সাধুদের সাবধান করে আসিফ আকবর স্ট্যাটাস দিয়েছেন, ‘হিপহপের নামে অসভ্য শব্দচয়ন এবং বিটিভিতে সম্প্রচার বাংলাদেশি সংস্কৃতির সাথে যায় না’। জুলাইয়ের বিখ্যাত র্যাপ ‘কথা ক’ এর র্যাপার সেজান এর প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘টার্ন দ্যা টিভি অফ, বড়ভাই!’। বড়ভাইদের এই সুশীলতা আপনার কাছে কেমন ঠেকছে?
রায়হান রহমান
আমার প্রিয় গায়ক আসিফ একটা সাবধানী পোস্ট দিছেন ফেসবুকে। পোস্ট দেইখা আমি হাসতে হাসতে শেষ। দেইখা মনে হইলো, মুরুব্বি, মুরুব্বি উঁহু হু হু!
পোস্টে হিপহপের নামে অসভ্য শব্দচয়ন, আবার সেই অসভ্য শব্দমাখা সো কল্ড হিপহপের বিটিভিতে সম্প্রচার নিয়া আসিফ সাবধান কইরা দিছেন। কারণ হিসাবে আসিফ বলতেছেন এগুলা নাকি বাংলাদেশি সংস্কৃতির সাথে যায়না। এই পোস্ট এর পরেই র্যাপার সেজান দেখলাম অনলাইনে বিরাট একটা কাইজ্জা লাগায় দিছেন। আসিফের পোস্ট শেয়ার দিয়া ক্যাপশনে লেখছেন- টার্ন দ্য টিভি অফ, বড়ভাই! কমেন্টে দেখলাম বাংলা সংস্কৃতির গেট কিপার হিসাবে আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই আসিফরে মন খুইলা ব্যাশিং করতেছেন।
আচ্ছা, আসিফ কী ভাইবা এমন একটা পোস্ট দিতে পারেন বইলা আপনার মনে হয়?
হিপহপ কালচারের প্রতি আসিফের ঠিক অশ্রদ্ধা পাইলাম না লেখাটায়। কিন্তু হিপহপের নাম কইরা যে ‘অসভ্য শব্দচয়ন’ হয়—উনি আসলে এইটার উপর বিলা। অথচ এইটাও হিপহপই বা এইটা হিপহপেরই বড় একটা অংশ। কীভাবে তা বুঝতে হইলে আপনারে যাইতে হবে হিপহপের গোড়ার কাছে।
হিপহপের জন্ম হইছে ৭০ এর দশকে, নিউ ইয়র্কের ব্রংকস-এ। ব্ল্যাক আর লাতিনদের কালচারাল এক্সপ্রেশন হিসাবে হিপহপ কালচার শুরু হইছিলো। মেইনস্ট্রিম কালচারাল স্পেসে ঐ কমিউনিটিগুলার কোন জায়গাই ছিলো না। তো আপনি যখন মেইন্সট্রিম কালচারাল স্পেস থিকা দূরের একটা কালচারাল এনভায়রনমেন্টে আর্ট করবেন, স্বাভাবিকভাবেই আপনার আর্টে এমন একটা সেলফ এক্সপ্রেশনের জায়গা তৈরি হবে যেইটা মেইনস্ট্রিম বা ডমিন্যান্ট কালচারে নাই । স্ট্রিট কালচার থিকা যেহেতু এই আর্ট ফর্মের জন্ম, হিপহপের একটা মূল উপাদান স্ল্যাং। ফলে গালিগালাজ খারাপ হিপহপের পার্ট—আসিফের এমন দাবির ইশারা কতটা বেইল দেয়ার মত তা আপনাদের উপরেই ছাইড়া দিলাম।
আগে এই প্যারাগুলা খাইতো এই দেশের ব্যান্ডের লোকজন। কেউ কেউ কইতো এত লাউড মিউজিক দিয়া হাত পা ছুইড়া গান হয় নাকি? জেমসের গানরে কিছু সুশীল নাম দিছিল ‘ম্যাৎকার’। বাংলাদেশে কন্সার্ট কালচার মোটামুটি দাঁড়ায় যাওয়ার পরে এই জিনিসগুলা কইমা গেছে। আপদ আইসা জুটছে এখন ২০০৫ পর জন্মানো বাংলাদেশি হিপহপ কালচারের ঘাড়ে। ‘হিপহপ খারাপ কারণ এইখানে প্রচুর গালিগালাজ আছে’—এই কথাটা অনেক আউড়ানো হয়। চলেন, বুঝার চেষ্টা করি বাংলাদেশের সমাজে এই বক্তব্যটা কাদের দ্বারা, কেম্নে পপুলার হইতে পারলো?
