এ বছর জাতিসংঘের ৮০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। তবে আয়োজন হচ্ছে বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে। গাজা, ইউক্রেন ও সুদানের সংঘাত, জলবায়ু বিপর্যয় এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে স্থবিরতা এর মধ্যে অন্যতম।
স্ট্রিম ডেস্ক
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশন (ইউএনজি-এ৮০) শুরু হয় গত ৯ সেপ্টেম্বর। আর এর মূল আয়োজন হাই-লেভেল উইক শুরু হয়েছে ২২ সেপ্টেম্বর থেকে, যা শেষ হবে ৩০ সেপ্টেম্বর। এর মধ্যে ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হচ্ছে উচ্চ পর্যায়ের বিতর্ক। এ উপলক্ষে ১৫০টির বেশি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সমবেত হয়েছেন।
এ বছর জাতিসংঘের ৮০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। তবে আয়োজন হচ্ছে বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে। গাজা, ইউক্রেন ও সুদানের সংঘাত, জলবায়ু বিপর্যয় এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে স্থবিরতা এর মধ্যে অন্যতম।
আয়োজনের মূল প্রতিপাদ্য— ‘Better Together: 80 Years and More for Peace, Development, and Human Rights’ তথা ‘একসাথে আরও ভালো: শান্তি, উন্নয়ন ও মানবাধিকারের জন্য ৮০ বছর এবং তার পরেও’। এতে বহুপাক্ষিক সহযোগিতা, সংহতি এবং প্রজন্মান্তরের অংশীদারিত্বকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
অধিবেশনের সভাপতিত্ব করছেন জার্মানির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক। তিনি পশ্চিম ইউরোপীয় গ্রুপের প্রথম নারী সভাপতি এবং বয়সে তুলনামূলকভাবে তরুণ— ৪৪ বছর। অধিবেশনের শুরুতে জাতিসংঘ সনদের প্রতি নতুন অঙ্গীকারের আহ্বান জানানো হয়েছে। মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, ‘গুরুত্ব দিন এবং বাস্তব ফল আনুন।’
বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা থেকে অধিবেশন পূর্ণমাত্রায় চলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। বিশেষত ফিলিস্তিন প্রসঙ্গ, আফ্রিকার অন্তর্ভুক্তি এবং বিভিন্ন পার্শ্বচুক্তি, যেমন স্কলারশিপ কর্মসূচি নিয়ে সাড়া পড়েছে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এবার ১৫০টিরও বেশি রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান বক্তব্য রাখবেন। সব সদস্য রাষ্ট্রেরই বক্তব্য রাখার সুযোগ রয়েছে। ২৩-২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে এই বক্তব্য রাখার পর্ব।
প্রথা অনুযায়ী, ১৯৫৫ সাল থেকে সবসময় প্রথম বক্তা হিসেবে ব্রাজিল বক্তব্য দেয়। যুক্তরাষ্ট্র, আয়োজক দেশ হিসেবে, সাধারণত দ্বিতীয় বক্তা হয়। ফলে এ বছর সূচনায় একটি বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা প্রথমে বক্তব্য রাখেন। এরপরই বক্তব্য রাখেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
লুলা ও ট্রাম্পের সম্পর্ক বর্তমানে উত্তেজনাপূর্ণ। ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, লুলার সরকার যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র সাবেক প্রেসিডেন্ট জায়ার বলসোনারোকে রাজনৈতিকভাবে প্রতিহিংসার শিকার করছে। সম্প্রতি ২০২৩ সালের নির্বাচনে লুলার কাছে পরাজয়ের পর অভ্যুত্থান চেষ্টার দায়ে বলসোনারো দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
অন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোর বক্তব্যের ক্রম নির্ধারিত হয় প্রতিনিধির স্তর (রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান বা মন্ত্রী), রাষ্ট্রের পছন্দ এবং ভৌগোলিক ভারসাম্যের ভিত্তিতে। ভ্যাটিকান সিটি (হলি সি), ফিলিস্তিন রাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নও আলোচনায় অংশ নেবে। তাদের বক্তৃতার সময় নির্ধারণ হয় প্রতিনিধিত্বের স্তর অনুযায়ী।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ অনুষ্ঠিত হয় জাতিসংঘ সদর দপ্তরে। এটি নিউইয়র্ক সিটির ম্যানহাটনে ইস্ট রিভারের তীরে অবস্থিত। সদর দপ্তরের ভবনসমূহ ১৯৪৯ থেকে ১৯৫২ সালের মধ্যে নির্মিত হয়। এটি জাতিসংঘের মালিকানাধীন এবং আন্তর্জাতিক ভূখণ্ড হিসেবে বিবেচিত। এখানেই আন্তর্জাতিক কূটনীতির মূল কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। জেনারেল অ্যাসেম্বলি হলে একসঙ্গে ১,৮০০ জন বসতে পারেন।
প্রথম ছয়টি অধিবেশন নিউইয়র্কে হয়নি। সেগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছিল লন্ডন ও প্যারিসসহ বিভিন্ন শহরে। তবে ১৯৫২ সাল থেকে প্রায় সব অধিবেশন নিউইয়র্ক সদর দপ্তরেই হয়েছে।
কিছু ব্যতিক্রমও আছে। ১৯৮৮ সালে ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাতকে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা না দেওয়ায় অধিবেশন বসে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায়। ২০২৫ সালেও ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিদের ভিসা দেওয়া হয়নি। ফলে তারা ভার্চুয়ালি অংশ নিচ্ছেন।
এ নিয়ে সমালোচনা উঠেছে। জাতিসংঘ বলেছে, এটি ‘হোস্ট কান্ট্রি এগ্রিমেন্ট’-এর লঙ্ঘন। ওই চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রকে রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানদের নিউইয়র্কে ভ্রমণ ও বার্ষিক বৈঠকে অংশগ্রহণে অনুমতি দিতে হবে। কূটনীতিকদের পূর্ণ দায়মুক্তিও নিশ্চিত করতে হবে।
এই সপ্তাহের মূল আয়োজন হলো জেনারেল ডিবেট বা সাধারণ বিতর্ক। এর মূল পার্ব ২৩–২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে। এখানে রাষ্ট্রপ্রধানরা ১৫–৩০ মিনিটের বক্তব্য রাখবেন, যা জাতিসংঘের ওয়েব টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার হবে। অধিবেশন প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা ৪৫ মিনিট এবং বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। প্রয়োজন হলে অতিরিক্ত সময়ও যোগ করা হবে।
২২ সেপ্টেম্বর (প্রাক-সপ্তাহ)
এসডিজি মোমেন্ট: টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় অগ্রগতি তুলে ধরা হয়। অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবর্তনে জোর দেওয়া হয়।
ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতি সম্মেলন: ফ্রান্স ও সৌদি আরব যৌথভাবে আয়োজন করে। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, পর্তুগাল ও যুক্তরাজ্য (২১ সেপ্টেম্বর) এবং ফ্রান্স, অ্যান্ডোরা, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা ও মোনাকো (২২ সেপ্টেম্বর) ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়। জাতিসংঘের মোট ১৯৩ সদস্যের মধ্যে ১৫৭টি দেশ এখন ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এর বিরোধিতা করেছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা না দেওয়ায় তিনি ২৫ সেপ্টেম্বর ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেবেন।
বেইজিং+৩০: নারী অধিকার ও লিঙ্গ সমতার জন্য চতুর্থ বিশ্ব নারী সম্মেলনের ৩০ বছর পূর্তি উদযাপন।
২৩ সেপ্টেম্বর
জেনারেল ডিবেট উদ্বোধন: ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা প্রথমে বক্তব্য রাখেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার পরেই বক্তব্য দেন।
গ্লোবাল কমপ্যাক্ট লিডার্স সামিট: ব্যবসা ও এসডিজি সমন্বয় নিয়ে আলোচনা হয়।
২৪ সেপ্টেম্বর
ক্লাইমেট সামিট ২০২৫-এর পার্শ্ব ইভেন্ট: মিথেন নির্গমন হ্রাস নিয়ে বৈঠক (সকাল ৮টা–৯:৩০)।
ইউরোপীয় ও আফ্রিকান নেতারা বক্তব্য রাখবেন। ইউরোপীয় কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কোস্তা নিরাপত্তা পরিষদে ভাষণ দেবেন।
২৫ সেপ্টেম্বর
