সালেহ ফুয়াদ
গাজায় প্রায় ৬৭ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার পর ইসরায়েলের সরকার ‘প্রথম ধাপ’ হিসেবে যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুমোদন করেছে। গতকাল শুক্রবার (১০ অক্টোবর) আল-জাজিরা জানিয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী এবার বন্দি বিনিময় হবে, এছাড়া ইসরায়েল গাজার কিছু অংশ থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে। তবে এই চুক্তি কীভাবে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়।
অন্যদিকে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় হামাসের পক্ষে অংশ নেওয়া নেতা খলিল আল-হাইয়া জানিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য মধ্যস্থতাকারী পক্ষ তাদের নিশ্চয়তা দিয়েছে যে, প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি চুক্তির অর্থ হলো গাজায় যুদ্ধ ‘সম্পূর্ণরূপে শেষ’ হয়েছে।
‘তুফান আল-আকসা’ নামে যে অভিযান হামাস ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর চালিয়েছিল তারপর দুই বছর কেটে গেছে। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ-যোদ্ধাদের চালানো সেই অভিযানের পরে টানা দুই বছর ধরে গাজায় ‘নির্মূল যুদ্ধ‘ চালিয়েছে ইসরায়েল। যুদ্ধ আংশিক বা পূর্ণ যে রূপেই শেষ হোক না কেন, এই দুই বছরে প্রতিরোধ আন্দোলন হিসেবে হামাস আর রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েল—নিজেদের অবস্থান, সম্ভাবনা ও প্রকল্প নিয়ে কে কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে তার মূল্যায়ন প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।
তবে বলে নেওয়া ভালো, এই মূল্যায়নের কোনো সহজ ও একমুখী উত্তর পাওয়া মুশকিল। কারণ এই হিসাবের মূল্যায়নপদ্ধতি ও মানদণ্ড বহুমুখী।
মূল্যায়নের এই জটিলতা বেড়ে যাওয়ার কারণ এই যুদ্ধে মুক্তিসংগ্রামের উপাদানের সঙ্গে রয়েছে ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক তত্ত্বের গূঢ় মিথষ্ক্রিয়া। মুক্তিসংগ্রামে সচেতনতা, মর্যাদা ও স্বাধীনতার মূল্যবোধ কেন্দ্রীয় ভূমিকা রাখে। শুধু ‘বস্তুবাদী’ মাপকাঠি দিয়ে এর মূল্যায়ন করা বেশ কঠিন। অনেক সময় এই কারণেই বিভিন্ন বিশ্লেষণ পরস্পরবিরোধী মনে হয়।
এ প্রসঙ্গে গত জুনে প্রকাশিত একটি গবেষণার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়। ‘গাজা যুদ্ধ ২০২৩-২০২৫: ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের ভবিষ্যৎ’ শিরোনামের এ গবেষণাটি করেছেন ম্যাসাচুসেটস ও বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের চার গবেষক।
ওই গবেষণা করতে গিয়ে চলতি বছরের শুরুতে গাজার বাসিন্দাদের মধ্যে একটি জরিপ চালানো হয়। জরিপের ফলে দেখা যায়, অবরুদ্ধ গাজার সাধারণ মানুষ মনে করেন এই যুদ্ধ দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানকে প্রত্যাখ্যান ও ইসরায়েলকে ধ্বংসের তাদের মনোভাবকে আরো দৃঢ় করেছে।
গাজার অধিবাসীরা তাদের জাতীয় ও ধর্মীয় পরিচয়, মাতৃভূমির প্রতি তীব্র ভালোবাসা ও মৌলিক মূল্যবোধের প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা জানিয়েছেন। তারা বলেছেন—ব্যক্তিগত ক্ষতির আশঙ্কা থাকার পরেও তারা রাজনৈতিকভাবে আপস করতে রাজি না।