যেকোনো ডমিন্যান্ট বা প্রবল কালচার অপরাপর ছোট বা বিচ্ছিন্ন কালচাররে খায়া দিতে চায়। তারা এইটা করে কালচারাল পিউরিটির মূলা ঝুলায়া। একটা সময়ে রবীন্দ্রনাথ বা নজরুলের গানের ‘একনিষ্ঠ শ্রোতা’রা ব্যান্ডের গানরে পিওর গান হিসাবে দেখতো না বা অবজ্ঞা করতো। ব্যান্ড কালচার এই দেশে পপুলার হয়ে যাওয়ার পর ছায়ানট বা বুলবুল ললিতকলারা আর কিন্তু এদের পিছে লাগতে আসেনা। কারণ ব্যান্ড মিউজিকের একটা পয়সা বানানো ইন্ডাস্ট্রি প্রায় তৈরি হয়ে গেছে। সে-ই এখন ডমিন্যান্ট কালচার। কিন্তু র্যাপ মিউজিকের ইন্ডাস্ট্রি এখনো এইখানে তেমন স্ট্রং না। যেই কারনে অপরাপর ডমিন্যান্ট কালচার, পিওরিটির দোহাই দিয়া এই দেশে র্যাপরে দৌঁড়ের উপর রাখতে চায়।
ডমিন্যান্ট কালচার আপনার কালচারাল ‘গেট কিপার’ হইতে চায়। গেটকিপাররা ঠিক কইরা দিতে চায় আপনি কি শুনবেন, কি শুনবেন না, কোনটা শ্লীল আর কোনটা অশ্লীল। এই সব কিছুরে তারা একটা ফ্রেমিংয়ে আটকায় রাখতে চায়। তাই হিপহপ বা যেকোনো কিছু খারাপ– এই কথা শুনলেই আপ্নের চেক কইরা নেয়া উচিত বক্তা কোন কালচারাল রুটে দাঁড়াইয়া এই কথা বলতেছে। সে যদি ডমিন্যান্ট কালচারের লোক হয় আপ্নে তার বক্তব্যরে চোখ বুইজা সন্দেহ করতে পারেন।
কিন্তু আসিফ একটা মজার ব্যাপার আনছেন। উনি এর মধ্যে বিটিভিরে নিয়ে আসছেন। ভাবটা এমন যে বিটিভি বাংলাদেশি সংস্কৃতি রক্ষার দায়িত্ব নিছে। বিটিভির প্রতি তার শ্রদ্ধারে একটু রিলিজিয়াস লাগলো। এরপরেই ‘বাতাবি লেবু’ ডাকনামের বিটিভিরে নিয়া ভাবতে বসলাম।
বিটিভি কি আসলেই আমাদের কালচার রক্ষার কসম খাইছে? খাইলেও কার কাছে খাইলো?
