leadT1ad

ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক এবং যে কারণে ‘সিচুয়েশনশিপ’ করবেন না

ব্যবসার যে পরিস্থিতি–সেটা বোঝা জটিল হলেও অসম্ভব না। কিন্তু ‘সিচুয়েশনশিপ’-এ সিচুয়েশন বোঝা মুশকিলই নয়, নামুমকিন। মোদি কি পারবে এই অসম্ভবকে সম্ভব করতে?

আদ্রিতা কবিরঢাকা
প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০২৫, ১৭: ১৫
আপডেট : ১০ আগস্ট ২০২৫, ১৭: ৪২
ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক এবং যে কারণে ‘সিচুয়েশনশিপ’ করবেন না। স্ট্রিম গ্রাফিক

মোদির সাথে রিলেট করব, কোনোদিন ভাবি নাই। একজন জেনজি হিসেবে মোদি ট্রাম্পের থেকে যে দাগা খাইল, তার জন্য গভীর সিম্প্যাথি বোধ করলাম। এই রকম সিচুয়েশনে বা ‘সিচুয়েশনশিপ’-এ বেঈমানির শিকার আমরা রেগুলার হই। তাই মোদিসহ অন্যান্য বুমার এবং বুমার-মনস্কদের জন্য এইটা একটা সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: সিচুয়েশনশিপের ফাঁদে পা বা কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দেবেন না, এর অপর পাশে অন-রিপিট আর্টসেলের ‘দুঃখবিলাস’ ছাড়া আর কিছু নাই।

কিন্তু হাতের পাঁচটা আঙুল, শুক্রাবাদের রাস্তা এবং যেকোনো সম্পর্কে দুইজনের এক্সপেক্টেশন কখনো সমান হয় না। দেখা যায়, একজন ‘সিচুয়েশন’ নিয়ে সন্তুষ্ট, আরেকজন আস্তে আস্তে প্রেমে মরিয়া হয়ে যাচ্ছে, কমিটমেন্ট-সংসারের স্বপ্ন দেখছে।

হোয়াট ইজ সিচুয়েশনশিপ?

জেনজি ভাষায় প্রেম-পিরিতি-বন্ধুত্ব এবং এর মধ্যবর্তী-দূরবর্তী যা কিছু আছে সবকিছুর নাম আছে। ব্রেডক্রাম্বিং মানে কাউকে সিরিয়াস প্রেমের অল্প অল্প আশা ছিটায় কবুতরের মতো তুকতুক করে ডাকা, কিন্তু কখনোই তার কাছে পুরাপুরি ধরা না দেওয়া। বেঞ্চিং মানে কাউকে সাইডলাইনে ব্যাকাপ অপশন হিসেবে বসায় রাখা, ইন কেস যদি এরচেয়ে প্রেমের ভালো অপশন না পাওয়া যায়। সিচুয়েশনশিপ অর্থ এমন এক দশা যা বন্ধুত্বের চেয়ে বেশি, কিন্তু প্রেমের চেয়ে কম। কাহলিল জিবরানের ‘দ্য প্রফেট’-এর ‘বাস্টার্ডাইজড’ তর্জমার মতো, স্পেসেস ইন টুগেদারনেস, দুইজনের মধ্যে বাতাস (হইতে পারে লু হাওয়া, হইতে পারে টর্নেডোর সমান) চলাচল করার জায়গা থাকা। দুইজনের কেউই এইটাকে ‘প্রেম’ লেবেল করবে না, কমিটমেন্ট দেবে না।

কিন্তু হাতের পাঁচটা আঙুল, শুক্রাবাদের রাস্তা এবং যেকোনো সম্পর্কে দুইজনের এক্সপেক্টেশন কখনো সমান হয় না। দেখা যায়, একজন ‘সিচুয়েশন’ নিয়ে সন্তুষ্ট, আরেকজন আস্তে আস্তে প্রেমে মরিয়া হয়ে যাচ্ছে, কমিটমেন্ট-সংসারের স্বপ্ন দেখছে।

দেখবে নাও বা কেন? আরেকজন তো তাকে মিষ্টি মিষ্টি আশা-ভরসাই দিচ্ছে।

এইটাই সিচুয়েশনশিপের মেইন থ্রিল। আপনাকে আপনার ‘কিছু একটা’ কমিটমেন্ট দেবে না, আশার আলো ডিসকো লাইটের মতো অন-অফ করে দেখাবে, কিন্তু অন্য কেউ আপনার সাথে ঘেঁষাঘেঁষি করলে আপনাকে পিনালাইজ করবে।

আমরা (ইনক্লুডিং মোদি) কীভাবে সিচুয়েশনশিপের ফাঁদে পড়ি?

ট্রাম্প আর মোদি যখন এই বছর ফেব্রুয়ারিতে দেখা করেন। তখন মোদী বলেন, তারা ‘গ্রেট ফ্রেন্ড’। দুইজন মিলে ২০৩০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত ট্রেড ৫০০ বিলিয়নে নিয়ে যাবেন, এইটাও ঘোষণা হয়।

তবে সিচুয়েশনশিপে এসব মধুর ফেজ বেশি দিন টিকে না, এইটাও ব্যতিক্রম না। আগস্ট আসতে না আসতেই ট্রাম্প-মোদি সম্পর্কে আসে ‘টপ টেন এনিমে বিট্রেয়াল’।

যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর ট্যারিফ ২৫% থেকে ডাবল করে ৫০% করে দেয়। ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনায় এই শাস্তি, বলছে বিবিসি