ওয়ার্ল্ড প্রোগ্রাম অফ অ্যাকশন ফর ইয়ুথ-এর ৩০ বছর উপলক্ষে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক। বিকেল ৩টা থেকে ৬টা ট্রাস্টিশিপ কাউন্সিলে অনুষ্ঠিত হবে।
আন্তোনিও কোস্তা প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর নেতাদের নিয়ে বৈঠক করবেন।
২৬ সেপ্টেম্বর
ইসরায়েল, যুক্তরাজ্য ও সংশ্লিষ্ট সংঘাত (সুদান, ইকুয়েডর) বিরোধী বিক্ষোভ।
চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং বক্তব্য রাখবেন।
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও বক্তব্য রাখবেন।
২৭ সেপ্টেম্বর
জেনারেল ডিবেট শেষ হবে।
গোলস লাউঞ্জ সংলাপ: এআই শাসনব্যবস্থা ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা।
২৮ সেপ্টেম্বর
কোনো পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন হবে না (সাবাথের কারণে)।
তবে অনানুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক চলতে থাকবে।
২৯ সেপ্টেম্বর
সমাপনী আলোচনা
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এবারের এজেন্ডা বিশ্বের চলমান অস্থিরতার প্রতিফলন ঘটেছে। মূল বিতর্কগুলো হলো—
ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি: ২০২৪ সালের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দিয়ে ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ আটকে দেয়। অথচ তখন ১৪২টি দেশ দুই রাষ্ট্র সমাধানকে সমর্থন করেছিল। সর্বশেষ মোট ১৫৭টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও সহায়তা জোরদার করেছে। ইউরোপীয় কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট কোস্তা যুদ্ধবিরতি, জিম্মিদের মুক্তি এবং গাজায় সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন।
সিরিয়ার প্রত্যাবর্তন: দেশটির অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা ২৪ সেপ্টেম্বর ভাষণ দেবেন। ১৯৬৭ সালের পর এই প্রথম সিরিয়া জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বক্তব্য রাখছে।
যুক্তরাষ্ট্র-জাতিসংঘ উত্তেজনা: ট্রাম্প প্রশাসনের কাটছাঁটে জাতিসংঘের অর্থায়ন ৪০ শতাংশ কমে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনেস্কো ও প্যারিস চুক্তি থেকেও বেরিয়ে গেছে। সমালোচকরা বলছেন, এতে দারিদ্র্য, স্বাস্থ্য ও নারী বিষয়ক কর্মসূচি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
চীনের প্রভাব: যুক্তরাষ্ট্রের পিছু হটার ফলে চীন সফট পাওয়ার বাড়াচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং ২৬ সেপ্টেম্বর বক্তব্য রাখবেন। তবে চীন জাতিসংঘের আর্থিক ঘাটতি পূরণ করছে না।
জলবায়ু ও এসডিজি: মিথেন নির্গমন হ্রাস, প্রারম্ভিক সতর্কীকরণ ব্যবস্থা ও এসডিজি অর্থায়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন টেকসই উন্নয়নকে জোর দিচ্ছে।
অন্যান্য সংঘাত: ইউক্রেন, সুদান, কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ও সোমালিয়ার বিষয়গুলো আলোচনায় থাকবে।
জাতিসংঘ সংস্কার: ‘ইউএন৮০’ উদ্যোগে আফ্রিকার জন্য আরও আসন, তরুণদের অন্তর্ভুক্তি এবং শান্তির কাঠামোকে শক্তিশালী করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এবারের অধিবেশন থেকে কোনো বাধ্যতামূলক প্রস্তাব গৃহীত হবে না। তবে এটি নিরাপত্তা পরিষদের ভোট, জলবায়ু অঙ্গীকার (কপ-৩০ প্রস্তুতি) এবং এসডিজি অর্থায়নকে প্রভাবিত করবে। পূর্বের দৃষ্টান্ত অনুযায়ী ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থায়নের ঘোষণা আসতে পারে। দ্বিপাক্ষিক চুক্তি, যেমন মালদ্বীপ–হাঙ্গেরি বৃত্তি কর্মসূচি, গৃহীত হতে পারে। সংস্কার প্রতিশ্রুতিও আসবে, বিশেষত আফ্রিকার অন্তর্ভুক্তি ও এআই শাসনব্যবস্থা নিয়ে। মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস একে তুলনা করেছেন ‘কূটনীতির বিশ্বকাপ’-এর সঙ্গে— যেখানে লক্ষ্য সমস্যার সমাধান, প্রতিযোগিতা নয়।