বিটিভি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয়/সরকারি মিডিয়া। মিউজিকের সাবেক ছাত্র হিসেবে আমি জানি বিটিভি কোন কোন বিষয়ে শিল্পীদের এনলিস্ট করে। পল্লীগীতি, আধুনিক গান, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, উচ্চাঙ্গ সংগীত, দলীয় সংগীত, সুরকার ও সংগীত পরিচালক হিসেবে লোক নিয়োগ দেয়া বিটিভি সবসময় একটা নির্দিষ্ট ধাচের, তথাকথিত শুদ্ধ ও ভদ্রলোকের সংস্কৃতির প্রচার কইরা আসছে। বিটিভিতে প্রান্তিক সঙ্গীত বা সংস্কৃতির অনেক কিছুই অনুপস্থিত। বিটিভির এই সিলেক্টিভ কালচারাল পজিশনরে কালচারাল এলিটিজম হিসেবে দেখতে পারেন। যেইখানে শহুরে মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্তের রুচিই সংস্কৃতির মাপকাঠি হয়ে দাড়াইছে। এই মাপকাঠির বাইরের আর্টিস্টিক এক্সপ্রেশন হয়েও বিটিভিতে তা কীভাবে চলতেছে– সেইটাই আসিফসহ কালচারাল এলিটদের মাথাব্যাথার বিষয়। কারণ বিটিভি তো বাংলাদেশের কালচারাল এলিটদের কাছেই, তাদের কালচার রক্ষার কসমটা এত দিন ধরে খেয়ে রাখছিলো।
এতে কইরা একটা জিনিস অন্তত আমরা বুঝতে পারতেছি। আসিফ যেইটারে বাংলাদেশি সংস্কৃতি বইলা হাজির করতেছেন ওইটা আসলে বাংলাদেশি কালচারাল এলিটের সংস্কৃতি। বাংলাদেশি সংস্কৃতি তার চেয়েও বড় ব্যাপার। বহু লেয়ার তার, বিচিত্র তার রাস্তাঘাট। সে গ্রামবাংলায় বাউল, জারি-সারি, ভাটিয়ালির ভিতর যেমন আছে, তেমন শহরের পপ, রক, রবীন্দ্র বা নজরুলের ভেতরেও আছে; তারে আপনে আন্ডারগ্রাউন্ডের ইউটিউব, হিপহপ, গেমিং বা মিম কালচারেও পাইতে পারেন, যদি পাইতে চান।
তাইলে আমাদের যাদের হিপহপ ভাল্লাগে, আমরা আসিফের ধমকরে কীভাবে দেখতে পারি?
সংস্কৃতি রক্ষার নামে নিয়ন্ত্রন চাপানো হিসেবে দেখতে পারি। এইটা গেলো মিউজিক, রুচি ও কালচার সংশ্লিষ্ট চোখে দেখা।
আবার চাইলে একটু অন্যভাবেও দেখা যায়।
বিটিভি সরকারি প্রতিষ্ঠান। শিশু থেকে বৃদ্ধ—দেশের সবার জন্যই বিটিভি। এই বিটিভিতে অনুষ্ঠান প্রচারে আয়োজকদের বিচার-বিবেচনা আসিফদের ঘৃণাসূচক বক্তব্য দেয়ার পরিস্থিতি তৈরি করে দিয়েছে কিনা ঐটাও দেখার বিষয়। বিটিভির প্রোগ্রাম ডিজাইনে হিপহপের মত জিনিসকে কখন সম্প্রচার করবেন, ফ্যামিলি আওয়ারে করবেন কিনা, করলে শিশুদের জন্য কন্টেন্ট ওয়ার্নিং বা প্যারেন্টাল এডভাইসরিসহ যেসব পদ্ধতি ও সেন্সিটিভিটির মধ্য দিয়া যাইতে হয় —সেইসবের পরিষ্কার দিক নির্দেশনা আছে কিনা সে বিষয়ে যত্নশীল থাকা দরকার। বিটিভিতে এই জিনিসটা প্রোগ্রাম ডিভিশন করা, প্রোগ্রামকে ঠিকভাবে আর্টিকুলেট করার ম্যানেজমেন্টের অভাব বইলাও অনেক সময় বাইনারি পজিশনে দাড়ায়ে এই ধরনের কালচারাল হেট্রেড বা ধমকাধমকির ঘটনা ঘটতে পারে।
ফলে আসিফদের মুরুব্বিগিরি ও গেটকিপিংরে যেমন আমরা সন্দেহ করবো, প্রয়োজনে বিরোধিতা করবো, তেমনি বিটিভি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বইলা তারে ম্যানেজমেন্টে ঘাটতি দেখা দিলে তারেও প্রশ্ন করবো।
এইটা আমার বিবেচনা। এখন, আপনারা দ্যাখেন, যেইটা ভাল মনে করেন!
আমার প্রিয় গায়ক আসিফ একটা সাবধানী পোস্ট দিছেন ফেসবুকে। পোস্ট দেইখা আমি হাসতে হাসতে শেষ। দেইখা মনে হইলো, মুরুব্বি, মুরুব্বি উঁহু হু হু!
