leadT1ad

বিয়ে হলেও সংসার করা হলো না জাবি শিক্ষক জান্নাতুলের

স্ট্রিম সংবাদদাতা
পাবনা
জাবি শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌস। ছবি: সংগৃহীত

ছয় মাস আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীর সঙ্গে বিয়ে হয় জান্নাতুল ফেরদৌসের। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান তিনি। স্কুল-কলেজে ছিলেন তুখোড় মেধাবী ছাত্রী। আগামী বছরে ৫ জানুয়ারি ধুমধাম করে বিয়ের অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। এর মধ্যে জান্নাতুল চলে গেলেন সবার ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। জাকসু নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকালে আকস্মিকভাবে মারা যান জান্নাতুল ফেরদৌস। মাত্র ত্রিশ বছর পেরোনো জান্নাতুলের এই মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন স্বজনরা।

জান্নাতুল ফেরদৌস ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষক। জাকসু নির্বাচনে ভোটের দায়িত্ব পালন করা কালে শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) মৃত্যু হয় তাঁর।

জান্নাতুলের বাড়ি পাবনা শহরে। বাবা রুমী খন্দকার একটি দৈনিকের জেলা প্রতিনিধি। এক সময় পাবনা প্রেস ক্লাবের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। সন্তানের শিক্ষার জন্য তাঁর চেষ্টা সহকর্মীদেরও চোখ এড়ায়নি। ঢাকায় গেলে জান্নাতুলের বাসায়ই উঠতেন তাঁর বাবা-মা।

শুক্রবার সন্ধ্যায় জান্নাতুলের লাশ গ্রামের বাড়ি পৌঁছলে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। লাশবাহী গাড়ির সঙ্গে আরও ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর বিভাগের প্রধানসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক। তাঁরা শোক সন্তপ্ত পরিবারকে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করেন।

রুমী খন্দকারের সহকর্মী উৎপল মীর্জা বলেন, ‘রুমি ভাই একদম ভেঙে পড়েছেন। জান্নাতুল একমাত্র সন্তান তাঁদের। ওদের খুব আদরের সন্তান ছিল জান্নাতুল।’

রুমী খন্দকার আরও বলেন, ছয় মাস আগে জান্নাতুলের বিয়ে হয়। রেজিস্ট্রি করে রাখা হয়েছে। আগামী বছরের ৫ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠান করে স্বামীর হাতে তুলে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটি আর হলো না। মেহেদী রঙা হাতে সংসার জীবনে প্রবেশ করা হলো না মেয়েটার। এসব জানিয়েই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

মেধাবী জান্নাতুল

স্বজনরা জানান, ছোটবেলা থেকেই জান্নাতুল ছিলেন মেধাবী। শিক্ষাজীবনের সব ক্ষেত্রেই তাঁর ফলাফল ছিল ঈর্ষণীয়। ২০০৯ সালে পাবনা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস ও ২০১১ সালে পাবনা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষাতেও গোল্ডেন এ প্লাস নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন জান্নাতুল।

২০১২ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলায় ভর্তি হন জান্নাতুল। সেখানে কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন তিনি। পরে ২০২১ সালে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন ।

পাবনা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষিকা রোখসানা খানম ডেইজি বলেন, ‘জান্নাতুল খুব চুপচাপ ও শান্ত স্বভাবের ছিল। অত্যন্ত মেধাবী। আকস্মিকভাবে তাঁর মৃত্যুর খবরে আমরাও শোকাহত।’

দায়িত্ব পালনকালেই মৃত্যু

বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে প্রীতিলতা হলে পোলিং কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ভোট পরবর্তী গণনা কার্যক্রমে অংশ নিতে গিয়ে শুক্রবার সকালে অসুস্থ হয়ে পড়েন । বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে ভোট গণনার কক্ষের দরজার সামনে হঠাৎ পড়ে যান। সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

জান্নাতুলের লাশের সঙ্গে আসা চারুকলা বিভাগের প্রধান শামীম রেজা বলেন, ‘সিনেট ভবনে ভোট গণনার কক্ষের যাচ্ছিলেন জান্নাতুল। হঠাৎ পড়ে গিয়ে দরজার সঙ্গে একটু আঘাত লাগে। তাতেই তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়।’

শুক্রবার বাদ জুমা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে তাঁর প্রথম জানাজা হয়। সন্ধ্যায় তাঁর মরদেহ আনা হয় পাবনায় পৈতৃকবাড়িতে। বাদ এশা শহরের কাচারিপাড়া মসজিদে জানাজা শেষে তাঁকে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছে স্বজনেরা।

জান্নাতুল ফেরদৌসের মৃত্যুতে পাবনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আখতারুজ্জামান আখতার, সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি এ বি এম ফজলুর রহমানসহ অন্যান্য সাংবাদিক গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

Ad 300x250

সম্পর্কিত