জাতিসংঘের ৮০তম অধিবেশন তার প্রাসঙ্গিকতাকে পরীক্ষা করছে। একদিকে যুক্তরাষ্ট্র সরে যাচ্ছে, অন্যদিকে চীন প্রভাব বাড়াচ্ছে। একই সময়ে গাজা থেকে শুরু করে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন পর্যন্ত নানা সংকট বিদ্যমান। সভাপতি আনালেনা বেয়ারবক ও মহাসচিব গুতেরেস এটিকে জাতিসংঘ সনদের শান্তি ও ন্যায়ের আদর্শে নতুনভাবে অঙ্গীকার করার সুযোগ হিসেবে দেখছেন। তবে অর্থসংকট ও ভেটো ব্যবহার—বিশেষত ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো—একটি বড় বাধা।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের মতে, জাতিসংঘ বর্তমানে ‘সংকটে’ আছে। তবু যুদ্ধক্ষেত্র ও কূটনীতির জন্য এটি এখনো অপরিহার্য সুরক্ষা-ব্যবস্থা।
বিতর্ক জাতিসংঘ ওয়েব টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার দেখা যাবে। বিশ্বনেতারা বাস্তব সমাধান দিতে পারেন কি না, নাকি শুধু বক্তব্যেই সীমাবদ্ধ থাকবেন—এটি সবার নজরে থাকবে।
বিশ্লেষকদের মতে, জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ পরিষদে এ প্রশ্নটি অন্যতম বড় আলোচ্য বিষয় হিসেবে উঠে আসার কথা ছিল। প্রতিষ্ঠার ৮০ বছর পরও সংগঠনটি কি শান্তি প্রতিষ্ঠায় তার মূল লক্ষ্য পূরণ করতে পারছে, তা নিয়েই বিতর্ক হওয়ার দরকার ছিল। তবে কূটনীতিকদের অনেকেই আরও সাধারণ সমস্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন। যেমন— অর্থনৈতিক সংকট এবং দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসনের সম্ভাবনায় জাতিসংঘের টিকে থাকা।
জাতিসংঘের মানবিক ও জরুরি ত্রাণবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার বলেন, জাতিসংঘ আজ ‘এক নিখুঁত ঝড়ের’মুখে। এটি অর্থের অভাবে ভুগছে, অতিরিক্ত চাপের মধ্যে আছে এবং নানা দিক থেকে আক্রমণের শিকার। গত বছরের তুলনায় এর অর্থায়ন ৪০ শতাংশ কমেছে। গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এর সর্বাধিক সংখ্যক ত্রাণকর্মী নিহত হয়েছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জাতিসংঘে অর্থায়ন কমিয়েছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনেস্কো থেকে বের করে এনেছেন। তার প্রশাসন জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) প্রত্যাখ্যান করেছে। দারিদ্র্য ও ক্ষুধা দূরীকরণের মতো লক্ষ্যগুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে, এসব উল্লেখ করা প্রস্তাবেও যুক্তরাষ্ট্র বিরোধিতা করছে।
আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের জাতিসংঘ বিষয়ক পরিচালক রিচার্ড গাওয়ান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র অবিশ্বাস্য রকমের ক্ষুদ্র-মানসিকতাপূর্ণ আচরণ করছে।’
ফোর্ডহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ আনজলি দয়াল বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র একসময় জাতিসংঘের সবচেয়ে বড় অর্থদাতা ছিল। এখন সেটি জাতিসংঘের জন্য অস্থিতিশীলতার প্রধান উৎসে পরিণত হয়েছে।’
তার মতে, জাতিসংঘের মূল কাজ—দারিদ্র্য হ্রাস, জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন, লিঙ্গ সমতা—এসব ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এখন সক্রিয়ভাবে বাধা দিচ্ছে।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, সিএনএন, এনপিআর, দ্য গার্ডিয়ান
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশন (ইউএনজি-এ৮০) শুরু হয় গত ৯ সেপ্টেম্বর। আর এর মূল আয়োজন হাই-লেভেল উইক শুরু হয়েছে ২২ সেপ্টেম্বর থেকে, যা শেষ হবে ৩০ সেপ্টেম্বর। এর মধ্যে ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হচ্ছে উচ্চ পর্যায়ের বিতর্ক। এ উপলক্ষে ১৫০টির বেশি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সমবেত হয়েছেন।