পোস্টে হিপহপের নামে অসভ্য শব্দচয়ন, আবার সেই অসভ্য শব্দমাখা সো কল্ড হিপহপের বিটিভিতে সম্প্রচার নিয়া আসিফ সাবধান কইরা দিছেন। কারণ হিসাবে আসিফ বলতেছেন এগুলা নাকি বাংলাদেশি সংস্কৃতির সাথে যায়না। এই পোস্ট এর পরেই র্যাপার সেজান দেখলাম অনলাইনে বিরাট একটা কাইজ্জা লাগায় দিছেন। আসিফের পোস্ট শেয়ার দিয়া ক্যাপশনে লেখছেন- টার্ন দ্য টিভি অফ, বড়ভাই! কমেন্টে দেখলাম বাংলা সংস্কৃতির গেট কিপার হিসাবে আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই আসিফরে মন খুইলা ব্যাশিং করতেছেন।
আচ্ছা, আসিফ কী ভাইবা এমন একটা পোস্ট দিতে পারেন বইলা আপনার মনে হয়?
হিপহপ কালচারের প্রতি আসিফের ঠিক অশ্রদ্ধা পাইলাম না লেখাটায়। কিন্তু হিপহপের নাম কইরা যে ‘অসভ্য শব্দচয়ন’ হয়—উনি আসলে এইটার উপর বিলা। অথচ এইটাও হিপহপই বা এইটা হিপহপেরই বড় একটা অংশ। কীভাবে তা বুঝতে হইলে আপনারে যাইতে হবে হিপহপের গোড়ার কাছে।
হিপহপের জন্ম হইছে ৭০ এর দশকে, নিউ ইয়র্কের ব্রংকস-এ। ব্ল্যাক আর লাতিনদের কালচারাল এক্সপ্রেশন হিসাবে হিপহপ কালচার শুরু হইছিলো। মেইনস্ট্রিম কালচারাল স্পেসে ঐ কমিউনিটিগুলার কোন জায়গাই ছিলো না। তো আপনি যখন মেইন্সট্রিম কালচারাল স্পেস থিকা দূরের একটা কালচারাল এনভায়রনমেন্টে আর্ট করবেন, স্বাভাবিকভাবেই আপনার আর্টে এমন একটা সেলফ এক্সপ্রেশনের জায়গা তৈরি হবে যেইটা মেইনস্ট্রিম বা ডমিন্যান্ট কালচারে নাই । স্ট্রিট কালচার থিকা যেহেতু এই আর্ট ফর্মের জন্ম, হিপহপের একটা মূল উপাদান স্ল্যাং। ফলে গালিগালাজ খারাপ হিপহপের পার্ট—আসিফের এমন দাবির ইশারা কতটা বেইল দেয়ার মত তা আপনাদের উপরেই ছাইড়া দিলাম।
আগে এই প্যারাগুলা খাইতো এই দেশের ব্যান্ডের লোকজন। কেউ কেউ কইতো এত লাউড মিউজিক দিয়া হাত পা ছুইড়া গান হয় নাকি? জেমসের গানরে কিছু সুশীল নাম দিছিল ‘ম্যাৎকার’। বাংলাদেশে কন্সার্ট কালচার মোটামুটি দাঁড়ায় যাওয়ার পরে এই জিনিসগুলা কইমা গেছে। আপদ আইসা জুটছে এখন ২০০৫ পর জন্মানো বাংলাদেশি হিপহপ কালচারের ঘাড়ে। ‘হিপহপ খারাপ কারণ এইখানে প্রচুর গালিগালাজ আছে’—এই কথাটা অনেক আউড়ানো হয়। চলেন, বুঝার চেষ্টা করি বাংলাদেশের সমাজে এই বক্তব্যটা কাদের দ্বারা, কেম্নে পপুলার হইতে পারলো?