এই গবেষণা গাজা যুদ্ধের গতিপথ মূল্যায়নে মূল্যবোধ ও আধ্যাত্মিক উপাদানের বিষয়টি কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা দেখিয়ে দেয়। যদিও এই গবেষণার পরে গাজাবাসীকে আরও বেশি মাত্রায় দুর্ভোগ ও ধ্বংস ভোগ করতে হয়েছে।
গবেষণাটিতে উত্তর ও মধ্য আমেরিকা, পশ্চিম ও পূর্ব ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশ ও প্রেক্ষাপটে পরিচালিত একই ধরনের আরও কিছু গবেষণার একটি যৌথ সারসংক্ষেপও উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে বলা হয়, জরিপে অংশগ্রহণকারীরা ব্যক্তিগত ও সামাজিক ক্ষতির ঝুঁকি জেনেও জীবন পাল্টে দেওয়া সিদ্ধান্তগুলো নেন। একই সঙ্গে তাঁরা এমন নেতা খুঁজতে থাকেন, যিনি তাঁদের এই উদ্বেগকে ধারণ করেন বলে মনে হয়। এসবই ওই নেতাদের এমনভাবে প্রভাবিত করে যে তাদের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি শক্তিধর প্রতিপক্ষকেও তারা পরাস্ত করতে সক্ষম হন।
গবেষণাটি বাস্তববাদ ও নীতিবাদের বিরোধকে সামনে নিয়ে আসে। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষণে ‘বস্তুবাদী উপাদান’ যেমন ভূমি, অর্থনীতি, নিরাপত্তা, সামরিক শক্তি ইত্যাদি বনাম ‘মূল্যবাদী উপাদান’ যেমন ন্যায্যতা, নীতি, পরিচয় ইত্যাদির কোনটি প্রাধান্য পাবে তা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
সহজ করে বললে দেখার ভিন্নতা বা দৃষ্টিভেদই বর্তমান যুদ্ধ বিশ্লেষণের কেন্দ্রে রয়েছে। অনেক বিশ্লেষক যুদ্ধের ধ্বংস ও মানবিক বিপর্যয়ের ওপর জোর দিয়ে ‘প্রতিরোধ অর্থহীন’ বা ‘পরাজয়’ নিশ্চিত বলে মন্তব্য করেন। অন্যদিকে ভিন্নমত হাজির করা বিশ্লেষকদের বিশ্বাস—প্রতিরোধ ও সংগ্রাম দীর্ঘমেয়াদে ন্যায় ও মর্যাদার প্রতিরূপ হতে পারে। ইতিহাসে প্রমাণিত ক্ষেত্রগুলোর অভিজ্ঞতায় এমনটিই দেখা যায়।
উপরের আলোচিত প্রসঙ্গগুলো বিবেচনায় রেখে হামাসের বর্তমান অবস্থাকে কয়েকভাবে মূল্যায়ন করা যায়।
প্রকল্প ও কৌশল: হামাসের মূল প্রকল্প ছিল ইসরায়েলকে সামরিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে ক্লান্ত করে সংগ্রামের পথে এগিয়ে চলা। গত দুই বছরে এই কাজটি কিছুটা হলেও করতে পেরেছে তারা। অন্যদিকে ‘শান্তি ও স্বীকৃতি-ভিত্তিক সমাধানে’র যে লক্ষ্য হামাসের ছিল তা হ্রাস পেয়েছে। ইসরায়েলের সীমাহীন চাপ ও ধ্বংসযজ্ঞ হামাসকে গাজায় অপূরণীয় ক্ষতির মুখে ফেলেছে। একই সঙ্গে দুই বছর ধরে টানা অবরোধের কারণে গাজা উপত্যকায় হামাসের সামরিক সক্ষমতাও ভেঙে পড়েছে।
জনসমর্থন: আন্তর্জাতিক অঙ্গনে হামাসের চিন্তা ও প্রতিরোধের ধারণা বেশ সমর্থন পেয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০২৫ সালের জুলাইয়ে হার্ভার্ড হারিসের করা এক জরিপে মার্কিন তরুণদের ৪০ শতাংশের বেশি বলেছে, তারা ইসরায়েলকে নয় হামাসকে সমর্থন করে।
যদিও দীর্ঘ সময় ধরে ধ্বংস, মৃত্যু, খাদ্য ও বাস্তু সংকট গাজার মানুষের সহনশীলতা অনেকটা নষ্ট করে দিয়েছে। এ কারণে বাইরে হামাসের সমর্থন দেখা গেলেও গাজার অভ্যন্তরে মানুষের মাঝে হতাশা দেখা গেছে। ইসরায়েল ও পশ্চিমাদের তীব্র চাপের মুখে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর ও অন্য অঞ্চলে হামাসের রাজনৈতিক ও সামাজিক উপস্থিতি সীমিত হয়েছে।
