.png)
সৌদি আরবের সঙ্গে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা চুক্তি নতুন এক কৌশলগত বাস্তবতার জন্ম দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ছাতার প্রতি আস্থা হারিয়ে রিয়াদ এখন বিকল্প শক্তির সন্ধান করছে। পাকিস্তানকে পাশে পেয়ে তারা শুধু পারমাণবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা নয়, বরং এক বৃহত্তর ‘ইসলামি ন্যাটো’র ধারণাও উসকে দিচ্ছে। এই সমীকরণে সবচেয়ে বেশি অস্বস্তিতে পড়েছে ভারত, যারা সৌদি আরবের বড় বাণিজ্যিক অংশীদার হয়েও কূটনৈতিকভাবে এক দ্বিধাজনক অবস্থায় পড়ে গেছে।

স্ট্রিম ডেস্ক

গত সপ্তাহে রিয়াদে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের আলিঙ্গনের প্রতীকী তাৎপর্য স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
এই আলিঙ্গনের আগেই দু’দেশ একটি ‘কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি’তে সই করে। এর ফলে মুসলিম বিশ্বের একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রকে উপসাগরীয় অঞ্চলের সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী রাজতন্ত্রের আরও কাছাকাছি নিয়ে এল।
একজন ঊর্ধ্বতন সৌদি কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ‘এ চুক্তি কেবল দীর্ঘদিনের গভীর সহযোগিতার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ।’ তবে ভারতে অনেকেই বিষয়টিকে ভিন্নভাবে দেখছেন।
যদিও দিল্লির সঙ্গে রিয়াদের উষ্ণ সম্পর্ক বজায় আছে, তবে এই চুক্তি এমন সময়ে হয়েছে যখন পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের শত্রুতা সর্বোচ্চ অবস্থায় আছে। কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তান বহুবার যুদ্ধে জড়িয়েছে। তাই পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীকে সৌদি আরবের সমর্থন জোগানোর যেকোনো পদক্ষেপ ভারতের জন্য সরাসরি উদ্বেগের কারণ।

ভারতীয় বিশ্লেষকদের সবচেয়ে বেশি অস্বস্তিতে ফেলেছে, এই চুক্তির ‘যে কোনো এক দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন মানেই উভয় দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন ধরা হবে’ এমন সমঝোতা।
ভারতীয় কৌশলবিদ ব্রহ্মা চেলানি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করেছেন, ‘সৌদি আরব জানত ভারত এই চুক্তিকে সরাসরি নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে নেবে, জেনেও সৌদি আরব চুক্তি করেছে’।
ব্রহ্মা চেলানির মতে, এই পদক্ষেপ পাকিস্তানের শক্তির প্রতিফলন নয়, বরং সৌদি আরবের উচ্চাকাঙ্ক্ষা। ‘চিরস্থায়ীভাবে নির্ভরশীল’ অংশীদারের কাছ থেকে সৌদি পাচ্ছে জনবল ও পারমাণবিক ‘বীমা’। একইসঙ্গে ভারত, ওয়াশিংটন ও অন্যদের দেখাচ্ছে যে সৌদি আরব নিজের পথ নিজেই তৈরি করবে।
ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব কাঁওয়াল সিবাল এই চুক্তিকে সৌদি আরবের ‘গুরুতর ভুল পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর মতে, এই চুক্তি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
নরেন্দ্র মোদি-নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার অবশ্য কিছুটা সংযত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র উল্লেখ করেছেন যে সরকার ‘জাতীয় নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার উপর এই চুক্তির প্রভাবগুলো খতিয়ে দেখবে’।