যেকোনো ডমিন্যান্ট বা প্রবল কালচার অপরাপর ছোট বা বিচ্ছিন্ন কালচাররে খায়া দিতে চায়। তারা এইটা করে কালচারাল পিউরিটির মূলা ঝুলায়া। একটা সময়ে রবীন্দ্রনাথ বা নজরুলের গানের ‘একনিষ্ঠ শ্রোতা’রা ব্যান্ডের গানরে পিওর গান হিসাবে দেখতো না বা অবজ্ঞা করতো। ব্যান্ড কালচার এই দেশে পপুলার হয়ে যাওয়ার পর ছায়ানট বা বুলবুল ললিতকলারা আর কিন্তু এদের পিছে লাগতে আসেনা। কারণ ব্যান্ড মিউজিকের একটা পয়সা বানানো ইন্ডাস্ট্রি প্রায় তৈরি হয়ে গেছে। সে-ই এখন ডমিন্যান্ট কালচার। কিন্তু র্যাপ মিউজিকের ইন্ডাস্ট্রি এখনো এইখানে তেমন স্ট্রং না। যেই কারনে অপরাপর ডমিন্যান্ট কালচার, পিওরিটির দোহাই দিয়া এই দেশে র্যাপরে দৌঁড়ের উপর রাখতে চায়।
ডমিন্যান্ট কালচার আপনার কালচারাল ‘গেট কিপার’ হইতে চায়। গেটকিপাররা ঠিক কইরা দিতে চায় আপনি কি শুনবেন, কি শুনবেন না, কোনটা শ্লীল আর কোনটা অশ্লীল। এই সব কিছুরে তারা একটা ফ্রেমিংয়ে আটকায় রাখতে চায়। তাই হিপহপ বা যেকোনো কিছু খারাপ– এই কথা শুনলেই আপ্নের চেক কইরা নেয়া উচিত বক্তা কোন কালচারাল রুটে দাঁড়াইয়া এই কথা বলতেছে। সে যদি ডমিন্যান্ট কালচারের লোক হয় আপ্নে তার বক্তব্যরে চোখ বুইজা সন্দেহ করতে পারেন।
কিন্তু আসিফ একটা মজার ব্যাপার আনছেন। উনি এর মধ্যে বিটিভিরে নিয়ে আসছেন। ভাবটা এমন যে বিটিভি বাংলাদেশি সংস্কৃতি রক্ষার দায়িত্ব নিছে। বিটিভির প্রতি তার শ্রদ্ধারে একটু রিলিজিয়াস লাগলো। এরপরেই ‘বাতাবি লেবু’ ডাকনামের বিটিভিরে নিয়া ভাবতে বসলাম।
বিটিভি কি আসলেই আমাদের কালচার রক্ষার কসম খাইছে? খাইলেও কার কাছে খাইলো?
বিটিভি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয়/সরকারি মিডিয়া। মিউজিকের সাবেক ছাত্র হিসেবে আমি জানি বিটিভি কোন কোন বিষয়ে শিল্পীদের এনলিস্ট করে। পল্লীগীতি, আধুনিক গান, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, উচ্চাঙ্গ সংগীত, দলীয় সংগীত, সুরকার ও সংগীত পরিচালক হিসেবে লোক নিয়োগ দেয়া বিটিভি সবসময় একটা নির্দিষ্ট ধাচের, তথাকথিত শুদ্ধ ও ভদ্রলোকের সংস্কৃতির প্রচার কইরা আসছে। বিটিভিতে প্রান্তিক সঙ্গীত বা সংস্কৃতির অনেক কিছুই অনুপস্থিত। বিটিভির এই সিলেক্টিভ কালচারাল পজিশনরে কালচারাল এলিটিজম হিসেবে দেখতে পারেন। যেইখানে শহুরে মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্তের রুচিই সংস্কৃতির মাপকাঠি হয়ে দাড়াইছে। এই মাপকাঠির বাইরের আর্টিস্টিক এক্সপ্রেশন হয়েও বিটিভিতে তা কীভাবে চলতেছে– সেইটাই আসিফসহ কালচারাল এলিটদের মাথাব্যাথার বিষয়। কারণ বিটিভি তো বাংলাদেশের কালচারাল এলিটদের কাছেই, তাদের কালচার রক্ষার কসমটা এত দিন ধরে খেয়ে রাখছিলো।
এতে কইরা একটা জিনিস অন্তত আমরা বুঝতে পারতেছি। আসিফ যেইটারে বাংলাদেশি সংস্কৃতি বইলা হাজির করতেছেন ওইটা আসলে বাংলাদেশি কালচারাল এলিটের সংস্কৃতি। বাংলাদেশি সংস্কৃতি তার চেয়েও বড় ব্যাপার। বহু লেয়ার তার, বিচিত্র তার রাস্তাঘাট। সে গ্রামবাংলায় বাউল, জারি-সারি, ভাটিয়ালির ভিতর যেমন আছে, তেমন শহরের পপ, রক, রবীন্দ্র বা নজরুলের ভেতরেও আছে; তারে আপনে আন্ডারগ্রাউন্ডের ইউটিউব, হিপহপ, গেমিং বা মিম কালচারেও পাইতে পারেন, যদি পাইতে চান।
তাইলে আমাদের যাদের হিপহপ ভাল্লাগে, আমরা আসিফের ধমকরে কীভাবে দেখতে পারি?