এসবের ভেতরেও হামাস যে ‘প্রতিরোধ ও মুক্তি’র ধারণাকে নিজেদের প্রধান রাজনৈতিক আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে এটাই আপাত তাদের সবচেয়ে বড় সফলতা। তাদের প্রতিরোধের ধারণা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। একই সময়ে ইসরায়েলের নিষ্ঠুর অভিযানের বিপরীতে বহির্বিশ্বে প্রবাসী ফিলিস্তিনি, আরব ও স্থানীয়রা যে আন্দোলনমুখী হয়েছেন তা দমনে পশ্চিমাগোষ্ঠী ও ইসরায়েল জোর চেষ্টা চালিয়েছে। এর জন্য তহবিল বন্ধ, রাজপথে মারমুখী আচরণসহ নানা প্রচেষ্টা তারা অব্যাহত রেখেছে। এতে পশ্চিমা শাসকদের অন্তসারশূন্য ‘মানবতাবাদী’ দরদের খোলস বেড়িয়ে পড়েছে।
গাজার নির্বাচিত ক্ষমতার অধিকারী হওয়ায় যুদ্ধের পুরোটা সময়ে হামাস গাজায় রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার ও কাঠামোগত সম্পদের ব্যবহার করতে পেরেছে। ইসরায়েল ও তার পশ্চিমা মিত্ররা এ কারণে যুদ্ধবিরতির পূর্বশর্ত দিয়ে গাজার ক্ষমতা কাঠামো থেকে হামাসকে দূরে ঠেলে দিতে চাইছে। এই অবস্থায় নিশ্ছিদ্রভাবে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারলে ‘প্রতিরোধ আন্দোলনকারী’ সংগঠন হিসেবেও হামাসের সক্রিয় থাকা দুরূহ হয়ে পড়বে।
এরপরেও ইসরায়েলি দখলদারত্বকে প্রত্যাখ্যান ও প্রতিরোধ করার সাহস শুধু হামাসেরই রয়েছে। শুধু এই কারণেই জনপ্রিয়তায় তারা উৎরে আছে। বিশ্বের খ্যাতিমান মানুষেরা ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি)-এর নৌবহরে যোগ দিয়েছেন। গাজার অবরোধ ভাঙার তাদের যে চেষ্টা, শত বাধার পরেও দেশে দেশে অকল্পনীয় বিশাল বিক্ষোভ এসবই হামাসের অর্জনের খাতায় যোগ হয়ে থাকবে।
এই দুই বছরে ইসরায়েল গাজার সর্বত্র ভারী সামরিক যান নিয়ে চষে বেড়িয়েছে। এসময়ে পোড়ামাটিনীতি দিয়ে প্রতিপক্ষকে তারা দুর্বল করতে পেরেছে। হামাস ছাড়াও প্রধান শত্রু ইরান ও হিজবুল্লাহর ব্যাপক ক্ষতি করতে সক্ষম হয়েছে ইসরায়েল। লেবানন, ইরান, সিরিয়া ও ইয়েমেনে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে ‘সাবলীলভাবে’ অভিযান চালিয়েছে দেশটি। প্রতিপক্ষের প্রথম সারির অনেক নেতাকেই তারা হত্যা করতে পেরেছে।
এর মধ্যে ইরানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে টেনে আনতে পারা, হিজবুল্লাহর অস্ত্রভাণ্ডারের বড় অংশ ক্ষয় করতে পারা, লেবাননে প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক ক্ষমতা দুর্বল করে দেওয়া, সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের পতনের ঘটনায় ইসরায়েল সামরিকভাবে জয়ী অবস্থায় রয়েছে বলা যেতে পারে।
তবে এই সামরিক লাভের বিপরীতে ইসরায়েলের ‘আইনি ও নৈতিক’ ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যুদ্ধে নৃশংস জেনোসাইড, সামরিক-বেসামরিক মানুষের ওপর মাত্রাহীন হামলা আর প্রযুক্তির সাহায্যে চালানো তাদের ধ্বংসলীলা সারা দুনিয়ার মানুষ সরাসরি দেখেছে। চলচ্চিত্রকে হার মানায় এমনসব অবিশ্বাস্য নৃশংস হত্যাযজ্ঞ স্মরণকালে বিশ্ব আর দেখেনি।
এর ফলে ইসরায়েলের প্রতি নমনীয় অনেক দেশ ও জনগোষ্ঠীও তাদের অপরাধের কথা উচ্চারণ করেছে। রাষ্ট্র ও মানুষের সম্মিলিত ‘নিন্দা ও প্রতিরোধ’ নিঃসন্দেহে ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করে যাবে।
এর মাঝেও অবিচল থেকে আমেরিকা ও পশ্চিমা দেশগুলো ইসরায়েলকে সামরিক ও আর্থিক সমর্থন দিয়ে গেছে। এই কাজ করতে গিয়ে তারা আন্তর্জাতিক আদালত ও মানবাধিকার সংস্থার সমালোচনার তোয়াক্কা করেনি। এটাও শেষ পর্যন্ত ইসরায়েলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্তই করেছে।
অর্থনীতি, জনসংখ্যা আর সামাজিক সংকট: দীর্ঘ যুদ্ধের কারণে ইসরায়েলের অর্থনীতি বড় চাপে পড়েছে। দেশটির অনেক প্রযুক্তি কোম্পানি কর্মী ছাঁটাই করেছে। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা সংকুচিত হয়ে গেছে।