এ বছর জাতিসংঘের ৮০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। তবে আয়োজন হচ্ছে বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে। গাজা, ইউক্রেন ও সুদানের সংঘাত, জলবায়ু বিপর্যয় এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে স্থবিরতা এর মধ্যে অন্যতম।
আয়োজনের মূল প্রতিপাদ্য— ‘Better Together: 80 Years and More for Peace, Development, and Human Rights’ তথা ‘একসাথে আরও ভালো: শান্তি, উন্নয়ন ও মানবাধিকারের জন্য ৮০ বছর এবং তার পরেও’। এতে বহুপাক্ষিক সহযোগিতা, সংহতি এবং প্রজন্মান্তরের অংশীদারিত্বকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
অধিবেশনের সভাপতিত্ব করছেন জার্মানির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক। তিনি পশ্চিম ইউরোপীয় গ্রুপের প্রথম নারী সভাপতি এবং বয়সে তুলনামূলকভাবে তরুণ— ৪৪ বছর। অধিবেশনের শুরুতে জাতিসংঘ সনদের প্রতি নতুন অঙ্গীকারের আহ্বান জানানো হয়েছে। মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, ‘গুরুত্ব দিন এবং বাস্তব ফল আনুন।’
বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা থেকে অধিবেশন পূর্ণমাত্রায় চলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। বিশেষত ফিলিস্তিন প্রসঙ্গ, আফ্রিকার অন্তর্ভুক্তি এবং বিভিন্ন পার্শ্বচুক্তি, যেমন স্কলারশিপ কর্মসূচি নিয়ে সাড়া পড়েছে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এবার ১৫০টিরও বেশি রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান বক্তব্য রাখবেন। সব সদস্য রাষ্ট্রেরই বক্তব্য রাখার সুযোগ রয়েছে। ২৩-২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে এই বক্তব্য রাখার পর্ব।
প্রথা অনুযায়ী, ১৯৫৫ সাল থেকে সবসময় প্রথম বক্তা হিসেবে ব্রাজিল বক্তব্য দেয়। যুক্তরাষ্ট্র, আয়োজক দেশ হিসেবে, সাধারণত দ্বিতীয় বক্তা হয়। ফলে এ বছর সূচনায় একটি বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা প্রথমে বক্তব্য রাখেন। এরপরই বক্তব্য রাখেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
লুলা ও ট্রাম্পের সম্পর্ক বর্তমানে উত্তেজনাপূর্ণ। ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, লুলার সরকার যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র সাবেক প্রেসিডেন্ট জায়ার বলসোনারোকে রাজনৈতিকভাবে প্রতিহিংসার শিকার করছে। সম্প্রতি ২০২৩ সালের নির্বাচনে লুলার কাছে পরাজয়ের পর অভ্যুত্থান চেষ্টার দায়ে বলসোনারো দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
অন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোর বক্তব্যের ক্রম নির্ধারিত হয় প্রতিনিধির স্তর (রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান বা মন্ত্রী), রাষ্ট্রের পছন্দ এবং ভৌগোলিক ভারসাম্যের ভিত্তিতে। ভ্যাটিকান সিটি (হলি সি), ফিলিস্তিন রাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নও আলোচনায় অংশ নেবে। তাদের বক্তৃতার সময় নির্ধারণ হয় প্রতিনিধিত্বের স্তর অনুযায়ী।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ অনুষ্ঠিত হয় জাতিসংঘ সদর দপ্তরে। এটি নিউইয়র্ক সিটির ম্যানহাটনে ইস্ট রিভারের তীরে অবস্থিত। সদর দপ্তরের ভবনসমূহ ১৯৪৯ থেকে ১৯৫২ সালের মধ্যে নির্মিত হয়। এটি জাতিসংঘের মালিকানাধীন এবং আন্তর্জাতিক ভূখণ্ড হিসেবে বিবেচিত। এখানেই আন্তর্জাতিক কূটনীতির মূল কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। জেনারেল অ্যাসেম্বলি হলে একসঙ্গে ১,৮০০ জন বসতে পারেন।
প্রথম ছয়টি অধিবেশন নিউইয়র্কে হয়নি। সেগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছিল লন্ডন ও প্যারিসসহ বিভিন্ন শহরে। তবে ১৯৫২ সাল থেকে প্রায় সব অধিবেশন নিউইয়র্ক সদর দপ্তরেই হয়েছে।