সংস্কৃতি রক্ষার নামে নিয়ন্ত্রন চাপানো হিসেবে দেখতে পারি। এইটা গেলো মিউজিক, রুচি ও কালচার সংশ্লিষ্ট চোখে দেখা।
আবার চাইলে একটু অন্যভাবেও দেখা যায়।
বিটিভি সরকারি প্রতিষ্ঠান। শিশু থেকে বৃদ্ধ—দেশের সবার জন্যই বিটিভি। এই বিটিভিতে অনুষ্ঠান প্রচারে আয়োজকদের বিচার-বিবেচনা আসিফদের ঘৃণাসূচক বক্তব্য দেয়ার পরিস্থিতি তৈরি করে দিয়েছে কিনা ঐটাও দেখার বিষয়। বিটিভির প্রোগ্রাম ডিজাইনে হিপহপের মত জিনিসকে কখন সম্প্রচার করবেন, ফ্যামিলি আওয়ারে করবেন কিনা, করলে শিশুদের জন্য কন্টেন্ট ওয়ার্নিং বা প্যারেন্টাল এডভাইসরিসহ যেসব পদ্ধতি ও সেন্সিটিভিটির মধ্য দিয়া যাইতে হয় —সেইসবের পরিষ্কার দিক নির্দেশনা আছে কিনা সে বিষয়ে যত্নশীল থাকা দরকার। বিটিভিতে এই জিনিসটা প্রোগ্রাম ডিভিশন করা, প্রোগ্রামকে ঠিকভাবে আর্টিকুলেট করার ম্যানেজমেন্টের অভাব বইলাও অনেক সময় বাইনারি পজিশনে দাড়ায়ে এই ধরনের কালচারাল হেট্রেড বা ধমকাধমকির ঘটনা ঘটতে পারে।
ফলে আসিফদের মুরুব্বিগিরি ও গেটকিপিংরে যেমন আমরা সন্দেহ করবো, প্রয়োজনে বিরোধিতা করবো, তেমনি বিটিভি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বইলা তারে ম্যানেজমেন্টে ঘাটতি দেখা দিলে তারেও প্রশ্ন করবো।
এইটা আমার বিবেচনা। এখন, আপনারা দ্যাখেন, যেইটা ভাল মনে করেন!
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ঘটে যাওয়া অভাবনীয় গণ-অভ্যুত্থান সারা দেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। রাস্তায় নেমে আসে লাখো মানুষ। ছাত্র-জনতার বজ্রকণ্ঠে উচ্চারিত হয় শেখ হাসিনা সরকার পতনের এক দফা দাবি। কিন্তু এই স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের পেছনে কোনো সুসংগঠিত পরিকল্পনা ছিল কি?
৪ ঘণ্টা আগেমোদির সাথে রিলেট করব, কোনোদিন ভাবি নাই। একজন জেনজি হিসেবে মোদি ট্রাম্পের থেকে যে দাগা খাইল, তার জন্য গভীর সিম্প্যাথি বোধ করলাম। এই রকম সিচুয়েশনে বা ‘সিচুয়েশনশিপ’-এ বেঈমানির শিকার আমরা রেগুলার হই।
৬ ঘণ্টা আগেসুলতানের জীবন দর্শন ও নন্দনতত্ব একটি বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হতে পারে। এসব বিচারে, শিল্পে, শিক্ষায়, জীবনবোধ ও নান্দনিকতায় আমাদের সময়ের জন্য শুধু নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যেও এস এম সুলতানের ছবির দর্শন বা নন্দনতত্ত্ব গভীরভাবে প্রাসঙ্গিক।
১০ ঘণ্টা আগেআহমদ ছফা ‘বাংলার চিত্রঐতিহ্য: সুলতানের সাধনা’ প্রবন্ধে সুলতানের চিত্রকলা নিয়ে লিখেছিলেন, ‘তারপর কোনোরকম ভনিতা না করেই বাংলাদেশের চিত্র-দর্শকদের উদ্দেশ্যে অমোঘ নির্দেশবাণী উচ্চারণ করেছে: আমাদের দেখো।’ এই দেখার ভেতরে যত অদেখাকে তুলে ধরেছেন তিনি, তাতে তাঁকে জাতিস্মর বললেও কিছু কম হবে না।
১০ ঘণ্টা আগে