জেরুজালেমের হিব্রু ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অব ইহুদি স্টাডিজের অধ্যাপক সার্জিও ডেলাপারগোলার তাঁর এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলেছেন, ৭ অক্টোবরের অভিযান ও পরবর্তী বিভিন্ন ফ্রন্টের যুদ্ধে শত শত সামরিক ও বেসামরিক হতাহত, উত্তর ও দক্ষিণে লাখ লাখ মানুষের বাস্তুচ্যুতি এবং রিজার্ভ সেনাবাহিনীতে বিপুল সংখ্যক যুবকের ক্রমাগত নিয়োগ ইসরায়েলে এক অভূতপূর্ব সামাজিক, অর্থনৈতিক ও অস্তিত্বগত সংকটের সৃষ্টি করেছে।
এই যুদ্ধ ইসরায়েলকে একটি অস্বাভাবিক নেতিবাচক আন্তর্জাতিক অভিবাসনের মুখোমুখি করেছে। এর আগে এমন ঘটনা গত শতকের কুড়ি, পঞ্চাশ ও আশির দশকে কয়েকবার ঘটেছিল। আগে নাগরিকদের ইসরায়েল ছেড়ে যাওয়ার প্রাথমিক কারণ ছিল অর্থনৈতিক সংকট।
আল-জাজিরা অ্যারাবিক জানিয়েছে, ২০২৫ সালের আগস্টে গ্লোবালিস্ট ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরে ইসরায়েলের সরকারি ঋণ জিডিপির ৭০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। এ ছাড়াও দেশটিতে যুদ্ধের কারণে নেতিবাচক অর্থনৈতিক প্রভাব এতটাই মারাত্মক যে, এই দশকের বাকি সময়কালে সরকারের বাজেট ঘাটতির হার প্রায় ১৬ শতাংশে গিয়ে ঠেকবে।
গত দুই বছরে ইসরায়েল যে সামরিক সক্রিয়তা দেখিয়েছে তা আশেপাশের রাষ্ট্রগুলোকে আরও সতর্ক করে তোলার জন্য যথেষ্ট। টিকে থাকার জন্য রাষ্ট্রগুলোর ঐক্য ও সামরিক শক্তিবৃদ্ধির কথা ভাবা ছাড়া খুব একটা উপায় নেই। ইতিমধ্যে এই ধরনের কিছু তৎপরতা দেখাও গেছে প্রতিবেশী আরব দেশগুলোর ভেতর। যেমন কাতারে ইসরায়েলি আগ্রাসনের পরেই পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী পাকিস্তানের সঙ্গে যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে সৌদি আরব। একইভাবে তুরস্কের সঙ্গে কুয়েতের প্রতিরক্ষা চুক্তির চেষ্টা লক্ষণীয়। অন্যদিকে মিসর চীনের সঙ্গে অস্ত্র চুক্তি করছে। ইতিমধ্যে দেশটি সিনাই পর্বতে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করেছে। আর তুরস্ক তো সামরিক সমৃদ্ধির পথে প্রায় দৌড়ে এগিয়ে চলেছে।
দুই বছর আগে যে প্রতিবেশী দেশগুলো ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের পথে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিল তারাই এখন নিজেদের সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেছে। এটা কোনো অর্থেই ইসরায়েলের জন্য ইতিবাচক অর্জন নয়।
ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ইসরায়েলি ডানপন্থী রাজনীতির জন্য একটি কূটনৈতিক ধাক্কা। এই স্বীকৃতি ইসরায়েলি সম্প্রসারণবাদী প্রচেষ্টাকে অবৈধ ঘোষণা করার শামিল। এই দিক দিয়েও ইসরায়েল ক্ষতিগ্রস্তই হয়েছে।
গাজায় প্রায় ৬৭ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার পর ইসরায়েলের সরকার ‘প্রথম ধাপ’ হিসেবে যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুমোদন করেছে। গতকাল শুক্রবার (১০ অক্টোবর) আল-জাজিরা জানিয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী এবার বন্দি বিনিময় হবে, এছাড়া ইসরায়েল গাজার কিছু অংশ থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে। তবে এই চুক্তি কীভাবে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়।
অন্যদিকে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় হামাসের পক্ষে অংশ নেওয়া নেতা খলিল আল-হাইয়া জানিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য মধ্যস্থতাকারী পক্ষ তাদের নিশ্চয়তা দিয়েছে যে, প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি চুক্তির অর্থ হলো গাজায় যুদ্ধ ‘সম্পূর্ণরূপে শেষ’ হয়েছে।
‘তুফান আল-আকসা’ নামে যে অভিযান হামাস ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর চালিয়েছিল তারপর দুই বছর কেটে গেছে। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ-যোদ্ধাদের চালানো সেই অভিযানের পরে টানা দুই বছর ধরে গাজায় ‘নির্মূল যুদ্ধ‘ চালিয়েছে ইসরায়েল। যুদ্ধ আংশিক বা পূর্ণ যে রূপেই শেষ হোক না কেন, এই দুই বছরে প্রতিরোধ আন্দোলন হিসেবে হামাস আর রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েল—নিজেদের অবস্থান, সম্ভাবনা ও প্রকল্প নিয়ে কে কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে তার মূল্যায়ন প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।
তবে বলে নেওয়া ভালো, এই মূল্যায়নের কোনো সহজ ও একমুখী উত্তর পাওয়া মুশকিল। কারণ এই হিসাবের মূল্যায়নপদ্ধতি ও মানদণ্ড বহুমুখী।
মূল্যায়নের এই জটিলতা বেড়ে যাওয়ার কারণ এই যুদ্ধে মুক্তিসংগ্রামের উপাদানের সঙ্গে রয়েছে ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক তত্ত্বের গূঢ় মিথষ্ক্রিয়া। মুক্তিসংগ্রামে সচেতনতা, মর্যাদা ও স্বাধীনতার মূল্যবোধ কেন্দ্রীয় ভূমিকা রাখে। শুধু ‘বস্তুবাদী’ মাপকাঠি দিয়ে এর মূল্যায়ন করা বেশ কঠিন। অনেক সময় এই কারণেই বিভিন্ন বিশ্লেষণ পরস্পরবিরোধী মনে হয়।
এ প্রসঙ্গে গত জুনে প্রকাশিত একটি গবেষণার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়। ‘গাজা যুদ্ধ ২০২৩-২০২৫: ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের ভবিষ্যৎ’ শিরোনামের এ গবেষণাটি করেছেন ম্যাসাচুসেটস ও বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের চার গবেষক।
ওই গবেষণা করতে গিয়ে চলতি বছরের শুরুতে গাজার বাসিন্দাদের মধ্যে একটি জরিপ চালানো হয়। জরিপের ফলে দেখা যায়, অবরুদ্ধ গাজার সাধারণ মানুষ মনে করেন এই যুদ্ধ দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানকে প্রত্যাখ্যান ও ইসরায়েলকে ধ্বংসের তাদের মনোভাবকে আরো দৃঢ় করেছে।
গাজার অধিবাসীরা তাদের জাতীয় ও ধর্মীয় পরিচয়, মাতৃভূমির প্রতি তীব্র ভালোবাসা ও মৌলিক মূল্যবোধের প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা জানিয়েছেন। তারা বলেছেন—ব্যক্তিগত ক্ষতির আশঙ্কা থাকার পরেও তারা রাজনৈতিকভাবে আপস করতে রাজি না।
এই গবেষণা গাজা যুদ্ধের গতিপথ মূল্যায়নে মূল্যবোধ ও আধ্যাত্মিক উপাদানের বিষয়টি কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা দেখিয়ে দেয়। যদিও এই গবেষণার পরে গাজাবাসীকে আরও বেশি মাত্রায় দুর্ভোগ ও ধ্বংস ভোগ করতে হয়েছে।
গবেষণাটিতে উত্তর ও মধ্য আমেরিকা, পশ্চিম ও পূর্ব ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশ ও প্রেক্ষাপটে পরিচালিত একই ধরনের আরও কিছু গবেষণার একটি যৌথ সারসংক্ষেপও উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে বলা হয়, জরিপে অংশগ্রহণকারীরা ব্যক্তিগত ও সামাজিক ক্ষতির ঝুঁকি জেনেও জীবন পাল্টে দেওয়া সিদ্ধান্তগুলো নেন। একই সঙ্গে তাঁরা এমন নেতা খুঁজতে থাকেন, যিনি তাঁদের এই উদ্বেগকে ধারণ করেন বলে মনে হয়। এসবই ওই নেতাদের এমনভাবে প্রভাবিত করে যে তাদের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি শক্তিধর প্রতিপক্ষকেও তারা পরাস্ত করতে সক্ষম হন।
গবেষণাটি বাস্তববাদ ও নীতিবাদের বিরোধকে সামনে নিয়ে আসে। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষণে ‘বস্তুবাদী উপাদান’ যেমন ভূমি, অর্থনীতি, নিরাপত্তা, সামরিক শক্তি ইত্যাদি বনাম ‘মূল্যবাদী উপাদান’ যেমন ন্যায্যতা, নীতি, পরিচয় ইত্যাদির কোনটি প্রাধান্য পাবে তা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
সহজ করে বললে দেখার ভিন্নতা বা দৃষ্টিভেদই বর্তমান যুদ্ধ বিশ্লেষণের কেন্দ্রে রয়েছে। অনেক বিশ্লেষক যুদ্ধের ধ্বংস ও মানবিক বিপর্যয়ের ওপর জোর দিয়ে ‘প্রতিরোধ অর্থহীন’ বা ‘পরাজয়’ নিশ্চিত বলে মন্তব্য করেন। অন্যদিকে ভিন্নমত হাজির করা বিশ্লেষকদের বিশ্বাস—প্রতিরোধ ও সংগ্রাম দীর্ঘমেয়াদে ন্যায় ও মর্যাদার প্রতিরূপ হতে পারে। ইতিহাসে প্রমাণিত ক্ষেত্রগুলোর অভিজ্ঞতায় এমনটিই দেখা যায়।
উপরের আলোচিত প্রসঙ্গগুলো বিবেচনায় রেখে হামাসের বর্তমান অবস্থাকে কয়েকভাবে মূল্যায়ন করা যায়।
প্রকল্প ও কৌশল: হামাসের মূল প্রকল্প ছিল ইসরায়েলকে সামরিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে ক্লান্ত করে সংগ্রামের পথে এগিয়ে চলা। গত দুই বছরে এই কাজটি কিছুটা হলেও করতে পেরেছে তারা। অন্যদিকে ‘শান্তি ও স্বীকৃতি-ভিত্তিক সমাধানে’র যে লক্ষ্য হামাসের ছিল তা হ্রাস পেয়েছে। ইসরায়েলের সীমাহীন চাপ ও ধ্বংসযজ্ঞ হামাসকে গাজায় অপূরণীয় ক্ষতির মুখে ফেলেছে। একই সঙ্গে দুই বছর ধরে টানা অবরোধের কারণে গাজা উপত্যকায় হামাসের সামরিক সক্ষমতাও ভেঙে পড়েছে।
জনসমর্থন: আন্তর্জাতিক অঙ্গনে হামাসের চিন্তা ও প্রতিরোধের ধারণা বেশ সমর্থন পেয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০২৫ সালের জুলাইয়ে হার্ভার্ড হারিসের করা এক জরিপে মার্কিন তরুণদের ৪০ শতাংশের বেশি বলেছে, তারা ইসরায়েলকে নয় হামাসকে সমর্থন করে।
যদিও দীর্ঘ সময় ধরে ধ্বংস, মৃত্যু, খাদ্য ও বাস্তু সংকট গাজার মানুষের সহনশীলতা অনেকটা নষ্ট করে দিয়েছে। এ কারণে বাইরে হামাসের সমর্থন দেখা গেলেও গাজার অভ্যন্তরে মানুষের মাঝে হতাশা দেখা গেছে। ইসরায়েল ও পশ্চিমাদের তীব্র চাপের মুখে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর ও অন্য অঞ্চলে হামাসের রাজনৈতিক ও সামাজিক উপস্থিতি সীমিত হয়েছে।
এসবের ভেতরেও হামাস যে ‘প্রতিরোধ ও মুক্তি’র ধারণাকে নিজেদের প্রধান রাজনৈতিক আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে এটাই আপাত তাদের সবচেয়ে বড় সফলতা। তাদের প্রতিরোধের ধারণা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। একই সময়ে ইসরায়েলের নিষ্ঠুর অভিযানের বিপরীতে বহির্বিশ্বে প্রবাসী ফিলিস্তিনি, আরব ও স্থানীয়রা যে আন্দোলনমুখী হয়েছেন তা দমনে পশ্চিমাগোষ্ঠী ও ইসরায়েল জোর চেষ্টা চালিয়েছে। এর জন্য তহবিল বন্ধ, রাজপথে মারমুখী আচরণসহ নানা প্রচেষ্টা তারা অব্যাহত রেখেছে। এতে পশ্চিমা শাসকদের অন্তসারশূন্য ‘মানবতাবাদী’ দরদের খোলস বেড়িয়ে পড়েছে।
গাজার নির্বাচিত ক্ষমতার অধিকারী হওয়ায় যুদ্ধের পুরোটা সময়ে হামাস গাজায় রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার ও কাঠামোগত সম্পদের ব্যবহার করতে পেরেছে। ইসরায়েল ও তার পশ্চিমা মিত্ররা এ কারণে যুদ্ধবিরতির পূর্বশর্ত দিয়ে গাজার ক্ষমতা কাঠামো থেকে হামাসকে দূরে ঠেলে দিতে চাইছে। এই অবস্থায় নিশ্ছিদ্রভাবে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারলে ‘প্রতিরোধ আন্দোলনকারী’ সংগঠন হিসেবেও হামাসের সক্রিয় থাকা দুরূহ হয়ে পড়বে।
