leadT1ad

ভাষা এলো কীভাবে, গবেষণায় মিলল উৎস

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক

প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৪: ১২
সংগৃহীত ছবি

মানুষ ভাষা কোথা থেকে পেল– বছরের পর বছর এই প্রশ্ন ঘুরছে। দার্শনিকরা উত্তর লিখেছেন, নৃবিজ্ঞানীরা সংগ্রহ করছেন প্রমাণ। ভাষাবিজ্ঞানীরা অসংখ্য ধারণা ভেঙেচুরে গড়লেও, উৎস রহস্যের ঘেরাটোপেই থেকে গেছে।

অবশ্য সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা এসব ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। গবেষকরা বলছেন, ভাষার কোনো একক ‘শিকড়’ নেই। বরং এটি বহু শাখা-প্রশাখার মেলবন্ধনে হয়েছে। এই যেমন: জীববিদ্যা, জ্ঞানীয় ক্ষমতা, সামাজিক আচরণ ও সংস্কৃতির পরম্পরা মিলে মানুষের এই অনন্য দক্ষতা তৈরি হয়েছে।

১০ আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞের দল এই গবেষণা করেছে। দলের প্রধান লেখক ইনবল আর্নন বলেছেন, ‘ভাষার বিবর্তন একা কোনো পথ ধরে হয়নি। আমরা দেখাতে চেয়েছি, বহুস্তরিক জৈবিক ও সাংস্কৃতিক প্রক্রিয়া ভাষার জন্মে কীভাবে ভূমিকা রেখেছে।’

‘ভাষার উৎপত্তি বিশ্লেষণ করতে হলে ডিএনএ থেকে শুরু করে শিশুর ভাষা শেখা, আদিম মানুষের সামাজিক জীবন, এমনকি পাখির গান– সবকিছুকে পাশাপাশি দেখতে হবে’, মনে করেন তিনি।

যথেষ্ট নয় একক উৎসের ধারণা

নতুন গবেষণা বলছে, ভাষা গঠিত হয়েছে একাধিক ক্ষমতার যোগফলে। প্রতিটি ক্ষমতা এসেছে ভিন্ন বিবর্তনীয় ইতিহাস থেকে। এই ক্ষমতাগুলো সংস্কৃতি ও সামাজিক শেখার মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত।

গবেষকেরা দেখেছেন, বিভিন্ন শাখার গবেষণা যখন আলাদাভাবে চলে, তখন ভাষার উৎস নিয়ে অগ্রগতি আটকে যায়। কিন্তু যখন ভাষাবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, প্রাণী সংযোগ গবেষণা, স্নায়ুবিজ্ঞান, জেনেটিক্স– এসব এক জায়গায় মিলিত হয়, তখন ভাষার বিবর্তনের দেখা মেলে বড় ক্যানভাসে।

ভাষার জন্মের তিন গল্প

গবেষণা দল তিনটি আলাদা দৃষ্টিকোণ থেকে ভাষার বিবর্তন ব্যাখ্যা করেছে। তবে এগুলোর সার্বিক অর্থ এটাই বলে– ভাষা কেবল একটিমাত্র ক্ষমতার ফসল নয়। বরং বহু ক্ষমতার সম্মিলিত নকশা।

১. বাক্শিক্ষা: মানুষ কথা বলতে শেখে অন্যের উচ্চারণ অনুকরণ করে। এই ক্ষমতাকে বলে ভোকাল লার্নিং। আশ্চর্যের বিষয়, মানুষ ছাড়াও দূর সম্পর্কিত অনেক প্রাণী স্বাধীনভাবে এই ক্ষমতা অর্জন করেছে। যেমন : কিছু গান গাওয়া পাখি, বাদুড়, তিমি ও ডলফিন। তাদের রয়েছে আশ্চর্য শব্দ অনুকরণের ক্ষমতা।

তাদের জেনেটিক ও আচরণগত গবেষণা দেখায়, মানুষের শব্দ শেখার দক্ষতাও এমন এক বিবর্তনীয় ক্ষমতা, যা অন্য জায়গায় কখনও, কোনোভাবে উঠে এসেছে।

২. ভাষার কাঠামো : মানুষের ব্যাকরণ নিজে নিজে বা হঠাৎ করে তৈরি হয়নি। গবেষকরা দেখিয়েছেন, প্রথমে আসে সহজ সংকেত। ধীরে ধীরে ব্যবহারের মাধ্যমে যোগ হয় নতুন ধরন। তারপর আসে বাক্যগঠনের মতো জটিল কাঠামো। পরীক্ষাগারে সংস্কৃতির বিবর্তনের যে মডেল তৈরি হয়েছে, তাতেও দেখা যায়, নিয়মিত শেখা ও ব্যবহারই ভাষার কাঠামো তৈরি করে।

তবে এর জন্য দরকার– মস্তিষ্কীয় ক্ষমতা, প্যাটার্ন শনাক্তকরণ, দীর্ঘ সময় ধরে সমাজে শেখা। আর এই তিনের মিলনেই মানুষের বিশেষত্ব।

৩. সামাজিক ভিত্তি : ভাষার লক্ষ্যই সামাজিক যোগাযোগ। গবেষণা দেখিয়েছে, শিশুদের ভাষা শেখার জন্য শুধু শব্দ নয়, সামাজিক যোগাযোগও অপরিহার্য। এমনকি পাখির গান শেখাও হয় সামাজিক আদান-প্রদান থেকে। মানুষ তথ্য ভাগাভাগিতে স্বভাবগতভাবে খুব উৎসাহী। এই তথ্য ভাগাভাগির ইচ্ছাই মানুষকে আলাদা করেছে।

প্রাণিজগতে এরকম প্রবণতা নেই বললেই চলে। আর মানুষের ভাষাকে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করেছে এরাই।

কেন এই গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ

ভাষার বিবর্তন বোঝা শুধু মানব ইতিহাসই ব্যাখ্যা করে না। এ গবেষণা নতুন দিক খুলে দেয় তিনটি ক্ষেত্রে।

১. ভাষা শিক্ষা: কীভাবে শিশু ভাষা শেখে, কী তাদের দ্রুত শেখায় তা আরও স্পষ্ট হয়।

২. ভাষা বহুস্তরিক: এটি নতুন ধরনের ভাষাভিত্তিক এআই তৈরি করতে সহায়ক।

৩. যোগাযোগ-সংক্রান্ত ব্যাধি: অটিজম, ডিসলেক্সিয়া বা ভাষাগত সমস্যা বোঝার ক্ষেত্রে জৈবিক ও সাংস্কৃতিক বিশ্লেষণ নতুন পথ দেখায়।

ভাষার উৎস এক রহস্য! কিন্তু এই গবেষণা দেখিয়েছে, ভাষা কোনো একমুহূর্তের বিস্ময় নয়। এটি ধীরে ধীরে গড়ে ওঠা বহু ক্ষমতার মিলিত কাহিনি। জীববিদ্যা, সামাজিকতা, শেখা ও সংস্কৃতির এক অবিশ্বাস্য সমন্বয়। মানব ভাষা তাই শুধু শব্দের সমষ্টি নয়। এটি মানবজীবনের গভীর বিবর্তনীয় স্মৃতি।

তথ্যসূত্র: ফিজ ডট অরগ

Ad 300x250

সম্পর্কিত