কিছু ব্যতিক্রমও আছে। ১৯৮৮ সালে ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাতকে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা না দেওয়ায় অধিবেশন বসে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায়। ২০২৫ সালেও ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিদের ভিসা দেওয়া হয়নি। ফলে তারা ভার্চুয়ালি অংশ নিচ্ছেন।
এ নিয়ে সমালোচনা উঠেছে। জাতিসংঘ বলেছে, এটি ‘হোস্ট কান্ট্রি এগ্রিমেন্ট’-এর লঙ্ঘন। ওই চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রকে রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানদের নিউইয়র্কে ভ্রমণ ও বার্ষিক বৈঠকে অংশগ্রহণে অনুমতি দিতে হবে। কূটনীতিকদের পূর্ণ দায়মুক্তিও নিশ্চিত করতে হবে।
এই সপ্তাহের মূল আয়োজন হলো জেনারেল ডিবেট বা সাধারণ বিতর্ক। এর মূল পার্ব ২৩–২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে। এখানে রাষ্ট্রপ্রধানরা ১৫–৩০ মিনিটের বক্তব্য রাখবেন, যা জাতিসংঘের ওয়েব টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার হবে। অধিবেশন প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা ৪৫ মিনিট এবং বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। প্রয়োজন হলে অতিরিক্ত সময়ও যোগ করা হবে।
২২ সেপ্টেম্বর (প্রাক-সপ্তাহ)
এসডিজি মোমেন্ট: টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় অগ্রগতি তুলে ধরা হয়। অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবর্তনে জোর দেওয়া হয়।
ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতি সম্মেলন: ফ্রান্স ও সৌদি আরব যৌথভাবে আয়োজন করে। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, পর্তুগাল ও যুক্তরাজ্য (২১ সেপ্টেম্বর) এবং ফ্রান্স, অ্যান্ডোরা, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা ও মোনাকো (২২ সেপ্টেম্বর) ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়। জাতিসংঘের মোট ১৯৩ সদস্যের মধ্যে ১৫৭টি দেশ এখন ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এর বিরোধিতা করেছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা না দেওয়ায় তিনি ২৫ সেপ্টেম্বর ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেবেন।
বেইজিং+৩০: নারী অধিকার ও লিঙ্গ সমতার জন্য চতুর্থ বিশ্ব নারী সম্মেলনের ৩০ বছর পূর্তি উদযাপন।
২৩ সেপ্টেম্বর
জেনারেল ডিবেট উদ্বোধন: ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা প্রথমে বক্তব্য রাখেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার পরেই বক্তব্য দেন।
গ্লোবাল কমপ্যাক্ট লিডার্স সামিট: ব্যবসা ও এসডিজি সমন্বয় নিয়ে আলোচনা হয়।
২৪ সেপ্টেম্বর
ক্লাইমেট সামিট ২০২৫-এর পার্শ্ব ইভেন্ট: মিথেন নির্গমন হ্রাস নিয়ে বৈঠক (সকাল ৮টা–৯:৩০)।
ইউরোপীয় ও আফ্রিকান নেতারা বক্তব্য রাখবেন। ইউরোপীয় কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কোস্তা নিরাপত্তা পরিষদে ভাষণ দেবেন।
২৫ সেপ্টেম্বর
ওয়ার্ল্ড প্রোগ্রাম অফ অ্যাকশন ফর ইয়ুথ-এর ৩০ বছর উপলক্ষে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক। বিকেল ৩টা থেকে ৬টা ট্রাস্টিশিপ কাউন্সিলে অনুষ্ঠিত হবে।
আন্তোনিও কোস্তা প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর নেতাদের নিয়ে বৈঠক করবেন।
২৬ সেপ্টেম্বর
ইসরায়েল, যুক্তরাজ্য ও সংশ্লিষ্ট সংঘাত (সুদান, ইকুয়েডর) বিরোধী বিক্ষোভ।
চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং বক্তব্য রাখবেন।
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও বক্তব্য রাখবেন।
২৭ সেপ্টেম্বর
জেনারেল ডিবেট শেষ হবে।
গোলস লাউঞ্জ সংলাপ: এআই শাসনব্যবস্থা ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা।
২৮ সেপ্টেম্বর
কোনো পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন হবে না (সাবাথের কারণে)।
তবে অনানুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক চলতে থাকবে।
২৯ সেপ্টেম্বর
সমাপনী আলোচনা
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এবারের এজেন্ডা বিশ্বের চলমান অস্থিরতার প্রতিফলন ঘটেছে। মূল বিতর্কগুলো হলো—
ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি: ২০২৪ সালের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দিয়ে ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ আটকে দেয়। অথচ তখন ১৪২টি দেশ দুই রাষ্ট্র সমাধানকে সমর্থন করেছিল। সর্বশেষ মোট ১৫৭টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও সহায়তা জোরদার করেছে। ইউরোপীয় কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট কোস্তা যুদ্ধবিরতি, জিম্মিদের মুক্তি এবং গাজায় সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন।
সিরিয়ার প্রত্যাবর্তন: দেশটির অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা ২৪ সেপ্টেম্বর ভাষণ দেবেন। ১৯৬৭ সালের পর এই প্রথম সিরিয়া জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বক্তব্য রাখছে।
যুক্তরাষ্ট্র-জাতিসংঘ উত্তেজনা: ট্রাম্প প্রশাসনের কাটছাঁটে জাতিসংঘের অর্থায়ন ৪০ শতাংশ কমে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনেস্কো ও প্যারিস চুক্তি থেকেও বেরিয়ে গেছে। সমালোচকরা বলছেন, এতে দারিদ্র্য, স্বাস্থ্য ও নারী বিষয়ক কর্মসূচি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
চীনের প্রভাব: যুক্তরাষ্ট্রের পিছু হটার ফলে চীন সফট পাওয়ার বাড়াচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং ২৬ সেপ্টেম্বর বক্তব্য রাখবেন। তবে চীন জাতিসংঘের আর্থিক ঘাটতি পূরণ করছে না।
জলবায়ু ও এসডিজি: মিথেন নির্গমন হ্রাস, প্রারম্ভিক সতর্কীকরণ ব্যবস্থা ও এসডিজি অর্থায়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন টেকসই উন্নয়নকে জোর দিচ্ছে।
অন্যান্য সংঘাত: ইউক্রেন, সুদান, কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ও সোমালিয়ার বিষয়গুলো আলোচনায় থাকবে।
জাতিসংঘ সংস্কার: ‘ইউএন৮০’ উদ্যোগে আফ্রিকার জন্য আরও আসন, তরুণদের অন্তর্ভুক্তি এবং শান্তির কাঠামোকে শক্তিশালী করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এবারের অধিবেশন থেকে কোনো বাধ্যতামূলক প্রস্তাব গৃহীত হবে না। তবে এটি নিরাপত্তা পরিষদের ভোট, জলবায়ু অঙ্গীকার (কপ-৩০ প্রস্তুতি) এবং এসডিজি অর্থায়নকে প্রভাবিত করবে। পূর্বের দৃষ্টান্ত অনুযায়ী ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থায়নের ঘোষণা আসতে পারে। দ্বিপাক্ষিক চুক্তি, যেমন মালদ্বীপ–হাঙ্গেরি বৃত্তি কর্মসূচি, গৃহীত হতে পারে। সংস্কার প্রতিশ্রুতিও আসবে, বিশেষত আফ্রিকার অন্তর্ভুক্তি ও এআই শাসনব্যবস্থা নিয়ে। মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস একে তুলনা করেছেন ‘কূটনীতির বিশ্বকাপ’-এর সঙ্গে— যেখানে লক্ষ্য সমস্যার সমাধান, প্রতিযোগিতা নয়।
জাতিসংঘের ৮০তম অধিবেশন তার প্রাসঙ্গিকতাকে পরীক্ষা করছে। একদিকে যুক্তরাষ্ট্র সরে যাচ্ছে, অন্যদিকে চীন প্রভাব বাড়াচ্ছে। একই সময়ে গাজা থেকে শুরু করে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন পর্যন্ত নানা সংকট বিদ্যমান। সভাপতি আনালেনা বেয়ারবক ও মহাসচিব গুতেরেস এটিকে জাতিসংঘ সনদের শান্তি ও ন্যায়ের আদর্শে নতুনভাবে অঙ্গীকার করার সুযোগ হিসেবে দেখছেন। তবে অর্থসংকট ও ভেটো ব্যবহার—বিশেষত ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো—একটি বড় বাধা।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের মতে, জাতিসংঘ বর্তমানে ‘সংকটে’ আছে। তবু যুদ্ধক্ষেত্র ও কূটনীতির জন্য এটি এখনো অপরিহার্য সুরক্ষা-ব্যবস্থা।