এরপরেও ইসরায়েলি দখলদারত্বকে প্রত্যাখ্যান ও প্রতিরোধ করার সাহস শুধু হামাসেরই রয়েছে। শুধু এই কারণেই জনপ্রিয়তায় তারা উৎরে আছে। বিশ্বের খ্যাতিমান মানুষেরা ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি)-এর নৌবহরে যোগ দিয়েছেন। গাজার অবরোধ ভাঙার তাদের যে চেষ্টা, শত বাধার পরেও দেশে দেশে অকল্পনীয় বিশাল বিক্ষোভ এসবই হামাসের অর্জনের খাতায় যোগ হয়ে থাকবে।
এই দুই বছরে ইসরায়েল গাজার সর্বত্র ভারী সামরিক যান নিয়ে চষে বেড়িয়েছে। এসময়ে পোড়ামাটিনীতি দিয়ে প্রতিপক্ষকে তারা দুর্বল করতে পেরেছে। হামাস ছাড়াও প্রধান শত্রু ইরান ও হিজবুল্লাহর ব্যাপক ক্ষতি করতে সক্ষম হয়েছে ইসরায়েল। লেবানন, ইরান, সিরিয়া ও ইয়েমেনে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে ‘সাবলীলভাবে’ অভিযান চালিয়েছে দেশটি। প্রতিপক্ষের প্রথম সারির অনেক নেতাকেই তারা হত্যা করতে পেরেছে।
এর মধ্যে ইরানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে টেনে আনতে পারা, হিজবুল্লাহর অস্ত্রভাণ্ডারের বড় অংশ ক্ষয় করতে পারা, লেবাননে প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক ক্ষমতা দুর্বল করে দেওয়া, সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের পতনের ঘটনায় ইসরায়েল সামরিকভাবে জয়ী অবস্থায় রয়েছে বলা যেতে পারে।
তবে এই সামরিক লাভের বিপরীতে ইসরায়েলের ‘আইনি ও নৈতিক’ ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যুদ্ধে নৃশংস জেনোসাইড, সামরিক-বেসামরিক মানুষের ওপর মাত্রাহীন হামলা আর প্রযুক্তির সাহায্যে চালানো তাদের ধ্বংসলীলা সারা দুনিয়ার মানুষ সরাসরি দেখেছে। চলচ্চিত্রকে হার মানায় এমনসব অবিশ্বাস্য নৃশংস হত্যাযজ্ঞ স্মরণকালে বিশ্ব আর দেখেনি।
এর ফলে ইসরায়েলের প্রতি নমনীয় অনেক দেশ ও জনগোষ্ঠীও তাদের অপরাধের কথা উচ্চারণ করেছে। রাষ্ট্র ও মানুষের সম্মিলিত ‘নিন্দা ও প্রতিরোধ’ নিঃসন্দেহে ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করে যাবে।
এর মাঝেও অবিচল থেকে আমেরিকা ও পশ্চিমা দেশগুলো ইসরায়েলকে সামরিক ও আর্থিক সমর্থন দিয়ে গেছে। এই কাজ করতে গিয়ে তারা আন্তর্জাতিক আদালত ও মানবাধিকার সংস্থার সমালোচনার তোয়াক্কা করেনি। এটাও শেষ পর্যন্ত ইসরায়েলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্তই করেছে।
অর্থনীতি, জনসংখ্যা আর সামাজিক সংকট: দীর্ঘ যুদ্ধের কারণে ইসরায়েলের অর্থনীতি বড় চাপে পড়েছে। দেশটির অনেক প্রযুক্তি কোম্পানি কর্মী ছাঁটাই করেছে। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা সংকুচিত হয়ে গেছে।
জেরুজালেমের হিব্রু ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অব ইহুদি স্টাডিজের অধ্যাপক সার্জিও ডেলাপারগোলার তাঁর এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলেছেন, ৭ অক্টোবরের অভিযান ও পরবর্তী বিভিন্ন ফ্রন্টের যুদ্ধে শত শত সামরিক ও বেসামরিক হতাহত, উত্তর ও দক্ষিণে লাখ লাখ মানুষের বাস্তুচ্যুতি এবং রিজার্ভ সেনাবাহিনীতে বিপুল সংখ্যক যুবকের ক্রমাগত নিয়োগ ইসরায়েলে এক অভূতপূর্ব সামাজিক, অর্থনৈতিক ও অস্তিত্বগত সংকটের সৃষ্টি করেছে।