সব বিশ্লেষক অবশ্য এতটা শঙ্কিত নন। কেউ কেউ বলছেন, ভারত হয়তো এই চুক্তির ঝুঁকিকে বেশি বড় করে দেখছে। কারণ ভারত হচ্ছে সৌদি আরবের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার এবং দেশটির তেলের বড় ক্রেতা।
বৈদেশিক নীতি বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যানের মতে, চুক্তিটি নিয়ে অতিরিক্ত না ভাবাই ভালো। কুগেলম্যান বিবিসিকে বলেন, ‘এই চুক্তি সরাসরি ভারতের জন্য কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না। যেহেতু ভারতের সঙ্গে সৌদি আরবের ব্যাপক সম্পর্ক আছে, সেহেতু সৌদি ‘ভারতের বিরুদ্ধে শত্রুতামূলক কোনো কাজে জড়াবে না।’
তবু কুগেলম্যানের মতে, পাকিস্তানকে মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা কাঠামোয় যুক্ত করে এই চুক্তি ‘ভারতকে চেকমেট করেছে’। চীন, তুরস্ক এবং নতুন করে সৌদি আরবের মতো তিনটি পৃষ্ঠপোষক এখন পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়েছে।
কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন, এই চুক্তির আসল তাৎপর্য ভারতের জন্য কোনো তাৎক্ষণিক হুমকির মধ্যে নয়, বরং কীভাবে আঞ্চলিক জোটগুলোকে নতুন আকার দেয় তার মধ্যে নিহিত।
ওয়াশিংটনের হাডসন ইনস্টিটিউটের ফেলো ও পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুসাইন হাক্কানি বিবিসিকে বলেন, ‘ভারতের উদ্বেগ বহুমুখী। এই চুক্তির ফলে সৌদি আরবের অর্থনৈতিক শক্তি ব্যবহার করে ভারতের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য পাকিস্তান তার সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করতে পারে।’

মি. হাক্কানির মতে, সবকিছু নির্ভর করছে ‘আগ্রাসন’ শব্দের সংজ্ঞার ওপর। একইসঙ্গে তিনি সতর্ক করেছেন, এই চুক্তি ভারতের সঙ্গে সৌদির অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ককেও টানাপোড়েনে ফেলতে পারে।
কেউ কেউ আবার বলছেন, এই চুক্তিকে নতুন কোনো পরিবর্তন মনে করার কারণ নেই। দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিম এশিয়া গবেষণা কেন্দ্রের অধ্যাপক মোহাম্মদ মুদাসসির কামারের মতে, এটি মূলত ১৯৬০-এর দশক থেকে চলে আসা সৌদি-পাকিস্তান বোঝাপড়ার আনুষ্ঠানিক রূপ।
১৯৬০-এর দশকে পাকিস্তানি সেনা মোতায়েন থেকে শুরু করে ১৯৭৯ সালে মক্কার মসজিদ দখল সংকট দমনে পাকিস্তানি কমান্ডো পাঠানো পর্যন্ত দীর্ঘদিন ধরে সৌদি-পাকিস্তানের সম্পর্ক প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ওপর দাঁড়িয়ে। পরবর্তী সময়ে সৌদি পাকিস্তানি অস্ত্র কিনেছে, পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের দিয়ে বিমানবাহিনী গড়ে তুলেছে এবং পাকিস্তানকে আদর্শগত মিত্র ও নিরাপত্তা সহযোগী হিসেবে দেখেছে। ২০১৭ সালে রিয়াদ সৌদি-প্রযোজিত সন্ত্রাসবিরোধী জোটের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য একজন অবসরপ্রাপ্ত পাকিস্তানি সেনাপ্রধানকে নিয়োগ করেছিল।
হাক্কানির মতে, ১৯৭০-এর দশক থেকেই সৌদি আরব পাকিস্তানকে সমর্থন দিয়ে আসছে। ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালের যুদ্ধে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়ানো, অর্থনৈতিক সংকটে সাহায্য, তেল কেনায় বিলম্বিত অর্থপ্রদানের সুযোগ দেওয়া এবং ঘনিষ্ঠ সামরিক সহযোগিতা বজায় রাখা—সবই এর প্রমাণ।
উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর মার্কিন নিরাপত্তা ছাতার ওপর আস্থা হারানোও এই চুক্তির পেছনে বড় কারণ বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। গত ৯ সেপ্টেম্বর ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে যুক্তরাষ্ট্রের উপসাগরীয় মিত্রদেশ কাতারে। মুহূর্তেই ভেঙে পড়ে কয়েক দশক ধরে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি ও বহু বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তির মাধ্যমে গড়ে ওঠা অটল নিরাপত্তার মেকি আবরণ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের দীর্ঘদিনের বৈরিতা। ফলে রিয়াদ এককভাবে ওয়াশিংটনের ওপর নির্ভর করতে চাইছে না।
চুক্তিটি যুদ্ধক্ষেত্রে সরাসরি প্রতিশ্রুতির চেয়ে বরং বার্তা দেওয়ার জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ, এমনটা বলছেন চ্যাথাম হাউসের সহযোগী ফেলো ও এমিরেটস পলিসি সেন্টারের গবেষক আহমেদ আবুদুহ। তাঁর মতে, চুক্তিটি মূলত এ বার্তা দিতেই করা হয়েছে যে সৌদি আরব এখন নিরাপত্তা অংশীদারিত্বে বৈচিত্র্য আনছে, তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ছাড়ছে না। যদিও এই চুক্তির কার্যকারিতার গভীরতা অস্পষ্ট, তবে তারা ইরান ও ইসরায়েল দুই দেশকেই হুমকি হিসেবে দেখছে এবং পাকিস্তানের পারমাণবিক অবস্থান থেকে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর সুযোগ নিচ্ছে।
ভারতের জন্য এই চুক্তি সরাসরি সামরিক হুমকি নয়, বরং কূটনৈতিক ও কৌশলগত। আবুদুহের মতে, আসল ঝুঁকি হলো একটি বিস্তৃত জোট ‘ইসলামি ন্যাটো’তে রূপ নিলে উপসাগরীয় অঞ্চলে বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং কৌশলগত করিডোর জুড়ে দিল্লির 'পশ্চিমমুখী' নীতিকে জটিল করে তুলবে।
আবুদুহ আরও মনে করেন, এই চুক্তির ফলে পাকিস্তানের সামনে সুযোগ এসেছে সৌদির অর্থনৈতিক ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে সামরিক সক্ষমতা বাড়ানো এবং রিয়াদের সফট পাওয়ার ব্যবহার করে রাজনৈতিক সমর্থন আদায় করা। ফলে ভারতকে শুধু পাকিস্তানের সঙ্গেই নয়, বরং একটি বৃহত্তর মুসলিম জোটের মুখোমুখিও হতে হবে।
কুগেলম্যানের মতে, রাশিয়া, ইসরায়েল, উপসাগরীয় দেশ ও ফ্রান্সসহ পশ্চিমা অংশীদারদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ভালো। কিন্তু সমস্যা হলো, এই ধরনের চুক্তি ভারতের দুর্বলতা প্রকাশ করে না, বরং পাকিস্তানের শক্তি বাড়ছে সেই আভাস দেয়। এই চুক্তি আঞ্চলিক ভারসাম্যকে পাকিস্তানের অনুকূলে নিয়ে এসেছে।
চুক্তিটি তাৎক্ষণিক সামরিক হুমকি না হলেও কূটনৈতিকভাবে দিল্লির জন্য ভালো সংকেত নয়। ভবিষ্যতে এর কী প্রভাব পড়বে তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে ভারত তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন অবলম্বনে তুফায়েল আহমদ

গত সপ্তাহে রিয়াদে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের আলিঙ্গনের প্রতীকী তাৎপর্য স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
এই আলিঙ্গনের আগেই দু’দেশ একটি ‘কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি’তে সই করে। এর ফলে মুসলিম বিশ্বের একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রকে উপসাগরীয় অঞ্চলের সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী রাজতন্ত্রের আরও কাছাকাছি নিয়ে এল।