এইটাই সিচুয়েশনশিপের মেইন থ্রিল। আপনাকে আপনার ‘কিছু একটা’ কমিটমেন্ট দেবে না, আশার আলো ডিসকো লাইটের মতো অন-অফ করে দেখাবে, কিন্তু অন্য কেউ আপনার সাথে ঘেঁষাঘেঁষি করলে আপনাকে পিনালাইজ করবে।

তখন আপনি অভিমান করে তাকেও নানা হুমকি-ধামকি দিতে পারেন, যেমন মোদি আর ট্রাম্প থেকে অস্ত্র কিনবে না, এই লাইনে আসতে পারে। তবে একপেশে প্রেমে এসবে উপকার নাই।

ফরাসী দার্শনিক রোঁলা বার্থ তাঁর ‘আ লাভার্স ডিসকোর্স: ফ্র্যাগমেন্টস’ বইয়ে বলেছেন প্রেমে একপক্ষ সবসময় অপেক্ষা করে আর আরেকপক্ষ অপেক্ষা করায়। ইফ ইউ আর ‘দ্য ওয়ান হু ওয়েইটস’, আপনি কখনোই মান-অভিমানের রেসলিংয়ে জিতবেন না। ঢেঁকি চিরকাল ওইপাশে ঝুঁকে থাকবে।

কিন্তু তারপরও চিংড়িমাছের মতো ঝুঁকে যাওয়া এই দুর্বল পক্ষ, সেলফওয়ার্থকে বুড়াগঙ্গায় ভাসায় দিয়ে কেন সিচুয়েশনশিপে থাকে?

অ্যাংশাস মুখাপেক্ষী হবে এভয়ডেন্টের, চলবে অ্যাটেনশনের দর কষাকষি। একজন ফোন দেবে, অন্যজন কাটবে। ১৬টা পরপর টেক্সটের রিপ্লাই আসবে, ‘হুম’। দেখা হওয়ার ডেট হবে নির্বাচনের ডেটের মত গায়েবি। তবে থাকবে ‘এই হয়ে গেল’ টাইপ আশার বাতাস।

অ্যাংশাস-অ্যাভয়ডেন্ট অ্যাটাচমেন্ট স্টাইল

আপনি ছোটবেলায় কট্টুক আদর পাইছেন, পান নাই—এর ওপর মোটামুটি আপনার পুরা জীবনের সব নির্ভর করে। অন্তত থেরাপিতে হাজার হাজার টাকা খরচ করে আমি এটাই বুঝছি।

আপনি প্রেমে বা প্রেমজাতীয় গ্যাঞ্জামে কী ফিল করবেন, কোন ইন্টেন্সিটিতে করবেন, কতটুকু চিল আর কতটুকু অস্থির থাকবেন, এইটাই হইল অ্যাটাচমেন্ট স্টাইল। ছোটবেলায় আদর বা গালির রিসেপশনে নাকি এইটা ডেভেলপ করে। জন বোলবি আর ম্যারি আইনসওয়ার্থ বিশ শতকে অ্যাটাচমেন্ট থিওরি ডেভলপ করেন।

এই অ্যাটাচমেন্ট থিওরির মধ্যে অ্যাংশাস-অ্যাভয়ডেন্ট অ্যাটাচমেন্ট স্টাইল এই যে, একটা সম্পর্কে একজন খুবই নার্ভাস, ইন্সিকিউরড থাকবে এবং আরেকজন হবে ইমোশনালি আনএভেইলেবল ‘থোড়াই কেয়ার করি’ টাইপ। অ্যাংশাস মুখাপেক্ষী হবে এভয়ডেন্টের, চলবে অ্যাটেনশনের দর কষাকষি। একজন ফোন দেবে, অন্যজন কাটবে। ১৬টা পরপর টেক্সটের রিপ্লাই আসবে, ‘হুম’। দেখা হওয়ার ডেট হবে নির্বাচনের ডেটের মত গায়েবি। তবে এইখানে ‘এই হয়ে গেল’ টাইপ আশার বাতাস থাকবে।

এই ধরনের অ্যাটাচমেন্টের সমাধান ব্যক্তির ছোটবেলার বড় ট্রমা কাটানো ছাড়া হয় না। নিজেকে উল্টায়-পালটায় ঝাঁকি মেরে অ্যাটাচমেন্ট স্টাইলে পরিবর্তন আনা সম্ভব এক্সপেক্টেশন আর সেন্স অব স্পেস বিষয়ে নিজের সাথে সমঝোতায় এসে।

নিজের সাথে এই বোঝাবুঝির আগে সিচুয়েশনশিপে জড়ালে মোদির মতো ছলছল চোখে ট্রাম্পের দিকে তাকায় থাকা ছাড়া আর গতি থাকবে না।

তাই যখন মনটা আকুপাকু করবে এমন সম্পর্কে জড়াইতে, মোদির এই মুহূর্তে ফেভারেট গালিবের শের মনে করবেন:

‘হামকো উনসে ওয়াফা কি উমিদ
যো নেহি জানতে ওয়াফা ক্যায়া হ্যায়’।

Ad 300x250

জুলাই হত্যার বিচারে ‘ক্যাঙারু কোর্ট’-এর পুনরাবৃত্তি হবে না: প্রেস সচিব

শিবির উপস্থিত থাকায় উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠক থেকে ওয়াক আউট বামপন্থীদের একাংশের

এনসিপিসহ নতুন ১৬ দল নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক যাচাইয়ে উত্তীর্ণ

ছাত্রদলের কমিটিতে ছাত্রলীগ কর্মী, পদে আছেন হত্যা মামলার আসামিও

উৎসবের ছোঁয়া লাগলেও অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময় বাংলাদেশের জন্য এখনো কঠিন

সম্পর্কিত