বিতর্ক জাতিসংঘ ওয়েব টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার দেখা যাবে। বিশ্বনেতারা বাস্তব সমাধান দিতে পারেন কি না, নাকি শুধু বক্তব্যেই সীমাবদ্ধ থাকবেন—এটি সবার নজরে থাকবে।
বিশ্লেষকদের মতে, জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ পরিষদে এ প্রশ্নটি অন্যতম বড় আলোচ্য বিষয় হিসেবে উঠে আসার কথা ছিল। প্রতিষ্ঠার ৮০ বছর পরও সংগঠনটি কি শান্তি প্রতিষ্ঠায় তার মূল লক্ষ্য পূরণ করতে পারছে, তা নিয়েই বিতর্ক হওয়ার দরকার ছিল। তবে কূটনীতিকদের অনেকেই আরও সাধারণ সমস্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন। যেমন— অর্থনৈতিক সংকট এবং দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসনের সম্ভাবনায় জাতিসংঘের টিকে থাকা।
জাতিসংঘের মানবিক ও জরুরি ত্রাণবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার বলেন, জাতিসংঘ আজ ‘এক নিখুঁত ঝড়ের’মুখে। এটি অর্থের অভাবে ভুগছে, অতিরিক্ত চাপের মধ্যে আছে এবং নানা দিক থেকে আক্রমণের শিকার। গত বছরের তুলনায় এর অর্থায়ন ৪০ শতাংশ কমেছে। গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এর সর্বাধিক সংখ্যক ত্রাণকর্মী নিহত হয়েছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জাতিসংঘে অর্থায়ন কমিয়েছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনেস্কো থেকে বের করে এনেছেন। তার প্রশাসন জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) প্রত্যাখ্যান করেছে। দারিদ্র্য ও ক্ষুধা দূরীকরণের মতো লক্ষ্যগুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে, এসব উল্লেখ করা প্রস্তাবেও যুক্তরাষ্ট্র বিরোধিতা করছে।
আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের জাতিসংঘ বিষয়ক পরিচালক রিচার্ড গাওয়ান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র অবিশ্বাস্য রকমের ক্ষুদ্র-মানসিকতাপূর্ণ আচরণ করছে।’
ফোর্ডহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ আনজলি দয়াল বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র একসময় জাতিসংঘের সবচেয়ে বড় অর্থদাতা ছিল। এখন সেটি জাতিসংঘের জন্য অস্থিতিশীলতার প্রধান উৎসে পরিণত হয়েছে।’
তার মতে, জাতিসংঘের মূল কাজ—দারিদ্র্য হ্রাস, জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন, লিঙ্গ সমতা—এসব ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এখন সক্রিয়ভাবে বাধা দিচ্ছে।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, সিএনএন, এনপিআর, দ্য গার্ডিয়ান
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভাষণ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে ভাষণের শুরুতেই জাতিসংঘ কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা নিয়ে ‘গুরুতর’ অভিযোগ করেছেন ট্রাম্প।
৭ ঘণ্টা আগেচলতি বছরের সবচেয়ে শক্তিশালী উপকূলীয় ঘূর্ণিঝড় সুপার টাইফোন রাগাসা হংকং ও তাইওয়ানে আঘাত হেনেছে। ঘূর্ণিঝড়টির তাণ্ডবে এবং প্রবল বৃষ্টিপাতে তাইওয়ানে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে ভারী বৃষ্টি ও প্রবল বাতাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে হংকং।
৯ ঘণ্টা আগেজাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পুরো ভাষণে ট্রাম্পের স্বভাবসুলভ রসিকতা, প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও বিস্ফোরক মন্তব্যে ভর্তি। নির্ধারিত ১৫ মিনিটের পরিবর্তে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে দেওয়া এই ভাষণে ট্রাম্প জাতিসংঘ থেকে শুরু করে মিত্র দেশ, অভিবাসন নীত
১ দিন আগেগত সপ্তাহে রিয়াদে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের আলিঙ্গনের প্রতীকী তাৎপর্য স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
১ দিন আগে