এই যুদ্ধ ইসরায়েলকে একটি অস্বাভাবিক নেতিবাচক আন্তর্জাতিক অভিবাসনের মুখোমুখি করেছে। এর আগে এমন ঘটনা গত শতকের কুড়ি, পঞ্চাশ ও আশির দশকে কয়েকবার ঘটেছিল। আগে নাগরিকদের ইসরায়েল ছেড়ে যাওয়ার প্রাথমিক কারণ ছিল অর্থনৈতিক সংকট।
আল-জাজিরা অ্যারাবিক জানিয়েছে, ২০২৫ সালের আগস্টে গ্লোবালিস্ট ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরে ইসরায়েলের সরকারি ঋণ জিডিপির ৭০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। এ ছাড়াও দেশটিতে যুদ্ধের কারণে নেতিবাচক অর্থনৈতিক প্রভাব এতটাই মারাত্মক যে, এই দশকের বাকি সময়কালে সরকারের বাজেট ঘাটতির হার প্রায় ১৬ শতাংশে গিয়ে ঠেকবে।
গত দুই বছরে ইসরায়েল যে সামরিক সক্রিয়তা দেখিয়েছে তা আশেপাশের রাষ্ট্রগুলোকে আরও সতর্ক করে তোলার জন্য যথেষ্ট। টিকে থাকার জন্য রাষ্ট্রগুলোর ঐক্য ও সামরিক শক্তিবৃদ্ধির কথা ভাবা ছাড়া খুব একটা উপায় নেই। ইতিমধ্যে এই ধরনের কিছু তৎপরতা দেখাও গেছে প্রতিবেশী আরব দেশগুলোর ভেতর। যেমন কাতারে ইসরায়েলি আগ্রাসনের পরেই পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী পাকিস্তানের সঙ্গে যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে সৌদি আরব। একইভাবে তুরস্কের সঙ্গে কুয়েতের প্রতিরক্ষা চুক্তির চেষ্টা লক্ষণীয়। অন্যদিকে মিসর চীনের সঙ্গে অস্ত্র চুক্তি করছে। ইতিমধ্যে দেশটি সিনাই পর্বতে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করেছে। আর তুরস্ক তো সামরিক সমৃদ্ধির পথে প্রায় দৌড়ে এগিয়ে চলেছে।
দুই বছর আগে যে প্রতিবেশী দেশগুলো ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের পথে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিল তারাই এখন নিজেদের সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেছে। এটা কোনো অর্থেই ইসরায়েলের জন্য ইতিবাচক অর্জন নয়।
ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ইসরায়েলি ডানপন্থী রাজনীতির জন্য একটি কূটনৈতিক ধাক্কা। এই স্বীকৃতি ইসরায়েলি সম্প্রসারণবাদী প্রচেষ্টাকে অবৈধ ঘোষণা করার শামিল। এই দিক দিয়েও ইসরায়েল ক্ষতিগ্রস্তই হয়েছে।
১৯৪৮ সালের আল-নাকবার পর শরণার্থী শিবিরে জন্ম নেওয়া এবং বড় হওয়া লাখ লাখ ফিলিস্তিনির মতো, আমার জীবনের কাহিনীতেও সংগ্রাম আর টিকে থাকার কয়েকটি অধ্যায় আছে। আমাদের প্রজন্ম একভাবে সৌভাগ্যবান ছিল। ফিলিস্তিনের সেই হারানো গ্রামগুলোতে যারা থাকত, তাদের গল্প শুনে বড় হয়েছি আমরা। তারা নিজের গ্রামের প্রতিটি গাছ, প্
২ মিনিট আগেপ্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের সম্পর্ক এক চরম সংকটময় মুহূর্ত পার করছে। অন্যদিকে, পাকিস্তানের ‘চিরশত্রু’ ভারতের সঙ্গে আফগানিস্তানের সম্পর্ক ক্রমশ উন্নতির দিকে মোড় নিচ্ছে।
১৯ ঘণ্টা আগেদ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) ভারতে পৌঁছেছেন। ২০২১ সালে তালেবান দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর দেশটির কোনো শীর্ষ নেতার এটি প্রথম ভারত সফর।
১ দিন আগেআফগানিস্তানের কাবুলে কয়েক দফা বিস্ফোরন ও গুলির শব্দ শোনা গেছে। আফগানিস্তানের সোশাল মিডিয়ায় এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, তেহেরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) প্রধান নূর ওয়ালি মেহসুদের বাসভবন লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।
১ দিন আগে