leadT1ad

ইউটিউবে ভিডিও দেখে শাশুড়িকে আগুনে পুড়িয়ে খুন, যেভাবে ধরা পড়লেন পুত্রবধূ

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক

ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের পুলিশের দাবি, তাঁরা এমন এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে যার বিরুদ্ধে নিজের বৃদ্ধ শাশুড়িকে খেলাচ্ছলে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। ছবি: বিবিসি

ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের পুলিশের দাবি, তাঁরা এমন এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে যার বিরুদ্ধে নিজের বৃদ্ধ শাশুড়িকে খেলাচ্ছলে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ রয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, জয়ন্তী ললিতা নামের এক নারী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তাঁর শাশুড়িকে শিশুদের সঙ্গে ‘চোর পুলিশ’ খেলতে বাধ্য করেছিলেন। এরপর হত্যাকাণ্ডকে দুর্ঘটনা দেখাতে খেলার সুযোগে শাশুড়ির গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন তিনি।

পুলিশ আরও দাবি করেছে যে ওই পুত্রবধু যে জেনেশুনে শাশুড়িকে হত্যা করেছেন। ইতিমধ্যে এ কথা স্বীকারও করে নিয়েছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত চলাকালে তাঁরা জানতে পেরেছে, জয়ন্তী ললিতা তার শাশুড়িকে আগুনে পোড়ানোর আগে, ইউটিউবে সার্চ দিয়ে ‘কীভাবে একজন বৃদ্ধাকে সহজে হত্যা করা যায়’ এমন শিরোনামের ভিডিও খুঁজেছেন। পুলিশের দাবি, ওই পুত্রবধু এই জাতীয় বেশ কয়েকটি ভিডিও দেখেছেনও।

প্রাথমিক তদন্তের পর প্রমাণ সামনে আসায় পুলিশ অভিযুক্ত ওই নারীকে গ্রেপ্তার করে।

সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা পৃথ্বী তেজ বিবিসিকে এ ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন। পুলিশের মতে, গত শুক্রবার সকালে একটি ফোনকল থেকে এ ঘটনা সম্পর্কে প্রথম জানতে পারেন। একজন ব্যক্তি পুলিশকে জানান, একটি আবাসিক ভবনের ফ্ল্যাটে আগুন লেগেছে এবং একজন বয়স্ক মহিলা সেখানে ছিলেন।

এই তথ্য পাওয়ার পর, স্থানীয় পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ৬৩ বছর বয়সী মহিলা জয়ন্তী মহালক্ষ্মীকে মৃত অবস্থায় দেখতে পায়। মৃতদেহের প্রাথমিক পরীক্ষায় পুলিশ দেখতে পায় যে, তার হাত-পা ও চোখে বাঁধা থাকার চিহ্ন রয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুত্রবধূ দাবি করেন, টিভিতে শর্ট সার্কিটের কারণে আগুন লেগে তার শাশুড়ির মৃত্যু হয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তা পৃথ্বী তেজ বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছাই, তখন পুত্রবধু ললিতা ও তার দুই সন্তানও বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন। পুত্রবধু আমাদের জানান যে শর্ট সার্কিটের কারণে আগুন লেগেছে। তবে আমরা ঘটনাস্থলে এমন কোনও আলামত পাইনি।’

পুলিশ কর্মকর্তার মতে, অভিযুক্ত নারী আরও দাবি করেছেন, ‘মাসি কনক মহালক্ষ্মী (অভিযুক্তের শাশুড়ি) এবং আমার বাচ্চারা চোর-পুলিশ খেলা খেলছিল। সেই কারণেই বাচ্চারা শাশুড়িকে চেয়ারে বসিয়ে তার হাত-পা ও চোখ বেঁধে দেয়। ঠিক সেই মুহূর্তে টিভিতে শর্ট সার্কিট হয় এবং এই দুর্ঘটনা ঘটে।’

পুলিশ অফিসার পৃথ্বী তেজ বলেন, দুর্ঘটনায় ললিতার মেয়েও সামান্য আহত হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘অভিযুক্তের স্বামী একজন পুরোহিত। দুর্ঘটনার পর তিনি যখন বাড়িতে পৌঁছান, তখন পুলিশের তদন্ত দলের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেন। প্রমাণ দেখে ও স্বামীর সঙ্গে কথা বলার পর, পুত্রবধুর ওপর আমাদের সন্দেহ হয়। তাই আমরা তাঁর মোবাইল ফোন নিয়ে তার ইন্টারনেট সার্চ হিস্ট্রি পরীক্ষা করি।’

পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা যখন পুত্রবধুর ইন্টারনেট সার্চ হিস্ট্রি পরীক্ষা করেছি, তখন আমরা দেখতে পাই অতি সম্প্রতি তিনি "কীভাবে একজন বৃদ্ধা মহিলাকে হত্যা করতে হয়" শিরোনামের ভিডিও বেশ কয়েকবার সার্চ করেছেন। এতে আমাদের সন্দেহ আরও বেড়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘প্রমাণের ভিত্তিতে আমরা যখন অভিযুক্তকে আবার জিজ্ঞাসাবাদ করি, তখন তিনি তার শাশুড়িকে হত্যার কথা স্বীকার করেন এবং বলেন যে বিয়ের পর থেকে শাশুড়ির সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক ছিল না। অভিযুক্ত বলেন, তার শাশুড়ি প্রতিদিন ছোটখাটো বিষয়ে তাকে দোষারোপ করতেন এবং সেই কারণেই তিনি তাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন।’

পুলিশ কর্মকর্তা পৃথ্বী তেজ বলেন, ‘শাশুড়িকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর, গত ৬ নভেম্বর অভিযুক্ত তাঁর স্কুটারে করে কাছের একটি পেট্রোল পাম্পে যান, সেখান থেকে ১০০ টাকার পেট্রোল কিনে এনে বাড়িতে লুকিয়ে রাখেন।’

পৃথ্বী তেজ জানান, অভিযুক্ত বলেছেন, ‘আমি আমার সন্তানদের তাদের দাদির সঙ্গে চোর-পুলিশের খেলা খেলতে বলেছিলাম। তারপর, একই খেলায় আমি তাদের হাত-পা একটি চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে চোখও বেঁধে ফেলি। আমি তাদের বলেছিলাম যে, এটাও খেলার অংশ।’

পুলিশ দাবি করে, এরপরে অভিযুক্ত পুত্রবধু ওই নারীর ওপর পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং তারপর দাবি করে যে শর্ট সার্কিট হয়েছে।

পুলিশ দাবি করেছে, ‘অভিযুক্ত এই সময় টেলিভিশনের ভলিউম বাড়িয়ে দেয় যেন কেউ তাঁর শাশুড়ির চিৎকার শুনতে না পায়। কিছুক্ষণ পর অভিযুক্ত চিৎকার শুরু করে প্রতিবেশীদের জড়ো করে।’

পুলিশ বলছে, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তাঁর স্বামী হত্যা মামলা করেছেন।

ঘটনাটি সম্পর্কে বিবিসির সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মনোবিজ্ঞানী ও সাইকোলোজিক্যাল কনসালট্যান্ট ডা. পুজিথা জুসিউলা বলেন, ‘কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত আবেগ একজন ব্যক্তিকে হত্যার দিকে ঠেলে দিতে পারে। কিছু পারিবারিক ব্যবস্থায়, কঠোর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক রীতিনীতি ব্যক্তির আবেগকে বিপজ্জনক পথে নিয়ে যেতে পারে।’

বিবিসি উর্দু থেকে অনুবাদ সালেহ ফুয়াদ

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত