসিপির অঙ্গ সংগঠনের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে জাতীয় নাগিরক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, কিছু রাজনৈতিক দলের জুলাই সনদে স্বাক্ষর করার নাম জাতীয় ঐক্য নয়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে আজকের সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে না আসার ঘোষণা দেয় সিপিবি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদের নেতারা। সনদে কেন স্বাক্ষর করবেন, তার যে কারণগুলো তাঁরা বলেছিলেন, তার মধ্যে একটি ছিল স্বাধীনতার ঘোষণা বাদ দেওয়ার সুপারিশের বিষয়টি।
যা বলছে রাজনৈতিক দলগুলো
জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই সনদ স্বাক্ষরের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আমরা একটি গণতান্ত্রিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র কাঠামো অর্জন করতে পারবো। যে রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্য দিয়ে আমাদের নতুন যাত্রা শুরু হবে। শক্তিশালী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান নির্মিত হবে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো নির্মিত হবে, রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা হবে। রাষ্ট্রের কোনো অঙ্গ আরেকটি অঙ্গের উপর কর্তৃত্ব প্রদর্শন করতে পারবে না।
এদিকে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের ভাষ্য, এই জাতি ৫৪ বছরে বারবার যে নানা অপকর্ম-অপশাসনের সম্মুখীন হয়েছিল, আজকের এই জাতীয় সনদ আমরা যারা সবার ঐকমত্যের মাধ্যমে সিগনেচার করেছি, এটা যদি সত্যিকার অর্থে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে এখানে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন হবে।'
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর বলেন, গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিবর্তনের একটি ব্যাপক জনমত এবং জন-আকাঙ্ক্ষা গড়ে উঠেছে। সেটির প্রতি সম্মান দেখিয়ে গণ-অভ্যুত্থানের সরকার বিভিন্ন সংস্কারের লক্ষ্যে সংস্কার কমিটির পাশাপাশি একটি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন করে দিয়েছিল। তারা একটি জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন করেছে।
নুর বলেন, 'জুলাই সনদে শহীদ পরিবার এবং আহতদের স্বীকৃতি, পুনর্বাসন এবং এই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী নেতাদের সুরক্ষার বিষয়টি শুরুর দিকে কিছুটা অস্পষ্ট ছিল। যার ফলে আজকে আমরা দেখেছি, সারা দেশের কিছু বিক্ষুব্ধ জুলাই যোদ্ধা এই অনুষ্ঠানে এসেছিল। যার ফলে একটি অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঘটেছিল। ওই যে বলে, "দাগ থেকে অনেক সময় দারুণ কিছু হয়", অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও সেই ঘটনার প্রেক্ষাপটে কিন্তু সরকার শেষ দিকে এসে জুলাই সনদ সংশোধন করে এই জুলাই যোদ্ধা, তাদের পরিবার এবং তাদের আইনি সুরক্ষা, ক্ষতিপূরণ ও শহীদ পরিবারগুলোর মর্যাদার বিষয়ে একটা ধারা যুক্ত করেছে।'
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, এই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে সবশেষ আলোচনা হয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একইসঙ্গে গণভোটও হবে। সেখানে গণভোটের মাধ্যমে জণগণ জুলাই জাতীয় সনদকে অনুমোদন দেবে এবং যারা সংসদ সদস্য হবে তারা আগামীতে এই সনদ বাস্তবায়ন করবে। এই বাস্তবায়ন কাজটা হবে সাংসদদের বাধ্যবাধকতা।'
জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শেষে আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তারা এ কথা বলেন।
পরবর্তীতে জুলাই সনদে স্বাক্ষরের সুযোগ রয়েছে: ধর্ম উপদেষ্টা
জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যেসব রাজনৈতিক দল আজ অংশগ্রহণ করেনি, তারা চাইলে পরবর্তীতে অংশগ্রহণ ও স্বাক্ষরের সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন। আজ শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) আশুলিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
জুলাই সনদে এনসিপি স্বাক্ষর না করা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “তারা আজকে অংশগ্রহণ না করলেও ওখানে পরে অংশগ্রহণের সুযোগ আছে। তাদের যেই দাবিগুলো আছে, সেগুলো সরকার বিবেচনা করবে এবং এটা যদি পূরণ করা যায়, তাদের সঙ্গে সমঝোতায় আসা যায়, তাহলে তারা স্বাক্ষর করবেন। এবং এটা বলা আছে যে যারা আজকে স্বাক্ষর করতে পারবেন না, তারা পরবর্তীতে স্বাক্ষর করতে পারবেন”।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আগুন লাগার ঘটনায় স্থগিত রয়েছে সব রুটের বিমান চলাচল। এতে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে আটকা পড়েছেন ঢাকাগামী ছয়টি ফ্লাইটের প্রায় চার শতাধিক যাত্রী।
২৫ মিনিট আগেঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কারণে ফ্লাইট ওঠানামা সাময়িকভাবে স্থগিত রয়েছে। ফলে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটকে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং ভারতের কলকাতা বিমানবন্দরে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
১ ঘণ্টা আগেস্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘বাংলাদেশের অগ্নি দুর্ঘটনায় তদন্ত সক্ষমতা বাড়াতে ইতালি প্রযুক্তিগত সহায়তা ও প্রশিক্ষণ প্রদানের আশ্বাস দিয়েছে।’
১ ঘণ্টা আগেশাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো ভিলেজের একটি অংশে অগ্নিকাণ্ডের জেরে বিমান ওঠানামা স্থগিত রয়েছে।
৩ ঘণ্টা আগে