একজন ঊর্ধ্বতন সৌদি কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ‘এ চুক্তি কেবল দীর্ঘদিনের গভীর সহযোগিতার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ।’ তবে ভারতে অনেকেই বিষয়টিকে ভিন্নভাবে দেখছেন।
যদিও দিল্লির সঙ্গে রিয়াদের উষ্ণ সম্পর্ক বজায় আছে, তবে এই চুক্তি এমন সময়ে হয়েছে যখন পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের শত্রুতা সর্বোচ্চ অবস্থায় আছে। কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তান বহুবার যুদ্ধে জড়িয়েছে। তাই পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীকে সৌদি আরবের সমর্থন জোগানোর যেকোনো পদক্ষেপ ভারতের জন্য সরাসরি উদ্বেগের কারণ।

ভারতীয় বিশ্লেষকদের সবচেয়ে বেশি অস্বস্তিতে ফেলেছে, এই চুক্তির ‘যে কোনো এক দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন মানেই উভয় দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন ধরা হবে’ এমন সমঝোতা।
ভারতীয় কৌশলবিদ ব্রহ্মা চেলানি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করেছেন, ‘সৌদি আরব জানত ভারত এই চুক্তিকে সরাসরি নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে নেবে, জেনেও সৌদি আরব চুক্তি করেছে’।
ব্রহ্মা চেলানির মতে, এই পদক্ষেপ পাকিস্তানের শক্তির প্রতিফলন নয়, বরং সৌদি আরবের উচ্চাকাঙ্ক্ষা। ‘চিরস্থায়ীভাবে নির্ভরশীল’ অংশীদারের কাছ থেকে সৌদি পাচ্ছে জনবল ও পারমাণবিক ‘বীমা’। একইসঙ্গে ভারত, ওয়াশিংটন ও অন্যদের দেখাচ্ছে যে সৌদি আরব নিজের পথ নিজেই তৈরি করবে।
ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব কাঁওয়াল সিবাল এই চুক্তিকে সৌদি আরবের ‘গুরুতর ভুল পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর মতে, এই চুক্তি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
নরেন্দ্র মোদি-নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার অবশ্য কিছুটা সংযত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র উল্লেখ করেছেন যে সরকার ‘জাতীয় নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার উপর এই চুক্তির প্রভাবগুলো খতিয়ে দেখবে’।
সব বিশ্লেষক অবশ্য এতটা শঙ্কিত নন। কেউ কেউ বলছেন, ভারত হয়তো এই চুক্তির ঝুঁকিকে বেশি বড় করে দেখছে। কারণ ভারত হচ্ছে সৌদি আরবের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার এবং দেশটির তেলের বড় ক্রেতা।
বৈদেশিক নীতি বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যানের মতে, চুক্তিটি নিয়ে অতিরিক্ত না ভাবাই ভালো। কুগেলম্যান বিবিসিকে বলেন, ‘এই চুক্তি সরাসরি ভারতের জন্য কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না। যেহেতু ভারতের সঙ্গে সৌদি আরবের ব্যাপক সম্পর্ক আছে, সেহেতু সৌদি ‘ভারতের বিরুদ্ধে শত্রুতামূলক কোনো কাজে জড়াবে না।’
তবু কুগেলম্যানের মতে, পাকিস্তানকে মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা কাঠামোয় যুক্ত করে এই চুক্তি ‘ভারতকে চেকমেট করেছে’। চীন, তুরস্ক এবং নতুন করে সৌদি আরবের মতো তিনটি পৃষ্ঠপোষক এখন পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়েছে।
কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন, এই চুক্তির আসল তাৎপর্য ভারতের জন্য কোনো তাৎক্ষণিক হুমকির মধ্যে নয়, বরং কীভাবে আঞ্চলিক জোটগুলোকে নতুন আকার দেয় তার মধ্যে নিহিত।
ওয়াশিংটনের হাডসন ইনস্টিটিউটের ফেলো ও পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুসাইন হাক্কানি বিবিসিকে বলেন, ‘ভারতের উদ্বেগ বহুমুখী। এই চুক্তির ফলে সৌদি আরবের অর্থনৈতিক শক্তি ব্যবহার করে ভারতের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য পাকিস্তান তার সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করতে পারে।’

মি. হাক্কানির মতে, সবকিছু নির্ভর করছে ‘আগ্রাসন’ শব্দের সংজ্ঞার ওপর। একইসঙ্গে তিনি সতর্ক করেছেন, এই চুক্তি ভারতের সঙ্গে সৌদির অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ককেও টানাপোড়েনে ফেলতে পারে।
কেউ কেউ আবার বলছেন, এই চুক্তিকে নতুন কোনো পরিবর্তন মনে করার কারণ নেই। দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিম এশিয়া গবেষণা কেন্দ্রের অধ্যাপক মোহাম্মদ মুদাসসির কামারের মতে, এটি মূলত ১৯৬০-এর দশক থেকে চলে আসা সৌদি-পাকিস্তান বোঝাপড়ার আনুষ্ঠানিক রূপ।
১৯৬০-এর দশকে পাকিস্তানি সেনা মোতায়েন থেকে শুরু করে ১৯৭৯ সালে মক্কার মসজিদ দখল সংকট দমনে পাকিস্তানি কমান্ডো পাঠানো পর্যন্ত দীর্ঘদিন ধরে সৌদি-পাকিস্তানের সম্পর্ক প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ওপর দাঁড়িয়ে। পরবর্তী সময়ে সৌদি পাকিস্তানি অস্ত্র কিনেছে, পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের দিয়ে বিমানবাহিনী গড়ে তুলেছে এবং পাকিস্তানকে আদর্শগত মিত্র ও নিরাপত্তা সহযোগী হিসেবে দেখেছে। ২০১৭ সালে রিয়াদ সৌদি-প্রযোজিত সন্ত্রাসবিরোধী জোটের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য একজন অবসরপ্রাপ্ত পাকিস্তানি সেনাপ্রধানকে নিয়োগ করেছিল।
হাক্কানির মতে, ১৯৭০-এর দশক থেকেই সৌদি আরব পাকিস্তানকে সমর্থন দিয়ে আসছে। ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালের যুদ্ধে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়ানো, অর্থনৈতিক সংকটে সাহায্য, তেল কেনায় বিলম্বিত অর্থপ্রদানের সুযোগ দেওয়া এবং ঘনিষ্ঠ সামরিক সহযোগিতা বজায় রাখা—সবই এর প্রমাণ।
উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর মার্কিন নিরাপত্তা ছাতার ওপর আস্থা হারানোও এই চুক্তির পেছনে বড় কারণ বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। গত ৯ সেপ্টেম্বর ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে যুক্তরাষ্ট্রের উপসাগরীয় মিত্রদেশ কাতারে। মুহূর্তেই ভেঙে পড়ে কয়েক দশক ধরে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি ও বহু বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তির মাধ্যমে গড়ে ওঠা অটল নিরাপত্তার মেকি আবরণ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের দীর্ঘদিনের বৈরিতা। ফলে রিয়াদ এককভাবে ওয়াশিংটনের ওপর নির্ভর করতে চাইছে না।
চুক্তিটি যুদ্ধক্ষেত্রে সরাসরি প্রতিশ্রুতির চেয়ে বরং বার্তা দেওয়ার জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ, এমনটা বলছেন চ্যাথাম হাউসের সহযোগী ফেলো ও এমিরেটস পলিসি সেন্টারের গবেষক আহমেদ আবুদুহ। তাঁর মতে, চুক্তিটি মূলত এ বার্তা দিতেই করা হয়েছে যে সৌদি আরব এখন নিরাপত্তা অংশীদারিত্বে বৈচিত্র্য আনছে, তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ছাড়ছে না। যদিও এই চুক্তির কার্যকারিতার গভীরতা অস্পষ্ট, তবে তারা ইরান ও ইসরায়েল দুই দেশকেই হুমকি হিসেবে দেখছে এবং পাকিস্তানের পারমাণবিক অবস্থান থেকে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর সুযোগ নিচ্ছে।
ভারতের জন্য এই চুক্তি সরাসরি সামরিক হুমকি নয়, বরং কূটনৈতিক ও কৌশলগত। আবুদুহের মতে, আসল ঝুঁকি হলো একটি বিস্তৃত জোট ‘ইসলামি ন্যাটো’তে রূপ নিলে উপসাগরীয় অঞ্চলে বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং কৌশলগত করিডোর জুড়ে দিল্লির 'পশ্চিমমুখী' নীতিকে জটিল করে তুলবে।
আবুদুহ আরও মনে করেন, এই চুক্তির ফলে পাকিস্তানের সামনে সুযোগ এসেছে সৌদির অর্থনৈতিক ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে সামরিক সক্ষমতা বাড়ানো এবং রিয়াদের সফট পাওয়ার ব্যবহার করে রাজনৈতিক সমর্থন আদায় করা। ফলে ভারতকে শুধু পাকিস্তানের সঙ্গেই নয়, বরং একটি বৃহত্তর মুসলিম জোটের মুখোমুখিও হতে হবে।
কুগেলম্যানের মতে, রাশিয়া, ইসরায়েল, উপসাগরীয় দেশ ও ফ্রান্সসহ পশ্চিমা অংশীদারদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ভালো। কিন্তু সমস্যা হলো, এই ধরনের চুক্তি ভারতের দুর্বলতা প্রকাশ করে না, বরং পাকিস্তানের শক্তি বাড়ছে সেই আভাস দেয়। এই চুক্তি আঞ্চলিক ভারসাম্যকে পাকিস্তানের অনুকূলে নিয়ে এসেছে।
চুক্তিটি তাৎক্ষণিক সামরিক হুমকি না হলেও কূটনৈতিকভাবে দিল্লির জন্য ভালো সংকেত নয়। ভবিষ্যতে এর কী প্রভাব পড়বে তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে ভারত তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন অবলম্বনে তুফায়েল আহমদ
.png)

আমেরিকার রাজনীতির গতিপথ বদলে দেওয়ার মতো এক আরেক ঐতিহাসিক নির্বাচনের সাক্ষী হলো যুক্তরাষ্ট্রের শহর সিয়াটল। বড় প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর টাকা আর করপোরেট শক্তির পৃষ্ঠপোষকতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সিয়াটলের নতুন মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন ৪৩ বছর বয়সী সমাজতান্ত্রিক জননেত্রী কেইটি উইলসন।
২ ঘণ্টা আগে
ব্রাজিলের বেলেমে চলমান (১০-২১ নভেম্বর ২০২৫) জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন কপ৩০-এ জলবায়ু কর্মী ও আদিবাসী নেতারা জীবাশ্ম জ্বালানি উত্তোলন নিয়ে তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, ভূগর্ভ থেকে তেল ও গ্যাস উত্তোলন অব্যাহত থাকলে মানবজাতি আত্মবিনাশের পথে যাবে।
৬ ঘণ্টা আগে
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি বৃহস্পতিবার দেশের ২৭তম সাংবিধানিক সংশোধনীতে স্বাক্ষর করেন। এটি সাম্প্রতিক দশকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক ও বিচার বিভাগীয় পুনর্গঠন।
৮ ঘণ্টা আগে
‘অপারেশন সাউদার্ন স্পিয়ার’শিরোনামে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে নতুন সামরিক অভিযানের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পিট হেগসেথ বৃহস্পতিবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই অভিযান শুরুর কথা বলেন। জয়েন্ট টাস্ক ফোর্স সাউদার্ন স্পিয়ার এবং সাউথকম এর নেতৃত্বে এই অভিযান চলবে।
১০ ঘণ্টা আগে